Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 197
Saheeh International
Hajj is [during] well-known months, so whoever has made Hajj obligatory upon himself therein [by entering the state of ihram], there is [to be for him] no sexual relations and no disobedience and no disputing during Hajj. And whatever good you do - Allah knows it. And take provisions, but indeed, the best provision is fear of Allah . And fear Me, O you of understanding.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
হাজ্জের জন্য কখন ইহরাম বাঁধতে হবে
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿اَلْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمٰتٌ ‘আরবী ভাষাবিদগণ বলেন যে, প্রথম বাক্যটির ভাবার্থ হচ্ছে যে, হাজ্জ হলো ঐ মাসগুলোর হাজ্জ যা সুবিদিত ও নির্দিষ্ট। সুতরাং হাজ্জের মাসগুলোতে ইহরাম বাঁধা ও অন্যান্য মাসে ইহরাম বাঁধা হতে বেশি পূর্ণতা প্রদানকারী। আর ইমাম মালিক (রহঃ) , আবূ হানীফা (রহঃ) , আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) প্রমুখের মতে সাড়া বছরই হাজ্জের জন্য ইহরাম বাধা জায়িয। তাদের পক্ষে দলীল হলো মহান আল্লাহ্র বাণীঃ
﴿یَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِ قُلْ هِیَ مَوَاقِیْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ﴾
‘লোকেরা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। বলো, তা মানুষের ও হাজ্জের জন্য সময় নির্ধারক।’ (২নং সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-১৮৯) অতএব ‘উমরার ন্যায় সাড়া বছরই হাজ্জের জন্য ইহরাম বাধাই বিশুদ্ধ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , জাবির (রাঃ) , ‘আতা (রহঃ) এবং মুজাহিদ (রহঃ) -এরও এটাই অভিমত যে, হাজ্জের ইহরাম হাজ্জের মাস ছাড় অন্যান্য মাসে বাঁধা সঠিক নয়। তাদের দলীল হচ্ছে ﴿اَلْحَجُّاَشْهُرٌمَّعْلُوْمٰتٌ﴾এই আয়াতটি। ‘আরবী ভাষাবিদগণের আরেকটি দলের মতে আয়াতটি এই শব্দগুলোর ভাবার্থ এই যে, হাজ্জের সময় হচ্ছে নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস। সুতরাং সাব্যস্ত হচ্ছে যে, এই মাসগুলোর পূর্বে হাজ্জের ইহরাম বাঁধা ঠিক হবে না, যেমন সালাতের সময়ের পূর্বে কেউ সালাত আদায় করলে সালাত ঠিক হয় না। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, ‘আমাকে মুসলিম ইবনু খালিদ (রহঃ) সংবাদ দিয়েছে, তিনি ইবনু খালিদ (রহঃ) সংবাদ দিয়েছেন, তিনি ইবনু যুরাইয (রহঃ) -এর নিকট হতে শুনেছেন, তাকে ‘উমার ইবনু ‘আতা (রহঃ) বলেছেন, তাঁর কাছে ইকরামাহ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন ‘কোন ব্যক্তির জন্য এটা উচিত নয় যে, সে হাজ্জের মাসগুলো ছাড়া অন্য মাসের হাজ্জের ইহরাম বাঁধে। কেননা মহান আল্লাহ্ বলেন ﴿اَلْحَجُّاَشْهُرٌمَّعْلُوْمٰتٌ﴾অর্থাৎ হাজ্জের মাসগুলো সুবিদিত।’ (সনদ য‘ঈফ। আল উম্ম ২/১৩২) এ বর্ণনাটির আরো বহু সনদ রয়েছে। একটি সনদে আছে যে, এটাই সুন্নাত। ইবনু খুযায়মাহ স্বীয় সহীহ গ্রন্থে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে তিনি বলেছেনঃ
مِنَ السُّنَّةِ أَنْ لَا يُحْرِمَ بِالْحَجِّ إِلَّا فِي أَشْهُرِهِ.
‘সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হলো হাজ্জের মাসগুলো ছাড়া অন্য মাসের হাজ্জের ইহরাম না বাঁধা। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-৩/৪৯০, মুসতাদরাক হাকিম-১/৪৪৮,সুনান বায়হাক্বী- ৪/৩৪৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্-৪/১৬২)
উসূলে’র গ্রন্থসমূহেও এ জিজ্ঞাস্য বিষয়টির এভাবে নিষ্পত্তির করা হয়েছে যে, এটা সাহাবীর উক্তি এবং তিনি সেই সাহাবী যিনি কুর’আনুল হাকীমের ব্যাখ্যাদাতা। সুতরাং এ উক্তি যেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এরই উক্তি। তাছাড় তাফসীর ইবনু মারদুওয়াইয়ে একটি মারফূ‘ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
‘হাজ্জের মাস ছাড়া অন্য মাসে হাজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধা কারো উচিত নয়।’ এর ইসনাদও উত্তম। কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) ও ইমাম বায়হাকী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) । তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, হাজ্জের মাসগুলোর পূর্বে হাজ্জের ইহরাম বাঁধা যেতে পারে কি? তিনি উত্তরে বলেন, ‘না’। (আল উম্ম ২/১৩২, বায়হাকী ৪/৩৪৩) এ বর্ণনাটি পূর্বের বর্ণনার চেয়ে অধিক সঠিক। সংক্ষিপ্ত সার হলো এই যে, এই বর্ণনা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একজন সাহাবীর এবং এর সমর্থন রয়েছে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর ঐ মন্তব্যের যে, তিনি বলেছেনঃ এটা হলো সুন্নাতেরই একটি অংশ যে, যিলহাজ্জ মাস শুরু হওয়ার আগেই হাজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরামের কাপড় পরিধান করা যাবে না। মহান আল্লাহ্ই সর্ব বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।
হাজ্জের মাসসমূহ
﴿اَشْهُرٌمَّعْلُوْمٰتٌ﴾-এর ভাবার্থে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘শাওয়াল, যিলকাদ এবং যিলহাজ্জ মাসের দশ দিন।’ (সহীহুল বুখারী-৩/৪৯০, ফাতহুল বারী ৩/৪৯০) এই বর্ণনাটি তাফসীর ইবনু জারীর এবং তাফসীর মুসতাদরাক হাকিমে রয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) , ‘আলী (রাঃ) , ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) , ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকেও এটা বর্ণিত আছে। ‘আতা (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) , ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) , শা‘বী (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , ইবনু সীরীন (রহঃ) , মাকহুল (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , যাহহাক ইবনু মাযাহিম (রহঃ) , বারী ‘ ইবনু আনাস (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনু হিব্বান (রহঃ) -ও এই কথাই বলেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৪৮৬-৪৮৮) ইবনু জারীর (রহঃ) -ও একেই প্রাধান্য দিয়ে বলেনঃ এটি একটি সাধারণ বিষয় যে, দুই মাস এবং তৃতীয় মাসের অংশকে মাসসমূহ বলা হয়ে থাকে। যেমন ‘আরবরা তাদের কথা বলার সময় বলে থাকে, আমি অমুক অমুক ব্যক্তির কাছে এ বছর কিংবা এ দিনেই গিয়েছি। অথচ সে শুধুমাত্র বছরের কোন এক মাসে অথবা দিনে যাতায়াত করেছিলো। কুর’আন মাজীদেও রয়েছে ﴿فَمَنْ تَعَجَّلَ فِیْ یَوْمَیْنِ﴾। অর্থাৎ যে (২নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ২০৩) দু’দিনের তাড়াতাড়ি করে।’ অথচ ঐ তাড়াতাড়ি দের দিনের হয়ে থাকে। কিন্তু বর্ণনায় দু’দিন বলা হয়েছে।’
ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, হাজ্জের মাসগুলোতে ‘উমরাহ্ করা ঠিক নয়। ইবনু জারীর (রহঃ) -ও বলেন যে, শাওয়াল, যিলক্বাদ ও যিলহাজ্জ মাস হাজ্জের জন্য নির্ধারিত বলে ধারণা পোষণকারীদের মতে এই মাসগুলোতে ‘উমরাহ করা যাবে না। যদিও হাজ্জের কার্যাবলী মীনার দিন অতিক্রান্ত হওয়া মাত্রই শেষ হয়ে যায়। যেমন মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন বলেছেন যে, এমন কোন বিদ্বান নেই যে, হাজ্জের মাসসমূহ ছাড়া অন্য মাসেই ‘উমরাহ পালন করা যে উত্তম এই মর্মে কারো সন্দেহ থাকতে পারে না।
হাজ্জের ইহরাম বাঁধলে তা পূর্ণ করা আবশ্যক
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ ‘فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ ‘যে ব্যক্তি এই মাসগুলোতে হাজ্জের সংকল্প করে’ অর্থাৎ হাজ্জের ইহরাম বাঁধে। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, হাজ্জের ইহরাম বাঁধা ও তা পুরা করা অবশ্য কর্তব্য। এখানে ‘ফারায’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সংকল্প করা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ ইহরাম বেঁধেছে। ‘আতা (রহঃ) বলেন যে, এখানে ‘ফারায’ এর ভাবার্থ হচ্ছে ইহরাম। ইবরাহীম (রহঃ) ও যাহহাকের (রহঃ) ও উক্তি এটাই। (তাফসীর তাবারী ৪/১২৩)
হাজ্জ পালন অবস্থায় স্ত্রী গমন করা নিষিদ্ধ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইহরাম বেঁধে ‘লাব্বাইক’ পাঠের পর কোন স্থানে থেমে যাওয়া উচিত নয়। অন্যান্য মনীষীদেরও এটাই উক্তি। কোন কোন মনীষী বলেন যে, ‘ফারায’ শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে লাব্বাইক পাঠ। رَفَثٌ শব্দের অর্থ হচ্ছে সহবাস। যেমন কুর’আনুল কারীমে অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ﴿اُحِلَّ لَكُمْ لَیْلَةَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰى نِسَآىِٕكُمْ﴾
‘রামাযানের রাতে আপন স্ত্রীদের সাথে মিলামিশা করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে।’ (২নং সূরাহ আল বাকারা, আয়াত- ১৮৭) ইহরাম অবস্থায় সহবাস এবং এর পূর্ববর্তী সমস্ত কাজই হারাম। যেমন প্রেমালাপ করা, চুমু দেয়া এবং স্ত্রীদের বিদ্যমানতায় এসব কথা আলোচনা করা। কেউ কেউ পুরুষদের মাজলিসেও এসব কথা আলোচনা করাকে رَفَثٌ-এর অন্তর্ভ্ক্তু করেছেন।
ইবনু জারীর (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেনঃ ‘রাফাস’ শব্দের অর্থ হলো সহবাস অথবা এ বিষয়ে কোন পুরুষ কিংবা মহিলার সাথে উচ্চারণ করা, বাক্যালাপ করা। (তাফসীর তাবারী ৪/১২৬) ‘আতা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) বলেন যে, ‘রাফাছ’ অর্থ হলো সহবাস অথবা অযথা বাক্যলাপ করা। (তাফসীর তাবারী ৪/১২৭) আমর ইবনু দিনার (রহঃ) -ও অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করেছেন। ‘আতা (রহঃ) বলেন যে, এর সাথে সাথে স্বীকার করার ব্যাপারেও আলোচনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। (তাফসীর তাবারী ৪/১২৮) তাউস (রহঃ) বলেন, যদি কেউ বলে যে, ‘ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে আমি তোমার সাথে সহবাস করবো, তাহলে তাও ‘রাফাছ’ এর অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীর তাবারী ৪/১২৮) আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) থেকেও একই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ‘আলী ইবনু আবী ত্বালহা (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ রাফাছ হলো স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা, তাকে চুমু দেয়া, তাকে আদর সোহাগ করা তার সাথে অশ্লীল কথাবার্তা বলা এবং এ ধরনের অন্যান্য কাজসমূহ। (তাফসীর তাবারী ৪/১২৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ‘রাফাছ’ শব্দের অর্থ হলো মহিলাদের সাথে সহবাস করা। (তাফসীর তাবারী ৪/১২৯) একই মত পোষণ করেছেন সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , ইকরিামহ (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) , আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) প্রমুখ জন। তারা এটা বর্ণনা করেছেন ‘আতা (রহঃ) , মাকহুল (রহঃ) , ‘আতা আল-খুরাসানী (রহঃ) ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) , আতিয়া (রহঃ) , ইবরাহীম (রহঃ) , রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) , যুহরী (রহঃ) , সুদ্দী (রহঃ) , মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) , মুকাতিল ইবনু হিব্বান (রহঃ) , আবদুল কারীম ইবনু মালিক (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , যাহহাক (রহঃ) এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে।
হাজ্জের সময় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকতে হবে
فُسُوْقٌ শব্দের অর্থ হচ্ছে অবাধ্য হওয়া, শিকার করা, গালি দেয়া ইত্যাদি। وَلَافُسُوْقَ-এর অর্থ হলো আর না পাপের কাজ। মিকসাম (রহঃ) এবং অন্যান্য বিদ্বানগণও ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এটা হলো অবাধ্যতা। একই মতামত ব্যক্ত করেছেন ‘আতা (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , তাউস (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) , যুহরী (রহঃ) , রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) , ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) , ‘আতা আল খুরাসানী (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনু হিব্বান (রহঃ) (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৪৯৭-৫০০)
ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন ‘ফুসুক হলো ঐ সমস্ত কাজ করা যা মহান আল্লাহ্ হারাম এলাকায় করতে নিষেধ করেছেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৪৯৭)
অন্যান্য অনেক ‘আলিম বলেছেন যে, ‘ফুসুক’ হলে কাউকে অভিশাপ করা। তারা নিম্নের হাদীসের ওপর ভিত্তি করে এ কথা বলেছেনঃ
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ.
কোন মুসলিমকে গালি দেয়া হলো ‘ফুসূক’ এবং হত্যা করা হলো কুফরী। (ফাতহুল বারী ১/১৩৫)
‘আবদুর রহমান ইবনু যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) বলেন যে, মহান আল্লাহ্ ছাড়া অন্য দেব-দেবীর নামে পশু যবেহ করাও হচ্ছে ‘ফুসূক’ যেমনটি মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿اَوْ فِسْقًا اُهِلَّ لِغَیْرِ اللّٰهِ بِهٖ﴾
‘অথবা ‘ফিসক’ যা মহান আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা হয়েছে।’ (৬নং সূরাহ্ আন‘আম. আয়াত নং ১৪৫)
খারাপ উপাধি দ্বারা ডাকাও ফিসক। যেমন আল কুর’আনে ঘোষিত হয়েছে ﴿وَلَاتَنَابَزُوْابِالْاَلْقَابِ﴾
এবং তোমরা একে অপরের মন্দ নামে ডেকো না। (৪৯নং সূরাহ্ হুজরাত, আয়াত নং ১১) সংক্ষিপ্ত কথা এই যে, মহান আল্লাহ্র প্রত্যেক অবাধ্যতাই ফিসকের অন্তর্ভুক্ত। এটা সর্বদাই অবৈধ বটে; কিন্তু সম্মানিত মাসগুলোতে এর অবৈধ্যতা আরো বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿مِنْهَاۤ اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ١ۙ۬ فَلَا تَظْلِمُوْا فِیْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ ﴾
‘তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটা হলো সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা। অতএব তোমরা এ মাসগুলোতে অর্থাৎ ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না।’ (৯নং সূরাহ্ তাওবাহ, আয়াত নং ৩৬)
অনুরূপভাবে হারামের মধ্যে এর অবৈধ্যতা বৃদ্ধি পায়। যেমন ইরশাদ হচ্ছেঃ
﴿وَ مَنْ یُّرِدْ فِیْهِ بِاِلْحَادٍۭ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِیْمٍ﴾
‘আর যে ইচ্ছা করে তাতে পাপ কাজের সীমালঙ্ঘন করে, তাকে আমি আস্বাদন করাবো মর্মদন্ত শাস্তি।’ (২২নং সূরাহ্ হাজ্জ, আয়াত নং ২৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ حَجَّ هَذَا الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ، خَرَجَ مِنْ ذُنُوبِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ.
যে ব্যক্তি এই বায়তুল্লার হাজ্জ করে সে যেন ‘রাফাস’ এবং ‘ফিসক’ না করে। তাহলে সে পাপ হতে এমনই মুক্ত হয়ে যাবে যে, যেমন তার জন্মের দিন ছিলো।’ (সহীহুল বুখারী-২/২৫/১৮১৯,১৮২০, সহীহ মুসলিম-২/৪৩৮/৯৮৩)
হাজ্জের সময় তর্ক-বিতর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে
এরপরে ইরশাদ হচ্ছেঃ وَلَاجِدَالَفِيالْحَجِّ ‘হাজ্জে কলহ নেই।’ এ সম্পর্কে দু’টি অভিমত বিদ্যমান। যথা-
১. হাজ্জের সময় এবং হাজ্জের আরকান ইত্যাদির মধ্যে তোমরা কলহ করো না। আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , জাবির ইবনু যায়দ (রহঃ) , ‘আতা আল খুরাসানী (রহঃ) , মাকহুল (রহঃ) , সুদ্দী (রহঃ) , মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) , ‘আমর ইবনু দিনার (রহঃ) , যাহহাক (রহঃ) , রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) , ইবরাহী নাখ‘ঈ (রহঃ) , ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) , হাসান (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , যুহরী (রহঃ) প্রমুখ থেকে ভাবার্থ এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমরা হাজ্জের সফরে পরস্পর ঝগড়া বিবাদ করো না, একে অপরকে রাগান্বিত করো না এবং কেউ কাউকে গালি দিয়ো না। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৫০৩-৫০৫)
২. جدال থেকে উদ্দেশ্য ঝগড়া-ফাসাদ করা। (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান আবূ দাউদ-২/১৬৩/১৮১৮, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৯৭৮/২৯৩৩, মুসনাদ আহমাদ -৬/৩৪৪, সুনান বায়হাক্বী-৫/৬৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ-৪/১৯৮/২৬৭৯, মুসতাদরাক হাকিম-১/৪৫৩, ৪৫৪, সিলসিলাতুয য‘ঈফাহ-২২৮১)
انْظُرُوا إِلَى هَذَا المُحْرِم مَا يَصْنَعُ ؟
তাফসীর মুসনাদ আবদ ইবনু হামীদে একটি হাদীস রয়েছে, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ قضَى نُسُكَه وسلِم الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
‘যে ব্যক্তি এরূপ অবস্থায় হাজ্জ পূর্ণ করলো যে, কোন মুসলিম তার হাতের দ্বারা এবং মুখের দ্বারা কষ্ট পেলো না, তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা হয়ে গেলো। (হাদীসটি য‘ঈফ। আল মুতালিবুল ‘আলিয়া লি ইবনু হাজার-১/৩২৪/১০৮৭, আল কামিল-২/৪৪)
হাজ্জের সময় মহান আল্লাহ্র যিক্রে মশগুল থাকতে হবেএবং হাজ্জের পাথেয় থাকতে হবে
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَ مَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَیْرٍ یَّعْلَمْهُ اللّٰهُ﴾ ‘তোমরা যে কোন সৎ কাজ করো না কেন মহান আল্লাহ্ অবগত আছেন।’ ওপরে যেহেতু অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বাঁধা দেয়া হয়েছে, কাজেই এখানে সাওয়াবের কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে এবং বলা হয়েছে যে, তাদেরকে কিয়ামতের দিন প্রতিটি সৎ কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَتَزَوَّدُوْافَاِنَّخَیْرَالزَّادِالتَّقْوٰى﴾
তোমরা হাজ্জের সফরে নিজেদের সাথে পাথেয় নিয়ে নাও। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, জনগণ পাথেয় ছাড়াই হাজ্জের সফরে বেরিয়ে পড়তো। পরে তারা মানুষের কাছে চেয়ে বেড়াতো। এই জন্যই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ ‘আর তোমরা তোমাদের সাথে পাথেয় নিয়ে নাও।’ ইকরামাহ (রহঃ) এবং উয়াইনা (রহঃ) -ও এ কথাই বলেছেন। সহীহুল বুখারী, সুনান নাসাঈ প্রভৃতিতেও এই বর্ণনাগুলো রয়েছে। একটি বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, ইয়ামানবাসীরা এরূপ করতো এবং বলতো, ‘আমরা মহান আল্লাহ্র ওপর নির্ভরশীল।’ (সহীহুল বুখারী- ৩/৪৪৯/১৫২৩, ফাতহুল বারী ৩/৪৪৯, সুনান আবূ দাঊদ-২/১৪১/১৭৩০, সহীহ ইবনু হিব্বান-৪/১৬৪/২৬৮০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে এও বর্ণিত। যখন তারা ইহরাম বাঁধতো তখন তাদের কাছ যে পাথেয় থাকতো তা তারা ফেলে দিতো এবং পুনরায় নতুনভাবে পাথেয় গ্রহণ করতো। এ জন্যই তাদের ওপর এই নির্দেশ দেয়া হয় যে, তারা যেন এরূপ না করে এবং আটা, ছাতু ইত্যাদি খাদ্য যেন পাথেয় হিসেবে সাথে নেয়। (তাফসীর তাবারী ৪/১৫৬) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তো এ কথাও বলেছেন যে, সফরে উত্তম পাথেয় রাখার মধ্যেই মানুষের মর্যাদা নিহিত রয়েছে। সাথীদের প্রতি মন খুলে খরচ করাও তিনি শর্ত আরোপ করতেন।
পরকালে পাথেয়
ইহলৌকিক পাথেয় এর বর্ণনার সাথে মহান আল্লাহ্ পারলৌকিক পাথেয় এর প্রস্তুতি গ্রহণের প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অর্থাৎ বান্দা যেন তার কবর রূপ সফরে মহান আল্লাহ্র ভয়কে পাথেয় হিসেবে সাথে নিয়ে যায়। যেমন অন্য স্থানে পোশাকের বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿ورِیْشًا وَ لِبَاسُ التَّقْوٰى١ۙ ذٰلِكَ خَیْرٌ﴾
‘আর শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক। (৭নং সূরাহ্ আ‘রাফ, আয়াত নং ২৬) অর্থাৎ বান্দা যেন বিনয়, নম্রতা, আনুগত্য এবং আল্লাহ্ভীরুতার গোপনীয় পোশাক হতে শূন্য না থাকে। এমনকি এই গোপনীয় পোশাক বাহ্যিক পোশাক হতে বহু গুণে শ্রেয়।
বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ يَتَزَوَّدْ فِي الدُّنْيَا يَنْفَعه فِي الْآخِرَةِ.
‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার পাথেয় গ্রহণ করে তা আখিরাতে তার উপকারে আসবে।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। আল মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ-১০/৩১১, তাবারানী, সিলসিলাতুয য‘ঈফাহ-৪৬৬৬)
মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান বলেন যে, যখন وتزودا এর আয়াতটি অবতীর্ণ হলো তখন এ নির্দেশ শুনে একজন দরিদ্র্র সাহাবী (রাঃ) বলেন, ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমার নিকট তো কিছুই নেই।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
تَزَوَّدْ مَا تَكُفُّ بِهِ وَجْهَكَ عَنِ النَّاسِ، وَخَيْرُ مَا تَزَوَّدْتُمُ التَّقْوَى.
‘এতোটুকু তো রয়েছে, তোমাকে কারো কাছে ভিক্ষা করতে হয় না ও উত্তম পাথেয় মহান আল্লাহ্র ভয়।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীর ইবনু আবী হাতিম )
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَ اتَّقُوْنِ یٰۤاُولِی الْاَلْبَابِ﴾ হে জ্ঞানবানগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। অর্থাৎ আমার শাস্তি ও পাকড়াওকে ভয় করো এবং তোমরা আমার নির্দেশকে অমান্য করো না। তাহলেই মুক্তি পেয়ে যাবে এবং এটাই হবে জ্ঞানের পরিচায়ক।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings