Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 8
Saheeh International
And of the people are some who say, "We believe in Allah and the Last Day," but they are not believers.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
‘নিফাক’ অর্থ কী
‘নিফাক’ এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ভালো গুণাবলী প্রকাশ করা ও মন্দ গুণাবলী গোপন করা। ‘নিফাক’ দু’ প্রকারঃ (১) বিশ্বাস জনিত ও (২) কাজ জনিত। প্রথম প্রকারের মুনাফিক তো চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং দ্বিতীয় প্রকারের মুনাফিক জঘন্যতম পাপী। ইনশা’আল্লাহ সঠিক স্থানে এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হবে।
ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন যে, মুনাফিকের কথা তার কাজের উল্টা, তার গোপনীয়তা তার প্রকাশ্যের বিপরীত। তার আগমন তার প্রস্থানের উল্টা এবং উপস্থিতি অনুপস্থিতির বিপরীত হয়ে থাকে। (তাফসীর তাবারী ১/২৭০)
মুনাফিকীর গোড়াপত্তন
নিফাক ও কপটতা মাক্কায় তো ছিলোই নেই, বরং সেখানে ছিলো তার বিপরীত। কিছু লোক এমন ছিলেন যাঁরা বাহ্যত ও আপাত দৃষ্টিতে কাফিরদের সাথে থাকতেন, কিন্তু অন্তরে ছিলেন মুসলিম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাক্কা ছেড়ে মাদীনায় হিজরত করেন তখন এখানকার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় আনসার উপাধি লাভ করে তাঁর সাথী হলেন ও অন্ধকার যুগের মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে মুসলিম হলেন। কিন্তু ইয়াহূদীরা তখনও যেই তিমিরের সেই তিমিরেই থেকে মহান আল্লাহর এ দান হতে সম্পূর্ণ রূপে বঞ্চিত থাকলো। তাদের মধ্যে শুধু ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম এই সত্য ধর্মের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তখন পর্যন্ত মুনাফিকদের জঘন্যতম দল সৃষ্টি হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব ইয়াহূদী ও ‘আরবের অন্যান্য কতকগুলো গোত্রের সাথে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এই দল সৃষ্টির সূচনা এভাবে হয় যে, মাদীনায় ইয়াহূদীদের ছিলো তিনটি গোত্রঃ (১) বানূ কাইনুকা, (২) বানূ নাযীর এবং (৩) বানূ কুরাইযাহ। বানু কাইনুকা ছিলো খাযরাজের মিত্র এবং বাকী দু’টি গোত্র ছিলো আউসের মিত্র। অল্প কিছু ইয়াহূদী ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে মাদীনায় কোন মুনাফিকের উপস্থিতি ছিলো না। কারণ তখন মুসলিমগণ এতোখানি শক্তিশালী ছিলো না যে, কাফিরদের মনে কোন ভয়-ভীতি সৃষ্টি হতে পারে। বদরের যুদ্ধে মহান আল্লাহ যখন ইসলাম ও এর অনুসারীদের বিজয় দান করেন তখন মাদীনার এক নেতা ছিলো ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবাই ইবনু সালূল খাযরাজ গোত্রের লোক হলেও আউস ও খাযরাজ উভয় দলের লোকই তাকে খুব সম্মান করতো। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বাদশাহ বলে ঘোষণা দেয়ার পূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিলো। এমতাবস্থায় আকস্মিকভাবে এই গোত্রের মন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলো। ফলে তার বাদশাহ হওয়ার আশার গুড়ে বালি পড়লো। এই দুঃখ, পরিতাপ তো তার অন্তরে ছিলোই, এদিকে ইসলামের অপ্রত্যাশিত ক্রমোন্নতি, আর ওদিকে যুদ্ধের উপর্যুপরি বিজয় দূরভিসন্ধি তাকে একেবারে পাগল প্রায় করে তুললো। এখন সে চিন্তা করলো যে, এমনিতে কাজ হবে না। অতএব সে ঝট করে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে নিলো এবং অন্তরে কাফির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। দলের যে কিছু লোক তার অধীনে ছিলো তাদেরকেও সে এই গোপন পন্থা বলে দিলো এবং এভাবেই মাদীনা ও তার আশেপাশে কপটাচারীদের একটি দল রাতারাতি কায়িম হয়ে গেলো। মহান আল্লাহর ফযলে এই কপটদের মধ্যে মাক্কার মুহাজিরদের একজনও ছিলেন না। আর থাকবেনই বা কেন? এই সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ তো নিজেদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও ধন-সম্পদ সবকিছু মহান আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এসেছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন।
সূরাহ্ বাক্বারার ৮ নং আয়াতের তাফসীর
মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই কপটচারীদের আউস ও খাযরাজ গোত্রভুক্ত ছিলো এবং কতক ইয়াহূদীও তাদের দলে ছিলো। এই আয়াতে আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের কপটতার বর্ণনা রয়েছে। (তাফসীর তাবারী ১/২৬৯) আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) হাসান বাসরী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং সুদ্দী (রহঃ) এটাই বর্ণনা করেছেন। বিশ্বনিয়ন্তা মহান আল্লাহ এখানে কপটাচারীদের অনেকগুলো বদ অভ্যাসের বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে মুসলিমগণ তাদের বাহ্যিক অবস্থা দেখে প্রতারিত না হয় এবং তাদেরকে মুসলিম মনে করে অসতর্ক না থাকে, নচেৎ একটা বিরাট হাঙ্গামা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এটা স্মরণ রাখা উচিত যে, অসৎকে সৎ মনে করার পরিণাম খুবই খারাপ ও ভয়াবহ। যেমন এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, তারা মুখে তো অবশ্যই স্বীকার করছে, কিন্তু অন্তরে ঈমান নেই। এভাবেই সূরাহ্ মুনাফিকূনেও বলা হয়েছেঃ
﴿اِذَا جَآءَكَ الْمُنٰفِقُوْنَ قَالُوْا نَشْهَدُ اِنَّكَ لَرَسُوْلُ اللّٰهِ١ۘ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ اِنَّكَ لَرَسُوْلُه﴾
‘মুনাফিকরা যখন তোমার নিকট আসে তখন তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহর রাসূল। আর মহান আল্লাহ জানেন যে, তুমি নিশ্চয়ই তাঁর রাসূল।’ (৬৩ নং সূরাহ্ মুনাফিকূন, আয়াত নং ১) কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকদের কথা তাদের বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো না বলেই তাদের জোরালো সাক্ষ্য দান স্বত্ত্বেও মহান আল্লাহ তাদেরকে স্পষ্টভাবে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করলেন। যেমন মহান আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ
﴿وَ اللّٰهُ یَشْهَدُ اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ لَكٰذِبُوْنَ﴾
‘আর মহান আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’ (৬৩ নং সূরাহ্ মুনাফিকূন, আয়াত নং ১)
তিনি আরো বললেনঃ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِیْنَ ‘তারা ঈমানদার নয়।’ (২ নং সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্, আয়াত নং ৮) তারা ঈমানকে প্রকাশ করে ও কুফরীকে গোপন রেখে নিজেদের বোকামীর দ্বারা মহান আল্লাহকে ধোকা দিচ্ছে এবং মনে করছে যে, এটা তাদেরকে মহান আল্লাহর কাছে উপকার ও সুযোগ সুবিধা দিবে এবং কতকগুলো মু’মিন তাদের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হবে।
কুর’আন মাজীদের অন্য স্থানে আছেঃ
﴿یَوْمَ یَبْعَثُهُمُ اللّٰهُ جَمِیْعًا فَیَحْلِفُوْنَ لَه كَمَا یَحْلِفُوْنَ لَكُمْ وَ یَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ عَلٰى شَیْءٍ اَلَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ الْكٰذِبُوْنَ﴾
‘যেদিন মহান আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন তাদের সকলকে, তখন তারা মহান আল্লাহর নিকট সেরূপ শপথ করবে যেরূপ শপথ তোমাদের নিকট করে এবং তারা মনে করে যে, এতে তারা উপকৃত হবে। সাবধান! তারাই তো মিথ্যাবাদী।’ (৫৮ নং সূরাহ্ মুজাদালাহ, আয়াত নং ১৮)
এখানেও তাদের ভুল বিশ্বাসের পক্ষে তিনি বলেন যে, প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের কাজের মন্দ পরিণতি সম্পর্কে অবহিতই নয়। এ ধোঁকা তো তারা নিজেদেরকেই দিচ্ছে। যেমন কুর’আনের অন্য জায়গায় ইরশাদ হচ্ছেঃ ﴿ اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللّٰهَ وَ هُوَ خَادِعُهُمْ﴾
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মহান আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে আর তিনি তাদেরকে ঐ প্রতারণার শাস্তি দেন।’ (৪ নং সূরাহ্ নিসা, আয়াত নং ১৪২) অর্থাৎ ফলাফল দান করেন।
এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, মুনাফিকরা মহান আল্লাহকে এবং মু’মিনদেরকে কিভাবে ধোঁকা দিবে তারা তো মনের বিপক্ষে যা কিছু প্রকাশ করে থাকে তা তো শুধু তাদের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে করে থাকে।
এর জবাব হলো, যে ব্যক্তি কোন বিপদ থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে এ রকম কথা বলে, ‘আরবী ভাষায় তাকে مخادع বলে। মুনাফিকরাও হত্যা, বন্দী হওয়া এবং ইহলৌকিক শাস্তি হতে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশ্যে এই চালাকি করতো এবং মনের বিপরীত কথা বাইরে প্রকাশ করতো, এজন্য তাদেরকে প্রতারক বলা হয়েছে। তাদের এ কাজ দুনিয়ার লোককে কিছু ধোঁকা দিলেও প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেকেই ধোঁকা দিচ্ছে। কারণ তার মধ্যে মঙ্গল ও সফলতা রয়েছে বলে তারা মনে করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা শাস্তি ও মহান আল্লাহর ক্রোধের কারণ হবে। ফলে তাদেরকে এমন শাস্তি দেয়া হবে যা তাদের সহ্য করার ক্ষমতা হবে না। সুতরাং এই প্রতারণা তাদের অশান্তির কারণ হবে। যে কাজের পরিণাম তারা নিজেদের জন্য ভালো মনে করছে তা তাদের অত্যন্ত খারাপ হবে। তাদের কুফরী, সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারণে তাদের প্রতিপালক তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় যে, তাদের বোধ শক্তি নেই।
ইবনু জুরাইজ (রহঃ)-এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেন যে, ‘লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহু’ কালিমা মুখে প্রকাশ করে তারা জীবনের নিরাপত্তা কামনা করে। এই কালিমাটি তাদের অন্তরে স্থান পায় না। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪৬)
কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, মুনাফিকদের অবস্থা এই-ইঃ তাদের মুখ পৃথক, অন্তর পৃথক, কাজ পৃথক, বিশ্বাস পৃথক, সকাল পৃথক, সন্ধ্যা পৃথক, তারা নৌকার মতো, যা বাতাসে কখনো এদিকে ঘুরে কখনো ওদিকে ঘুরে। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪৭)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings