Surah Az Zukhruf Tafseer
Tafseer of Az-Zukhruf : 81
Saheeh International
Say, [O Muhammad], "If the Most Merciful had a son, then I would be the first of [his] worshippers."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৮১-৮৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
إِنْ শর্তমূলক, নাকি না-বোধক এ নিয়ে দুধরনের উক্তি রয়েছে; কেউ বলেছেন তা শর্তমূলক, সে হিসেবে অর্থ হল, যদি আল্লাহ তা‘আলার কোন সন্তান থাকত তাহলে আমিই হতাম সে সন্তানের প্রথম ইবাদতকারী। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলার কোন সন্তান নেই তাই একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি। কেউ বলেছেন, إِنْ না-বোধক, সুতরাং অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলার কোন সন্তান নেই, অতএব এক আল্লাহ তা‘আলার ইবদাতকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম (তোমাদের মধ্যে)। তাঁর সন্তান হবে এমন কথা থেকে পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং প্রত্যেক ঐসব থেকেও পবিত্রতা বর্ণনা করছি যা তাঁর শানে উপযোগী নয়। এটাই সঠিক কথা, কেননা এ অর্থেই কুরআনের অনেক আয়াত এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَّيُنْذِرَ الَّذِيْنَ قَالُوا اتَّخَذَ اللّٰهُ وَلَدًا ق مَا لَهُمْ بِه۪ مِنْ عِلْمٍ وَّلَا لِآبَا۬ئِهِمْ)
“এবং সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না।” (সূরা কাহ্ফ ১৮ : ৪-৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًا لَقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا إِدًّا
“তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তোমরা এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করেছ” (সূরা মারাইয়াম ১৯ : ৮৮-৮৯, আযওয়াউল বায়ান, অত্র আয়াতের তাফসীর)
তাই মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান থাকার ব্যাপারে যে সকল কথা-বার্তা বলাবলি করে তিনি তা হতে সম্পূর্ণ পবিত্র ও মহান। তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অধিপতি এবং আরশের অধিকারী। তিনি এক, অভাবমুক্ত, সমকক্ষ ও সন্তান নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(سُبْحٰنَه۫ أَنْ يَّكُوْنَ لَه۫ وَلَدٌ ﻣ لَه۫ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ط وَكَفٰي بِاللّٰهِ وَكِيْلًا)
“তাঁর সন্তান হবে- তিনি এটা হতে পবিত্র। আসমানে যা কিছু আছে ও জমিনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই; কর্ম-বিধানে আল্লাহই যথেষ্ট।” (সূরা নিসা ৪ : ১৭১)
সুতরাং সত্য সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও যারা আল্লাহ তা‘আলার শানে এরূপ কথা-বার্তা বলে তাদেরকে ঐ দিনের সাক্ষাত করার পূর্ব পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হবে যেদিনের প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তারা ক্রীড়া-কৌতুক ও হাসি-তামাশা করুক। যখন ঐদিন এসে যাবে তখন তারা তাদের পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে।
এরপর মহান আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, আসমান ও জমিনের সমস্ত মাখলূক তাঁর ইবাদতে লিপ্ত রয়েছে এবং সবাই তাঁর সামনে অপারগ ও শক্তিহীন। তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَهُوَ اللّٰهُ فِي السَّمٰوٰتِ وَفِي الْأَرْضِ ط يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُوْنَ)
“আসমানসমূহ ও জমিনে তিনিই আল্লাহ, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর তাও তিনি অবগত আছেন।” (সূরা আন‘আম ৬ : ৩) এ সম্পর্কে সূরা আন‘আমের ৩ নম্বর আয়াতেও আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এর মধ্যবর্তী যা কিছু রয়েছে সকল কিছুর মালিক। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নন। আর একমাত্র তিনিই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়কাল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখেন। এ সম্পর্কে সূরা আল আন‘আমের ৫৯ নম্বর আয়াতে ও সূরা লুক্বমানের শেষ আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(وَلَا يَمْلِكُ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ الشَّفَاعَةَ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য যাদের ইবাদত করা হয় এ আশায় যে, তারা আমাদের জন্য শাফায়াত করবে। যেমন ফেরেশতা, নাবী, ওলী-আওলিয়া ও কবরে শায়িত ব্যক্তি ইত্যাদি; এরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কোন শাফায়াত করতে পারবে না। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন :
(إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ)
অর্থ হল- যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাসূলুল্লাহ। অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও যে ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছে সে ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান রাখে। সত্যের প্রতি সাক্ষ্য দেয়ার জন্য শর্ত হল- আল্লাহ তা‘আলার এককত্বের সাক্ষ্য দেবে, সাক্ষ্য দেবে রাসূলগণের নবুওয়াতের ও তারা যা নিয়ে এসেছেন তা সঠিক। এসব ব্যক্তিরা আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি সাপেক্ষে যার জন্য শাফায়াত করার অনুমতি দেয়া হবে তার জন্য শাফায়াত করতে পারবে। এ সম্পর্কে সূরা বাকারাতে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর মুশরিকরাও আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহ তথা সকল কিছুর মালিক ও সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা তা স্বীকার করত কিন্তু ইবাদত করত বিভিন্ন প্রতিমা ও দেব-দেবীর। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : অর্থাৎ তারা সব কিছুর মালিক ও সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ তা‘আলাকে এক মেনে নিয়েও কিভাবে অন্যের ইবাদত করে? কেননা তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ তাওহীদে উলুহিয়্যাহ আবশ্যক করে। অর্থাৎ যিনি সব কিছুর মালিক তিনি ইবাদত পাওয়ার হকদার।
وَقِيْلِه এখানে তিন ধরনের কিরাত রয়েছে। কেউ যবর দিয়ে পড়েছেন, কেউ পেশ দিয়ে পড়েছেন, কেউ যের দিয়ে পড়েছেন। যের দিয়ে পড়লে এর সম্পর্ক হল এর পূর্ব আয়াতের عِلْمُ السَّاعَةِ শব্দের সাথে। সর্বনাম দ্বারা উদ্দেশ্য হল নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। অর্থ হল- আল্লাহ তা‘আলার নিকট রয়েছে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথার জ্ঞান। অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে অভিযোগ করে বলেছিলেন- হে আল্লাহ! যাদের কাছে আমাকে প্রেরণ করেছেন তারা আমাকে অস্বীকার করছে, তারা ঈমান আনছে না।
আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভিযোগ শুনে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বললেন এবং সুন্দর করে বিদায় নিয়ে চলে আসতে বললেন। এখানে সালাম অর্থ ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা নয়, বরং এটা এক প্রকার বাক্যপদ্ধতি। কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলে বলা হয়। আমরাও বাংলা ভাষায় ব্যবহার করে থাকি। যেমন কারো সাথে তর্কবিতর্কের ক্ষেত্রে সঠিক দলীল-প্রমাণ তুলে ধরলেও যদি মেনে না নেয় তাহলে সুন্দর করে বিদায় দিয়ে বলি, ভাই! ‘সালাম’। অর্থাৎ আপনি আপনার মত নিয়ে থাকেন, আমি চললাম।
সুতরাং দীনের দিকে দাওয়াত দিলে কেউ সে দাওয়াতে সাড়া না দিলে মন খারাপ হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন, যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন। বান্দার কাজ তার জ্ঞানানুপাতে দাওয়াতী কাজ করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই নিকট রয়েছে। অন্য কারো নিকট এ ব্যাপারে কোনই জ্ঞান নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলার কোন স্ত্রী-সন্তান নেই, তিনি এক অদ্বিতীয়, তাঁর সকতুল্য কেউ নেই।
৩. যারা সত্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে তাদের থেকে সদ্ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসতে হবে, তাদের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলার ওপর।
৪. আল্লাহ তা‘আলা যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত অন্য কেউ তাঁর সম্মুখে কোন কথা-বার্তা বলতে পারবে না ও শাফায়াতও করতে পারবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings