Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 284
Saheeh International
To Allah belongs whatever is in the heavens and whatever is in the earth. Whether you show what is within yourselves or conceal it, Allah will bring you to account for it. Then He will forgive whom He wills and punish whom He wills, and Allah is over all things competent.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
বান্দা যদি মনে মনে কিছু ভাবে সেজন্য কি সে দায়ী হবে
মহান আল্লাহ্ বলেন যে, তিনি হচ্ছেন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের একচ্ছত্র অধিপতি। ছোট, বড়, প্রকাশ্য, গোপনীয় বিষয়সমূহের হিসাব গ্রহণকারী। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
﴿قُلْ اِنْ تُخْفُوْا مَا فِیْ صُدُوْرِكُمْ اَوْ تُبْدُوْهُ یَعْلَمْهُ اللّٰهُ١ؕ وَ یَعْلَمُ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ١ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ﴾
‘তুমি বলোঃ তোমাদের অন্তরসমূহে যা রয়েছে তা তোমরা গোপন করো অথবা প্রকাশ্য করো মহান আল্লাহ্ তা অবগত আছেন।’ (৩ নং সূরাহ্ আলি ‘ইমরান, আয়াত নং ২৯) অন্যস্থানে রয়েছেঃ ﴿یَعْلَمُ السِّرَّ وَ اَخْفٰى﴾
‘তিনি গোপনীয় ও প্রকাশ্য বিষয়সমূহ খুব ভালো জানেন।’ (২০ নং সূরাহ্ তা-হা, আয়াত নং ৭) এই অর্থ সম্বলিত আরো বহু আয়াত রয়েছে। এখানে এর সাথে এটাও বলেছেন যে, তিনি তাঁর হিসাব গ্রহণ করবেন। সূরাহ্ আল বাক্বারার ২৮৪ নং আয়াতটি অবতীর্ণ হলে সাহাবীগণের ওপর এটা খুব কঠিন বোধ হয় যে, ছোট বড় সমস্ত জিনিসের মহান আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণ করবেন। সুতরাং তাদের ঈমানের দৃঢ়তার কারণে তারা কম্পিত হোন। তাই তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বসে পড়েন এবং বলেন, ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমাদেরকে সালাত, সিয়াম, জিহাদ এবং দানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে; কিন্তু এখন যে, আয়াত অবতীর্ণ হলো তা পালন করার শক্তি আমাদের নেই।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘তোমরা কি ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের মতো বলতে চাও যে, আমরা শুনলাম ও মানলাম না? তোমাদের বলা উচিত, আমরা শুনলাম ও মানলাম। হে মহান আল্লাহ্! আমরা আপনার দয়া কামনা করছি। হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে তো আপনার নিকটই ফিরে যেতে হবে।’ অতঃপর সাহাবীগণ এ কথা মেনে নেন এবং তাদের মুখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শিখিয়ে দেয়া কথাগুলো উচ্চারিত হতে থাকে। তখন মহান আল্লাহ্ নিম্নের আয়াতাংশ নাযিল করেনঃ
﴿اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَمَلٰٓىِٕكَتِه وَ كُتُبِه وَ رُسُلِه لَا نُفَرِّقُ بَیْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه١۫ وَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا١ۗ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَاِلَیْكَ الْمَصِیْرُ﴾
‘রাসূল তাঁর রাব্ব হতে তার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করে এবং মু’মিনগণও বিশ্বাস করে; তারা সবাই মহান আল্লাহ্কে, ফিরিশতাকে, তাঁর গ্রন্থসমূহকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করে; তারা বলে আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কাউকে পার্থক্য করি না, আর তারা আরো বলে, আমরা শুনলাম; স্বীকার করলাম। অতঃপর মহান আল্লাহ্ ২৮৪ নং আয়াতটি বাতিল করেন এবং
﴿ لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَیْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِیْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَا ﴾
‘কোন ব্যক্তিকেই মহান আল্লাহ্ তাঁর সাধ্যের অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেন না; সে যা উপার্জন করেছে তা তাঁরই জন্য এবং যা সে অর্জন করেছে তা তাঁরই ওপর বর্তাবে। হে আমাদের রাব্ব! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করি সে জন্য আমাদেরকে অপরাধী করবেন না। আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (মুসনাদ আহমাদ -২/৪১২, সহীহ মুসলিম-১/১৯৯/১১৫) ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন যে, মহান আল্লাহ্ এই কষ্ট উঠিয়ে দিয়ে উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। মুসলিমগণ যখন বলেনঃ ﴿ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَیْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَه عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِنَا﴾
‘হে আমাদের রাব্ব! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করি সেজন্য আমাদেরকে অপরাধী করবেন না। তখন মহান আল্লাহ্ বলেনঃ হ্যাঁ, ‘আমি এটাই করবো।’ মুসলিমগণও বলেনঃ
﴿ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِه﴾
‘হে আমাদের রাব্ব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেরূপ গুরুভার অর্পণ করেছিলেন আমাদের ওপর তদ্রুপ ভার অর্পণ করবেন না। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ‘এটা কবূল করা হলো।’ অতঃপর মুসলিমগণ বলেনঃ ﴿ وَ اعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَ﴾
‘আর আমাদের পাপ মোচন করুন ও আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে দয়া করুন, আপনি আমাদের আশ্রয়দাতা! অতঃপর কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জয়যুক্ত করুন। এটাও মহান আল্লাহ্ কবূল করেন। (সহীহ মুসলিম-১/২০০/১১৬, মুসনাদ আহমাদ -১/২৩৩) এ হাদীসটি আরো বহু পন্থায় বর্ণিত হয়েছ্।
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর নিকট ঘটনা বর্ণনা করি যে, ﴿وَاِنْتُبْدُوْامَافِیْۤاَنْفُسِكُمْاَوْتُخْفُوْهُ﴾ এই আয়াতটি পাঠ করে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) খুবই ক্রন্দন করেছেন। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ﴿وَاِنْتُبْدُوْامَافِیْۤاَنْفُسِكُمْاَوْتُخْفُوْهُ﴾ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় সাহাবীগণের এই অবস্থায়ই হয়েছিলো, তারা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন এবং তারা এই কথাও বলেছিলেন, ‘অন্তরের মালিক তো আমরা নই। সুতরাং অন্তরের ধারণার জন্যও যদি আমাদেরকে ধরা হয় তাহলে তো খুব কঠিন ব্যাপার হবে।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেনঃ سَمِعْنَاوَأَطَعْنَا বলো।’ সাহাবীগণ এই কথাই বলেন। অতঃপর পরবর্তী আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এই আয়াতগুলো দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, কার্যাবলীর জন্য ধরা হবে বটে;কিন্তু মনের ধারণা ও সংশয়ের জন্য ধরা হবে না।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -১/৩৩২/৩০৭১) অন্য ধারায় এই বর্ণনাটি ইবনু মারজানা (রহঃ) হতেও এভাবে বর্ণিত আছে। তাতে এটাও রয়েছে যে, কুর’আন ফায়সালা করে দিয়েছে যে, তোমাদেরকে তোমাদের সৎ ও অসৎ কাজের ওপর ধরা হবে, তা মুখের দ্বারাই হোক অথবা অন্য অঙ্গের দ্বারাই হোক। কিন্তু মনের সংশয় ক্ষমা করে দেয়া হলো। আরো বহু সাহাবী (রাঃ) ও তাবি‘ঈ (রহঃ) দ্বারা এর রহিত হওয়া সাব্যস্ত রয়েছে। (মুসনাদ আহমাদ ১/৩৩২)
সহীহ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا، مَا لَمْ تكلَّم أَوْ تَعْمَلْ.
‘মহান আল্লাহ্ আমার উম্মাতের মনের ধারণা ও সংশয় ক্ষমা করেছেন। তারা যা বলবে বা করবে তার ওপরেই তাদের ধরা হবে। (সহীহুল বুখারী-৯/৩০০/৫২৬৮, ফাতহুল বারী ৯/৩০০, সহীহ মুসলিম-১/২০১/১১৬, সুনান আবু দাঊদ২/২৬৪/২২০৯, জামি‘তিরমিযী -৩/৪৮৯/১১৮৩, সুনান নাসাঈ - ৬/১৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬৫৮/২০৪০, মুসনাদ আহমাদ -২/২৫৫, ৩৯৩, ৪২৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহান আল্লাহ্ ফিরিশতাকে বলেনঃ
قَالَ اللَّهُ: إِذَا هَم عَبْدِي بِسَيِّئَةٍ فَلَا تَكْتُبُوهَا عَلَيْهِ، فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا سَيِّئَةً، وَإِذَا هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا فَاكْتُبُوهَا حسنَة، فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا عَشْرًا.
‘যখন আমার বান্দা খারাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে তখন তা লিখো না, যে পর্যন্ত না সে করে বসে। যদি করেই ফেলে তাহলে একটি পাপ লিখো। আর যখন সে সৎকাজের ইচ্ছা করে তখন শুধু ইচ্ছার জন্যই একটি সাওয়াব লিখো এবং যখন করে ফেলবে তখন একের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব লিখে নাও। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, একটি পুণ্যের বিনিময়ে সাতশ’টি পুণ্য লিখা হয়। (সহীহুল বুখারী-১৩/৪৭৩/৭৫০১, ফাতহুল বারী ১৩/৪৭৩, সহীহ মুসলিম-১/২০৪/পৃষ্ঠা-১১৭, জামি‘তিরমিযী -৫/২৪৭/৩০৭৩) আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ বলেন, বান্দা যখন ভালো কাজ করার নিমিত্তে কোন আলোচনা করে, আমি এর বিনিময়ে একটি নেকী লিখে রাখি যতোক্ষণ না সে ‘আমলে বাস্তবায়ন করে। যখন বান্দা তা ‘আমলে বাস্তবায়ন করে, তখন আমি তার ‘আমলনামায় দশ গুণ সাওয়াব লিখে দেয়। পক্ষান্তরে যখন সে গুনাহের কাজ করার জন্য কোন আলোচনা করে কিন্তু বাস্তবায়ন করে না ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে ক্ষমা করতে থাকি। কিন্তু যখন তা বাস্তবায়ন করে তখন আমি পাপ পরিমাণ গুনাহ লিখে রাখি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বান্দা যখন খারাপ কাজের ইচ্ছে করে তখন ফিরিশতারা মহান আল্লাহ্র দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করে, হে মহান আল্লাহ্! আপনার অমুক বান্দা অসৎ কাজ করতে চায়। তখন মহান আল্লাহ্ বলেন, বিরত থাকো , যে পর্যন্ত না সে তা করে বসে সেই পর্যন্ত তা ‘আমলনামায় লিখো না। যদি করে ফেলে তবে একটি লিখবে। আর যদি ছেড়ে দেয় তবে একটি পুণ্য লিখবে। কেননা, সে আমাকে ভয় করে ছেড়ে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে খাঁটি ও পাকা মুসলমান হয়ে যায় তার এক একটি ভালো কাজের পুণ্য দশ হতে সাতশ’ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং মন্দ কাজ বৃদ্ধি পায় না। (সহীহুল বুখারী- ১/১২৪/৪২, সহীহ মুসলিম- ১/২০৫/১১৭, মুসনাদ আহমাদ -২/৩১৫)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কখনো পুণ্য সাতশ’ অপেক্ষা ও বেশি বৃদ্ধি করা হয়। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ধ্বংস প্রাপ্ত ঐ ব্যক্তি যে এতো দয়া ও করুণা সত্ত্বেও ধ্বংস হয়ে থাকে। একবার সাহাবীগণ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করেন, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! মাঝে মাঝে আমাদের অন্তরে এমন সংশয়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে যে, তা মুখে বর্ণনা করাও আমাদের ওপর কঠিন হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা শুনে বলেন, এইরূপ পাচ্ছো না কি ? তাঁরা বলেন, জ্বি হ্যাঁ। তিনি বলেন, এটাই স্পষ্ট ঈমান। (সহীহ মুসলিম-১/২০৯/১১৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, এই আয়াতটি মানসূখ হয়নি। বরং ভাবার্থ এই যে, কিয়ামতের দিন যখন সমস্ত সৃষ্টজীবকে মহান আল্লাহ্ একত্রিত করবেন তখন বলবেন, আমি তোমাদের মনের এমন গোপন কথা বলে দিচ্ছি যা আমার ফিরিশতারাও জানে না। মু’মিনদেরকে ঐ কথাগুলো বলে দিয়ে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু মুনাফিক ও সন্দেহ পোষণকারীদেরকে তাদের মনের অবিশ্বাসের কথা বলে দিয়ে পাকড়াও করবেন। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَ لٰكِنْ یُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوْبُكُمْ﴾
অর্থাৎ, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে তোমাদের অন্তরের উপার্জনের জন্য পাকড়াও করবেন। (২নং সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-২২৫) অর্থাৎ অন্তরের সন্দেহ ও কপটতার জন্য মহান আল্লাহ্ ধরবেন। হাসান বাসরী (রহঃ) -ও এটাকে মানসূখ বলেন না। ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) -ও এই উক্তিকেই পছন্দ করেন এবং বলেন, হিসাব এক জিনিস এবং শাস্তি অন্য জিনিস। হিসাব গ্রহণের জন্য শাস্তি জরুরী নয়। হিসাব গ্রহণের পর ক্ষমারও সম্ভাবনা রয়েছে এবং শাস্তির সম্ভবনাও রয়েছে।
সাফওয়ান ইবনু মুহাররাম (রহঃ) বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সাথে বায়তুল্লার তাওয়াফ করছিলাম। এক ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করেন, কানা ঘুষা সম্বন্ধে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হতে কি শুনেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি। মহান আল্লাহ্ ঈমানদারকে নিজের পার্শ্বে ডেকে নিবেন। , এমন কি তার স্বীয় বাহু তার ওপরে রাখবেন। অতঃপর তাকে বলবেন, তুমি কি অমুক অমুক পাপ করেছো ? সে বলবে, হ্যাঁ আমি করেছি। দু’বার বলবে। যখন খুব পাপের কথা স্বীকার করবে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, জেনে রেখো দুনিয়ায় আমি তোমার দোষ গুলো গোপন রেখেছিলাম এবং আজ আমি তোমার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর তার পুণ্যের পুস্তিকা তাকে ডান হাতে দিবেন। তবে অবশ্যই কাফির ও মুনাফিকদেরকে জনমণ্ডলীর সামনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হবে এবং তাদের পাপগুলো প্রকাশ করে দেয়া হবে। অতঃপর বলা হবে, (সহীহুল বুখারী-৭৫১৪, সহীহ মুসলিম-৪/৫২/২১২০, সুনান ইবনু মাজাহ-১/১৮৩/৬৫)
﴿هٰۤؤُلَآءِ الَّذِیْنَ كَذَبُوْا عَلٰى رَبِّهِمْ١ۚ اَلَا لَعْنَةُ اللّٰهِ عَلَى الظّٰلِمِیْنَ﴾
‘এই লোকগুলো তারাই যারা তাদের প্রভুর ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো। ঐ অত্যাচারীদের ওপর মহান আল্লাহ্র অভিশাপ।’ (১১ নং সূরাহ হূদ, আয়াত-১৮) একবার যায়দ (রাঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে এই আয়াতটি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ যখন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এই আয়াতটি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন লোক আমাকে এই আয়াতটি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেনি। তুমি আজ জিজ্ঞেস করলে। তাহলে জেনে রেখো যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে বান্দার ওপর ইহলৌকিক কষ্ট। যেমন, তাদের জ্বর জ্বালা ইত্যাদি হয়ে থাকে, এমনকি মনে করো একটি লোক তার জামার একটি পকেটে কিছু টাকা রেখেছে এবং তার ধারণা হয়েছে যে, টাকা অন্য পকেটে রয়েছে। কিন্তু ঐ পকেটে হাত ভরে দেখে যে, টাকা রয়েছে। এই জন্য তার পাপ মোচন হয়ে থাকে। এমনকি সে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত পাপ হতে এমন ভাবে বেরিয়ে যায় যেমন খাঁটি লাল সোনা বেরিয়ে থাকে। (জামি‘তিরমিযী -৫/২০৫/২৯৯১, মুসনাদ আহমাদ -৬/২১৮, তাফসীর তাবারী -৬/১১৭/৬৪৯৫) এই হাদীসটি গরীব।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings