Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 62
Saheeh International
Indeed, those who believed and those who were Jews or Christians or Sabeans [before Prophet Muhammad] - those [among them] who believed in Allah and the Last Day and did righteousness - will have their reward with their Lord, and no fear will there be concerning them, nor will they grieve.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
সৎ ‘আমলকারীগণের জন্য সব সময়েই রয়েছে উত্তম প্রতিদান
এ আয়াতের পূর্বে অবাধ্যদের শাস্তির বর্ণনা ছিলো। এখানে তাদের মধ্যে যারা ভালো লোক তাদের প্রতিদানের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। নবীগণের অনুসারীদের জন্য এ সু-সংবাদ কিয়ামত পর্যন্ত রয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতের ভয় হতে নির্ভয় এবং অতীতের হাতছাড়া হয়ে যাওয়া জিনিসের জন্য আফসোস করা হতে পবিত্র। অতএব যে নিরক্ষর নবী ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করবে সে প্রাপ্ত হবে অন্তহীন শান্তি— এবং ভবিষ্যতের কোন আশঙ্কার জন্য সে ভীত হবে না, আর অতীতে কোন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য সে দুঃখিত হবে না। অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللّٰهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ﴾
মনে রেখো, মহান আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশঙ্কা আছে, আর না তারা বিষন্ন হবে। (১০ নং সূরাহ্ ইউনুস, আয়াত নং ৬২) যে ফিরিশতাগণ মুসলিমদের রুহ্ বের করার জন্য আগমন করেন তাঁদের কথা উদ্ধৃত করে কুর’আন মাজীদে বলা হয়েছেঃ
﴿اِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْهِمُ الْمَلٰٓىِٕكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ﴾
নিঃসন্দেহে যারা বলেঃ আমাদের রাব্ব মহান আল্লাহ! অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং তাঁরা বলেঃ তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিলো তার জন্য আনন্দিত হও। (৪১ নং সূরাহ্ হা-মীম সাজদাহ, আয়াত নং ৩০)
‘মু’মিন’ শব্দের অর্থ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, এ আয়াতের পর মহান আল্লাহ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/১৯৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মহান আল্লাহ কোন ব্যক্তির ‘আমল কবূল করবেন না যদি ঐ ‘আমল মহান আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ মতো করা না হয়। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে অন্যান্য নবীর উম্মাতগণ তাদের নবীর মতাদর্শ অনুযায়ী ‘আমল করলে তা ছিলো গ্রহণযোগ্য, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আবির্ভাবের পর তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণের নির্দেশিত পথ ও ‘আমলের গ্রহণযোগ্যতা আর থাকে না।
সালমান ফারসী (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাযির হওয়ার পূর্বে যেসব ধর্মপ্রাণ লোকের সাথে সাক্ষাৎ করি, তাদের সালাত, সিয়াম ইত্যাদির বর্ণনা দেই। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।’ (মুসনাদ ইবনু আবী হাতিম) আর একটি বর্ণনায় আছে যে, সালমান ফারিসী (রাঃ) তাঁদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ ‘তারা সালাত আদায়কারী, সিয়াম পালনকারী ও ঈমানদার ছিলো এবং আপনি যে প্রেরিত পুরুষ এর ওপরও তাদের বিশ্বাস ছিলো।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘হে সালমান! তারা জাহান্নামী।’ (হাদীস য‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী-১/১১১৩, আসবাবুন নুযূল ২৮ পৃষ্ঠা) এতে সালমান (রাঃ) দুঃখিত হলে তখন আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কিন্তু এটা স্পষ্ট কথা যে, ইয়াহূদীদের মধ্যে ঈমানদার ঐ ব্যক্তি যে তাওরাতের ওপর ঈমান আনে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে, কিন্তু যখন ‘ঈসা (আঃ) আগমন করেন তখন তাঁরও অনুসরণ করে এবং তাঁর নাবুওয়াতকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু তখনও যদি তাওরাতের ওপর অটল থাকে এবং ‘ঈসা (আঃ)-কে অস্বীকার করে এবং তাঁর অনুসরণ না করে তাহলে সে বেদ্বীন হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে, খ্রিষ্টানদের মধ্যে ঈমানদার হলো ঐ ব্যক্তি, যে ইনজীলকে মহান আল্লাহর কিতাব বলে বিশ্বাস করে, ‘ঈসা (আঃ)-এর শারী‘আত অনুযায়ী ‘আমল করে এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পেলে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে ও তাঁর নাবুওয়াতকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু তখনও যদি ইনজীল ও ‘ঈসা (আঃ)-এর আনুগত্যের ওপর স্থির থাকে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের অনুসরণ না করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। সুদ্দী (রহঃ)-ও এটাই বর্ণনা করেছেন। সা‘ঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ)-ও এটাই বলেছেন। ভাবার্থ এই যে, প্রত্যেক নবীর অনুসারী, তাঁকে মান্যকারী ঈমানদার ও সৎ লোক। সুতরাং সে মহান আল্লাহর নিকট মুক্তি পেয়ে যাবে। কিন্তু তার জীবিতাবস্থায়ই যদি অন্য নবী এসে যান এবং আগমনকারী নবীকে সে অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির। কুর’আন মাজীদে অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
﴿وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ١ۚ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ﴾
‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম অনুসন্ধান করে, তা কবূল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (৩ নং সূরাহ্ আলি ‘ইমরান, আয়াত নং ৮৫)
এই দু’টি আয়াতের মধ্যে আনুকূল্য এটাই। কোন ব্যক্তির কোন কাজ ও কোন পন্থা গ্রহণীয় নয় যে পর্যন্ত না শারী‘আতে মুহাম্মাদীর অনুসারী হয়। কিন্তু এটা সে সময় যে সময় তিনি প্রেরিত নবী রূপে দুনিয়ায় এসে গেছেন। তাঁর পূবে যে নবীর যুগ ছিলো এবং যেসব লোক সে যুগে ছিলো তাদের জন্য ঐ নবীর অনুসরণ ও তাঁর শারী‘আতেরও অনুসরণ করা শর্ত।
‘ইয়াহূদ’ এর হাদীস
ইয়াহূদীরা হলো মূসা (আঃ)-এর অনুসারী। তাদের ধর্মীয় আইন-কানুন তাওরাতের বাণী অনুযায়ী করা হয়েছে বলে তারা দাবী করে থাকে। ইয়াহূদ শব্দের অর্থ অনুশোচনা বা অনুতপ্ত হওয়া, যেমনটি মূসা (আঃ) বলেছিলেন ‘ইন্না হুদনা ইলাইকা’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমরা তোমার কাছে অনুশোচনাকারী। এ থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, তাদেরকে এ জন্য ইয়াহূদ বলা হতো যে, তারা ছিলো অনুশোচনাকারী এবং একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র।
আবার কেউ কেউ বলেন যে, তারা ইয়াহূদের সন্তান ছিলো বলে তাদেরকে ইয়াহূদী বলা হয়েছে। ইয়া‘কূব (আঃ)-এর বড় ছেলের নাম ছিলো ইয়াহূদ। একটি মত এও আছে যে, তারা তাওরাত পড়ার সময় নড়াচড়া করতো বলে তাদেরকে ইয়াহূদ অর্থাৎ হরকতকারী বলা হয়েছে।
খ্রীষ্টানদের কেন ‘নাসারা’ বলা হয়
‘ঈসা (আঃ)-এর নাবুওয়াতের যুগ এলে বানী ইসরাঈলদের ওপর তাঁর নাবুওয়াতকে বিশ্বাস করা এবং তাঁর অনুসারী হওয়া ওয়াজিব হয়ে যায় এবং তাদের নাম হয় ‘নাসারা’ অর্থাৎ সাহায্যকারী। কেননা তারা একে অপরের সাহায্য করেছিলো। তাদেরকে আনসারও বলা হয়েছে। পবিত্র কুর’আনে ‘ঈসা (আঃ)-এর কথা উদ্ধৃত করে বলা হয়েছেঃ
﴿مَنْ اَنْصَارِیْۤ اِلَى اللّٰهِ١ؕ قَالَ الْحَوَارِیُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللّٰهِ ﴾
‘মহান আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলেছিলোঃ আমরাই তো মহান আল্লাহর পথে সাহায্যকারী।’ (৬১ নং সূরাহ্ সাফফ, আয়াত নং ১৪) কেউ কেউ বলেন যে, এসব লোক যেখানে অবতরণ করে ঐ জায়গার নাম ছিলো ‘নাসিরাহ’ এ জন্য তাদেরকে ‘নাসারা’ বলা হয়েছে। কাতাদাহ (রহঃ) এবং ইবনু জুরাইজের (রহঃ) এটাই অভিমত। মহান আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী। نَصَرَى শব্দটি نَصْرَان শব্দের বহুবচন।
অতঃপর যখন শেষ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ এসে গেলে এবং তিনি সারা দুনিয়ার জন্য রাসূলরূপে প্রেরিত হলেন তখন তাদের সবারই ওপর তাঁর সত্যতা স্বীকার ও তাঁর অনুসরণ ওয়াজিব হয়ে গেলো। আর তাঁর উম্মাতের ঈমান বা বিশ্বাসের পরিপক্কতার কারণে তাদের নাম রাখা হয় মু’মিন এবং এ জন্যও যে, পূর্বের নবীগণের প্রতি ও ভবিষ্যতের সমস্ত কথার প্রতিও তাদের ঈমান রয়েছে।
সাবি‘ঈ দল
صَابِىْ-এর একটি অর্থ তো হচ্ছে বেদ্বীন ও ধর্মহীন। এটা আহলে কিতাবের একটি দলেরও নাম ছিলো যারা ‘যাবূর’ পড়তো। এরই ভিত্তিতে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) ও ইসহাক (রহঃ)-এর মাযহাব এই যে, সাবিঈদের হাতে যবেহ কৃত প্রাণী আমাদের জন্য খাওয়া বৈধ এবং তাদের নারীদের বিবাহ করাও বৈধ। হাসান বাসরী (রহঃ) এবং হাকাম বলেন যে, এ দলটি মাজূসদের মতো। এটাও বর্ণিত আছে যে, তারা ফিরিশতাদের পূজা করতো। যিয়াদ শুনতে পারলেন যে, তারা কিবলামুখী হয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তখন তিনি তাদের কর মাওকূফ করতে চাইলেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ তিনি জানতে পারলেন যে, তারা ফিরিশতাগণের পূজা করে। ফলে তিনি ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত হোন।
আবূ যিনাদ (রহঃ) বলেন যে, সাবিঈরা ‘ইরাকের কাওসার অধিবাসী। তারা সব নবীকেই মানে। প্রতি বছর ত্রিশটি সাওম পালন করে। ইয়ামনের দিক মুখ করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বাহ (রহঃ) বলেন যে, তারা মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা কোন শারী‘আতের অনুসারী নয় এবং কাফিরও নয়।
‘আব্দুর রহমান ইবনু যায়দ (রহঃ)-এর মত এই যে, এটাও একটি স্বতন্ত্র মাযহাব। তারা মুসিল দ্বীপে ছিলো। তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়তো। কিন্তু কোন কিতাব বা কোন নবীকে মানতো না। এমনকি নির্দিষ্ট কোন শারী‘আতেরও অনুসারী ছিলো না। আর এর ওপরই ভিত্তি করে অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ার কারণেই মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সহ তাঁর সাহাবায়ি কিরাম (রাঃ)-কে ‘সাবী’ বলতো। তাদের ধর্ম খ্রিষ্টানদের ধর্মের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো। তাদের কিবলা ছিলো দক্ষিণ দিক। তারা নিজেদেরকে নূহ (আঃ)-এর অনুসারী বলে দাবী করতো।
সুফইয়ান সাওরী (রহঃ)-এর মতে ইয়াহূদ ও মাজুস ধর্মের সংমিশ্রণেই ছিলো এ মাযহাবটি। (আর রাযী ৩/৯৭) মুজাহিদ (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ) এবং ইবনু আবী নাজীহর (রহঃ) এটাই ফাতাওয়া। (তাফসীর তাবারী ২/১৪৬)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ ‘আমি যেটুকু জেনেছি তাতে বুঝেছি যে, সাবি‘ঈরা মহান আল্লাহর একাত্মবাদে বিশ্বাসী ছিলো, কিন্তু তারকার ফলাফলের প্রতি এবং নক্ষত্রের প্রতিও তারা বিশ্বাসী ছিলো। ইমাম রাযী (রহঃ) বলেন যে, তারা ছিলো তারকা পূজারী। তারা কাসরানীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো, যাদের নিকট ইবরাহীম (আঃ) প্রেরিত হয়েছিলো। প্রকৃত অবস্থা তো মহান আল্লাহই জানেন। তবে বাহ্যত এ মতটিই সঠিক বলে মনে হচ্ছে যে, এসব লোক ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, মাজুসী বা মুশরিক ছিলো না। বরং তারা স্বভাব ধর্মের ওপর ছিলো। তারা কোন বিশেষ মাযহাবের অনুসারী ছিলো না। এই অর্থেই মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণকে (রাঃ) ‘সাবী’ বলতো, অর্থাৎ তাঁরা সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করেছেন। কোন কোন ‘আলিমের অভিমত এই যে, ‘সাবী’ তারাই যাদের কাছে কোন নবীর দা‘ওয়াত পৌঁছেনি। মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings