Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 285
Saheeh International
The Messenger has believed in what was revealed to him from his Lord, and [so have] the believers. All of them have believed in Allah and His angels and His books and His messengers, [saying], "We make no distinction between any of His messengers." And they say, "We hear and we obey. [We seek] Your forgiveness, our Lord, and to You is the [final] destination."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াত দু’টি হচ্ছে সম্পূর্ণ সূরার এমনি এক পরিশিষ্ট ও সংক্ষিপ্তসার যাতে সূরার মূল আলোচিত বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে ঈমানের ধরন ও সত্যিকার মু’মিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ফযীলত: ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
যে ব্যক্তি সূরা বাকারার এ আয়াত দু’টি রাতে তেলাওয়াত করবে তার জন্য এ দু’টিই (রাতের ইবাদত হিসেবে ও সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য) যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী হা: ৪০০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত আরশের নীচের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নাবীকে তা দেয়া হয়নি। (হাকিম: ১/৫৫৯, সিলসিলা সহীহাহ হা:১৪৮২)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন তা থেকে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যে বাড়িতে তিন রাত এ আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করা হবে সে বাড়িতে শয়তান থাকবে না। (তিরমিযী হা: ২৮৮২, সনদ সহীহ)
এ ছাড়াও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াতের আরো অনেক ফযীলত রয়েছে।
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অত্র আয়াতে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে মু’মিনগণ ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি ঈমান এনেছেন। পূর্ববর্তী দীনের অনুসারীরা কিতাবের কিছু বিশ্বাস করেছিল আর কিছু কুফরী করেছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মু’মিনরা এমন করেনি। বরং মু’মিনরা সকল রুকনের প্রতি যেভাবে বিশ্বাস করা উচিত সেভাবে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত নাবী-রাসূলদের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করে না। কোন রাসূলকে আল্লাহ তা‘আলা কিম্বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে বলে আখ্যায়িত করে বাড়াবাড়ি করে না, আবার অসম্মানিতও করে না। আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মু’মিনদের কথা উল্লেখ করায় তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
(وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا)
“তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।”এটা হল মু’মিনদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কুরআন ও সহীহ সুন্নায় যত বিধান নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেছেন সকল বিধানের ক্ষেত্রে মু’মিনদের এরূপ কথা হবে। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধানের কাছে নিজেরা আত্মসমর্পন করবে এবং মেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে শ্রবণ করবে, এ ক্ষেত্রে দল-মত ও তরীকার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
(رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ)
“হে আমাদের রব! আমরা ভুলে গেলে অথবা ভুল করলে পাকড়াও করবেন না”এ দু‘আ কবূল করতঃ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ)
“এ ব্যাপারে তোমরা যে ভুল-ত্র“টি করে ফেলেছ তাতে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না।”(সূরা আহযাব ৩৩:৫) আর ভুল করে কিছু করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন (সূরা আন‘আম ৬:৬৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জোরপূর্বক যা কিছু করা হয় তাও ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা:২০৪৫, সহীহ)
(رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا)
“হে আমাদের রব! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না”আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের উত্তরে বলেছেন: হ্যাঁ। আমি তোমাদের ওপর এমন ভার দেব না যা পূর্ববর্তীগণ বহন করেছে। (মুসলিম, ১খণ্ড, ১৯৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বণিত, তিনি বলেন: এক সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে দেখতে পেলেন যে, দু‘টি খুটির মাঝে রশি টাঙানো আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ রশিটা কিসের জন্য? লোকেরা বলল: এ রশি যায়নাবের (লটকানো), রাতের বেলা তিনি ইবাদত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এর ওপর গা ঝুলিয়ে দেন। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, ওটা খুলে দাও। মনে ফূর্তি ও সতেজ ভাব থাকা পর্যন্তই তোমাদের ইবাদত বন্দেগী (ফরয ব্যতীত) করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন ইবাদত করবে না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) আবূ মা‘মার আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: বানী আসাদ গোত্রের একজন মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমন করলেন এবং (মহিলাটিকে দেখে) জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাটি কে? আমি বললাম: অমুক মহিলা আর তার সালাতের কথা উল্লেখ করে বললাম যে, সে রাতে ঘুমায় না। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির স্বরে বললেন: থামো! সাধ্য অনুসারেই তোমাদের আমল করা উচিত। কেননা, তোমরা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হননা। (অর্থাৎ তোমরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যখন কাজ বন্ধ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তখনই সওয়াব বা পুরস্কার প্রদান বন্ধ করে দেন। (সহীহ বুখারী হা: ১১৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৭৮৪)
সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যা দায়িত্ব দেননি নিজেরা বিভিন্ন তরীকার অসাধ্য সবক আবিস্কার করে এমন কিছু চাপিয়ে না নেয়া, বরং সাধ্যমত আমল করতঃ আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের আশা করব।
পরিশেষে একজন দাস তার মুনীবের কাছে যেভাবে অনুনয়-বিনয়ের সাথে নিজের অক্ষমতা, অপারগতা ও অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা সেভাবে আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার শিক্ষা দিচ্ছেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন, আপনি দয়ালু, অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও দয়া করুন। আপনি আমাদের মাওলা, আপনি ছাড়া আমাদের কোন অভিভাবক নেই, অতএব আপনি কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ সূরা শেষে আমীন বলার হাদীসটি দুর্বল। (ইবনু জারীর আত-তাবারী হা: ৬৫৪১, যঈফ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানের রুকনসমূহ অবগত হলাম।
২. সকল রাসূলের প্রতি কোন পার্থক্য ছাড়াই ঈমান আনা আবশ্যক। কাউকে আল্লাহ তা‘আলা বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে মর্যাদায় উন্নীত করব না আবার কারো প্রাপ্য মর্যাদা ক্ষুণ্ণও করব না।
৩. অজান্তে ভুল-ত্র“টি হয়ে গেলে এ উম্মাতের জন্য তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
৪. অন্তরে যে খারাপ চিন্তা আসে তা কর্মে বা কথায় প্রকাশ না পেলে পাকড়াও করা হবে না।
৫. সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু’টির ফযীলত জানতে পারলাম।
৬. প্রত্যেক মু’মিনের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে ঈমান এনে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ঈমান আনা এবং সকল মতবাদ, চিন্তা-চেতনা ও জাহিলি কর্মকাণ্ড বর্জন করা।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings