Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 196
Saheeh International
And complete the Hajj and 'umrah for Allah . But if you are prevented, then [offer] what can be obtained with ease of sacrificial animals. And do not shave your heads until the sacrificial animal has reached its place of slaughter. And whoever among you is ill or has an ailment of the head [making shaving necessary must offer] a ransom of fasting [three days] or charity or sacrifice. And when you are secure, then whoever performs 'umrah [during the Hajj months] followed by Hajj [offers] what can be obtained with ease of sacrificial animals. And whoever cannot find [or afford such an animal] - then a fast of three days during Hajj and of seven when you have returned [home]. Those are ten complete [days]. This is for those whose family is not in the area of al-Masjid al-Haram. And fear Allah and know that Allah is severe in penalty.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
‘উমরাহ্ ও হাজ্জ করার নির্দেশ
সিয়ামের বর্ণনা করার পর মহান আল্লাহ্ তার ওপর ‘আতফ করে জিহাদের বর্ণনা দিয়েছেন। অতঃপর এখান থেকে হাজ্জের বর্ণনা দিচ্ছেন। অতএব মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ‘তোমরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্কে পূর্ণ করো।’ বাহ্যিক শব্দ দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ শুরু করার পর সেগুলো পূর্ণ করা উচিত। সমস্ত ‘আলিম এ বিষয়ে একমত যে, হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ আরম্ভ করার পর সেগুলো পূর্ণ করা অবশ্য কর্তব্য। ‘আলী (রাঃ) বলেন ‘পূর্ণ করার অর্থ এই যে, তোমরা নিজ নিজ বাড়ী হতে ইহরাম বাধবে।’ সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) বলেন যে, এগুলো পূর্ণ করার অর্থ এই যে, তোমরা নিজ নিজ বাড়ী হতে ‘উমরাহ্ কিংবা হাজ্জ করার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাধবে এবং মহান আল্লাহ্র ঘরের ‘উমরাহ্ বা হাজ্জ সম্পাদন করবে। (তাফসীর তাবারী ৪/৭) উত্তম হলো, তোমাদের এই সফর হবে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উদ্দেশ্যে। ‘মীকাতে’ (যেখান থেকে ইহরাম বাধতে হয়, সেই জায়গাকে মীকাত বলা হয়) পৌঁছে উচ্চস্বরে ‘লাব্বায়িক’ পাঠ আরম্ভ করবে। তোমাদের অভিপ্রায় ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোন ইহলৌকিক কাজ সাধনের জন্য হবে না। তোমরা হয়তো বেরিয়েছো নিজের কাজে। মাক্কার নিকটবর্তী হয়ে তোমাদের খেয়াল হলো যে, এবার আমরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ পালন করে নেই। এভাবেও হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ আদায় করা হয়ে যাবে, কিন্তু পূর্ণ হবে না। পূর্ণ করা এই যে, শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে বাড়ী হতে বের হবে।’ মাকহূল (রহঃ) বলেন যে, এগুলো পূর্ণ করার অর্থ হচ্ছে এগুলো মীকাত হতে আরম্ভ করা।
‘আবদুর রাযযাক বর্ণনা করেন, জুহরী (রহঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেছেনঃ এগুলো পূর্ণ করার অর্থ হচ্ছে এ দু’টি কার্য পৃথক পৃথকভাবে আদায় করা এবং ‘উমরাহ্কে হাজ্জের মাসে আদায় না করা। কেননা কুর’আন মাজীদে রয়েছেঃ ﴿اَلْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمٰتٌ﴾
‘হাজ্জের মাসগুলো নির্দিষ্ট।’ (২নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ১৯৭)
কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন যে, হাজ্জের মাস গুলোতে ‘উমরাহ্ পালন করা পূর্ণ হওয়া নয়। তিনি জিজ্ঞাসিত হোন যে, মুহাররম মাসে ‘উমরাহ্ করা কিরূপ ? তিনি উত্তরে বলেনঃ মানুষ একেতো পূর্ণই বলতেন। কিন্তু এই উক্তিটি সমালোচনা যোগ্য। কেননা এটা প্রমাণিত বিষয় যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি ‘উমরাহ্ করেন এবং চারটিই করেন যুলক্বাদা মাসে। প্রথমটি হচ্ছে ‘উমরাতুল হুদায়বিয়াহ হিজরী ৬ষ্ঠ সনের যুলক্বাদা মাসে। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -২/১৩৯/৬২৪২) দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘উমরাতুল কাযা হিজরী সপ্তম সনের যুলক্বাদা মাসে। তৃতীয়টি হচ্ছে ‘উমরাতুল জা‘আরানা হিজরী অষ্টম সনের যুলক্বাদা মাসে এবং চতুর্থটি হচ্ছে ঐ ‘উমরাহ্ যা তিনি হিজরী দশম সনে বিদায় হাজ্জের সাথে যুলক্বাদা মাসে আদায় করেন। এই চারটি ‘উমরাহ্ ছাড়া হিজরতের পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর কোন ‘উমরাহ্ পালন করেন নি। হ্যাঁ, তবে তিনি উম্মু হানী (রাঃ) -কে বলছিলেনঃ
عُمْرة فِي رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً مَعِي.
রামাযান মাসে ‘উমরাহ্ করা আমার সাথে হাজ্জ করার সমান পুণ্য। (সহীহুল বুখারী-৩/৭০৬/১৭৮২, ৪/৮৬/১৮৬৩, সহীহ মুসলিম-২/২২২, ২২১/৯১৭, সুনান নাসাঈ -৪/৪৩৬/২১০৯, সুনান দারিমী-২/৭৩/১৮৫৯, মুসনাদ আহমাদ -১/২২৬/২০২৫, ১/৩০৮/২৮০৯, সহীহ ইবনু হিব্বান-৬/৫/৩৬৯২, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৯৯৬/২৯৯৪,) একথা তিনি তাঁকে এজন্যই বলেছিলেনঃ যে, তাঁর সাথে হাজ্জে যাওয়ার তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যানবাহনের অভাবে তাকে সাথে নিতে পারেন নি। যেমন সহীহুল বুখারীতে এই ঘটনাটি পূর্ণভাবে নকল করা হয়েছেঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) তো পরিস্কার ভাবে বলেন যে, এটা উম্মু হানী (রাঃ) -এর জন্য বিশিষ্ট ছিলো।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ ইহরাম বাঁধার পর এ দু’টো পূর্ণ না করেই ছেড়ে দেয়া জায়িয নয়। হাজ্জ ঐ সময় পূর্ণ হয় কুরবানীর দিন অর্থাৎ দশই যিলহাজ্জে যখন জামারা-ই-‘উকবাকে পাথর মারা হয়, বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ করা হয় এবং সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের মধ্যস্থলে দৌড়ানো হয়। এখন হাজ্জ পূর্ণ হয়ে গেলো।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ ইহরাম বাধার পর দু’টি পূর্ণ না করেই ছেড়ে দেয়া জায়িয নয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, হাজ্জ ‘আরাফার নাম এবং ‘উমরাহ্ হচ্ছে তাওয়াফের নাম। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর কিরা’আত হচ্ছে নিম্নরূপঃ
وَأَتِمُّواالْحَجَّوَالْعُمْرَةَإِلَىالْبَيْتِ তোমরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্কে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পূর্ণ করো। সুতরাং বায়তুল্লাহ পর্যন্ত গেলেই ‘উমরাহ্ পূর্ণ হয়ে যায়। সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) এর নিকট এটি আলোচিত হলে তিনি বলেনঃ ‘ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর কিরা’আতও এটাই ছিলো।’ শা‘বী (রহঃ) -এর পঠনে ওয়াল উমরাতু রয়েছে। তিনি বলেন যে, ‘উমরাহ্ ওয়াজিব নয়। তবে তিনি এর বিপরীতও বর্ণনা করেছেন। বহু হাদীসে কয়েকটি সনদসহ আনাস (রাঃ) প্রভৃতি সাহাবীদের একটি দল হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ এ দু’টোকেই একত্রিত করেছেন। (সহীহুল বুখারী-৩/৪৯৩/১৫৬৩, সহীহ মুসলিম-২/১৮৪-১৮৬/৯০৪, ৯০৫, সুনান আবূ দাউদ-৩/১৫৭/১৭৯৫, ৩/১৬০, সুনান নাসাঈ -৫/১৬১/২৭২০-২৭২৯, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৯৮৯,৯৯০, মুসনাদ আহমাদ -৩/১১১, ১৮৭, ২৬৬, ২৮২) বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে বলেছেনঃ
مَنْ كَانَ مَعَهُ هَدْي فَلْيُهِلَّ بِحَجٍّ وَعُمْرَةٍ
যার নিকট কুরবানীর জন্তু রয়েছে সে যেন হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ একই সাথে ইহরাম বাঁধে। (সহীহুল বুখারী- ৩/৪৮৫/১৫৫৬, ৩/৫৭৭/১৬৩৮, সহীহ মুসলিম-২/৮৭০/১১১) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যেঃ دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
‘কিয়ামত পর্যন্ত ‘উমরাহ্ হাজ্বের মধ্যে প্রবেশ করেছে।’ (সহীহ মুসলিম-২/২০৩/৯১১, সুনান আবূ দাউদ-২/১৫৬/১৭৯০, সুনান দারিমী-২/৭২/১৮৫৬, সুনান নাসাঈ -৫/১৯৯/২৮১৪, মুসনাদ আহমাদ -১/২৩৬, ৩৪১)
আবূ মুহাম্মাদ ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) স্বীয় কিতাবের মধ্যে একটি বর্ণনা এনেছেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আগমন করে। তার নিকট হতে যাফরানের সুগন্ধি আসছিলো। সে জুব্বা পরিহিত ছিলো। সে জিজ্ঞেস করে হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমার ইহরামের ব্যাপারে নির্দেশ কি? তখন وَاَتِمُّواالْحَجَّوَالْعُمْرَةَلِلّٰهِ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেনঃ
أَيْنَ السَّائِلُ عَنِ العُمْرة؟ " فَقَالَ: هَا أَنَا ذَا. فَقَالَ لَهُ: "أَلْقِ عَنْكَ ثِيَابَكَ، ثُمَّ اغْتَسِلْ، وَاسْتَنْشِقْ مَا اسْتَطَعْتَ، ثُمَّ مَا كُنْتَ صَانِعًا فِي حَجّك فَاصْنَعْهُ فِي عُمْرَتِكَ
‘প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলে, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি উপস্থিত আছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, যাফরানযুক্ত কাপড় খুলে ফেলো এবং শরীরকে খুব ভালো করে ঘর্ষণ করে গোসল করে এসো। অতঃপর ‘উমরাহ্ জন্য তাই করো যা তুমি তোমার হাজ্জের জন্য করে থাকো। (সহীহুল বুখারী-৩/৭১৮/১৭৮৯, সহীহ মুসলিম-২/৮৩৬/৬) এই হাদীসটি গরীব। কোন কোন বর্ণনায় গোসল করার এবং এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার উল্লেখ নেই। একটি বর্ণনায় তার নাম ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়াহ (রাঃ) এসেছে। অন্য বর্ণনায় সাফওয়ান ইবনু উমাইয়াহ (রাঃ) রয়েছে। মহান আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
কেউ পথে বাধাপ্রাপ্ত হলে সেখানেই পশু কুরবানী করবে,মাথা মুণ্ডন করবে এবং ইহরাম ত্যাগ করবে
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿فَاِنْ اُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَیْسَرَ مِنَ الْهَدْیِ ﴾যদি তোমরা পথে বাধাপ্রাপ্ত হও এবং হাজ্জ বা ‘উমরাহ্ করতে অসমর্থ হও। মুফাস্সিরগণ বর্ণনা করেছেন যে, এ আয়াতটি হিজরী ষষ্ঠ সনে হুদায়বিয়ার প্রান্তরে অবতীর্ণ হয়, যখন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাক্কাহ যেতে বাধা দিয়েছিলো এবং ঐ সম্বন্ধেই পূর্ণ একটি সূরাহ্ আল ফাতাহ অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণ (রাঃ) অনুমতি লাভ করেন যে, তাঁরা যেন সেখানেই তাঁদের কুরবানীর জন্তুগুলো যবেহ করেন। ফলে সত্তরটি উট যবেহ করা হয়, মাথা মুণ্ডন করা হয় এবং ইহরাম ত্যাগ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নির্দেশ শুনে সাহাবীগণ প্রথমে কিছুটা সংকোচবোধ করেন। তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন যে, সম্ভবতঃ এই নিদের্শক রহিতকারী কোন নির্দেশ অবতীর্ণ হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং বাইরে এসে মাথা মুণ্ডন করেন, তাঁর দেখাদেখি সবাই এ কাজে অগ্রসর হোন। কিছু লোক মাথা মুণ্ডন করেন এবং কিছু লোক চুল ছেঁটে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
رَحِماللَّهُالمُحَلِّقين". قَالُوا: وَالْمُقَصِّرِينَيَارَسُولَاللَّهِ؟فَقَالَفِيالثَّالِثَةِ: "وَالْمُقَصِّرِينَ.
‘মাথা মুণ্ডনকারীর ওপর মহান আল্লাহ্ করুণা বর্ষণ করুন। জনগণ বললেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! যাঁরা চুল ছেঁটেছেন তাঁদের জন্যও প্রার্থনা করুন।’ তিনি পুনরায় মুণ্ডনকারীদের জন্য প্রার্থনা করেন। তৃতীয়বার চুল ছোটকারীদের জন্যও তিনি প্রার্থনা করেন। (সহীহুল বুখারী- ৩/১৫৬/১৭২৭, সহীহ মুসলিম ২/৯৪৫, ৯৪৬/৩১৭, ৩১৮) এক একটি উষ্ট্রিতে সাতজন করে লোক অংশীদার ছিলেন। সাহাবীগণের মোট সংখ্যা ছিলো চৌদ্দশ।’ তাঁরা হুদায়বিয়া প্রান্তরে অবস্থান করছিলেন যা ‘হারাম’ সীমা বহির্ভূত ছিলো। তবে এটাও বর্ণিত। এটা ‘হারাম’ সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত ছিলো।
‘আলিমগণের মধ্যে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে, যারা শত্রুকর্তৃক বাধা প্রাপ্ত হবে শুধু তাদের জন্যই কি এই নির্দেশ, নাকি যারা রোগের কারণে বাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের জন্যও এই অনুমতি রয়েছে যে, তারা ঐ জায়গায়ই ইহরাম ত্যাগ করবে, মাথা মুণ্ডন করবে এবং কুরবানী করবে? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর মতে তো শুধুমাত্র প্রথম প্রকারের লোকদের জন্যই এই অনুমতি রয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) , তাউস (রহঃ) , যুহরী (রহঃ) এবং যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) -ও এ কথাই বলেছেন। দ্বিতীয় উক্তির পক্ষে যারা, তাদের দলীল হলো ‘যদি তোমরা পথে বাধাপ্রাপ্ত হও’ এ আয়াতাংশটি ব্যাপক। কাজেই শত্রুকর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হোক আর অসুস্থজনিত কারণে বাধাপ্রাপ্ত হোক সর্বাবস্থায় একই হুকম। কিন্তু একটি মারফূ‘ হাদীসে রয়েছে যে, হাজ্জাজ ইবনু ‘আমর আল আনসারী (রাঃ) বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ
منكُسِرأَوْعَرِجفَقَدْحَلَّ،وَعَلَيْهِحَجَّةٌأُخْرَى.
‘যে ব্যক্তির হাত-পা ভেঙ্গে গেছে কিংবা রুগ্ন হয়ে পড়েছে অথবা খোঁড়া হয়ে গেছে সে হালাল হয়ে গেছে। সে পরে হাজ্জ করে নিবে। (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ- ২/১৭৩/১৮৬২, ১৮৬৩, জামি‘ তিরমিযী-৩/২৭৭/৯৪০, সুনান নাসাঈ -৫/২১৮/২৮৬০,সুনান ইবনু মাজাহ-২/১০২৮/৩০৭৭, ৩০৭৮, মুসনাদ আহমাদ ৩/৪৫০)
হাদীসের বর্ণনাকারী বলেনঃ ‘আমি এটা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) -এর নিকটও বর্ণনা করেছি। তাঁরাও বলেছেন, ‘এটা সত্য।’ সুনান-ই আরবা‘আতেও এ হাদীসটি রয়েছে। (আবূ দাঊদ ২/৪৩৪, তিরমিযী ৪/৮, নাসাঈ ৫/১৯৮, ইবনু মাজাহ ২/১০২৮) ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) ইবনু যুবাইর (রহঃ) , আলকামা (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) , ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) থেকেও এটাই বর্ণিত। রুগ্ন হয়ে পড়া এবং খোড়া হয়ে যাওয়াও এ রকমই ওযর। সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) প্রত্যেক বিপদ ও কষ্টকেই এ রকম্ই ওযর বলে থাকেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪৪৪-৪৪৫)
একটি হাদীসে রয়েছে যে, যুবাইর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর কন্যা, যুবাআহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেন, ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমার হাজ্জ করার ইচ্ছা হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ থাকি।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
حُجِّي وَاشْتَرِطِي أَنَّ مَحِلِّي حَيْثُ حَبَسْتَنِي
‘হাজ্জে চলে যাও এবং শর্ত করো যে, তোমার ইহরাম সমাপনের এটাই স্থান হবে যেখানে তুমি রোগের কারণে থেকে যেতে বাধ্য হবে। (সহীহুল বুখারী- ৯/৩৪/৫০৮৯, ফাতহুল বারী ৯/৩৪, সহীহ মুসলিম ২/১০৪, ১০৫/৮৬৭, ৮৬৮) এই হাদীসের ওপর ভিত্তি করেই কোন কোন ‘আলিম বলেন যে, হাজ্জে শর্ত করা জায়িয। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, যদি এই হাদীসটি সঠিক হয় তবে আমারও উক্তি তাই। ইমাম বায়হাকী (রহঃ) ও হাফিযদের মধ্যে অন্যান্যগণ বলেন যে, এই হাদীসটি সম্পূর্ণ রূপে সঠিক। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্র জন্যই।
কুরবানীর পশুর বিবরণ
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ فمااستيسرمنالهدي ‘যা সহজ প্রাপ্য হয় তাই কুরবানী করবে।’ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, উষ্ট্র-উষ্ট্রী, বলদ-গাভী, ছাগ-ছাগী এবং ভেড়া- ভেড়ী এই আট প্রকারের মধ্যে থেকে ইচ্ছে মতো যবেহ করবে। ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) হতে শুধু ছাগীও বর্ণিত আছে এবং আরো বহু মুফাসইসরও এরূপই বলেছেন। ইমাম চতুষ্টয়েরও এটাই অভিমত। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং ইবন ‘উমার (রাঃ) প্রভৃতি মনীষীগণ বলেন যে, এর ভাবার্থ শুধুমাত্র উষ্ট্র ও গাভী। খুব সম্ভব তাদের দলীল হুদায়বিয়ার ঘটনাই হবে। সেখানে কোন সাহাবী হতে ছাগ-ছাগী যবেহ করা বর্ণিত হয়নি। তাঁরা একমাত্র গরু ও উটই কুরবানী দিয়েছিলেন।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ
أَمَرَنَا رسولُ اللَّهِ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِي بَقَرَةٍ.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, আমরা সাত জন করে মানুষ এক একটি গরু ও উটে শরীক হয়ে যাবো। (সহীহ মুসলিম-২/১৩৮/৮৮২, ২/৩৫০-৩৫২/৯৫৫, সুনান আবূ দাউদ-৩/৯৮/২৮০৭, মুসনাদ আহমাদ -৩/২৯২, ২৯৩)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যার যে পশু যবেহ করার ক্ষমতা রয়েছে সে তাই যবেহ করবে। যদি ধনী হয় তাহলে উট, যদি এর চেয়ে কম ক্ষমতাবান হয় তাহলে গরু, এর চেয়েও কম ক্ষমতা রাখলে ছাগল যবেহ করবে। (তাফসীর তাবারী ৪/৩০) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) -ও তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, কুরবানীর পশু যবেহ করা নির্ভর করে ক্রয়-ক্ষমতার ওপর। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম, ১/৪৫২)
জ্ঞানের সমুদ্র কুর’আনুল হাকীমের ব্যাখ্যাদাতা এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিতৃব্য পুত্র ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘যা সহজ প্রাপ্য হয় তাই কুরবানী করবে; তা উট, গরু, ছাগল, ভেড়া যা-ই হোক না কেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার কয়েকটি ভেড়া কুরবানী দিয়েছিলেন। (ফাতহুল বারী ৩/৬৩৯, সহীহ মুসলিম ২/৯৫৮)
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ حَتّٰى یَبْلُغَ الْهَدْیُ مَحِلَّه ‘যে পর্যন্ত কুরবানীর জন্তু তার স্বস্থানে না পৌঁছে’ সে পর্যন্ত তোমরা তোমাদের মাথা মুণ্ডন করো না। এর সংযোগ ﴿وَاَتِمُّواالْحَجَّ﴾এর সাথে রয়েছে ﴿فَاِنْاُحْصِرْتُمْ﴾-এর সাথে নয়। ইবনু জারির (রহঃ) -এর এখানে ত্রুটি হয়ে গেছে। কারণ এই যে, হুদায়বিয়ায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এবং তাঁর সহচরবৃন্দকে যখন মাসজিদুল হারামে যেতে বাধা প্রদান করা হয় তখন তাঁরা সবাই হারামের বাইরেই মাথা মুণ্ডন এবং কুরবানীও করেন। কিন্তু শান্তি ও নিরাপত্তার সময় এটা জায়িয নয়, যে পর্যন্ত না কুরবানীর প্রাণী যবেহর স্থানে পৌঁছে যায় এবং হাজীগণ তাঁদের হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ যাবতীয় কাজ হতে অবকাশ লাভ করেন, যদি তাঁরা একই সাথে ‘উমরাহ্ ও হাজ্জ উভয়টির জন্য ইহরাম বেঁধে থাকেন। বর্ণিত আছে যে, হাফসাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সবাই তো ইহরাম ত্যাগ করেছে; কিন্তু আপনি যে ইহরাম অবস্থায়ই রয়েছেন? ‘ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেনঃ
إِنِّي لَبَّدْتُ رَأْسِي وقلَّدت هَدْيي، فَلَا أَحِلُّ حَتَّى أَنْحَرَ
‘হ্যাঁ, আমি আমার মাথাকে আঠাযুক্ত করেছি এবং আমার কুরবানীর পশুর গলদেশে চিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছি। সুতরাং যে পর্যন্ত এটা যবেহ করার স্থানে পৌঁছে যায় সেই পর্যন্ত আমি ইহরাম ত্যাগ করবোনা।’ (সহীহুল বুখারী-৩/৬৩৯/১৭০১, ফাতহুল বারী ৩/৪৯৩, সহীহ মুসলিম-২/৯০২/১৭২)
ইহরাম অবস্থায় মাথামুণ্ডন করলে ‘ফিদইয়া’ দিতে হবে
এরপর নির্দেশ হচ্ছে যে, রুগ্ন ও মাথার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ‘ফিদইয়া’ দিবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা‘কিল (রহঃ) বলেনঃ ‘আমি কুফার মাসজিদে কা‘ব ইবনু ‘আজরা (রাঃ) -এর পাশে বসে ছিলাম। তাঁকে আমি এই আয়াতটি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেনঃ এই আয়াতটি আমারই সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয় এবং নির্দেশ হিসেবে এ রকম প্রত্যেক ওযরযুক্ত লোকের জন্যই প্রযোজ্য। ‘আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই সময় আমার মুখের উকুন বয়ে চলছিলো। আমাকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘তোমার অবস্থা যে এতোদূর পর্যন্ত পৌঁছবে আমি তা ধারণাই করিনি। তুমি কি একটি ছাগী যবেহ করারও ক্ষমতা রাখো না?’ আমি বললামঃ আমি তো দরিদ্র লোক। তিনি বললেনঃ ‘যাও মাথা মুণ্ডন করো এবং তিনটি সাওম পালন করো অথবা ছয়জন মিসকীনকে অর্ধ সা‘ অর্থাৎ প্রায় দেড় কেজি করে খাদ্য দিয়ে দাও।’ (সহীহুল বুখারী-৪/১৬/১৮১৪, ৮/৩৪/৪৫১৭। ফাতহুল বারী ৮/৩৪, মুসনাদ আহমাদ -৪/২৪১, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক-১/২৩৮/৪১৭)
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, কা‘ব ইবনু আজরা (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি হাঁড়ির নীচে জাল দিচ্ছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আগমন করেন। সে সময় আমার মুখের ওপর দিয়ে উকুন বয়ে চলছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার মাথার উকুন কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, তিনি বলেনঃ তোমার মাথার চুল কেটে ফেলো এবং তিনদিন সাওম পালন করো অথবা ছয়জন গরীবকে খাদ্য প্রদান করো অথবা একটি পশু কুরবানী করো। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আইউব (রহঃ) মন্তব্য করেন, আমি মনে করতে পারছিলাম যে, কোন বিষয়টি আগে বলা হয়েছে। (মুসনাদ আহমাদ ৪/২৪১) তাফসীর ইবনু মিরদুওয়াই এর বর্ণনায় রয়েছে, ‘ অতঃপর আমি মাথা মুণ্ডন করি এবং একটি ছাগী কুরবানী দেই।’
অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন نسك অর্থাৎ কুরবানী হচ্ছে একটি ছাগী। আর সাওম পালন করলে তিন দিন এবং সাদাকাহ করলে এক ফারাক (তিন সা‘ বা সাড়ে সাত সের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পরিমাণ বা পরিমাপ যন্ত্র) মিসকীনদের মধ্যে বন্টন করা। ‘আলী (রাঃ) , মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব (রহঃ) , আলকামা (রহঃ) , ইবরাহীম (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , ‘আত্বা (রহঃ) , সুদ্দী (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) -এরও ফাতাওয়া এটাই।
তাফসীর ইবনু আবি হাতিমের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা‘ব ইবনু ‘আজরা (রহঃ) কে তিনটি মাস’আলা জানিয়ে দিয়ে বলেছিলেনঃ এ তিনটির মধ্যে যে কোন একটিকে গ্রহণ করার অধিকার থাকে। মুজাহিদ (রহঃ) , ‘ইকরামাহ (রহঃ) আত্বা (রহঃ) , ত্বাউস (রহঃ) হাসান বাসরী (রহঃ) , হামিদ আ‘রাজ (রহঃ) , ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) এবং যাহহাক (রহঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম চতুষ্টয় এবং অধিকাংশ ‘আলিমেরও অভিমত এটাই যে, ইচ্ছে করলে এক ফারাক অথাৎ তিন সা‘ বা সাড়ে সাত সের খাদ্য ছ' জন মিসকীনের মধ্যে বন্টন করতে হবে এবং কুরবানী করলে একটি ছাগী কুরবানী করতে হবে। এই তিনটির মধ্যে যেটি ইচ্ছে হয় পালন করতে হবে।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ্ এখানে যেহেতু অবকাশ দিতেই চান, এজন্যই কুর’আনে সর্বপ্রথম সিয়ামের বর্ণনা দিয়েছে, যা সর্বাপেক্ষা সহজ। অতঃপর সাদাকাহর কথা বলেছিলেন এবং সর্বশেষে কুরবানীর বর্ণনা দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যেহেতু সর্বোত্তমের ওপর ‘আমল করার ইচ্ছা, তাই তিনি সর্বপ্রথম ছাগল কুরবানীর বর্ণনা দিয়েছেন, অতঃপর ছয়জন মিসকীনকে খাওয়ানোর কথা বলেছেন এবং সর্বশেষে তিনটি সাওমের উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শৃঙ্খলা হিসেবে দু’টিরই অবস্থান অতি চমৎকার। সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) এই আয়াতের ভাবার্থ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ তার ওপর খাদ্যের নির্দেশ দেয়া হবে। যদি তার কাছে তা বিদ্যমান থাকে তবে তা একটি ছাগল ক্রয় করবে। নচেৎ রৌপ্য মুদ্রা দ্বারা ছাগলের মূল্য নির্ণয় করবে এবং তা দিয়ে খাদ্য ক্রয় করবে, অতঃপর তা সাদাকাহ করে দিবে। নতুবা অর্ধ সা‘র পরিবর্তে একটা সাওম রাখবে। হাসান বাসরী (রহঃ) -এর মতে যখন মুহরিমের মস্তকে কোন রোগ হয় তখন সে মস্তক মুণ্ডন করবে এবং নিম্নলিখিত তিনটির মধ্যে যে কোন একটি দ্বারা ফিদইয়াহ আদায় করবেঃ (১) সাওম দশদিন অথবা (২) দশজন মিসকীনকে আহার করান, প্রত্যেক মিসকীনকে এক মাকুক খেজুর ও এক মাকুক' গম দিতে হবে। (৩) একটি ছাগল কুরবানী করা। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী -৩/৭২,৭৩/৩৩৭৪) ইকরামাহ (রহঃ) ও দশ মিসকীনকে খানা খাওয়ানোর কথাই বলেন। কিন্তু এই উক্তিটি সঠিক নয়।
কেননা মারফূ‘ হাদীসে এসেছে যে, সাওম তিনটি, ছ’জন মিসকীনকে খানা খাওয়ানোর ও একটি ছাগল কুরবানী করা। এই তিনটির যে কোন একটি গ্রহণ করার ব্যাপারে স্বাধীনতা রয়েছে। বলা হচ্ছে যে, ছাগল কুরবানী করবে বা তিনটি সাওম রাখবে অথবা ছ’জন মিসকীনকে আহার করাবে। হ্যাঁ এই শৃঙ্খলার বিষয়টি রয়েছে ইহরামের অবস্থায় শিকারকারীর জন্যও যেমন কুর’আনুল কারীমের শব্দ রয়েছে এবং ধর্মশাস্ত্রবিদগণের ইজমা‘ও রয়েছে। কিন্তু এখানে শৃঙ্খলার প্রয়োজন নেই। বরং ইচ্ছাধীন রাখা হয়েছে। ত্বা‘উস (রহঃ) বলেন যে, এই কুরবানী ও সাদাকাহ মাক্কাতেই করতে হবে। তবে সাওম যেখানে ইচ্ছা সেখানই করতে পারে। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে ইবনু জা‘ফর (রহঃ) -এর গোলাম আবূ আসমা (রহঃ) বলেনঃ ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) হাজ্জে বের হোন। তাঁর সাথে ‘আলী (রাঃ) এবং হুসাইন (রাঃ) ছিলেন। আমি ইবন জা‘ফরের সাথে ছিলাম। আমরা দেখি যে, একটি লোক ঘুমিয়ে রয়েছেন এবং তার উষ্ট্রী তার শিয়রে বাঁধা রয়েছে। আমি তাকে জাগিয়ে দেখি যে, তিনি হুসাইন ইবনু ‘আলী (রাঃ) । ইবনু জা‘ফর (রহঃ) তাকে উঠিয়ে নেন। অবশেষে আমরা সাজিয়া নামক স্থানে পৌঁছি। তথায় আমরা বিশ দিন পর্যন্ত তার সেবায় নিয়োজিত থাকি। একবার ‘আলী (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ অবস্থা কেমন? হুসাইন (রাঃ) তার মস্তকের প্রতি ইঙ্গিত করেন। ‘আলী (রাঃ) তাঁকে মস্তক মুণ্ডনের নির্দেশ দেন। অতঃপর উট যবেহ করেন। তাহলে যদি তার এই উট কুরবানী করা ইহরাম হতে হালাল হওয়ার জন্য হয়ে থাকে তবে তো ভালো কথা। আর যদি এটা ফিদইয়ার জন্য হয়ে থাকে তবে এটা পষ্ট কথা যে এই কুরবানী মাক্কার বাইরে করা হয়েছিলো।
তামাত্তু হাজ্জ
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿فَاِذَاۤ اَمِنْتُمْ فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَیْسَرَ مِنَ الْهَدْیِ﴾
যে ব্যক্তি হাজ্জে তামাত্তু করতে চায় সে কুরবানী করবে তা সে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ ইহরাম এক সাথে বাধুক অথবা প্রথমে ‘উমরাহ্ ইহরাম বেধে এর কার্যাবলী শেষ করে হালাল হওয়ার পর পুনরায় হাজ্জের ইহরাম বাঁধুক। শেষেরটাই ‘প্রকৃত তামাত্তু’ এবং ধর্মশাস্ত্রবিদগণের উক্তিতে এটাই প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। তবে সাধারণ ‘তামাত্তু’ বলতে দু’টিকেই বুঝায়। সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কোন কোন বর্ণনাকারী তো বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও হাজ্জে তামাত্তু করেছিলেন। অন্যান্যগণ বলেন যে, তিনি হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ ইহরাম একসাথে বেধেছিলেন। তাঁরা সবাই বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে কুরবানীর জন্তু ছিলো। সুতরাং আয়াতটিতে এ নির্দেশ রয়েছে যে, হাজ্জে তামাত্তুকারী যে কুরবানীর ওপর সক্ষম হবে তাই করবে। এর সর্বনিম্ন পর্যায় হচ্ছে একটি ছাগল কুরবানী করা। গরুও কুরবানী করতে পারে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় স্ত্রীগণের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছিলেন। (সহীহুল বুখারী-১/৪৭৭/২৯৪, সহীহ মুসলিম-২/১১৯/৮৭৩) আওজা‘ঈ (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সহধর্মিণীগণের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছিলেন, তাঁরা সবাই হাজ্জে তামাত্তু করেছিলেন।’ (সুনান নাসাঈ - ২/৪৫২/৪১২৮, সুনান আবূ দাঊদ ২/৩৬২) আবূ বাকর ইবনু মারদুওয়াই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অতএব এর দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, তামাত্তু ব্যবস্থা শারী‘আতে রয়েছে। ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেন, ‘কুর’আন মাজীদে তামাত্তু আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছে এবং আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে হাজ্জে তামাত্তু করেছি। অতঃপর কুর’আনুল হাকীমে এর নিষেধাজ্ঞা সম্বোন্ধিত কোন আয়াত অবতীর্ণ হয়নি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ও এটা হতে বাধা দান করেননি। জনগণ নিজেদের মতানুসারে এটাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।’ (সহীহুল বুখারী-৮/৩৪/৪৫১৮, সহীহ মুসলিম-২/১৭৩/৯০০, ফাতহুল বারী ৮/৩৪, সহীহ মুসলিম ২/৯০০) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন যে, এর দ্বারা ‘উমার (রাঃ) -কে বুঝানো হয়েছে। মুহাদ্দিসগণের মতে ইমাম বুখারী (রহঃ) -এর এই কথা সম্পূর্ণরূপেই সঠিক। ‘উমার (রাঃ) থেকে নকল করা হয়েছে যে, তিনি জনগণকে এটা হতে বাধা দিতেন এবং বলতেন, ‘আমরা যদি মহান আল্লাহ্র কিতাবকে গ্রহণ করি তাহলে এর মধ্যে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্কে পুরা করার নির্দেশ বিদ্যমান রয়েছে। যেমন বলা হয়েছেঃ
﴿فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَیْسَرَ مِنَ الْهَدْیِ﴾
তোমরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্কে মহান আল্লাহ্র জন্য পুরা করো। (২নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ১৯৬) তবে এটা মনে রাখা দরকার যে, ‘উমার (রাঃ) -এর এই বাধা প্রদান হারাম হিসেবে ছিলো না। বরং এ জন্যই ছিলো যে, মানুষ যেন খুব বেশি করে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উদ্দেশে বায়তুল্লার যিয়ারত করে।
তামাত্তু হাজ্জ পালনকারীর সাথে কুরবানীর পশু নাথাকলে ১০দিন সাওম পালন করবে
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿فَمَنْ لَّمْ یَجِدْ فَصِیَامُ ثَلٰثَةِ اَیَّامٍ فِی الْحَجِّ وَ سَبْعَةٍ اِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ﴾
‘যে ব্যক্তির কাছে কুরবানীর পশু থাকবে না সে হাজ্জের মধ্যে তিনটি সাওম পালন করবে এবং হাজ্জ সমাপ্ত করে প্রত্যাবর্তনের পর আরো সাতটি সাওম পালন করবে। সুতরাং পূর্ণ দশটি সাওম হয়ে যাবে।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি কুরবানী করতে সক্ষম হবে না, সে সাওম পালন করবে। তিনটি সাওম হাজ্জের দিনগুলোতে পালন করবে। ‘আলিমগণের মতে এই সাওমগুলো ‘আরাফার দিনের অর্থাৎ ৯ যিলহাজ্জ তারিখের পূর্ববর্তী দিনগুলোতে রাখাই উত্তম। ‘আতা (রহঃ) -এর উক্তি এটাই। কিংবা ইহরাম বাঁধা মাত্রই সাওম পালন করবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ মনীষীর উক্তি এটাই।
যদি কোন ব্যক্তির এই তিনটি সাওম বা দু’একটি সাওম ছুটে এবং ‘আইয়্যামে তাশরীক’ অর্থাৎ ‘ঈদুল আযহার পরবর্তী তিনদিন এসে পড়ে যায় তাহলে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর উক্তি এই যে, এই ব্যক্তি ঐ দিনগুলোতেও সাওম পালন করতে পারে। (তাফসীর তাবারী ৪/৯৫, সহীহুল বুখারী-৪/২৮৪/১৯৯৭, ১৯৯৮) ‘আলী (রাঃ) থেকেও এটা বর্ণিত আছে। ইকরামাহ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) এবং ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। তাদের দলীল এই যে, اَلْحَجُّ শব্দটি সাধারণ। সুতরাং এই দিনগুলো এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ
أَيَّامُ التَّشْرِيقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ وَذِكْرِ اللهِ.
‘আইয়্যামে তাশরীফ’ হচ্ছে খাওয়া, পান করা ও মহান আল্লাহ্র যিকর করার দিন। (সহীহ মুসলিম ২/৮০০)
অতঃপর সাতটি সাওম পালন করতে হবে হাজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর। (মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ১/৭৬) এর ভাবার্থ এই যে, যখন স্বীয় অবস্থান স্থলে পৌঁছে যাবে। সুতরাং ফিরার সময় পথেও এই সাওমগুলো পালন করতে হবে। মুজাহিদ (রহঃ) ও ‘আত (রহঃ) এ কথাই বলেন। কিংবা এর ভাবার্থ হচ্ছে স্বদেশে পৌঁছে যাওয়া। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এটাই বলেছেন। একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , ইমাম যুহরী (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) । (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৪৯৮)
সহীহুল বুখারীর একটি সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছে যে, ‘হাজ্জাতুল বিদায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরাহ্ সাথে হাজ্জে তামাত্তু’ করেন এবং ‘যুলহুলাইফায়’ কুরবানী করেন। তিনি কুরবানীর পশু সাথে নিয়েছিলেন। তিনি ‘উমরাহ্ করেন, অতঃপর হাজ্জ করেন। জনগণও তাঁর সাথে হাজ্জে তামাত্তু করেন। কিছু লোক কুরবানীর জন্তু সাথে নিয়েছিলেন; কিন্তু কিছু লোকের সাথে কুরবানীর জন্তু ছিলো না। মাক্কায় পৌঁছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেনঃ
مَنْ كَانَ مِنْكُمْ أَهْدَى فَإِنَّهُ لَا يَحل لِشَيْءٍ حَرُم مِنْهُ حتَى يَقْضِيَ حَجّه، ومَنْ لَمْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَهْدَى فَلْيَطُفْ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ، وَلْيُقَصِّر وليَحللْ ثُمَّ ليُهِلّ بِالْحَجِّ، فَمَنْ لَمْ يَجِدْ هَدْيًا فليصُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةً إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ.
‘যাদের নিকট কুরবানীর পশু রয়েছে তারা হাজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইহরামের অবস্থায়ই থাকবে। আর যাদের কাছে কুরবানীর পশু নেই তারা বায়তুল্লার তাওয়াফ করে সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ে ইহরাম ত্যাগ করবে। মাথা মুণ্ডন করবে অথবা ছেঁটে ফেলবে। অতঃপর হাজ্জের ইহরাম বেঁধে নিবে। কুরবানী দেয়ার ক্ষমতা না থাকলে হাজ্জের মধ্যে তিনটি সাওম পালন করবে এবং সাতটি সিয়াম স্বদেশ ফিরে পালন করবে।’ (সহীহুল বুখারী-৩/৬৩০/১৬৯১, ফাতহুল বারী ৩/৬৩০, সহীহ মুসলিম ২/৯০) এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, এই সাতটি সাওম স্বদেশে ফিরে পালন করতে হবে।
অতঃপর বলা হচ্ছে, ‘এই পূর্ণ দশ দিন।’ এ কথাটি গুরুত্ব দেয়ার জন্য হয়েছে। যেমন ‘আরবী ভাষায় বলা হয়ে থাকে, ‘আমি স্বচক্ষে দেখেছি, নিজ কানে শুনেছি এবং নিজ হাতে লেখেছি।’ কুর’আন মাজীদেও রয়েছেঃ ﴿وَ لَا طٰٓىِٕرٍ یَّطِیْرُ بِجَنَاحَیْهِ﴾
‘আর না কোন পাখি, যে তার দু’পাখার সাহায্যে উড়ে থাকে।’ (৬নং সূরাহ্ আন‘আম, আয়াত নং ৩৮)
অন্য স্থানে রয়েছেঃ ﴿وَّ لَا تَخُطُّهٗ بِیَمِیْنِكَ﴾
‘আর তুমি তোমার ডান হাত দিয়ে কোন কিতাব লেখোনি।’ (২৯ নং সূরাহ্ আনকাবূত, আয়াত নং ৪৮)
﴿وَ وٰعَدْنَا مُوْسٰى ثَلٰثِیْنَ لَیْلَةً وَّ اَتْمَمْنٰهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِیْقَاتُ رَبِّهۤ اَرْبَعِیْنَ لَیْلَةً﴾
‘আর আমি মূসাকে ওয়া‘দা দিয়েছিলাম ত্রিশ রাতের জন্য এবং আরো দশ দ্বারা এটা পূর্ণ করেছিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময়টি চল্লিশ রাত দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে।’ (৭নং সূরাহ্ আ‘রাফ, আয়াত নং ১৪২)
অতএব এসব জায়গায় যেমন শুধু জোর দেয়ার জন্যই এই শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে তেমনি এই বাক্যটিও জোর দেয়ার জন্যই আনা হয়েছে। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, এটা হচ্ছে পূর্ণ করার নির্দেশ।
মাক্কাবাসীরা হাজ্জে তামাত্তু করবে না
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেন যে, ‘এই নির্দেশ ঐ সব লোকের জন্য যাদের পরিবার পরিজন ‘মাসজিদে হারামে’ অবস্থানকারী নয়।’ হারামবাসী যে হাজ্জে তামাত্তু করতে পারে এর ওপর তো ইজমা‘ রয়েছে। মুসনাদ ‘আবদুর রাযযাকে বলা হয়েছে, ত্বা‘উস (রহঃ) বলেছেন যে, তামাত্তু হাজ্জ পালন করতে পারবে শুধুমাত্র তারা যারা মাক্কার হারাম এলাকার মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে না। (নন-রেসিডেন্ট) , কিন্তু যারা মাক্কায় অবস্থান করেন (রেসিডেন্ট) তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমনটি আলোচিত আয়াতে বলা হয়েছেঃ এটা তারই জন্য যার পরিজন পবিত্রতম মাসজিদে উপস্থিত থাকে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -ও এ কথাই বলেছেন।
অতঃপর বলা হচ্ছে, ‘মহান আল্লাহ্কে ভয় করো। তাঁর নির্দেশাবলী মেনে চলো এবং যেসব কাজের ওপর তিনি নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। জেনে রেখো যে, তাঁর অবাধ্যদেরকে তিনি কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন।’
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings