Surah Al Ahzab Tafseer
Tafseer of Al-Ahzab : 44
Saheeh International
Their greeting the Day they meet Him will be, "Peace." And He has prepared for them a noble reward.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
(اذْكُرُوا اللّٰهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মু’মিন বান্দাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির করার নির্দেশ প্রদান করেছেন ।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلٰوةَ فَاذْكُرُوا اللّٰهَ قِيٰمًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰي جُنُوْبِكُمْ)
“যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে।” (সূরা নিসা ৪:১০৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالذّٰكِرِيْنَ اللّٰهَ كَثِيْرًا وَّالذّٰكِرٰتِ أَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّأَجْرًا عَظِيْمًا)
“এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারিণী নারীন এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান।” (সূরা আহযাব ৩৩:৩৫)
হাদীসে এসেছে, আবূ দারদা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে উত্তম কাজ, পবিত্র আমল, সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের পুণ্য, স্বর্ণ-রৌপ্য আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করা অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং জিহাদ হতে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কাজের কথা বলব না? সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সেটা কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা‘আলার যিকির বা স্মরণ। (আহমাদ ৫/১৯৫, তিরমিযী হা: ৩৩৭৭, ইবনু মাযাহ হা: ৩৭৯০ সনদ সহীহ)
সাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন স্বর্ণ-রৌপ্যের ব্যাপারে যা নাযিল হওয়ার নাযিল হল তখন সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: মানুষ যেন কৃতজ্ঞ আত্মা, যিকিরকারী রসনা এবং এমন স্ত্রী গ্রহণ করে, যে পরকালীন বিষয়ে সহযোগিতা করবে। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ১৫০৫ )
আব্দুল্লাহ বিন বুসর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন দুজন গ্রাম্য লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে একজন বলল: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন্ শ্রেণির মানুষ উত্তম? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যে ব্যক্তি দীর্ঘ আয়ু পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। অপরজন বললন হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে ইসলামের বিধিবিধান অনেক হয়ে গেছে, তাই কোন্ আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সর্বদা তোমার জিহবাকে আল্লাহ তা‘আলার যিকির দ্বারা সিক্ত রাখবে। (তিরমিযী হা: ৩৩৭৫, ইবনু মাযাহ হা: ৩৭৯৩, সহীহ)
যিকির সম্পর্কে আরো অসংখ্য সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তবে এ যিকির করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে, তন্মধ্যে একটি হল চুপে চুপে এবং ভয়ের সাথে যিকির করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغٰفِلِيْنَ)
“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়-ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ কর আর উদাসীনদের মত হয়ো না।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১০৫)
তবে যিকির করার অর্থ এই নয় যে, কয়েকজন একত্রে বসে উচ্চৈঃস্বরে হৈ-হুল্লা করে আওয়াজ করা। তুমি এমনভাবে যিকির কর যেন মানুষ তোমাকে পাগল বলেন ইত্যাদি এ ব্যাপারে যে-সকল কথা বর্ণনা করা হয় তা আদৌ সঠিক নয়। (তাফসীর ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) বরং নম্রভাবে বিশুদ্ধ চিত্তে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতে হবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় মহান আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَسُبْحَانَ اللّٰهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ)
“অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান প্রকাশ কর সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে। এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই।” (সূরা রূম ৩০:১৭-১৮)
সুতরাং প্রচলিত ভ্রান্ত যিকির বাদ দিয়ে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক যে সকল যিকির রয়েছে সেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করতে হবে। এ যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি দিনে একশত বার:
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ )
-এ দু‘আ পাঠ করবে তার দশটি গোলাম মুক্ত বা আযাদ করার সমান সওয়াব হবে। তার জন্য একশত নেকী লেখা হবে এবং একশত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে এবং তাকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তার থেকে উত্তম আর কেউ হবে না। তবে যে এর চেয়েও বেশি পাঠ করবে সে ব্যতীত। এবং তিনি আরো বলেন: যে ব্যক্তি দিনে একশত বার
“سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحْمَدِهِ”
এ দু‘আ পাঠ করবে তার সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৯১)
এরপর এর ফযীলত ও এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। এতদসত্ত্বেও কি তোমরা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ থেকে উদাসীন থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيٰتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ - فَاذْكُرُوْنِيْٓ أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ)
“আমি তোমাদের মধ্য হতে এমন এক রাসূল প্রেরণ করেছি যিনি তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন ও তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং তোমাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেন আর তোমরা যা জানতে না তাও শিক্ষা দেন। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর! আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় কর ও অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সূরা বাকারাহ ২:১৫১-১৫২)
হাদীসে এসেছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমাকে একাকী স্মরণ করে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যে আমাকে কোন দলের মধ্যে স্মরণ করে আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম (ফেরেশতাদের) দলের মধ্যে স্মরণ করি। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪০৫, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৫)
এমনকি ফেরেশতারাও যিকিরকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَه۫ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِه۪ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ج رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ -رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنّٰتِ عَدْنِ نِالَّتِيْ وَعَدْتَّهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيّٰتِهِمْ ط إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ)
“যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা পার্থনা করে (বলে:) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি সকল কিছুকেই (তোমার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করেছ, অতএব যারা তাওবা করে ও তোমার পথের অনুসরণ করে তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে প্রবেশ করাও স্থায়ী জান্নাতে যার অঙ্গীকার তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎ কর্ম করেছে তাদেরকেও। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।” (সূরা মু’মিন ৪০:৭-৯)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তারা যখন আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তারা তথায় শুধু শান্তিপূর্ণ অভিবাদন শুনবে। এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের প্রথম দিকে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যিকির করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য। নম্রভাবে ভয়ের সাথে চুপে চুপে এবং সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক।
২. সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বক্ষণ আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
৩. ফেরেশতারা মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
৪. জান্নাতে শান্তিপূর্ণ অভিবাদন ছাড়া আর কিছুই সেখানে থাকবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings