Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 285
Saheeh International
The Messenger has believed in what was revealed to him from his Lord, and [so have] the believers. All of them have believed in Allah and His angels and His books and His messengers, [saying], "We make no distinction between any of His messengers." And they say, "We hear and we obey. [We seek] Your forgiveness, our Lord, and to You is the [final] destination."
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
অত্র আয়াত দু’টির ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস সমূহ
এই আয়াত দু’টির ফযীলতের বহু হাদীস রয়েছে। সহীহুল বুখারীতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ.
‘যে ব্যক্তি এ আয়াত দু’টি রাতে পাঠ করবে তার জন্য এ দু’টিই যথেষ্ট। (সহীহুল বুখারী-৭/৩৬৮/৪০০৮, ৮/৬৭২/৫০০৯, ফাতহুল বারী ৮/৬৭২, সহীহ মুসলিম-১/২৫৫/৫৫৪, সুনান আবু দাঊদ-২/৫৬/১৩৯৮, জামি‘তিরমিযী -৫/১৪৭/২৮৮১, সুনান নাসাঈ -৫/১৪, ইবনু মাজাহ -১/৩৩৬/১৩৬৯, মুসনাদ আহমাদ -৪/১২১, ১২২) সহীহুল বুখারী ছাড়াও অন্যান্য পাঁচটি হাদীস গ্রন্থেও একই শব্দ প্রয়োগে বর্ণনা করা হয়েছে। সহীহাইনে বিভিন্ন বরাতের মাধ্যমে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী -৭/৩৬৯, ৮/৭১২, সহীহ মুসলিম১/৫৫৪, মুসনাদ আহমাদ ৪/১১৮)
ইমাম আহমাদ আবূ যার (রাঃ) -এর একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
أُعْطِيتُ خَوَاتِيمَ سُورَةِ الْبَقَرَةِ مِنْ كَنْزٍ تَحْتَ الْعَرْشِ، لَمْ يُعْطَهُنَّ نَبِيٌّ قَبْلِي.
‘সূরাহ আল বাকারার শেষ আয়াতগুলো আমাকে ‘আরশের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নবীকেই এগুলো দেয়া হয় নি।’ (হাদীসটি সহীহ । মুসনাদ আহমাদ -৪/১৫১, ১৮১, সুনান বায়হাক্বী-২/৪৬১, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৬/৩২৪, সিলসিলাতুস সহীহাহ-১৪৮২)
সহীহ মুসলিমে রয়েছে, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি সপ্তম আকাশে অবস্থিত সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছেন, যে জিনিস আকাশের দিকে উড়ে যায় তা এই স্থান পর্যন্ত পৌঁছে থাকে ও এখান থেকে নিয়ে নেয়া হয় এবং যে জিনিস ওপর থেকে নেমে আসে এটাও এখান পর্যন্তই পৌঁছে থাকে এখান হতেই নিয়ে নেয়া হয়। অতঃপর তিনি পাঠ করেনঃ ﴿اِذْیَغْشَىالسِّدْرَةَمَایَغْشٰى﴾ ‘যখন গাছটি যা দিয়ে ঢেকে থাকার তা দিয়ে ঢাকা ছিলো’ (৫৩নংসূরাহআননাজম, আয়াত-১৬৫৩নংসূরাহআননাজম, আয়াত-১৬) অর্থাৎ স্বর্ণের প্রজাপতি তা ঢেকে নিলো। বর্ণনাকারী বলেনঃ
وَأُعْطِي رَسُولُ اللهِ # ثَلَاثًا: أعْطِيَ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ، وأعْطِي خَوَاتِيمَ سُورَةِ الْبَقَرَةِ، وَغُفِرَ لِمَنْ لَمْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ مِنْ أُمَّتِهِ شَيْئًا المُقْحَماتُ.
সেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তিনটি জিনিস দেয়া হয় (১) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, (২) সূরাহ্ বাক্বারার শেষ আয়াতগুলো এবং (৩) একাত্মবাদীদের সমস্ত পাপের ক্ষমা। (সহীহ মুসলিম-১/২৭৯/১৫৭, জামি‘তিরমিযী -৫/৩৬৬/৩২৭৬, সুনান নাসাঈ -৫/২৪৩/৫৪০, মুসনাদ আহমাদ -১/৩৮৭)
মুসনাদ আহমাদের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উকবাহ্ ইবনু ‘আমির (রহঃ) -কে বলেনঃ اقْرَأِ الْآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فَإِنِّي أُعْطِيتُهُمَا مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ.
সূরাহ আল বাকারার এই আয়াত দু’টি পাঠ করতে থাকবে। আমাকে এ দু’টো ‘আরশের নীচের ধনভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। (মুসনাদ আহমাদ -৪/১৫৮) তাফসীর ইবনু মিরদুওয়াইয়ের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلَاثٍ، أُوتِيْتُ هَؤُلَاءِ الْآيَاتِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ البقرة من بيت كنز تحت الْعَرْشِ، لَمْ يُعْطَهَا أَحَدٌ قَبْلِي، وَلَا يُعْطَاهَا أَحَدٌ بَعْدِي.
‘আমাদেরকে লোকদের ওপর তিনটি ফযীলত দেয়া হয়েছে। সূরাহ্ আল বাক্বারার শেষের আয়াতগুলো ‘আরশের নীচের ভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। এ দু’টো আমার পূবে আর কাউকে ও দেয়া হয়নি। আর আমার পরেও আর কাউকেও দেয়া হবে না।’ (সহীহ মুসলিম-১/৪/৩৭১, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্-১/১৩৩/২৬৪, মুসনাদ আহমাদ -৫/৩৮৩) ইবনু মিরদুওয়াই (রহঃ) -এর গ্রন্থে রয়েছে যে, ‘আলী (রাঃ) বলেনঃ আমার জানা নেই যে, ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞান রয়েছে এরূপ লোকদের মধ্যে কেউ আয়াতুল কুরসী এবং সূরাহ আল বাকারার শেষ আয়াত দু’টি না পড়েই শুয়ে যায়। এটা এমন একটি ধনভাণ্ডার যা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ‘আরশের নীচের ধনভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। (হাদীস টি য‘ঈফ। সুনান দারিমী-২/৩৩৮৪) জামি‘ তিরমিযীতে একটি হাদীস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنَّ اللهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السموات والأرض بألفي عام، أَنْزَلَ مِنْهُ آيَتَيْنِ خَتَمَ بهما سورة البقرة، ولا يقرأن في دار ثلاث ليال فيقربها شيطان.
‘মহান আল্লাহ্ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছিলেন। যার মধ্যে দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ শেষ করেন। যে বাড়িতে তিন রাত্রি পর্যন্ত এই আয়াত দু’টি পাঠ করা হবে শায়তান সেই বাড়ির নিকটেও যেতে পারবে না।’ (হাদীসটি সহীহ। জামি‘তিরমিযী -৫/১৪৭/২৮৮২, সুনান দারিমী-২/৩৩৮৭, মুসনাদ আহমাদ -৪/২৭৪, সুনান নাসাঈ -৯৬৭, মুসতাদরাক হাকিম-২/২৬০) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এই হাদীসটিকে গারীব বলেছেন। কিন্তু হাকীম স্বীয় গ্রন্থ মুসতাদরাকের মধ্যে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনু মিরদুওয়াই (রহঃ) -এর গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সূরাহ আল বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং আয়াতুল কুরসী পাঠ করতেন তখন তিনি হেসে উঠে বলতেনঃ এই দু’টো রহমানের মহান আল্লাহ্র ‘আরশের নীচের ধনভাণ্ডার। যখন তিনি مَنْيَعْمَلْسُوءاًيُجْزَبِهِ অর্থাৎ যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করবে তাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে। (সূরাহ আন নিসা, আয়াত-১২৩) وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسانِ إِلَّا مَا سَعى وَأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرى ثُمَّ يُجْزاهُ الْجَزاءَ الْأَوْفى اسْتَرْجَعَ وَاسْتَكَانَ. অর্থাৎ মানুষ যা চেষ্টা করছে তাই তার জন্য রয়েছে। নিশ্চয় তার চেষ্টার ফল তাকে সত্বরই দেখানো হবে অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। (৫৩ নং সূরাহ আন নাজম, আয়াত-৩৯-৪১) এই আয়াতগুলো পাঠ করতেন তখন তার মুখ দিয়ে ﴿اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ﴾ অথাৎ নিশ্চয় আমরা মহান আল্লাহ্র জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী আয়াতটি (২ নং সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-১৫৬) বেরিয়ে যেতো এবং তিনি বিষন্ন হয়ে পড়েন। ইবনু মিরদুওয়াই (রহঃ) -এর গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে সূরাহ্ আল ফাতিহা এবং সূরাহ্ আল বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি ‘আরশের নিম্নদেশ হতে দেয়া হয়েছে এবং মুফাস্সাল সূরাহ্গুলো অতিরিক্ত। (মুসতাদরাক হাকিম-১/৫৫৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পাশে বসে ছিলাম এবং জিবরাঈল (আঃ) -ও তাঁর নিকট ছিলেন। এমন সময় আকাশ হতে এক ভয়াবহ শব্দ আসে। জিবরাঈল (আঃ) ওপরের দিকে চক্ষু উত্তোলন করেন এবং বলেনঃ আকাশের ঐ দরজাটি খুলে গেলো যা আজ পর্যন্ত কোনদিন খোলেনি।’ তথা হতে এক ফিরিশতা অবতরণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলেনঃ আপনি সন্তোষ প্রকাশ করুন! আপনাকে ঐ দু’টি নূর দেয়া হচ্ছে যা আপনার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তা হচ্ছে সূরাহ্ ফাতিহা ও সূরাহ্ বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি। এগুলোর প্রত্যেকটি অক্ষরের ওপর আপনাকে নূর দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম-১/৫৫৪, সুনান নাসাঈ -৫/১২) সুতরাং এই দশটি হাদীসে এই বরকতপূর্ণ আয়াতগুলোর ফযীলত সম্বন্ধে বর্ণিত হলো।
সূরাহ্ আল বাক্বারার শেষ দু’টি আয়াতের তাফসীর
﴿اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْهِ مِنْ رَّبِّهٖ وَالْمُؤْمِنُوْنَ﴾
‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা তার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে ঈমান এনেছেন এবং মু’মিনগণও।’ আয়াতের ভাবার্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওপর তার প্রভুর পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপর তিনি ঈমান এনেছেন। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তিনি ঈমান আনয়নের পূর্ণ হকদার। অন্যান্য মু’মিনগণও ঈমান এনেছে। অর্থাৎ প্রত্যেক মু’মিন এ বিশ্বাস করেন যে, মহান আল্লাহ্ এক এবং একক, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি ছাড়া কেউ উপাসনার যোগ্য নেই এবং তিনি ছাড়া কেউ পালনকর্তাও নেই।
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓىِٕكَتِه وَ كُتُبِه وَ رُسُلِه۫ لَا نُفَرِّقُ بَیْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه﴾
‘তারা (প্রত্যেক মু’মিন) সবাই মহান আল্লাহ্কে, তাঁর ফিরিশতাকে, তাঁর গ্রন্থসমূহকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করে থাকে; তারা বলে আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কাউকেও পার্থক্য করি না।’ এই মু’মিনরা সমস্ত নবীকেই স্বীকার করে। তারা সমস্ত রাসূলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, ঐ আসমানী কিতাবসমূহকে সত্য বলে বিশ্বাস করে যেগুলো নবীগণের ওপর অবতীর্ণ হয়েছিলো। তারা নবীগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। অর্থাৎ কাউকে মানবে এবং কাউকে মানবে না তা নয়। বরং সকলকেই তারা সত্য বলে স্বীকার করে এবং বিশ্বাস রাখে যে, তারা সবাই সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং মানুষকে ন্যায়ের দিকে আহ্বান করতেন। তবে কোন কোন আহকাম প্রত্যেক নবীর যুুগে পরিবতির্ত হতো বটে, এমনকি শেষ পর্যন্ত শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শারী‘আত পূর্ববর্তী সকল শারী‘আতকে রহিতকারী হয়ে যায়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সর্বশেষ নবী ও সর্বশেষ রাসূল। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর শারী‘আত বাকি থাকবে এবং একটি দল তার অনুসরণও করতে থাকবে। ﴿وَقَالُوْاسَمِعْنَاوَاَطَعْنَا﴾ তারা স্বীকারও করে, আমরা মহান আল্লাহ্র কালাম শুনলাম এবং তাঁর নির্দেশাবলী আমরা অবনত মাথায় স্বীকার করে নিলাম।’ তারা বলেঃ ﴿غُفْرَانَكَرَبَّنَا﴾হে আমাদের প্রভু! আপনারই নিকট আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আপনারই নিকট আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এখানে আপনার ও আপনার অনুসারীর উম্মাতের প্রশংসা করা হচ্ছে। এই সুযোগে আপনি মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করুন, তা গৃহীত হবে এবং তাঁর নিকট যাঞ্চা করুন যে, তিনি যেন সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট না দেন।’ অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا﴾
‘কোন ব্যক্তিকেই মহান আল্লাহ্ তার সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেন না।’ এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহ্র করুণা ও অনুগ্রহ। (হাদীস টি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী -৬/১২৯/৬৫০১)
সাহাবীগণের মনে পূর্ববর্তী আয়াতের জন্য যে চিন্তা জেগেছিলো এবং মহান আল্লাহ্ মনের ধারণার জন্যও যেন হিসাব নিবেন তা তাদের কাছে যে খুব কঠিন ঠেকেছিলো, মহান আল্লাহ্ এই আয়াত দ্বারা তা নিরসন করেন। ভাবার্থ এই যে, মহান আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণ করবেন বটে, কিন্তু সাধ্যের অতিরিক্ত কাজের জন্য তিনি শাস্তি প্রদান করবেন না। কেননা মনে হঠাৎ কোন ধারণা এসে যাওয়াটা রোধ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। বরং হাদীসে তো এটাও এসেছে যে, এরূপ ধারণাকে খারাপ মনে করাও ঈমানের পরিচায়ক।
﴿لَهَا مَا كَسَبَتْ وَ عَلَیْهَا مَا اكْتَسَبَتْ﴾ নিজ নিজ কর্মের ফল সকলকেই ভোগ করতে হবে। ভালো কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে এবং মন্দ কাজের মন্দ ফল হবে। অতঃপর মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে প্রার্থনা শিখিয়ে দিচ্ছেন এবং তা কবূল করারও তিনি অঙ্গীকার করছেন। বান্দা প্রার্থনা করছেঃ ﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِیْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَا﴾
হে আমাদের রাব্ব! যদি আমাদের ভ্রম অথবা ত্রুটি হয় তার জন্য আমাদেকে ধরবেন না। অর্থাৎ যদি ভুলবশত কোন নির্র্দেশ পালনে আমরা ব্যর্থ হই অথবা কোন মন্দ কাজ করি কিংবা শারী‘আত বিরোধী কোন কাজ আমাদের দ্বারা সম্পন্ন হয় তাহলে আমাদেরকে তজ্জন্য পাকড়াও না করে দয়া করে ক্ষমা করুন। ‘ইতোপূর্বে সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত হয়েছে যে, এই প্রার্থনার উত্তরে মহান আল্লাহ্ বলেন, আমি এটা কবূল করেছি। (সহীহ মুসলিম-১/১১৫)
অন্য হাদীসে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ.
‘আমার উম্মাতের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করা হয়েছে এবং জোরপূর্বক যে কাজ করিয়ে নেয়া হয় তজ্জন্যও ক্ষমা রয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম-১/১১৬)
আরো বলা হয়েছেঃ ﴿رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَیْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَه عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِنَا﴾
‘হে মহান আল্লাহ্! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেরূপ গুরুভার অর্পণ করেছিলেন আমাদের ওপর তদ্রুপ গুরুভার অর্পণ করবেন না।’ মহান আল্লাহ্ তাদের এই প্রার্থনাও কবূল করেন। হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "بعثتبالحَنيفيَّةالسمحة". ‘আমি শান্তিপূর্ণ ও সহজ ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদ আহমাদ -৫/২৬৬) ﴿رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِه﴾ হে আমাদের রাব্ব! যা আমাদের সাধ্যের বাইরে এরূপ কার্যভার বহনে আমাদেকে বাধ্য করবেন না। এই প্রার্থনার উত্তরেও মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে মঞ্জুরী ঘোষিত হয়। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম-৩১২৩৫)
﴿وَاعْفُعَنَّاوَاغْفِرْلَنَاوَارْحَمْنَا﴾ আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। অর্থাৎ আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন, আমাদের পাপসমূহ মার্জনা করুন, আমাদের অসৎ কার্যাবলী গোপন রাখুন এবং আমাদের ওপর সদয় হোন যেন পুনরায় আমাদের দ্বারা আপনার অসন্তুষ্টির কোন কাজ সাধিত না হয়। এ জন্য মনীষীদের উক্তি রয়েছে যে, পাপীদের জন্য তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। (১) যে বিষয়টি মহান আল্লাহ্ ও তাদের মাঝে সাব্যস্ত তা ক্ষমা করে দেয়া (২) তারা যে ভুল করেছে তা যেন অন্যান্য বান্দা থেকে মহান আল্লাহ্ গোপন রাখেন এবং (৩) ভবিষ্যতে তারা যাতে আর পাপ কাজ না করে সেই জন্য মহান আল্লাহ্ যেন তাদেরকে হিফাযত করেন। এর ওপরও মহান আল্লাহ্র মঞ্জুরী ঘোষিত হয়। ﴿اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَ﴾ আপনিই আমাদের সাহায্যকারী, আপনার ওপরেই আমাদের ভরসা, আপনার নিকটই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি, আপনিই আমাদের আশ্রয়স্থল। আপনার সাহায্য ছাড়া না আমরা অন্য কারো সাহায্য পেতে পারি, না কোন মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি। আপনি আমাদেরকে ঐ লোকদের ওপর সাহায্য করুন যারা আপনার মনোনীত ধর্মের বিরোধী, যারা আপনার একাত্মবাদে বিশ্বাসী নয়, যারা আপনার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রিসালাতকে অস্বীকার করে, যারা আপনার ‘ইবাদতে অন্যদেরকে অংশীদার করে; আপনি আমাদেরকে তাদের ওপর জয়যুক্ত করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদেরকে তাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করুন। মহান আল্লাহ্ এর উত্তরেও বলেনঃ হ্যাঁ আমি করবো। (সহীহ মুসলিম-১/১৯৯/১১৫,১১৬, ১/২০০/১১৬) অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ হ্যাঁ, আমি এটাও করলাম। মু‘আয (রাঃ) এই আয়াতটি শেষ করে আমীন বলতেন। (তাফসীর তাবারী-৬/১৪৬)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings