Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 282
Saheeh International
O you who have believed, when you contract a debt for a specified term, write it down. And let a scribe write [it] between you in justice. Let no scribe refuse to write as Allah has taught him. So let him write and let the one who has the obligation dictate. And let him fear Allah, his Lord, and not leave anything out of it. But if the one who has the obligation is of limited understanding or weak or unable to dictate himself, then let his guardian dictate in justice. And bring to witness two witnesses from among your men. And if there are not two men [available], then a man and two women from those whom you accept as witnesses - so that if one of the women errs, then the other can remind her. And let not the witnesses refuse when they are called upon. And do not be [too] weary to write it, whether it is small or large, for its [specified] term. That is more just in the sight of Allah and stronger as evidence and more likely to prevent doubt between you, except when it is an immediate transaction which you conduct among yourselves. For [then] there is no blame upon you if you do not write it. And take witnesses when you conclude a contract. Let no scribe be harmed or any witness. For if you do so, indeed, it is [grave] disobedience in you. And fear Allah . And Allah teaches you. And Allah is Knowing of all things.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
লিখিত লেনদেনে পরবর্তী সময়ে উপকার রয়েছে
কুর’আনুল কারীমে এ আয়াতটি সবচেয়ে বড় আয়াত। সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহঃ) বলেনঃ ‘আমার নিকট বর্ণিত হয়েছে যে, ‘আরশ থেকে কুর’আন মাজীদের জন্য সর্বশেষ যে আয়াত নাযিল হয়েছে তা হলো ঋণের এই আয়াতটি। (তাফসীর তাবারী-৬/৪১) এই আয়াতে মহান আল্লাহ্ তাঁর ঈমানদার বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ ﴿ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا تَدَایَنْتُمْ بِدَیْنٍ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوْهُ﴾ ‘তারা যেন আদান-প্রদান লিখে রাখে, তাহলে ঋণের পরিমাণ ও নির্ধারিত সময়ের ব্যাপারে কোন গণ্ডগোল সৃষ্টি হবে না। এতে সাক্ষীরাও ভুল করবে না। এর দ্বারা ঋণের জন্য একটি সময় নির্ধারিত করার বৈধতাও সাব্যস্ত হচ্ছে। আয়াতটি অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আদম (আঃ) -ই অস্বীকারী। মহান আল্লাহ্ আদম (আঃ) -কে সৃষ্টি করার পর তার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলিয়ে দেন। ফলে কিয়ামত পর্যন্ত তার যতোগুলো সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সবাই বেরিয়ে আসে। আদম (আঃ) তার সন্তানদেরকে স্বচক্ষে দেখতে পান। একজনকে অত্যন্ত হৃষ্টপুষ্ট ও ঔজ্জ্বল্যময় দেখে জিজ্ঞেস করেন হে মহান আল্লাহ্! এর নাম কি? মহান আল্লাহ্ বলেনঃ এটা তোমার সন্তান দাউদ (আঃ) । তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তার বয়স কতো? মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ষাট বছর। তিনি বলেনঃ তার বয়স আরো কিছুদিন বাড়িয়ে দিন! মহান আল্লাহ্ বলেনঃ না, তা হবে না। তবে তুমি যদি তোমার বয়সের মধ্যে হতে তাকে কিছু দিতে চাও, তবে দিতে পারো। তিনি বলেনঃ হে মহান আল্লাহ্! আমার বয়সের মধ্যে হতে চল্লিশ বছর তাকে দেয়া হোক। সুতরাং তা দেয়া হয়। আদম (আঃ) -এর বয়স ছিলো এক হাজার বছর। বয়সের এই আদান প্রদান লিখে নেয়া হয় এবং ফিরিশতাদেরকে এর ওপর সাক্ষী রাখা হয়। আদম (আঃ) -এর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তিনি বলেনঃ হে মহান আল্লাহ্! আমার বয়সের এখনো তো চল্লিশ বছর অবশিষ্ট রয়েছে? মহান আল্লাহ্ তখন বলেনঃ তুমি তোমার সন্তান দাউদ (আঃ) -কে চল্লিশ বছর দান করেছো? আদম (আঃ) তা অস্বীকার করেন। তখন তাকে ঐ লিখা দেখানো হয় এবং ফিরিশতাগণ সাক্ষ্য প্রদান করেন। (মুসনাদ আহমাদ -১/২৫১, ২৯৯, ৩৭১, মুসনাদ আবূ দাউদআত তায়ালিসী-২৬৯১, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৮/২০৬, জামি‘তিরমিযী-৫/২৪৯/৩০৭৬। ইমাম তিরমিযী হাদীস টি কে সহীহ বলেছেন) দ্বিতীয় বর্ণনায় রয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ আদম (আঃ) -এর বয়স এক হাজার বছর পূর্ণ করেছিলেন এবং দাউদ (আঃ) -এর বয়স করেছিলেন একশ’ বছর। কিন্তু এই হাদীসটি অত্যন্ত গারীব। এর একজন বর্ণনাকারী ‘আলী ইবনু যায়দ ইবনু জাদ‘আন হতে বর্ণিত হাদীস গুলো অগ্রাহ্য হয়ে থাকে। মুসতাদরাক হাকিমের মধ্যেও এই বর্ণনাটি রয়েছে।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় আসেন তখন এখানকার লোকদের মধ্যে এই রীতি ছিলো যে, এক কিংবা দুই বছর আগেই তারা তাদের গাছের ফলের মূল্য বাবদ অগ্রিম টাকা নিয়ে নিতো। তাদের এ ধরনের লেনদেন দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
مَنْ أَسْلَفَ فَلْيُسْلِفْ فِي كَيْلٍ مَعْلُومٍ، ووزن معلوم، إلى أجل معلوم.
‘তোমরা যারা অগ্রিম টাকা (খেজুর বিক্রি বাবদ) নিতে চাও তারা নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখসহ ওযন বা পরিমাপের কথা উল্লেখ করে নিবে।’ (সহীহুল বুখারী-৪/৫০১/২২৪১, ফাতহুল বারী -৪/১০৫, সহীহ মুসলিম-৩/১২২৬/হা-১২৮, সুনান আবূ দাউদ-৩/২৭৫/৩৪৬৩, জামি‘তিরমিযী -৩/৬০২/১৩১১, মুসনাদ আহমাদ -১/২১৭)
কুর’আনুল কারীমে নির্দেশ হচ্ছে, ‘তোমরা লিখে রাখো।’ আর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা নিরক্ষর উম্মাত, না আমরা লিখতে জানি, না হিসাব জানি। (সহীহুল বুখারী-৪/১৫১/১৯১৩, সহীহ মুসলিম-২/৭৬১/১৫, সুনান আবূ দাউদ-২/২৯৬/২৩১৯, সুনান নাসাঈ -৪/৪৪৬/২১৩৯, মুসনাদ আহমাদ -২/১২২) এই দু’য়ের মধ্যে সামঞ্জস্য এইভাবে যে, ধর্মীয় জিজ্ঞাস্য বিষয়াবলী এবং শারী‘আতের বিধানসমূহ লিখার মোটেই প্রয়োজন নেই। স্বয়ং মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে এগুলো অত্যন্ত সহজ করে দেয়া হয়েছে। কুর’আন মাজীদ ও হাদীসুন নাবাবী মুখস্থ রাখা মানুষের জন্য প্রকৃতিগতভাবেই সহজ। কিন্তু ইহলৌকিক ছোট খাট আদান প্রদান ও ধার-কার্যের বিষয়গুলো আবশ্যই লিখে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এটাও স্মরণ রাখার বিষয় যে, এই নির্দেশ ফরযের জন্য নয়। সুতরাং না লিখা ধর্মীয় কার্যে এবং লিখে রাখা সাংসারিক কার্যে প্রযোজ্য। অবশ্য কেউ কেউ এই লিখে রাখাকে ফরযও বলেছেন।
ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেছেন, যে ধার দিবে সে লিখে রাখবে এবং যে বিক্রি করবে সে সাক্ষী রাখবে। আবূ সুলাইমান মিরআশী (রহঃ) বহুদিন কা‘বের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তিনি একবার তার পাশ্ববর্তী লোকদের বলেন- ঐ অত্যাচারিত ব্যক্তি, যে মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করে অথচ তার প্রার্থনা গ্রহণীয় হয় না। তোমরা তার পরিচয় জান কি? তারা বললো এটা কিরূপে? তিনি বলেন, এটা ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি একটা নির্ধারিত সময়ের জন্য ধার দেয় কিন্তু সাক্ষীও রাখে না আবার তা লিখেও রাখে না। অতঃপর নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে তাগাদা শুরু করে এবং ঋণী ব্যক্তি তা অস্বীকার করে। তখন এই লোকটি মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করে কিন্তু তাঁর, প্রার্থনা গৃহীত হয় না। কেননা, সে মহান আল্লাহ্র নির্দেশের বিপরীত করেছে। সুতরাং সে তার অবাধ্য হয়েছে। আবূ সা‘ঈদ (রহঃ) , শা‘বী (রহঃ) , রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , ইবনু জুরাইজ (রহঃ) , ইবনু যায়দ (রহঃ) প্রমুখের উক্তি এই যে, এভাবে লিখে রাখার কাজটি প্রথমে অবশ্য করণীয় কাজ ছিলো। কিন্তু পরে তা রহিত হয়ে যায়।
পরে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْیُؤَدِّ الَّذِی اؤْتُمِنَ اَمَانَتَه ‘যদি তোমাদের একে অপরের প্রতি আস্থা থাকে তাহলে যার নিকট তার আমানত রাখা হবে তা যেন সে আদায় করে দেয়।’ (তাফসীর তাবারী ৬/৪৭, ৪৯, ৫০) এর দলীল হচ্ছে নিম্নের হাদীসটি। এই ঘটনাটি পূর্বযুগীয় উম্মাতের হলেও তাদের শারী‘আতই আমাদের শারী‘আত, যদি আমাদের শারী‘আত তা অস্বীকার না করে। যে ঘটনা আমরা এখন বর্ণনা করতে যাচ্ছি তাতে লিখা-পড়া না হওয়া এবং সাক্ষী ঠিক না রাখাকে আইন রচয়িতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্বীকার করেননি। মুসনাদ আহমাদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
أَنَّ رَجُلًا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ سَأَلَ بَعْضَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يُسْلفه أَلْفَ دِينَارٍ، فَقَالَ: ائْتِنِي بِشُهَدَاءَ أُشْهِدُهُمْ. قَالَ: كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا. قَالَ: ائْتِنِي بِكَفِيلٍ. قَالَ: كَفَى بِاللَّهِ كَفِيلًا. قَالَ: صَدَقْتَ. فَدَفَعَهَا إِلَيْهِ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى، فَخَرَجَ فِي الْبَحْرِ فَقَضَى حَاجَتَهُ، ثُمَّ الْتَمَسَ مَرْكَبًا يَقَدَمُ عَلَيْهِ لِلْأَجَلِ الَّذِي أجله، فلم يجد مركبا، فأخذ خشبة فنقرها فَأَدْخَلَ فِيهَا أَلْفَ دِينَارٍ وَصَحِيفَةً مَعَهَا إِلَى صَاحِبِهَا، ثُمَّ زَجج مَوْضِعَهَا، ثُمَّ أَتَى بِهَا الْبَحْرَ، ثُمَّ قَالَ: اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ قَدْ عَلِمْتَ أَنِّي اسْتَسْلَفْتُ فُلَانًا أَلْفَ دِينَارٍ، فَسَأَلَنِي كَفِيلًا فَقُلْتُ: كَفَى بِاللَّهِ كَفِيلًا. فَرَضِيَ بِذَلِكَ، وَسَأَلَنِي شَهِيدًا، فَقُلْتُ: كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا. فَرَضِيَ بِذَلِكَ، وَإِنِّي قَدْ جَهِدْتُ أَنْ أَجِدَ مَرْكَبًا أَبْعَثُ بِهَا إِلَيْهِ بِالَّذِي أَعْطَانِي فَلَمْ أَجِدْ مَرْكَبًا، وَإِنِّي اسْتَوْدعْتُكَها. فَرَمَى بِهَا فِي الْبَحْرِ حَتَّى وَلَجَتْ فِيهِ، ثُمَّ انْصَرَفَ، وَهُوَ فِي ذَلِكَ يَطْلُبُ مَرْكَبًا إِلَى بَلَدِهِ، فَخَرَجَ الرَّجُلُ الَّذِي كَانَ أَسْلَفَهُ يَنْظُرُ لَعَلَّ مَرْكَبًا تَجِيئُهُ بِمَالِهِ، فَإِذَا بِالْخَشَبَةِ الَّتِي فِيهَا الْمَالُ، فَأَخَذَهَا لِأَهْلِهِ حَطَبًا فَلَمَّا كَسَرَهَا وَجَدَ الْمَالَ وَالصَّحِيفَةَ، ثُمَّ قَدِمَ الرَّجُلُ الَّذِي كَانَ تَسَلف مِنْهُ، فَأَتَاهُ بِأَلْفِ دِينَارٍ وَقَالَ: وَاللَّهِ مَا زِلْتُ جَاهِدًا فِي طَلَبِ مَرْكَبٍ لِآتِيَكَ بِمَالِكَ فَمَا وَجَدْتُ مَرْكَبًا قَبْلَ الَّذِي أَتَيْتُ فِيهِ. قَالَ: هَلْ كُنْتَ بَعَثْتَ إِلَيَّ بِشَيْءٍ؟ قَالَ: أَلَمْ أُخْبِرْكَ أَنِّي لَمْ أَجِدْ مَرْكَبًا قَبْلَ هَذَا الَّذِي جِئْتُ فِيهِ؟ قَالَ: فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ أَدَّى عَنْكَ الَّذِي بَعَثْتَ بِهِ فِي الْخَشَبَةِ، فَانْصَرِفْ بِأَلْفِكَ رَاشِدًا.
‘বানী ইসরাঈলের এক লোক অন্য এক লোকের কাছে এক হাজার দীনার অর্থাৎ স্বর্ণ মুদ্রা ধার চায়। সে বলেঃ ‘সাক্ষী আনো।’ সে উত্তরে বললোঃ ‘মহান আল্লাহ্র জামানতই যথেষ্ট।’ তখন ঋণদাতা লোকটিকে বলেঃ ‘তুমি সত্যি বলছো।’ অতঃপর ঋণ আদায়ের সময় নির্ধারিত হয় এবং সে তাকে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা গুণে দেয়। এরপর ঋণ গৃহিতা লোকটি সামুদ্রিক ভ্রমণে বের হয় এবং নিজের কাজ হতে অবকাশ লাভ করে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে সে সমুদ্রের তীরে আগমন করে। তার ইচ্ছা এই যে, কোন জাহাজ এলে তাতে উঠে বাড়ী চলে আসবে এবং ঐ লোকটির ঋণ পরিশোধ করে দিবে। কিন্তু সে কোন জাহাজ পেলো না। যখন সে দেখলো যে, সে সময় মতো পৌঁছাতে পারবে না। তখন সে একখানা কাঠ নিয়ে খোদাই করলো এবং তাতে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা রেখে দিলো এবং এক টুকরো কাগজও রাখলো। এরপর এর মুখ বন্ধ করে দিলো এবং মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করলো, হে প্রভু! আপনি খুব ভালো জানেন যে, আমি অমুক ব্যক্তির নিকট এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা ধার করেছি। সে আমার নিকট জামানত চাইলে আমি আপনাকেই জামিন দেই এবং তাতে সে সন্তুষ্ট হয়ে যায়। সে সাক্ষী উপস্থিত করতে বললে আমি আপনাকেই সাক্ষী রাখি। সে তাতেও সন্তুষ্ট হয়ে যায়। এখন সময় শেষ হতে চলেছে, আমি সদা নৌযান অনুসন্ধান করতে থাকছি যে, নৌযানে চড়ে বাড়ী গিয়ে কর্য পরিশোধ করবো। কিন্তু কোন নৌযান পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমি সেই পরিমাণ মুদ্রা আপনাকেই সমর্পণ করছি এবং সমুদ্রে নিক্ষেপ করছি ও প্রার্থনা করছি যেন আপনি এই মুদ্রা তার নিকট পৌঁছে দেন।’ অতঃপর সে ঐ কাঠটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করে এবং নিজ অবস্থান স্থলে চলে আসে কিন্তু তবুও সে নৌযানের খোঁজে রতই থাকে যাতে নৌযান পেলে সে চলে যাবে। এখানে তো এই অবস্থার উদ্ভব হলো। আর ওখানে যে ব্যক্তি তাকে ঋণ দিয়েছিলো সে যখন দেখলো যে, ঋণ পরিশোধের সময় হয়ে গেছে এবং আজ তার যাওয়া উচিত। অতএব সেও সমুদ্রের তীরে গেলো যে, হয়তো ঐ ঋণগ্রহীতা ফিরে আসবে এবং তার ঋণ পরিশোধ করবে কিংবা কারো হাতে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু যখন সন্ধা হয়ে গেলো এবং সে এলো না তখন সে ফিরে আসার মনস্থ করলো। সমুদ্রের ধারে একটি কাঠ দেখে মনে পড়লো, বাড়ী তো খালি হাতেই যাচ্ছি, কাঠটি নিয়ে যাই। একে ফেরে শুকিয়ে জ্বালানি কাঠরূপে ব্যবহার করা যাবে। বাড়ী পৌঁছে কাঠটিকে ফারা মাত্রই ঝনঝন করে বেজে উঠে স্বর্ণ মুদ্রা বেরিয়ে আসে। গণনা করে দেখে যে, পুরো এক হাজারই রয়েছে। তার কাগজ খণ্ডের ওপর দৃষ্টি পরে। ওটা উঠিয়ে পড়ে নেয় অতঃপর একদিন ঐ লোকটি এসে এক হাজার দীনার পেশ করে বলে, ‘আপনার প্রাপ্য মুদ্রা গ্রহণ করুন এবং আমাকে ক্ষমা করুন। আমি অঙ্গীকার ভঙ্গ না করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু নৌযান না পাওয়ার কারণে বিলম্ব করতে বাধ্য হয়েছি। আজ নৌযান পাওয়ায় মুদ্রা নিয়ে আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছি।’ তখন ঐ ঋণদাতা লোকটি বলে’ আপনি আমার প্রাপ্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কি? সে বলে, ‘আমি তো বলেই দিয়েছি যে, আমি নৌকা পাইনি।’ সে বলে, ‘আপনি আপনার অর্থ নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে যান। আপনি মহান আল্লাহ্র ওপর নির্ভর করে কাঠের মধ্যে ভরে যে মুদ্রা নদীদে ফেলে দিয়েছিলেন তা মহান আল্লাহ্ আমার নিকট পৌঁছে দিয়েছেন এবং আমি আমার পূর্ণপ্রাপ্য পেয়েছি।’ এই হাদীসের সনদ সম্পূর্ণ সঠিক। সহীহুল বুখারীতে সাত জায়গায় এই হাদীসটি এসেছে। (সহীহুল বুখারী৩/৪২৪, হাঃ১৪৯৮, ৪/৩৫০/২০৬৩, ৪/৫৪৮/২২৯১, ৫/৮১/২৪০৪, ৫/১০২/২৪৩০, ৫/৪১৬/২৭৩৪, ১১/৫০/৬২৬১)
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَلْیَكْتُبْ بَّیْنَكُمْ كَاتِبٌۢ بِالْعَدْلِ﴾ ‘লেখক যেন ন্যায় ও সত্যের সাথে লিখে।’ লেখার ব্যাপারে যেন কোন দলের ওপর অত্যাচার না করে। এদিক ওদিক কিছু কম বেশি না করে। বরং আদান প্রদানকারী একমত হয়ে যা তাকে লিখতে বলবে ঠিক তাই যেন সে লিখে দেয়। যেমন তার প্রতি মহান আল্লাহ্র অনুগ্রহ রয়েছে যে, তিনি তাকে লিখা-পড়া শিখিয়েছেন, তেমনই যারা লিখা-পড়া জানে না তাদের প্রতি সেও যেন অনুগ্রহ প্রদর্শন করে। তাদের আদান প্রদান ঠিকভাবে লিখে দেয়। হাদীসে রয়েছেঃ إِنَّ مِنَ الصَّدَقَةِ أَنْ تُعِيْنَ صَانِعًا أَوْ تَصْنَعَ لأخْرَق.
‘কোন কার্যরত ব্যক্তিকে সাহায্য করা এবং কোন অক্ষম ব্যক্তির কাজ করে দেয়াও সাদাকাহ।’ (সহীহুল বুখারী-৫/১৭৬/২৫১৮, ফাতহুল বারী -৫/১৭৬, সহীহ মুসলিম-১/১৩৬/৮৯, মুসনাদ আহমাদ -৫/১৫০) অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ مَنْ كَتَمَ عِلْمًا يَعْلَمه ألْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ.
‘যে বিদ্যা জেনে তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পড়ানো হবে।’ (তাফসীর তাবারী -৫/১১)
মুজাহিদ (রহঃ) এবং ‘আতা (রহঃ) বলেনঃ ‘এই আয়াতের অনুসারে লিখে দেয়া লেখকের ওপর ওয়াজিব।’ লিখিয়ে নেয়ার দায়িত্ব যার ওপর রয়েছে সে যেন হক ও সত্যের সাথে লিখিয়ে নেয় এবং মহান আল্লাহ্কে ভয় করে যেন বেশি-কম না করে এবং বিশ্বাস ঘাতকতা না করে। যদি এই লোকটি অবুঝ হয়, দুর্বল হয়, নাবালক হয়, জ্ঞান ঠিক না থাকে কিংবা নির্বুদ্ধিতার কারণে লিখিয়ে নিতে অসমর্থ্য হয় তাহলে তার অভিভাবক ও জ্ঞানী ব্যক্তি লিখিয়ে নিবে।
চুক্তি লিখার সময় সাক্ষীর উপস্থিত থাকতে হবে
অতঃপর বলা হচ্ছেঃ ﴿وَاسْتَشْهِدُوْا شَهِیْدَیْنِ مِنْ رِّجَالِكُمْ﴾ চুক্তি লিখার সাথে সাথে সাক্ষ্যও হতে হবে, যেন এই আদান-প্রদানের ব্যাপারটি খুবই শক্ত ও পরিস্কার হয়ে যায়। ‘তোমরা দু’জন পুরুষ লোককে সাক্ষী করবে। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿ فَاِنْ لَّمْ یَكُوْنَا رَجُلَیْنِ فَرَجُلٌ وَّ امْرَاَتٰنِ ﴾ ‘যদি দু’জন পুরুষ পাওয়া না যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রী হলেও চলবে।’ এই নির্দেশ ধন-সম্পদের ব্যাপারে এবং সম্পদের উদ্দেশ্যে রয়েছে। স্ত্রী লোকের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই দু’জন স্ত্রীলোককে একজন পুরুষের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। যেমন সহীহ মুসলিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ، تَصَدَّقْنَ وَأَكْثِرْنَ الِاسْتِغْفَارَ، فَإِنِّي رأيتكُن أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ جَزْلة: وَمَا لَنَا -يَا رَسُوْلَ اللهِ-أَكْثَرُ أَهْلِ النَّارِ؟ قَالَ: تُكْثرْنَ اللَّعْنَ، وتكفُرْنَ الْعَشِيرَ، مَا رأيتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُب مِنْكُنَّ". قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا نُقْصَانُ الْعَقْلِ وَالدِّينِ؟ قَالَ: أَمَّا نُقْصَانُ عَقْلِهَا فَشَهَادَةُ امْرَأَتَيْنِ تَعْدل شَهَادَةَ رَجُلٍ، فَهَذَا نُقْصَانُ الْعَقْلِ، وَتَمْكُثُ اللَّيَالِي لَا تُصَلِّي، وَتُفْطِرُ فِي رَمَضَانَ، فَهَذَا نُقْصَانُ الدين.
‘হে মহিলারা! তোমরা দান-খায়রাত করো এবং খুব বেশি মহান আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি জাহান্নামে তোমাদেরই সংখ্যা বেশি দেখেছি।’ এক মহিলা বললো, ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এর কারণ কি?’ তিনি বললেনঃ ‘তোমরা খুব বেশি অভিশাপ দিয়ে থাকো এবং তোমাদের স্বামীদের অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। তোমাদের জ্ঞান ও দ্বীনের স্বল্পতা সত্ত্বেও পুরুষদের জ্ঞানহরণকারিণী তোমাদের অপেক্ষা বেশি আর কেউ নেই।’ সে পুনরায় জিজ্ঞেস করে, ‘দীন ও জ্ঞানের স্বল্পতা কিরূপে?’ তিনি উত্তরে বলেনঃ‘জ্ঞানের স্বল্পতা তো এর দ্বারাই প্রকাশিত হয়েছে যে, দু’জন স্ত্রী লোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষ লোকের সাক্ষ্যের সমান; আর দ্বীনের স্বল্পতা এই যে, তোমাদের মাসিক অবস্থায় তোমরা সালাত আদায় করো না ও সিয়াম কাযা করে থাকো।’ (সহীহ মুসলিম-১/৮৭/৮০, ১/১৩২/৮৬) সাক্ষীদের সম্বন্ধে বলা হয়েছেঃ
﴿ مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَآءِ اَنْ تَضِلَّ اِحْدٰىهُمَا فَتُذَكِّرَ اِحْدٰىهُمَا الْاُخْرٰى ﴾ তাদের ন্যায়পরায়ণ হওয়া শর্ত। যারা ন্যায় পরায়ণ নয় তাদের সাক্ষ্য যারা প্রত্যাখ্যান করেছেন, এই আয়াতটিই তাদের দলীল। তারা বলেন যে, সাক্ষীগণকে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। দু’জন স্ত্রীলোক নির্ধারণ করারও দূরদর্শিতা বর্ণনা করা হয়েছে যে, যদি একজন ভুলে যায় তাহলে অপরজন তাকে স্মরণ করিয়ে দিবে। ফাতুযাক্কিরা শব্দটি অন্য পঠনে ‘ফাতুযাক্কিরু’ রয়েছে। যারা বলেন যে, একজন মহিলার সাক্ষ্য যদি অন্য মহিলার সাক্ষ্যের সাথে মিলে যায় তখন তা পুরুষ লোকের সাক্ষ্যের মতই হয়ে যায়, এটা তাদের মনগড়া কথা। প্রথম উক্তিটিই সঠিক।
অতঃপর বলা হচ্ছে, ‘সাক্ষীদের ডাকা হলে তারা যেন অস্বীকার না করে’ অর্থাৎ যখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা এসো ও সাক্ষী প্রদান করো, তখন তারা যেন অস্বীকৃত জ্ঞাপন না করে। যেমন লেখকদের ব্যাপারেও এটাই বলা হয়েছে। এখান থেকে এই উপকারও লাভ করা যাচ্ছে যে, সাক্ষী থাকা ফরযে কিফায়া। ‘জামহুরের মাযহাব এটাই’ এ কথাও বলা হয়েছে। (তাফসীর তাবারী ৬/৬৮)
এই অর্থও বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন সাক্ষীদেরকে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ডাকা হবে অর্থাৎ যখন তাদেরকে ঘটনা জিজ্ঞেস করা হবে তখন যেন তারা সাক্ষ্য দেয়ার কাজ হতে বিরত না থাকে। আবূ মুজাল্লায (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন যে, যখন সাক্ষী হওয়ার জন্য কাউকে ডাকা হবে তখন তার সাক্ষী হওয়ার বা না হওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সাক্ষী হয়ে যাওয়ার পর সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আহ্বান করা হলে অবশ্যই যেতে হবে। (তাফসীর তাবারী -৬/৭১, তাফসীর ইবনু আবী হাতিম-৩/১১৮১) সহীহ মুসলিম ও সুনানের হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘উত্তম সাক্ষী তারাই যারা সাক্ষ্য না চাইতেই সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাক্ষ্য দেয়।’ (সহীহ মুসলিম-৩/১৯/১৩৪৪, সুনান আবূ দাউদ-৩৫৯৬, জামি‘তিরমিযী -৪/৪৭২/২২৯৫, মুসনাদ আহমাদ -৫/১৯৩, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক-১/৩/ পৃষ্ঠা-৭২০, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৭৯২/২৩৬৪) সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে, ‘জঘন্যতম সাক্ষী তারাই যাদের নিকট সাক্ষ্য না চাইতেই মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়।’ অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ ‘এমন লোক আসবে যাদের শপথ সাক্ষ্যের ওপর ও সাক্ষ্য শপথের ওপর আগে আগে থাকবে। (সহীহুল বুখারী- ৭/৫/৩৬৫১, সহীহ মুসলিম-৪/২১০/১৯৬১, জামি‘তিরমিযী -৫/৩৮৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ- ২/৭৯১/২৩৬২, মুসনাদ আহমাদ -১/৪১৭, ৪৩৪) এতে জানা যাচ্ছে যে, এসব নিন্দাসূচক কথা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীর সম্বন্ধেই বলা হয়েছে এবং ওপরের ঐ প্রশংসামূলক কথা সত্য সাক্ষ্য প্রদানকারী সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এভাবেই এই পরস্পর বিরোধী হাদীসগুলোর মধ্যে অনুরূপ তা দান করা হবে। এই হাদীসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ মনীষী বলেন, ‘সাক্ষ্য দিতে ও সাক্ষী হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা উচিত নয়।
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَلَا تَسْـَٔمُوْۤا اَنْ تَكْتُبُوْهُ صَغِیْرًا اَوْ كَبِیْرًا اِلٰۤى اَجَلِه﴾ বিষয় বড়ই হোক আর ছোটই হোক, সময়ের মেয়াদ ইত্যাদি লিখে নাও। আমার এই নির্দেশ ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী এবং সাক্ষ্যের সঠিকতা সাব্যস্তকারী।’ কেননা নিজের লিখা দেখে বিস্মৃত কথাও স্মরণ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে লিখা না থাকলে ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয়ে থাকে। লিখা থাকলে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না। কেননা মতানৈক্যের সময় লিখা দেখে নিঃসন্দেহে মীমাংসা করা যেতে পারে।
এরপর বলা হচ্ছেঃ
تَكْتُبُوْهَا اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِیْرُوْنَهَا بَیْنَكُمْ فَلَیْسَ عَلَیْكُمْ جُنَاحٌ اَلَّا ‘যদি নগদ ক্রয়-বিক্রয় হয় তাহলে বিবাদের কোন সম্ভাবনা নেই বলে না লিখলেও কোন দোষ নেই।’ এখন রইলো সাক্ষ্য। এ ব্যাপারে সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহঃ) বলেন যে, ধার হোক আর নগদই হোক সর্বাবস্থায়ই সাক্ষী রাখতে হবে। অন্যান্য মনীষী থেকে বর্ণিত আছেঃ ﴿ فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْیُؤَدِّ الَّذِی اؤْتُمِنَ اَمَانَتَه﴾ এ কথা বলে মহান আল্লাহ্ সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশও উঠিয়ে নিয়েছেন। এটাও মনে রাখার বিষয় যে, জামহুরের মতে এই নির্দেশ ওয়াজিবের জন্য নয়, বরং এর মধ্যে মঙ্গল নিহিত আছে বলে মুস্তাহাব হিসাবে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর দলীল হচ্ছে নিম্নের হাদীসটি যা খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত আল আনসারী (রহঃ) থেকে ইমাম আহমাদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। ‘উমারাহ ইবনু খুযায়মাহ্ আল আনসারী (রহঃ) বলেন, তার চাচা যিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একজন সাহাবী ছিলেন, তিনি বলেন যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বেদুঈনের সাথে একটি ঘোড়া কেনার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেদুঈনকে তাঁর পিছন পিছন বাড়ীতে চলে আসতে বলেন, যাতে তিনি তার ঘোড়ার মূল্য দিয়ে দিতে পারেন। বেদুঈনটি মূল্য নেয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর পিছনে পিছনে তাঁর বাড়ীর দিকে আসে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব দ্রুত চলছিলেন এবং বেদুঈনটি ধীরে ধীরে চলছিলো। ঘোড়াটি যে বিক্রি হয়ে গেছে এ সংবাদ জনগণ জানতো না বলে তারা ঐ ঘোড়ার দাম করতে থাকে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ঘোড়াটি যে দামে বিক্রি করেছিলো তার চেয়ে বেশি দাম উঠে যায়। বেদুঈন নিয়ত পরিবর্তন করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ডাক দিয়ে বলেঃ ‘জনাব, আপনি হয় ঘোড়াটি ক্রয় করুন, না হয় আমি অন্যের হাতে বিক্রি করে দেই।’ এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেমে যান এবং বলেনঃ ‘তুমি তো ঘোড়াটি আমার কাছে বিক্রি করেই ফেলেছো; সুতরাং এখন আবার কি বলছো?’ বেদুঈনটি তখন বলেঃ ‘মহান আল্লাহ্র শপথ! আমি বিক্রি করিনি।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমার ও আমার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে গেছে।’ এখন এদিক ওদিক থেকে লোক এ কথা ও কথা বলতে থাকে। ঐ নির্বোধ তখন বলে, আমি আপনার নিকট বিক্রি করেছি তার সাক্ষী নিয়ে আসুন। মুসলিমগণ তাকে বার বার বলে, ওরে হতভাগা! তিনি তো মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , তাঁর মুখ দিয়ে তো সত্য কথাই বের হবে। কিন্তু তাঁর ঐ একই কথা, সাক্ষ্য নিয়ে আসুন। এ সময় খুযায়মাহ্ (রাঃ) এসে পড়ে এবং বেদুঈনের কথা শুনে বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে ঘোড়াটি বিক্রি করেছো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তুমি কি করে সাক্ষ্য দিচ্ছো? তিনি বলেনঃ আপনার সত্যবাদিতার ওপর ভিত্তি করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘আজ খুযায়মাহ্ (রাঃ) -এর সাক্ষ্য দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের সমান। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -৫/২১৫, ২১৬, সুনান আবু দাঊদ-৩/৩০৮/৩৬০৭, সুনান নাসাঈ -৭/৩৪৭/৪৬৬১) সুতরাং এ হাদীস দ্বারা ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদানের বাধ্য বাধ্যকতা প্রমাণিত হয় না। কিন্তু মঙ্গল এর মধ্যেই রয়েছে যে, ব্যবসা বাণিজ্যেরও সাক্ষী রাখতে হবে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ثَلَاثَةٌ يَدْعُونَ اللهَ فَلَا يُسْتَجَابُ لَهُمْ: رَجُلٌ لَهُ امْرَأَةٌ سَيِّئَةُ الْخُلُقِ فَلَمْ يُطَلِّقْهَا، وَرَجُلٌ دَفَعَ مَالَ يَتِيمٍ قَبْلَ أَنْ يَبْلُغَ، وَرَجُلٌ أَقْرَضَ رَجُلًا مَالًا فَلَمْ يُشْهد.
‘তিন শ্রেণির লোক মহান আল্লাহ্কে ডাকবে কিন্তু মহান আল্লাহ্ তাদের ডাকে সাড়া দিবেন না। ১. ঐ পুরুষ লোক যার স্ত্রী খারাপ হওয়া সত্ত্বেও তালাক দেয় না। ২. ঐ লোক যে ইয়াতীমরা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই সম্পদ তাদের নিকট হস্তান্তর করে। ৩. ঐ লোক যে কোন ব্যক্তিকে উত্তম ঋণ প্রদান করে কিন্তু তাতে কোন সাক্ষী রাখে না। (হাদীসটি সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম-২/৩০২, সিলসিলাতুস সহীহাহ-১৮০৫)
এরপর বলা হচ্ছেঃ ﴿وَلَا یُضَآرَّ كَاتِبٌ وَّلَا شَهِیْدٌ﴾যা লিখিয়ে নিচ্ছে লেখক যেন তার বিপরীত কথা না লিখে।’ অনুরূপভাবে সাক্ষীরও উচিত যে, সে যেন মূল ঘটনার উল্টা সাক্ষ্য না দেয় অথবা সাক্ষ্য প্রদানে কার্পণ্য না করে। হাসান বাসরী (রহঃ) এবং কাতাদাহ (রহঃ) প্রমুখ মনীষীর এটাই উক্তি। (তাফসীর তাবারী -৬/৮৫, ৮৬)
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ ﴿وَ اِنْ تَفْعَلُوْا فَاِنَّه فُسُوْقٌۢ بِكُمْ﴾ আমি যা করতে নিষেধ করি তা করা এবং যা করতে বলি তা হতে বিরত থাকা চরম অন্যায়। এর শাস্তি তোমাদেরকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে। এরপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَاتَّقُوا اللّٰهَ وَیُعَلِّمُكُمُ اللّٰهُ﴾
তোমরা প্রতিটি কাজে মহান আল্লাহ্র কথা স্মরণ করে তাকে ভয় করে চলো, তাঁর আদেশ পালন করো এবং তাঁর নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকো।
যেমন মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَتَّقُوا اللّٰهَ یَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا ﴾
হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি মহান আল্লাহ্কে ভয় করো তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার একটি মান নির্ণায়ক শক্তি দান করবেন। (৮ নং সূরাহ্ আনফাল, আয়াত নং ২৯)
অন্য স্থানে রয়েছেঃ
﴿ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اٰمِنُوْا بِرَسُوْلِهٖ یُؤْتِكُمْ كِفْلَیْنِ مِنْ رَّحْمَتِهٖ وَ یَجْعَلْ لَّكُمْ نُوْرًا تَمْشُوْنَ بِهٖ﴾
হে মু’মিনগণ! মহান আল্লাহ্কে ভয় করো এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদেরকে দিবেন দ্বিগুণ পুরস্কার এবং তিনি তোমাদেরকে দিবেন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে। (৫৭ নং সূরাহ হাদীদ, আয়াত নং ২৮)
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَاللّٰهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ﴾
কার্যসমূহের পরিনাম এবং গুঢ় রহস্য সম্পর্কে, ঐগুলোর মঙ্গল ও দূরদর্শিতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছেন। কোন কিছুই তাঁর দৃষ্টির অন্তরালে নেই; তাঁর জ্ঞান সারা জগতকে ঘিরে রয়েছে এবং প্রত্যেক জিনিসেই প্রকৃত জ্ঞান তাঁর রয়েছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings