Surah Al Baqarah Tafseer

বন্ধক রাখার ব্যাপারে কুর’আনের আদেশ

মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ ﴿وَاِنْ كُنْتُمْ عَلٰى سَفَرٍ﴾ সফর অবস্থায় যদি ধারের আদান প্রদান হয় এবং কোন লেখক পাওয়া না যায় অথবা কলম, কালি, কাগজ ইত্যাদি না থাকে তাহলে বন্ধক রাখো এবং যে জিনিস বন্ধক রাখবে তা ঋণদাতার অধিকারে দিয়ে দাও। مَقْبُوْضَة শব্দ দ্বারা এই দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, বন্ধক যে পর্যন্ত অধিকারে না আসবে সে পর্যন্ত তা অপরিহার্য হবে না। সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া হতে চির বিদায় গ্রহণ করেন তখন তাঁর লৌহ বর্মটি আবুশ শাহাম নামক একজন ইয়াহূদীর নিকট ত্রিশ ‘ওয়াসাক’ অর্থাৎ প্রায় ১৮০ কেজি বার্লির বিনিময়ে বন্ধক ছিলো, যে যব তিনি স্বীয় পরিবারের খাবারের জন্য গ্রহণ করেছিলেন। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, ঐ ইয়াহূদীটি ছিলো মাদীনায় অবস্থান করা এক ইয়াহূদী। (সহীহুল বুখারী-৬/১১৬/২৯১৬, ৭/৭৫৮/৪৪৬৭, ফাতহুল বারী ৪/৩৫৪, সহীহ মুসলিম-৩/১২৪-১২৬/১২২৬, সুনান নাসাঈ - ৭/৩৩২/৪৬২৩, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৮১৫/২৪৩৬, মুসনাদ আহমাদ -৬/৪৫৩, ৪৫৭)

মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ ﴿فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْیُؤَدِّ الَّذِی اؤْتُمِنَ اَمَانَتَه﴾ যদি তোমাকে কেউ বিশ্বাস করে তাহলে তোমার উচিত সেই বিশ্বাসের মূল্য দেয়া। অতঃপর মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ ﴿وَلْیَتَّقِاللّٰهَرَبَّه﴾পাওনাদারের উচিত মহান আল্লাহ্‌কে ভয় করা যে, তিনি সব কিছু জানেন ও লক্ষ্য করছেন যে, কে কি ধরনের আচরণ করছে। মুসনাদ আহমাদ (রহঃ) এবং সুনানের কিতাব সমূহে বর্ণিত হয়েছে, কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, সামুরাহ (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ عَلَىالْيَدِمَاأَخَذَتْحَتَّىتُؤَدِّيَهُ ‘ঋণ গ্রহীতা যে ঋণ নিয়ে থাকে তা পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার হাত তা ঋণের বোঝা বহন করে বেড়াবে।’ (সনদয‘ঈফ। মুসনাদ আহমাদ -৫/৮, সুনান আবু দাঊদ-৩/২৯৬/৩৫৬১, জামি‘তিরমিযী -৩/৫৬৬/১২৬৬, সুনান নাসাঈ -৩/৪১১, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৮০২/২৪০০, সুনান দারিমী-২/৩৪২/২৫৯৬, মুসতাদরাক হাকিম-২/৪৭)

মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ ﴿وَ لَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ﴾ ‘সাক্ষ্য গোপন করো না, বিশ্বাস ভঙ্গ করো এবং তা হতে বিরত হয়ো না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ মনীষী বলেন যে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া এবং সাক্ষ্যকে গোপন করা বড় পাপ অর্থাৎ কবীরা গুনাহ। সুদ্দী (রহঃ) মন্তব্য করেছেন যে, এর অর্থ হচ্ছে যে, সে তার মনে পাপ পুষিয়ে রেখেছে। (তাফসীর তাবারী -৬/১০০) এখানেও বলা হচ্ছে যে, সাক্ষ্য গোপনকারীর মন পাপাচারী। অন্যস্থানে রয়েছেঃ ﴿ وَ لَا نَكْتُمُ شَهَادَةَ١ۙ اللّٰهِ اِنَّاۤ اِذًا لَّمِنَ الْاٰثِمِیْنَ﴾

‘মহান আল্লাহ্‌র সাক্ষ্যকে আমরা গোপন করবো না, যদি এরূপ করি তাহলে এমতাবস্থায় আমরা ভীষণ পাপী হবো।’ (৫ নং সূরাহ্ আল মায়িদাহ, আয়াত নং ১০৬)

অন্যত্র মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ

﴿ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِیْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَ لَوْ عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَیْنِ وَ الْاَقْرَبِیْنَ١ۚ اِنْ یَّكُنْ غَنِیًّا اَوْ فَقِیْرًا فَاللّٰهُ اَوْلٰى بِهِمَا١۫ فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰۤى اَنْ تَعْدِلُوْا١ۚ وَ اِنْ تَلْوٗۤا اَوْ تُعْرِضُوْا فَاِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرًا﴾

‘হে মু’মিনগণ! তোমরা মহান আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দানকারী, সুবিচার প্রতিষ্ঠাকারী হও এবং যদিও এটা তোমাদের নিজের অথবা মাতা-পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিকূল হয়, যদি সে সম্পদশালী কিংবা দরিদ্র হয় তাহলে মহান আল্লাহ্‌ই তাদের জন্য যথেষ্ট; অতএব সুবিচারে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, আর তোমরা যদি ঘুড়িয়ে পেচিয়ে কথা বলো কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও তাহলে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্‌ তোমাদের সমস্ত কর্মের পূর্ণ সংবাদ রাখেন। (৪ নং সূরাহ নিসা, আয়াত নং ১৩৫)