Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 195
Saheeh International
And spend in the way of Allah and do not throw [yourselves] with your [own] hands into destruction [by refraining]. And do good; indeed, Allah loves the doers of good.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মহান আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করার আদেশ
হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন যে, মহান আল্লাহ্র পথে ব্যয়কারীদের সম্বন্ধে
﴿ وَاَنْفِقُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَلَا تُلْقُوْا بِاَیْدِیْكُمْ اِلَى التَّهْلُكَةِ ﴾
এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহুল বুখারী-৮/৩৩/৪৫১৬, ফাতহুল বারী ৮/৩৩) মনীষীগণও এই আয়াতের তাফসীরে এ কথাই বলেছেন। ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি মন্তব্য করেছেন যে, একই ধরনের বক্তব্য পেশ করেছেন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) , যাহহাক (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , সুদ্দী (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) ।
অত্র আয়াতে ‘ধ্বংসের দিকে হাত প্রসারিত করো না’ এর অর্থ হলো পরিবার ও ধন-সম্পদ থেকে দূরে না থাকা এবং জিহাদ পরিত্যাগ করা। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) , নাসাঈ (রহঃ) , আবদ ইবনু হুমাইদ তার তাফসীরে, ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) , ইবনু জারীর (রহঃ) , ইবনু মারদুয়াহ (রহঃ) , হাফিয আবূ ইয়া‘লা (রহঃ) তার মুসনাদ, ইবনু হিব্বান (রহঃ) এবং হাকিম (রহঃ) -ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (জামি‘ তিরমিযী ৮/৩১১, নাসাঈ ৬/২৯৯, তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪২৪, তাফসীর তাবারী ৩/৫৯০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭/১৫০ এবং হাকিম ২/৭৭৫) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এটিকে হাসান সহীহ গারীব বলেছেন। হাকিম (রহঃ) বলেন যে, দুই শায়খের অর্থাৎ ইমাম বুখারী (রহঃ) ও ইমাম মুসলিম (রহঃ) -এর শর্তাধীনে এটি সহীহ।
ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আবূ ইমরান (রহঃ) বলেনঃ আমরা কনস্টানটিনোপলের যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলাম। ঐ সময় ‘উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) মিসরের সৈন্যদের যুদ্ধ পরিচালনা করছিলেন এবং ফাযালা ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ) যুদ্ধ পরিচালনা করছিলেন সিরীয় সৈন্যবাহিনী। অতঃপর প্রচুর সংখ্যক রোমান বাইজান্টাইন সৈন্য নগরী ত্যাগ করে চলে গেলো। আমরা তাদের মুকাবিলা করার জন্য দৃঢ় অবস্থান নেই। আমাদের মাঝে এক মুসলিম সৈন্য হঠাৎ করে তাদের বুহ্যের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং তাদের রক্ষাবুহ্য তছনছ করে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলোঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্র! এ লোকটিতো নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিলো। তখন আবূ আইউব (রাঃ) বলেনঃ হে লোকসকল! তোমরা মহান আল্লাহ্র আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করছো, এ আয়াত তো আমাদের জন্য নাযিল হয়েছিলো যখন আনসাররা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো এবং মহান আল্লাহ্ তাঁর দীনকে জয়যুক্ত করেছিলেন এবং মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। তখন আমরা নিজেরা বলাবলি করছিলাম, ‘এখন আমাদের উচিত নিজ নিজ গৃহে ফিরে গিয়ে পরিবার ও ধন-সম্পত্তির দেখা-শোনা করা। মহান আল্লাহ্ তখন এই আয়াত (২নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ১৯৫) নাযিল করেন। (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ ৩/১২, ১৩,/২৫১২, জামি‘ তিরমিযী-৫/১৯৬/২৯৭২, সুনান নাসাঈ -৬/২৯৯/১১০২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান-৫/২৬৭/১৬৬৭, ৭/১০৫, মুসতাদরাক হাকিম-২/২৭৫, মুসনাদ আবূ দাউদ আত ত্বায়ালিসী-৭১, ৭২ পৃষ্ঠ, হাদীস-৫৯৯, তাফসীরে ত্বাবারী -৩/৫৯০/৩১৭৯)
আবূ বাকর ইবনু আই‘য়াশ (রহঃ) আবূ ইসহাক আস সুবাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) -কে বলেনঃ ‘আমি যদি একাকী শত্রুসারির মধ্যে ঢুকে পড়ি এবং সেখানে শত্রুপরিবেষ্টিত হয়ে পড়ি ও নিহত হই তাহলে কি এই আয়াত অনুসারে আমি নিজের জীবনকে নিজেই ধ্বংসকারীরূপে পরিগণিত হবো?’ তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘না না; মহান আল্লাহ্ স্বীয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলেনঃ
﴿فَقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِۚ لَا تُكَلَّفُ اِلَّا نَفْسَكَ﴾
‘অতএব মহান আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করো; তোমার নিজের ছাড়া তোমার ওপর অন্য কোন ভার অর্পণ করা হয়নি।’ (৪নং সূরাহ্ নিসা, আয়াত নং ৪৮) বরং ঐ আয়াতটি তো তাদেরই ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে যারা মহান আল্লাহ্র পথে খরচ করা হতে বিরত রয়েছিলো। (তাফসীর ইবনু মিরদুওয়াই)
জামি‘উত্ তিরমিযীর অন্য একটি বর্ণনায় এটুকু বেশিও রয়েছে যে, মানুষের পাপের ওপর পাপ কাজ করে যাওয়া এবং তাওবাহ না করাই হচ্ছে নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংস করা। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, মুসলমানগণ দামেস্ক অবরোধ করেন। ইযদিশনাওয়াআহ নামক গোত্রের এক ব্যক্তি বীরত্ব দেখিয়ে শত্রুদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং তাদের ব্যুহ ভেদ করে ভিতরে চলে যায়। জনগণ তাকে খারাপ মনে এবং ‘আমর ইবনুল ‘আস (রহঃ) -এর নিকট অভিযোগ পেশ করে। ‘আমর (রাঃ) তাকে ডেকে নেন এবং বলেনঃ কুর’আন মাজীদের মধ্যে রয়েছে- নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘যুদ্ধের মধ্যে এরূপ বীরত্ব দেখানো জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করা নয়, বরং মহান আল্লাহ্র পথে মাল খরচ না করাই হচ্ছে ধ্বংসের মধ্যে পতিত হওয়া। অত্র আয়াতের (২নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ১৯৫) মাধ্যমে আদেশ করা হয়েছে যে, মুসলিমরা যেন মহান আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদসহ সকল ধরনের কাজে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। বিশেষ করে এই আয়াতটি নাযিলের উদ্দেশ্য হলো জিহাদের জন্য ব্যয় করা এবং শত্রুদের মুকাবিলায় মুসলিমদের শক্তি যাতে বৃদ্ধি পায় সেই লক্ষ্যে সচেষ্ট থাকা। মহান আল্লাহ্ বলেন যে, যারা এ ব্যাপারে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকবে তারা মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হবে এবং তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। تهلكه শব্দের ভাবার্থ মহান আল্লাহ্র শাস্তিও বর্ণনা করা হয়েছে। কারাযী (রহঃ) প্রভৃতি মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, জনগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে যুদ্ধে যেতো কিন্তু নিজের সাথে কোন খরচ নিয়ে যেতো না। তখন হয় তারা ক্ষুধায় মারা যাবে, না হয় তাদের বোঝা অন্যদের ঘাড়ে চেপে বসবে। তাই এই আয়াতে তাদেরকে বলা হচ্ছে- ‘মহান আল্লাহ্ তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তা থেকে তাঁর পথে খরচ করো এবং তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।’ যে ক্ষুধা পিপাসায় বা পায়ে হেঁটে হেঁটে মরে যাবে।
এর সাথে সাথে যাদের কাছে কিছু রয়েছে তাদেরকেও নির্দেশ দেয়া হচ্ছেঃ তোমরা মানুষের হিতসাধন করতে থাকো, তাহলে মহান আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। তোমরা সাওয়াবের প্রত্যেক কাজে খরচ করতে থাকো। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় মহান আল্লাহ্র পথে খরচ করা হতে বিরত থেকো না, এটা প্রকৃতপক্ষে তোমাদেরই ধ্বংস টেনে আনবে। সুতরাং হিতসাধন করা হচ্ছে বড় রকমের আনুগত্য। যার নির্দেশ এখানে দেয়া হচ্ছে যে, হিতসাধনকারীগণ মহান আল্লাহ্র বন্ধু।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings