Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 94
Saheeh International
Say, [O Muhammad], "If the home of the Hereafter with Allah is for you alone and not the [other] people, then wish for death, if you should be truthful.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মৃত্যু কামনার নির্দেশ দিয়ে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা নির্ণয়ের জন্য ইয়াহুদীদের সাথে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হলো
‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সব ইয়াহুদীদেরকে বলেনঃ ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এসো, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দুই দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। কিন্তু তখনই ভবিষ্যদ্বাণী হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। আর হলোও তাই। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এলো না। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৪৮) কারণ তারা অন্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ও কুর’আন মাজীদকে সত্য বলে জানতো। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মুকাবিলায় আসতো তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেতো এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহুদীও অবশিষ্ট থাকতো না। (তাফসীর ইবনে আবী হাতিম ১/২৪৮) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইয়াহুদীরা যদি মৃত্যু কামনা করতো তাহলে তারা সবাই মারা যেতো। (হাদীসটি সহীহ। তাফসীরে ‘আব্দুর রাজ্জাক)
ইবনে জারীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করে বলেন যে, আমাদের নিকট সংবাদ পৌছেযে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"لو أن اليهود تمنوا الموت لماتوا. ولرأوا مقاعدهم من النار. ولو خرج الذين يُباهلون رسول الله صلى الله عليه وسلم لرجعوا لا يجدون أهلا ولا مالا".
ইয়াহুদীরা যদি মৃত্যু কামনা করতো তাহলে তারা সবাই মারা যেতো। আর তারা জাহান্নামে নিজেদের স্থান দেখতে পেতো। আর মুবাহালাকারীরা যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মুবাহালার উদ্দেশ্যে বের হতো তাহলে তারা ফিরো এসে কোন আত্মীয়-স্বজন ও সম্পদ পাইতো না। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদয়ে আহমাদ ১/২৪৮/২২২৫, তাফসীরে ত্বাবারী ১/১৫৬৯, তাফসীরে আব্দুর রাজ্জাক ১/৯১) আর এ আয়াতের মতোই মহান আল্লাহ্র নিম্নোক্ত বাণীঃ
﴿قُلْ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ هَادُوْۤا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّكُمْ اَوْلِیَآءُ لِلّٰهِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ۶ وَ لَا یَتَمَنَّوْنَهٗۤ اَبَدًۢا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْهِمْ١ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِالظّٰلِمِیْنَ۷ قُلْ اِنَّ الْمَوْتَ الَّذِیْ تَفِرُّوْنَ مِنْهُ فَاِنَّهٗ مُلٰقِیْكُمْ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ اِلٰى عٰلِمِ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ﴾
‘বলোঃ হে ইয়াহুদীরা! যদি তোমরা মনে করো যে, তোমরাই মহান আল্লাহ্র বন্ধু, অন্য কোন মানবগোষ্ঠি নয়; তাহলে তোমরা মৃত্যু কামনা করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা অগ্রে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। মহান আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত। বলোঃ তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন করো সেই মৃত্যুর সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই। অতঃপর তোমরা উপস্থিত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা মহান আল্লাহ্র নিকট এবং তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে যা তোমরা করতে। (৬২ নং সূরা জুমু‘আহ, আয়াত নং ৬-৮)
তাদের দাবী ছিলোঃ ﴿نَحْنُ اَبْنٰٓؤُا اللّٰهِ وَ اَحِبَّآؤُهٗ﴾
আমরা মহান আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁর প্রিয়। (৫ নং সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ১৮) তারা আরো বলতোঃ
﴿لَنْ یَّدْخُلَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ كَانَ هُوْدًا اَوْ نَصٰرٰى﴾
ইয়াহুদী অথবা খ্রিষ্টান ছাড়া কেউ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১১১) এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে অর্থাৎ ইয়াহুদীদেরকে বলেনঃ ‘এসো এর ফয়সালা আমরা এভাবে করি যে, আমরা দু’টি দলে মাঠে বেরিয়ে যাই। তারপর আমরা মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা জানাই যে, তিনি যেন আমাদের মধ্যকার মিথ্যাবাদী দলকে ধ্বংস করে দেন।’ কিন্তু ইয়াহুদী দলটির নিজেদের মিথ্যাবাদীতা সম্পর্কে পূর্ণ বিশ্বাস ছিলো বলে তারা এর জন্য প্রস্তুত হলো না। সুতরাং তাদের মিথ্যা প্রকাশ পেয়ে গেলো।
অনুরূপভাবে নাজরানের খ্রিষ্টানরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করে বহু তর্ক বিতর্কের পর তাদেরকেও মুবাহালা করতে বলা হয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿فَمَنْ حَآجَّكَ فِیْهِ مِنْۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ اَبْنَآءَنَا وَ اَبْنَآءَكُمْ وَ نِسَآءَنَا وَ نِسَآءَكُمْ وَ اَنْفُسَنَا وَ اَنْفُسَكُمْ١۫ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَّعْنَتَ اللّٰهِ عَلَى الْكٰذِبِیْنَ﴾
তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি তোমার সাথে ‘ঈসার সম্বন্ধে বিতর্ক করবে তাকে বলো, ‘এসো, আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের আর আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের এবং আমাদের নিজেদের এবং তোমাদের নিজেদের আহ্বান করি। তারপর আমরা বিনীত প্রার্থনা করি আর মিথ্যুকদের প্রতি মহান আল্লাহ্র অভিসম্পাত বর্ষণ করি। (৩ নং সূরা আল ‘ইমরান, আয়াত নং ৬১) কিন্তু তারা পরস্পর বলতে থাকেঃ ‘মহান আল্লাহ্র শপথ!’ এ নবীর সাথে কখনো মুকাবিলা করো না, নতুবা এখনই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ সুতরাং তারা মোকাবেলা হতে বিরত হয় এবং জিজিয়া কর দিতে রাজি হয়ে সন্ধি করে নেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ‘উবাইদাহ ইবনে জাররাহ্কে (রাঃ) আমীর করে তাদের সাথে পাঠিয়ে দেন।
এভাবেই ‘আরবের মুশরিকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿قُلْ مَنْ كَانَ فِی الضَّلٰلَةِ فَلْیَمْدُدْ لَهُ الرَّحْمٰنُ مَدًّا﴾ ‘বলো, যারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাদেরকে প্রচুর অবকাশ দিবেন।’ (১৯ নং সূরা মারইয়াম, আয়াত নং ৭৫) এর পূর্ণ ব্যাখ্যা এ আয়াতের তাফসীরে ইনশা’আল্লাহ বর্ণিত হবে।
অবশ্য কেউ কেউ বলেন ‘তাহলে তোমরা মৃত্যু কামনা করো, যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তোমরা যদি তোমাদের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও তাহলে এখনই তোমরা মৃত্যু কামনা করো। তারা এর দ্বারা মুবাহালা উদ্দেশ্য নেয় নি। ইবনে জারীর (রহঃ) এরও দু’টি উক্তির দ্বিতীয় উক্তি এটাই। তিনি বলেন মহান আল্লাহ উক্ত বাণী দ্বারা স্বীয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য ইয়াহুদীদের ওপর হুজ্জাত বা দালীল সাব্যস্ত করেছেন। আর ইয়াহুদী পণ্ডিত ও জ্ঞানীদেরকে লাঞ্ছিত করেছেন। আর তা এই যে মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর ও তাদের মাঝে মতভেদপূর্ণ বিষয়ে ইনসাফ এর সাথে ফয়সালা করার আদেশ দিয়েছেন। যেমন আদেশ দিয়েছিলেন খ্রিষ্টানদের একটি দলকে মুবাহালার জন্য, যখন তারা ‘ঈসা (আঃ) সম্পর্কে মতানৈক্য করলো। অতএব তিনি ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে বললেন তোমরা যদি তোমাদের ঈমান ও মহান আল্লাহ্র নিকট তোমাদের একটি মর্যাদা আছে মর্মে সত্যবাদী হও তাহলে তোমরা মৃত্যু কামনা করলেও তা তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করবে না। বরং তোমাদের প্রার্থনা অনুযায়ী আমি তোমাদের তা দিয়ে দিবো আর এর মাধ্যমে তোমরা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট ও ক্লান্তি থেকে মুক্ত হয়ে শান্তিময় জীবন লাভ করতে পারবে। আর জান্নাতে মহান আল্লাহ্র প্রতিবেশী হয়ে সফলতা লাভ করবে। আখিরাতের বাসস্থান একমাত্র তোমাদের জন্যই নির্দিষ্ট মর্মে তোমাদের দাবী যদি বাস্তব হয়। আর যদি তোমরা তা না পাও, তাহলে মানুষেরা অনুধাবন করবে যে তোমরা মিথ্যা দাবীদার ছিলে আর আমরাই আমাদের দাবী অনুযায়ী সত্যবাদী ছিলাম। আর আমাদের ও তোমাদের মাঝের অস্পষ্টতা উম্মুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু ইয়াহুদীরা মৃত্যু কামনা করা থেকে বিরত থাকলো। কেননা তারা জানতো যে, তারা যদি মৃত্যু কামনা করে তাহলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। অর্থাৎ তাদের দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে আর আখিরাতে চিরস্থায়ী লাঞ্ছনা ভোগ করবে। যেমন খ্রিষ্টানরাও মুবাহালার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বিরত ছিলো।
এটা এমন কিছু বিবরণ যার প্রথমাংশ উত্তম, কিন্তু শেষাংশের বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আর তা এই জন্য যে, এই ব্যাখ্যা অনুপাতে তাদের ওপর কোন দালীল সাব্যস্ত হয় না। কেননা তারা তাদের দাবীতে সত্যবাদী হলেও মৃত্যু কামনা করা আবশ্যক করে না। কেননা মৃত্যু কামনা করা ও উযুদস সালাহ এর কোন অত্যাবশ্যকতা নেই। অনেক সৎ ব্যক্তিই রয়েছে যারা মৃত্যু কামনা করে না। বরং কামনা করে যে তাকে যদি হাজার বছর আয়ূ দেয়া হতো তাহলে তারা কল্যাণমুলক কাজ আরো বেশি বেশি করতে পারতো এবং জান্নাতে সুউচ্চ মর্যাদা লাভ করতো। যেমন হাদীসে এসেছেঃ خيركم من طال عمره وحسن عمله ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যার আয়ূষ্কাল লম্বা হয়েছে এবং ‘আমল সুন্দর হয়েছে।’ (হাদীসটি সহীহ। জামি‘ তিরমিযী ৪/২৩২৯, ২৩৩০, মুসনাদে আহমাদ-৪/১৮৮, ১৯০, ৫/৪০, ৪৩, ৪৭, ২/২৩৫/ হাঃ ৭২১১। আহমাদ শাকির ও নাসিরুদ্দীন আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৮৩৬) আবার সহীহ হাদীসে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
"لا يتمنين أحدكم الموت لضر نزل به إما محسنًا فلعله أن يزداد، وإما مسيئًا فلعله أن يستعتب"
‘তোমাদের কেউ যেন কোন বিপদ-আপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে, কেননা সে নেককার হলে নেকীর কাজ আরো বেশি করতে পারবে। আর বদকার হলে হয়তো খারাপ কাজ থেকে সে বিরত হবে।’ (সহীহুল বুখারী ৫৬৭১, সহীহ মুসলিম-২৬৮০)
অতএব এসব দালীলের ভিত্তিতে তারা মুসলিমদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারে যে, হে মুসলিমগণ! তোমরা নিজেরাও তো জান্নাতী হওয়ার দাবী করো, তাহলে তোমরা সুস্থাবস্থায় মৃত্যু কামনা করো না কেন। অতএব কিভাবে তোমরা আমাদেরকে এমন কাজে বাধ্য করতে চাও যে কাজে আমরাও তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি। এসবই আয়াতের বাহ্যিক অর্থের ওপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু যদি ইবনে ‘আব্বাসের তাফসীর এর দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি তাহলে এরকম কোন অত্যাবশ্যকতা আসবে না। বরং তাদের সাথে ন্যায়পূর্ণ কথা বলা হবে। আর তা হলো এই যে, তোমরা যদি বিশ্বাস করো যে, অন্য মানুষ নয় শুধু তোমরাই মহান আল্লাহ্র বন্ধু, মহান আল্লাহ্র পুত্র এবং তার প্রিয় পাত্র। তাছাড়া তোমরাই একমাত্র জান্নাতী অন্য কেউ নয়, বরং তোমরা ছাড়া বাকী সবাই জাহান্নামী। তাহলে তোমরা মুবাহালা করো। আর তোমাদের মধ্যেকার মিথ্যাবাদীর ওপর বদ দু‘আ করো। আর এটাও জেনে রেখো যে, নিশ্চয় মুবাহালা মিথ্যাকে মূলোৎপাটন করে। সুতরাং তারা যখন নিশ্চিত হলো এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সত্যবাদিতা অনুধাবন করলো, তখন তারা মুবাহালা করা থেকে বিরত হলো। কেননা তারা তাদের নিজেদের রচিত মিথ্যা ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গুণাবলী সংক্রান্ত সত্যকে যে তারা গোপন করছে, এটা তারা খুব ভালো করেই জানতো। তারা মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবী হিসেবে তেমনই জানতো যেমন নিজের সন্তানকে সন্তান হিসেবে জানে। অতএব মুবাহালা থেকে বিরত থাকার কারণে প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের মিথ্যাবাদিতা, লাঞ্ছনা, পথভ্রষ্টতা ও সীমালঙ্ঘনের বিষয় বুঝতে পারলো। আর তারা এটাও বুঝতে পারলো যে, তাদের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহ কর্তৃক অভিসম্পাত বহাল থাকবে।
মুবাহালার অর্থ
এখানে মুবাহালার অর্থ ‘আশা করা।’ কারণ প্রতিটি নির্দোষ ব্যক্তি মহান আল্লাহ্র কাছে আশা করে যে, মহান আল্লাহ যেন তার বিরোধী লোকটিকে ধ্বংস করেন যে অনর্থক বিবাদ করছে। বিশেষ করে কোন ব্যক্তি যখন এরূপ ধারণা করে যে, সে সত্যের ওপর আছে তখন সে মুবাহালা করবে। এ ছাড়া অন্যায়কারীদের মৃত্যু কামনা করাও মুবাহালা। কারণ অন্যায়কারী বা অবিশ্বাসীদের কাছে পার্থিব জীবনের মূল্য সর্বাধিক, যেহেতু তারা জানে যে, তাদের অন্যায়ের শাস্তি স্বরূপ পরকালে কঠোর ‘আযাব ভোগ করতে হবে, তাই তারা কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আর এজন্য মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَلَنْ یَّتَمَنَّوْهُ اَبَدًۢا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْهِمْ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌۢ بِالظّٰلِمِیْنَ﴾
‘কিন্তু তাদের কৃতকর্মের জন্য তারা কখনো তা কামনা করবে না এবং মহান আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে খুবই অবহিত।’
কাফিররা চায় যে, তাদেরকে দীর্ঘ জীবন দান করা হোক
মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ لَتَجِدَنَّهُمْ اَحْرَصَ النَّاسِ عَلٰى حَیٰوةٍ﴾ ‘অবশ্যই তুমি তাদেরকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক লোভী দেখতে পাবে।’ অর্থাৎ তারা তাদের কৃত মন্দ কার্যাবলী ও এর পরিণতি স্বরূপ মহান আল্লাহ্র নিকট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত জ্ঞান থাকার কারণে সকল সৃষ্টিকূলের মধ্যে তারাই পার্থিব জীবন তথা লম্বা বয়সের প্রতি বেশি আগ্রহী হবে। কেননা মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ الدنيا سجن المؤمن وجنة الكافر
‘পার্থিব দুনিয়া মু’মিনের জন্য কয়েদখানা আর কাফিরের জন্য জান্নাত স্বরূপ।’ (সহীহ মুসলিম-৪/১/২২৭২) তারা অর্থাৎ কাফিররা আখিরাতের অবস্থান থেকে যে কোন ভাবেই তারা বিলম্ব হোক এটাই তারা কামনা করবে কিন্তু যার ভয় তারা পাচ্ছে তা ঘটবেই। তাদের কামনাকে যাদের কাছে কোন ঐশি কিতাব নেই এমন মুশরিকদের চেয়েও বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন, অনারাবদেরকে। (হাদীস সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম-২/২৬৩)
হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন যে, মুনাফিকদের ইহলৌকিক জীবনের লালসা কাফিরদের চেয়েও বেশি থাকে। এই ইয়াহূদীরা তো এক হাজার বছরের আয়ু চায়। তাইতো মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَ مَا هُوَ بِمُزَحْزِحِه مِنَ الْعَذَابِ اَنْ یُّعَمَّرَ﴾ ‘এক হাজার বছরের আয়ুও তাদেরকে শাস্তি হতে মুক্তি দিতে পারবে না।’ কাফিররা তো পরকালকে বিশ্বাসই করে না, কাজেই তাদের মরণের ভয় কম; কিন্তু ইয়াহূদীদের পরকালের প্রতি বিশ্বাস ছিলো, আবার তারা খারাপ কাজও করতো। এ জন্যই তারা মৃত্যুকে অত্যন্ত ভয় করতো। কিন্তু ইবলীসের সমান বয়স পেলেই কি হবে? শাস্তি হতে তো বাঁচতে পারবে না। (তাফসীর তাবারী ২/৩৭৬)
﴿وَ اللّٰهُ بَصِیْرٌۢ بِمَا یَعْمَلُوْنَ﴾
‘মহান আল্লাহ তাদের কাজ হতে বে-খবর নন।’ সকল বান্দার ভালো মন্দ কাজের তিনি খবর রাখেন এবং প্রত্যেকের কর্ম অনুপাতেই প্রতিদান দিবেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings