Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 67
Saheeh International
And [recall] when Moses said to his people, "Indeed, Allah commands you to slaughter a cow." They said, "Do you take us in ridicule?" He said, "I seek refuge in Allah from being among the ignorant."
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
বানী ইসরাঈলের নিহত ব্যক্তি ও গাভীর ঘটনা
মহান আল্লাহ বলেন, হে বানী ইসরাঈলগণ! তোমরা আমার নি‘য়ামতের কথা স্মরণ করো, অর্থাৎ গরুর মাধ্যমে একজন নিহত লোককে জীবিত করে এবং তার হত্যাকারীর পরিচয় দান করে যে অনুগ্রহ করেছি তা স্মরণ করো। এটি একটি অলৌকিক ঘটনাই বটে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন ‘উবাইদা আস সালমানী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে এক ধনী বন্ধ্যা লোক ছিলো, তার কোন সন্তানাদি ছিলো না। তার উত্তরাধিকারী ছিলো তার এক ভ্রাতুস্পুত্র। উত্তরাধিকারী প্রাপ্তির আশায় সে তার পিতৃব্যকে হত্যা করে এবং রাতে তাদের গ্রামের একটি লোকের দরজার ওপরে রেখে আসে। সকালে গিয়ে ঐ লোকটির ওপর হত্যার অপবাদ দেয়। অবশেষে উভয় দলের লোকদের মধ্যে মারামারি ও খুনাখুনি হওয়ার উপক্রম হয়। এমন সময় তাদের জ্ঞানী লোকেরা তাদেরকে বলেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহর রাসূল মূসা (আঃ) বিদ্যমান থাকতে তোমরা কেন একে অপরকে হত্যা করবে? সুতরাং তারা মূসা (আঃ)-এর নিকট এসে ঘটনাটি বর্ণনা করে। তিনি তাদেরকে বলেনঃ ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু যবেহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন।’ এ কথা শুনে তারা বললোঃ ‘আপনি কি আমাদের সাথে উপহাস করছেন? তিনি বলেনঃ ‘মূর্খদের ন্যায় কাজ করা হতে আমি মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।’ তারা যদি কোন একটি গরু যবেহ করতো তাহলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা কাঠিন্য অবলম্বন করে, সুতরাং মহান আল্লাহ তাদের ওপর তা কঠিন করে দেন।
অতঃপর তারা মহান আল্লাহর বর্ণিত নির্ধারিত গরু একটি লোকের নিকট প্রাপ্ত হয়। একমাত্র তার নিকট ছাড়া ঐ রূপ গরু আর কারো কাছে ছিলো না। লোকটি বলেঃ ‘মহান আল্লাহর শপথ! এই গরুর চামড়া পূর্ণ স্বর্ণের কম মূল্যে আমি এটা বিক্রি করবো না।’ সুতরাং তারা ঐ মূল্যেই তা কিনে নেয় এবং যবেহ করে। তারপর তারা এর এক খণ্ড মাংস দ্বারা নিহত ব্যক্তির ওপর আঘাত করে। তখন মৃত লোকটি দাঁড়িয়ে যায়। লোকগুলো তাকে জিজ্ঞেস করেঃ তোমাকে কে হত্যা করেছে? সে বলেঃ আমার এই ভ্রাতুস্পুত্র। এ কথা বলেই সে পুনরায় মরে যায়। সুতরাং ভ্রাতুস্পুত্রকে মৃত ব্যক্তির কোন মাল দেয়া হলো না। অতঃপর সাব্যস্ত হয়েছে যে, কোন ব্যক্তির সম্পদ লাভের অসৎ উদ্দেশে যদি কেউ তাকে হত্যা করে তাহলে মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে ঐ হত্যাকারী কোন কিছুই প্রাপ্ত হবে না। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/১১৪) ইবনু জারীর (রহঃ)-ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ ভালো জানেন। ‘আব্দ ইবনু হুমাইদ (রহঃ)ও স্বীয় তাফসীরে ইয়াযিদ ইবনু হারূন থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
আদম ইবনু ইয়াস স্বীয় তাফসীরে আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, বানী ইসরাঈলদের মাঝে একজন ধনী লোক ছিলো, তার কোন সন্তানাদি ছিলো না। তবে তার একজন নিকটাত্মীয় ছিলো সে তার ওয়ারিস ছিলো। অতঃপর সে তাকে হত্যা করলো যাতে সে দ্রুত সম্পদ পেয়ে যায়। ফলে সে হত্যা করে মৃত ব্যক্তিকে লোকালয়পূর্ণ রাস্তায় রেখে যায়। অতঃপর সে মূসা (আঃ)-এর কাছে এসে বলে যে, আমার নিকটাত্মীয়কে হত্যা করা হয়েছে আর এ বিষয়ে আমি খুব কিংকর্তব্যবিমুঢ়। আর এমতাবস্থায় আমি আপনাকে ব্যতীত এমন কাউকে পাচ্ছি না, যে আমার আত্মীয়ের হত্যাকারীর সন্ধান দিবে। তখন মূসা (আঃ) সমবেত জনগণের উদ্দেশ্যে বললেন, মৃত ব্যক্তির হত্যাকারীর কোন সন্ধান তোমাদের কারো কাছে থাকলে সে যেন তা আমাদেরকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু জনগণ কোন তথ্য দিতে পারলো না। ফলে হত্যা কারী নিজেই সামনে অগ্রসর হয়ে মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বললো আপনি তো একজন নবী কাজেই মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেই এর সমাধান পাওয়া যাবে। অতঃপর মহান আল্লাহ গাভী যবেহ করার নির্দেশ দিলেন। এ নির্দেশ শোনে বানী ইসরাঈলরা খুবই বিস্মিত হলো এবং বললো ‘আপনি কি আমাদের সাথে উপহাস করছেন? তিনি বলেনঃ ‘মূর্খদের ন্যায় কাজ করা হতে আমি মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।’ তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো তা কীরূপ’? মূসা (আঃ) বললো, ‘মহান আল্লাহ বলছেন, তা এমন এক গরু যা বৃদ্ধও নয় এবং অল্প বয়স্কও নয় বরং মধ্য বয়সী। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো, এর রং কী’? মূসা বললো, ‘মহান আল্লাহ বলছেন, তা হলুদ বর্ণের গরু, তার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শকদের আনন্দ দেয়’। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো গরুটি কেমন? কারণ সব গরু আমাদের কাছে সমান। আর মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় আমরা পথের দিশা পাবো।’ মূসা (আঃ) বললো, ‘তিনি বলছেন, তা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং সুস্থ ও নিখুঁত’। তারা বললো, ‘এখন তুমি সত্য প্রকাশ করেছো’। তারা তাকে যবেহ করলো যদিও তাদের জন্য সেটা প্রায় অসম্ভব ছিলো। (২ নং সূরাহ আল বাকারা, আয়াত-৬৮-৭১) তারা নির্দেশ পেয়ে যে কোন একটি গরু যবেহ করলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা নিজেদের ওপর কঠোরতা করলো ফলে তাদের ওপর আরো কঠিন করে দেয়া হলো। তারা যদি একপর্যায়ে إنشاء الله لمهتدون وإنا ‘মহান আল্লাহ চাহেতো আমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত হবো’ এ কথা না বলতো তাহলে তারা কখনো এর সমাধান করতে পারতো না। অতএব আমাদের কাছে এ মর্মে সংবাদ এসেছে যে, উল্লিখিত বিশেষণ সম্বলিত গাভী অনুসন্ধান করতে করতে ইয়াতীম লালন-পালনকারী একজন বৃদ্ধার নিকট পেলো। গাভীটি লোকদের নিকট খুবই দুর্লভ ছিলো। তাই বৃদ্ধা যখন জানতে পারলো যে, এই গাভীই তাদের একমাত্র অবলম্বন যা ক্রয় ব্যতীত তাদের অন্য কোন উপায় নেই, তখন সে তার মূল্য খুব বেশি চাইলো। ফলে তারা ফিরে এসে মূসা (আঃ)-এর কাছে বিষয়টি অবহিত করলো যে তারা অনেক অনুসন্ধানের পর একজন বৃদ্ধার কাছে পেয়েছে বটে কিন্তু মূল্য খুব বেশি চাচ্ছে। উত্তরে মূসা (আঃ) বললেন, মহান আল্লাহ তো প্রথমে তোমাদের ওপর হালকাভাবেই নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু তোমরা নিজেরা নিজেদের ওপর কঠোরতা করে নিয়েছো। কাজেই তারা যা চায় তা দিয়েই গাভীটি ক্রয় করে আনো। ফলে তারা তাই করলো এবং গাভীটি যবেহ করলো। অতঃপর মূসা (আঃ) গাভীটির একটি হাড় দিয়ে নিহত ব্যক্তিকে আঘাত করার নির্দেশ দিলেন। তারা তাই করলো। ফলে মৃত ব্যক্তি রূহ ফিরে পেয়ে তথা জীবিত হয়ে তার হত্যাকারীর নাম বলে আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। অতঃপর হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হলো। আর সে ঐ ব্যক্তি ছিলো যে নিজেই হত্যা করে নিহত ব্যক্তির হত্যাকারী কে হতে পারে মর্মে মূসা (আঃ)-এর কাছে তথ্য জানতে গিয়েছিলো। তারপর মহান আল্লাহর নির্দেশে জনগণ তথা বানী ইসরাঈলের লোকেরা মন্দের তথা হত্যা কাজের প্রতিশোধ স্বরূপ হত্যাকারীকেও হত্যা করে।
গাভী সম্পর্কে কিছু বিবরণ
মুহাম্মাদ ইবনু জারীর (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে গাভীটির বিবরণ দিয়ে বর্ণনা করেন যে, মূসা (আঃ)-এর যুগে বানী ইসরাঈলের মাঝে একজন বৃদ্ধ লোক ছিলো। যার অনেক সম্পদ ছিলো। আর তারই কিছু ভ্রাতুস্পুত্র ছিলো যারা ছিলো সহায়-সম্পদহীন অভাবী ব্যক্তিবর্গ। আর এদিকে ঐ অঢেল সম্পদের অধিকারী বৃদ্ধ লোকটির কোন সন্তান-সন্ততি না থাকায় তার ভ্রাতুস্পুত্রগণই ছিলো তার একমাত্র ওয়ারিস। অতএব তারা পরস্পরে বলতে লাগলো যে, আমাদের চাচা যদি মারা যেতো তাহলেই তো আমরা তার সম্পদগুলো প্রাপ্ত হয়ে অভাবমুক্ত হতে পারতাম। কিন্তু দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে থাকলো অথচ বৃদ্ধ মৃত্যুবরণ না করায় একপর্যায়ে শায়তান এসে তাদেরকে পরামর্শ দিলো যে, তোমরা কি তোমাদের বৃদ্ধ চাচাকে হত্যা করবে না? তাহলেই তো তোমরা তার সম্পদ পেয়ে যাও এবং অপর শহর বাসীর ওপর হত্যার দোষ চাপিয়ে তারও তোমরা দিয়ত তথা মুক্তিপণ নিতে পারতে। আর এ কথা বলার কারণ হলো সেখানে দু’টি গ্রাম বা শহর ছিলো একটিতে বৃদ্ধলোকটিসহ তার আত্মীয়-স্বজন বাস করতো অন্যটিতে অপর লোকেরা বাস করতো। আর পূর্বে থেকেই নিয়ম চালু ছিলো যে নিহত ব্যক্তি যেই হোক না কেন যে গ্রাম বা শহরের নিকটবর্তী হবে তারাই মাকতুলের দিয়ত বা মুক্তিপণ পরিশোধ করবে।
অতএব শায়তান তাদেরকে প্ররোচিত করতে থাকলো আর এদিকে বৃদ্ধ চাচা মৃত্যু বরণ না করে সময় আরো দীর্ঘায়িত হতে লাগলো। ফলে তারা বৃদ্ধকে হত্যা করে অন্য গ্রামে বা শহরের প্রান্তে রেখে আসে। আর পরদিন সকাল বেলা মৃত ব্যক্তির ভাতিজাবর্গ উক্ত শহরের লোকদের উদ্দেশ্যে বলে যে, যেহেতু চাচার লাশ তোমাদের এলাকায় পাওয়া গিয়েছে তাই তোমরা এর দিয়ত বা মুক্তিপণ দাও। প্রতি উত্তরে উক্ত শহরবাসী বললো, আমরা মহান আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আমরা না তাকে হত্যা করেছি আর না তার হত্যাকারীকে আমরা চিনি। তাছাড়া শহরের গেট বন্ধ করার পর আমরা প্রভাত না হওয়া পর্যন্ত কখনো শহরের গেটে খোলাও হয়নি। অবশ্য জিবরাঈল আমীন সামী‘উল ‘আলীম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এসে থাকে। হয়তো তার মাধ্যমে এর সমাধান পাওয়া যাবে। এরপরই জিবরাঈল আমীন মূসা (আঃ)-কে বললেন, তুমি তাদেরকে বলো, اِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ اَنْ تَذْبَحُوْا بَقَرَةً ‘মহান আল্লাহ তোমাদের একটি গরু যবেহ করার আদেশ দিচ্ছেন’। (হাদীসের সনদটি য‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী ১/১৮৫)
আর সুদ্দী (রহঃ) বলেন, পূর্ব যুগে একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন এবং তার একজন কন্যাও ছিলো। আর একজন অভাবী ভাতিজাও ছিলো। অতএব ভাতিজা চাচার মেয়েকে তার সাথে বিবাহ দেয়ার জন্যে অনুরোধ করলো। কিন্তু চাচা তার সাথে আপন কন্যাকে বিবাহ দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। এতে যুবক ভাতিজা রেগে যায়। আর শপথ করে বলে যে, আমি অবশ্যই আমার চাচাকে হত্যা করবো এবং তার সমস্ত সম্পদ হস্তগত করবো। তার মেয়েকেও বিবাহ করবো এবং তার মুক্তিগণ গ্রহণ করে নিজেই তা ভক্ষণ করবো। অতএব যুবকটি তার চাচার নিকট এসে বানী ইসরাইলের বাণিজ্যিক কাফিলার কথা উল্লেখ করে বললো চাচা! আমার সাথে গিয়ে অমুক বাণিজ্যিক কাফিলার নিকট থেকে কিছু নিয়ে দিন। কেননা তারা আমাকে দিতে চাইবে না কিন্তু আপনাকে দেখলে তারা হয়তো না করবে না। ভ্রাতুস্পুত্রের প্রতি সদয় হয়ে চাচা কোন এক রাতে তার সাথে বের হয়ে যখন কাফিলার নিকট পৌছলো। তখন ভাতিজা চাচাকে হত্যা করে সেখানে ফেলে রেখে নিজ বাড়ীতে ফিরে আসে। অতঃপর পরদিন প্রত্যুষে চাচার সন্ধানে বের হয়ে কোথাও তাকে পেলো না, অবস্থা যেন এমন যে, সে কিছু জানেই না। একপর্যায়ে উক্ত বাণিজ্যিক কাফিলার নিকট গিয়ে সম্মিলিত জনগণ দেখতে পেয়ে বললো তোমরাই আমার চাচাকে হত্যা করেছো। অতএব তার দিয়াত বা মুক্তিপণ আমার নিকট হস্তান্তর করো। এই বলে সে ক্রন্দনরত অবস্থায় মুষ্ঠি ভর্তি করে মাথায় ছিটাচ্ছিল আর হায় চাচা! বলে বিলাপ করতেছিলো। অতঃপর বাণিজ্যিক কাফিলার লোকগণ বিষয়টি মূসা (আঃ)-এর নিকট অবহিত করলো। মূসা (আঃ) পূর্বের নিয়মানুযায়ী তাদেরকে দিয়াত বা মুক্তিপণ আদায় করতে বললেন। তারা বললো, হে মহান আল্লাহর রাসূল! প্রকৃত হত্যাকারী কে হতে পারে তা জানার জন্য আপনি মহান আল্লাহর দরবারে একটু আবেদন করুন। যাতে তার থেকেই দিয়াত আদায় করা যায়। মহান আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি মৃত ব্যক্তির দিয়ত পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে এমনটি নয়। বরং আমরা লজ্জাবোধ করছি যে আজীবন আমাদেরকে দোষারোপ করা হবে। তখনই মহান বললেনঃ
﴿وَ اِذْ قَتَلْتُمْ نَفْسًا فَادّٰرَءْتُمْ فِیْهَا وَ اللّٰهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ﴾
‘স্মরণ করো! তোমরা যখন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করছিলে, তোমরা যা গোপন করছিলে মহান আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিলেন।’ (২ নং সূরাহ আল বাকারা, আয়াত-৭২) অতঃপর মূসা (আঃ) বললেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করার আদেশ দিচ্ছেন’। তারা বললো আমরা তোমাকে আবেদন করলাম নিহত ব্যক্তি ও তার হত্যাকারী সম্পর্কে জানার জন্য। আর আপনি বলছেন তোমরা একটি গাভী যবেহ করো। নিহত ব্যক্তির সাথে গাভীর সম্পর্ক কি? আপনি কি আমাদের সাথে উপহাস করছেন? ‘মূসা (আঃ) বললো, মহান আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, যাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হই।’ ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) বলেন, তারা যদি যে কোন একটি গাভী যবেহ করতো তাহলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করে মূসা (আঃ)-কে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো। ফলে মহান আল্লাহ তাদের ওপর কঠিন করে দিলেন। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো তা কীরূপ’? মূসা (আঃ) বললো, ‘মহান আল্লাহ বলছেন, তা এমন এক গরু যা বৃদ্ধও নয় এবং অল্প বয়স্কও নয় বরং মধ্য বয়সী। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো, ওর রং কী’? মূসা বললো, ‘মহান আল্লাহ বলছেন, তা হলুদ বর্ণের গরু, তার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শকদের আনন্দ দেয়’। তারা বললো, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলো গরুটি কেমন? কারণ সব গরু আমাদের কাছে সমান। আর মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় আমরা পথের দিশা পাবো।’ মূসা বললো, ‘তিনি বলছেন, তা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং সুস্থ ও নিখুঁত’। তারা বললো, ‘এখন তুমি সত্য প্রকাশ করেছো’। (২ নং সূরাহ আল বাকারা, আয়াত-৬৮-৭১) অতঃপর তারা অনুরূপ গাভী অনুসন্ধানে বের হয়ে তার কোনরূপ সন্ধান পেলো না।
এদিকে বানী ইসরাঈলদের মাঝে পিতার বাধ্য একজন নেককার লোক ছিলো। একবার তার পিতা মাথার নিচে টাকার বাক্সের চাবি রেখে ঘুমিয়ে গেলেন। ইত্যবসরে একজন মোতি বিক্রেতা এসে ছেলেটিকে বলে, আমার এই মোতিটি কি তুমি ৭০ (সত্তর) হাজার দিরহাম বা দিনার এর বিনিময়ে ক্রয় করবে? তখন পিতা মাতার বাধ্য ছেলেটি পিতাকে দেখিয়ে বললো আপনি একটু আমার পিতার জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর তখন আমি এটা আপনার নিকট থেকে ৮০ (আঁশি) হাজার এর বিনিময়ে ক্রয় করবো। তখন অন্য একজন বললো তোমার পিতাকে ডাক দিয়ে জাগ্রত করো। এটা তোমাকে ৬০ হাজারের বিনিময়েই দিয়ে দিবো। বণিক লোকটি সর্বদা মূল্য কমাতে কমাতে ৩০ হাজারে পৌছলো। আর ছেলেটি পিতার জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে মূল্য বৃদ্ধি করে পরিশোধ করবে বলে অনুরোধ করতে করতে একপর্যায়ে তা এক লাখ দিবো বলে প্রতিশ্র“তি দেয়। কিন্তু বণিক লোকটি যখন আরো বাড়ারাড়ি করলো তখন ছেলেটি মহান আল্লাহর শপথ দিয়ে বললো আমি এখন আর তা কোন কিছুর বিনিময়েই ক্রয় করবো না এবং সে কিছুতেই পিতাকে জাগ্রত করতে রাযী হলো না। অবশেষে বণিক লোকটি অসন্তুষ্ট হয়ে মোতি নিয়ে ফিরে চলে যায়। ছেলেটি যে তার পিতার আরামের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে এবং তার সম্মান ও মর্যাদা বুঝেছে, এ কারণে মহান আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে এ গাভীটি দান করেন। বানী ইসরাইলের লোকেরা ওপরে বর্ণিত গুণ সম্বলিত গাভী খুঁজতে খুঁজতে পেরেশান হয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে পিতার বাধ্য এই ছেলেটির নিকট তারা পেলো। সুতরাং তারা তাকে বলে যে, তোমার এ গাভীটি অন্য একটি গাভীর বিনিময়ে আমাদের নিকট বিক্রি করে দাও। কিন্তু সে তাতে রাযী হলো না। তারা বললো তাহলে দু’টি গাভীর বিনিময়ে আমাদের নিকট বিক্রি করে দাও। কিন্তু সে তাতেও রাযী হলো না। এক পর্যায়ে তারা বৃদ্ধি করে বলতে বলতে ১০টি পর্যন্ত বললো তবুও ছেলেটি রাযী হলো না। তারা বললো আমরা এটা তোমার থেকে না নিয়ে ছাড়বো না। অতঃপর তারা ছেলেটিকে নিয়ে মূসা (আঃ)-এর নিকট গেলো এবং অভিযোগ করলো যে, হে মহান আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা উক্ত গুণের অধিকারী গাভীটি এই ছেলের নিকট পেয়েছি কিন্তু অনেক মূল্য বলা সত্ত্বেও সে দিতে রাযী হচ্ছে না। তখন মূসা (আঃ) বললেন, হে ছেলে তোমার গাভীটি তাদেরকে দিয়ে দাও। তখন ছেলেটি বললো হে মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার সম্পদের ব্যাপারে আমিই বেশি হকদার। মূসা (আঃ) বললেন, তুমি সত্যিই বলেছো। এরপর তিনি কাওমের লোকদেরকে বললেন তোমরা তোমাদের এই সাথীকে যে কোন মূল্যে রাযী করাও। প্রয়োজনে গাভীর ওযন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে দাও। তাতেও সে সম্মত না হওয়ায় বৃদ্ধি করতে করতে এক পর্যায়ে দশ গুণ পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে তা ক্রয় করে। অতঃপর গাভীটি যবেহ করা হয় এবং এর গোশত খণ্ড দিয়ে নিহত ব্যক্তির শরীরে আঘাত করা হয়। তখন মহান আল্লাহর হুকুমে সে জীবিত হয়ে উঠে। আর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তোমাকে হত্যা করেছিলো কে? সে উত্তরে বলে আমার এই ভ্রাতুস্পুত্র আমার সম্পদ অধিকারের জন্য ও আমার মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে আমাকে হত্যা করেছিলো এটুকু বলার পরই সে পুনরায় মরে যায়। এখন হত্যাকারীকে চেনা যায় এবং এ হত্যার ফলে বানী ইসরাইলের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিলো তা প্রশমিত হয়। অতঃপর জনগণ মৃত ব্যক্তির ভ্রাতুস্পুত্রকে ধরে কিসাস স্বরূপ তাকে হত্যা করে। এ গল্পটি বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত আছে, ¯পষ্ট ভাবে জানা যাচ্ছে যে, এটা বানী ইসরাইলের সে যুগের ঘটনা। আমরা একে সত্যও বলতে পারি না এবং মিথ্যাও বলতে পারি না। মহান আল্লাহ সর্ববিষয়ে ভালো জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings