Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 7
Saheeh International
Allah has set a seal upon their hearts and upon their hearing, and over their vision is a veil. And for them is a great punishment.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
‘খাতামা’ শব্দের অর্থ
মুফাস্সির সুদ্দী (রহঃ) বলেছেন যে, خَتَمٌ-এর অর্থ মোহর করে দেয়া। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪৪, তাফসীর কুরতুবী ১/১৮৭) কাতাদাহ (রহঃ) বলেনঃ ‘শায়তান তাদের ওপর বিপুলভাবে জয়লাভ করেছে এবং তারা তারই আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের অন্তরে ও কানে মহান আল্লাহর মোহর লেগে গেছে এবং চোখের ওপর পর্দা পড়ে গেছে। সুতরাং হিদায়াতকে দেখতেও পাচ্ছেনা, শুনতেও পাচ্ছেনা এবং তা বুঝতেও পারছেনা।’ (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪৪) মুজাহিদ (রহঃ) বলেনঃ ‘পাপ মানুষের অন্তরে চেপে বসে এবং তাকে চারদিক থেকে ঘিরে নেয়। এটাই হচ্ছে মোহর। অন্তর ও কানের জন্য প্রচলিত অর্থে মোহর।(তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৪৪) মুজাহিদ বলেন, পবিত্র কুর’আনে ران- طبع এবং أقفال এই তিন প্রকারের শব্দ এসেছে। ران শব্দটি طبع হতে কম এবং طبع শব্দটি اقفال হতে কম। আর اقفال সবচেয়ে বেশি। মুজাহিদ (রহঃ) তাঁর হাতটি দেখিয়ে বলেনঃ ‘অন্তর হচ্ছে হাতের তালুর মতো। বান্দার পাপের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বান্দা একটা পাপ করলে তখন তার কনিষ্ঠ আঙ্গুলটি বন্ধ হয়ে যায়। যখন দু’টি পাপ কাজ করলো তখন তার দ্বিতীয় আঙ্গুলও বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে সমস্ত আঙ্গুল বন্ধ হয়ে যায়। এখন মুষ্টি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেলো এবং এর ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবেই নিরন্তর পাপের ফলে অন্তরের ওপর কালো পর্দা পড়ে যায় এবং মোহর লেগে যায়। তখন আর সত্য তার মধ্যে ক্রিয়াশীল হয় না। (তাফসীর তাবারী ১/২৫৮)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ ‘উম্মাতের ইজমা‘ আছে যে, মহান আল্লাহ মোহর করাকেও নিজের একটি বিশেষ গুণ রূপে বর্ণনা করেছেন যে, মোহর কাফিরদের কুফরীর প্রতিদান স্বরূপ হয়ে থাকে। যেমন তিনি বলেনঃ ﴿بَلْ طَبَعَ اللّٰهُ عَلَیْهَا بِكُفْرِهِمْ﴾
বরং তাদের অবিশ্বাস হেতু মহান আল্লাহ ওদের অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন। (৪ নং সূরাহ্ নিসা, আয়াত নং ১৫৫)
হাদীসেও আছে যে, আল্লাহ তা‘আলা অন্তরকে পরিবর্তন করে থাকেন। প্রার্থনায় আছেঃ
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ.
‘হে অন্তরের পরিবর্তন আনয়নকারী! আমাদের অন্তরকে দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।’
হুযায়ফাহ (রাঃ) থেকে ফিতনার অধ্যায়ে একটি সহীহ হাদীস বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ
تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا
‘অন্তরের মধ্যে ফিতনা এমনভাবে উপস্থিত হয় যেমন ছেঁড়া মাদুরের একটা খড়কুটা। যে অন্তর তা গ্রহণ করে নেয় তাতে একটা কালো দাগ পড়ে যায় এবং যে অন্তরের মধ্যে এই ফিতনা ক্রিয়াশীল হয় না, তাতে একটা সাদা দাগ পড়ে যায়। আর সেই শুভ্রতা বাড়তে বাড়তে সম্পূর্ণ সাদা হয়ে গিয়ে সমস্ত অন্তরকে আলোকে উদ্ভাসিত করে দেয়। তারপর ফিতনা এই অন্তরের কোন ক্ষতি করতে পারে না। পক্ষান্তরে, অন্য অন্তরে কৃষ্ণতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় এবং শেষে সমস্ত অন্তরকে কালিমাময় করে দেয়। তখন তা উল্টানো কলসের মতো হয়ে যায়, ভালো কথাও তার ভালো লাগে না এবং মন্দ কথাও খারাপ লাগে না।’ (সহীহ মুসলিম ১/১২৮,১২৯, মুসনাদ আহমাদ ৫/৩৮৬, ৪০৫)
ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ)-এর ফায়সালা এই যে, সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ
إن المؤمن إذا أذنب ذنبًا كانت نُكْتة سوداء في قلبه فإن تاب ونزعَ واستعتب صقل قلبه، وإن زاد زادت حتى تعلو قلبه، فذلك الران الذي قال الله تعالى: { كَلا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ }
‘মু’মিন যখন পাপ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ হয়ে যায়। যদি সে পাপ কাজ হতে ফিরে আসে ও বিরত হয় তাহলে ঐ দাগটি আপনি সরে যায় এবং তার অন্তর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। আর যদি সে পাপ করতেই থাকে তাহলে সেই পাপও ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত অন্তরকে ছেয়ে ফেলে।’ এটাই সেই মরিচা যার বর্ণনা নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ
﴿كَلَّا بَلْٚ رَانَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ مَّا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ﴾
না এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মের ফলেই তাদের মনের ওপর মরিচা জমে গেছে। (৮৩ নং সূরাহ্ মুতাফ্ফিফীন, আয়াত নং ১৪/ সুনান নাসাঈ ৬/৫০৯, জামি‘ তিরমিযী ৫/৩৩৩৪, সুন্না ইবনু মাজাহ ২/৪২৪৪। তাফসীরে ত্বাবারী ১/৩০৪। হাদীস সহীহ) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে জানা গেলো যে, পাপের প্রাচুর্য অন্তরের ওপর পর্দা ফেলে দেয় এবং এর পরে মহান আল্লাহর মোহর হয়ে যায়। একেই বলে খাতাম এবং তবা।’ এরূপ অন্তরের মধ্যে ঈমান প্রবেশ করার ও কুফর বের হওয়ার আর কোন পথ থাকেনা। এই মোহরের বর্ণনাই এই আলোচ্য আয়াতে করা হয়েছে।
‘গিশাওয়াতু’ কী
এটা আমাদের চোখে দেখা যে, যখন কোন জিনিসের মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়, তখন যে পর্যন্ত মোহর ভেঙ্গে না যায় সে পর্যন্ত তার ভিতর কিছু যেতেও পারে না এবং তা থেকে কিছু বেরও হতে পারে না। এরকমই কাফিরদের অন্তরে ও কানে মহান আল্লাহর মোহর লেগে গেছে, সেই মোহর সরে না যাওয়া পর্যন্ত তার ভিতরে হিদায়াত প্রবেশ করতে পারবে না এবং তা থেকে কুফরও বেরিয়ে আসতে পারবে না। কারণ তাদের অন্তর সীল গালা করে দেয়া হয়েছে; শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। এর তাফসীরে সুদ্দী (রহঃ), ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হলো, তারা না বুঝতে পারে, আর না শুনতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন যে, তাদের দৃষ্টির ওপর একটি আবরণ এটে দেয়া হয়েছে, ফলে তারা দেখতে পায় না। (তাফসীর তাবারী ১/২৬৬) পবিত্র কুর’আনে আছেঃ
﴿اَمْ یَقُوْلُوْنَ افْتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًاۚ فَاِنْ یَّشَاِ اللّٰهُ یَخْتِمْ عَلٰى قَلْبِكَ وَ یَمْحُ اللّٰهُ الْبَاطِلَ وَ یُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمٰتِه اِنَّه عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ﴾
তারা কি বলে যে, সে মহান আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে? যদি তাই হতো তাহলে মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার হৃদয় মোহর করে দিতেন। মহান আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে তিনি তো সবিশেষ অবহিত। (৪২ নং সূরাহ্ শূরা, আয়াত নং ২৪) অন্য স্থানে আছেঃ
﴿ اَفَرَءَیْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوٰىهُ وَ اَضَلَّهُ اللّٰهُ عَلٰى عِلْمٍ وَّ خَتَمَ عَلٰى سَمْعِهٖ وَ قَلْبِهٖ وَ جَعَلَ عَلٰى بَصَرِهٖ غِشٰوَةً١ؕ فَمَنْ یَّهْدِیْهِ مِنْۢ بَعْدِ اللّٰهِ١ؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ﴾
তুমি কি লক্ষ্য করছো তাকে, যে তা খেয়াল খুশীকে নিজের মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছে? মহান আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় মোহর করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর ওপর রেখেছেন আবরণ। অতএব, কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (৪৫ নং সূরাহ্ জাসিয়া, আয়াত নং ২৩)
মুনাফিকের পরিচয়
সূরার প্রথম চারটি আয়াতে মু’মিনদের বিশেষণ বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর এই দু’টি আয়াতে কাফিরদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখন কপটচারী মুনাফিকদের বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে যারা বাহ্যত ঈমানদাররূপে প্রকাশ পায়, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ও গোপনে তারা কাফির। সাধারণত তাদের চতুরতা গোপন থেকে যায় বলে তাদের আলোচনা কিছুটা বিস্তারিতভাবে হয়েছে এবং তাদের অনেক নিদর্শনও বর্ণনা করা হয়েছে। তাদেরই সম্বন্ধে সূরাহ্ বারা’আত অবতীর্ণ হয়েছে এবং সূরাহ্ নূর ইত্যাদিতে তাদের সম্বন্ধেই আলোচনা রয়েছে যাতে তাদের থেকে পূর্ণভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এবং মুসলিমরা তাদের জঘন্য ও নিন্দনীয় স্বভাব থেকে দূরে সরে থাকতে পারে। তাই মহান আল্লাহ বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছেনঃ (পরবর্তী আয়াত দেখুন)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings