Surah Al An'am Tafseer
Tafseer of Al-An'am : 128
Saheeh International
And [mention, O Muhammad], the Day when He will gather them together [and say], "O company of jinn, you have [misled] many of mankind." And their allies among mankind will say, "Our Lord, some of us made use of others, and we have [now] reached our term, which you appointed for us." He will say, "The Fire is your residence, wherein you will abide eternally, except for what Allah wills. Indeed, your Lord is Wise and Knowing."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১২৮-১৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
যারা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়, সে মানুষ হোক আর জিন হোক তাদেরকে হুশিয়ার করে দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- সকলকে তিনি তাঁর কাছে হাজির করবেন এবং বলবেন-
(قَدِ اسْتَكْثَرْتُمْ مِّنَ الْإِنْسِ)
‘তোমরা তো অনেক লোককে তোমাদের অনুগামী (পথভ্রষ্ট) করেছিলে; অর্থাৎ অনেক মানুষকে নিজেদের আনুগত্যে নিয়ে এসেছ। তারা তোমাদের ইবাদত করেছে, তোমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছে, তোমাদের আনুগত্য করেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلَمْ اَعْھَدْ اِلَیْکُمْ یٰبَنِیْٓ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّیْطٰنَﺆ اِنَّھ۫ لَکُمْ عَدُوٌّ مُّبِیْنٌﮋﺫ وَّاَنِ اعْبُدُوْنِیْﺛ ھٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِیْمٌﮌ وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْکُمْ جِبِلًّا کَثِیْرًاﺚ اَفَلَمْ تَکُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَﮍ)
“আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি হে বানী আদম! তোমরা শয়তানের ইবাদত কর না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“। আমারই ইবাদত কর, এটাই সরল-সঠিক পথ। আর সে (শয়তান) তো তোমাদের বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে তবুও কি তোমরা বুঝবে না।”(সূরা ইয়াসীন ৩৬:৬০-৬২)
যে সব মানুষ জিন নামক শয়তানের ইবাদত করত তারা বলত: আমরা একে অপরের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছি। এর দু’টি অর্থ হতে পারে-
১. মানুষের কাছ থেকে জিনদের উপকারিতা অর্জন করা হল: তাদেরকে নিজেদের অনুসারী বানিয়ে তৃপ্তি লাভ করা। আর জিনদের থেকে মানুষের উপকারিতা অর্জন করা হল: শয়তানের পাপকর্মসমূহকে তাদের জন্য সুন্দর আকারে পেশ করা।
২. মানুষ সেসব খবরকে বিশ্বাস করত শয়তান ও জিনদের পক্ষ হতে যা ভবিষ্যতবাণী হিসাবে প্রচার করা হত।
(أَجَلَنَا الَّذِيْٓ أَجَّلْتَ لَنَا)
‘তুমি আমাদের জন্য যে সময় নির্ধারিত করেছিলে এখন আমরা তাতে উপনীত হয়েছি।’অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেছে যা আমরা মানতাম না। এর উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এখন জাহান্নামই হবে তোমাদের চিরন্তন ঠিকানা।
(نُوَلِّيْ بَعْضَ الظّٰلِمِيْنَ بَعْضًا)
‘আমি জালিমদের একদলকে অন্যদলের বন্ধু করে থাকি।’কাতাদাহ (রহঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এমন লোকেদেরকে একে অপরের বন্ধু বানিয়ে দেন যাদের আমল একই হয়ে থাকে। যেমন মু’মিন মু’মিনের বন্ধু, যেখানেই থাকুক ও যেভাবেই থাকুক। অনুরূপ কাফির কাফিরের বন্ধু, যেখানেই থাকুক ও যেভাবেই থাকুক। সুতরাং ঈমান আশা-আকাক্সক্ষা ও বাহ্যিক চাকচিক্যের নাম নয়। (তাফসীর তাবারী. ১২/পৃঃ ১১৯, হা: ১৩৮৯৩) বরং অন্তরে বিশ্বাস, কাজে বাস্তবায়ন ও যারা ঈমান ভালবাসে তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা ও যারা ঈমান অপছন্দ করে তাদের সাথে শত্র“তা পোষণ করার নাম।
(أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ)
‘তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি’অর্থাৎ কাফির জিন ও মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন এ কথা জিজ্ঞেস করবেন। আল্লাহ তা‘আলা তো সবকিছু জানেন, তারপরেও জিজ্ঞেস করবেন; কারণ হচ্ছে তাদের থেকে স্বীকৃতি নেয়া। তাই তারা স্বীকৃতি দিয়ে বলবে:
(شَهِدْنَا عَلٰٓي أَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيٰوةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوْا عَلٰٓي أَنْفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوْا كٰفِرِيْنَ)
‘‘আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।’বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল, আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্যও দেবে যে, তারা কাফির ছিল।”(সূরা আন‘আম ৬:১৩০)
এ কথা সর্বজনবিদিত যে, রাসূলগণ কেবল মানুষের মধ্য হতে আগমন করেছেন, জিনদের মধ্য হতে নয়। এ ব্যাপারে কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। এসবের অন্যতম আয়াত হল:
(وَمَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْٓ إِلَيْهِمْ مِّنْ أَهْلِ الْقُرٰي)
“তোমার পূর্বেও জনপদবাসীর মধ্য হতে পুরুষগণকেই প্রেরণ করেছিলাম, যাদের নিকট ওয়াহী পাঠাতাম। (সূরা ইউসুফ ১২:১০৯)
ইবরাহীম (রাঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَعْقُوْبَ وَجَعَلْنَا فِيْ ذُرِّيَّتِهِ النُّبُوَّةَ وَالْكِتٰبَ)
“তার বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নবুওয়াত ও কিতাব।”(সূরা আনকাবুত ২৯:২৭)
তবে হ্যাঁ, জিনদের থেকে ভীতি প্রদর্শনকারী রয়েছে যারা নাবী রাসূলদের থেকে শিখে স্বজাতিকে ভীতি প্রদর্শন করত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ صَرَفْنَآ إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْاٰنَ ج فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْآ أَنْصِتُوْا ج فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلٰي قَوْمِهِمْ مُّنْذِرِيْنَ)
“ (হে রাসূল! এ ঘটনাটাও উল্লেখ করার মত যে) আমি একদল জিনকে তোমার দিকে নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তারা কুরআন শুনে। যখন ওরা ঐ জায়গায় পৌঁছল (যেখানে তুমি কুরআন তেলাওয়াত করছিলে) তখন একে অপরকে বলেছিল, তোমরা চুপ করে শোন। তারপর যখন কুরআন পড়া হয়ে গেল তখন তারা নিজ কাওমের নিকট সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেল।”(সূরা আহকাফ ৪৬:২৯)
নাবী ও রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য এই যে, কোন জাতি জুলুম করল আর সে সম্পর্কে অবগত না করেই ধ্বংস করেন এমনটি যাতে না হয় এবং যাতে কিয়ামতের দিন কেউ ওযর পেশ করতে না পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِيْنَ حَتّٰي نَبْعَثَ رَسُوْلًا)
“আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দেই না।”(সূরা ইসরা ১৭:১৫)
অন্যত্র তিনি বলেন:
(رُسُلاً مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَي اللّٰهِ حُجَّةٌۭ بَعْدَ الرُّسُلِ ط وَكَانَ اللّٰهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا)
“সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”(সূরা নিসা ৩:১৬৫)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকল মাখলুক তার মুখাপেক্ষী, তিনি দয়াময়। তাঁর ইচ্ছায় সবকিছু হয়। তিনি ইচ্ছা করলে দুনিয়ায় যারা রয়েছে এদেরকে ধ্বংস করে নতুন জাতি নিয়ে আসতে সক্ষম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ يَّشَأْ يُذْهِبْكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ وَيَأْتِ بِاٰخَرِيْنَ ط وَكَانَ اللّٰهُ عَلٰي ذٰلِكَ قَدِيْرًا)
“হে মানুষ! তিনি (আল্লাহ) ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারিত করে অপরকে আনতে পারেন; আল্লাহ এটা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।”(সূরা নিসা ৩:১৩৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاللّٰهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرَا۬ءُ ج وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ لا ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْآ أَمْثَالَكُمْ)
“আল্লাহ অভাবমুক্ত, তোমরাই অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য কাওমকে নিয়ে আসবেন। আর তারা তোমাদের মত হবে না।”(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৩৮)
তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই হবে এবং তোমাদের পুনরুত্থান ঘটবেই। এতে তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে অপারগ করতে পারবে না।
(اعْمَلُوْا عَلٰي مَكَانَتِكُمْ)
‘তোমরা যেখানে যা করছ, করতে থাক; অর্থাৎ এটা কুফরী ও অবাধ্যতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার এখতিয়ার বা অনুমতি নয় বরং এ হল কঠোর ধমক যা পরের শব্দ থেকে স্পষ্ট হয়। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقُلْ لِّلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ اعْمَلُوْا عَلٰي مَكَانَتِكُمْ ط إِنَّا عٰمِلُوْنَ - وَانْتَظِرُوْا ج إِنَّا مُنْتَظِرُوْنَ)
“যারা ঈমান আনে না তাদেরকে বল ‘তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করতে থাক, আমরাও আমাদের কাজ করছি। ‘এবং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষা করছি।’(সূরা হূদ ১১:১২১-২২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খারাপ মানুষ ও জিনরা পরস্পরকে খারাপ কাজে সহযোগিতা করে।
২. আমলের মাধ্যমে মানুষ ও জিনদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ভালদের সাথে ভাল আর খারাপদের সাথে খারাপের সম্পর্ক।
৩. নাবী ও রাসূল প্রেরণের কারণ জানতে পারলাম।
৪. নাবী ও রাসূল কেবল মানব জাতির পুরুষদের মধ্য থেকে হয়।
৫. আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন তিনি তা-ই করতে সক্ষম।
৬. আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা সত্য।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings