Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 66
Saheeh International
And We made it a deterrent punishment for those who were present and those who succeeded [them] and a lesson for those who fear Allah .
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
ইয়াহূদীদের প্রতিশ্রতি ভঙ্গ এবং চেহারার পরিবর্তন
সূরাহ্ আ‘রাফের ১৬৩ নং আয়াতে এ ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। সেখানে এর তাফসীরও ইনশা’আল্লাহ পূর্ণভাবে করা হবে। ঐ লোকগুলো আইলা নামক গ্রামের অধিবাসী ছিলো। শনিবার দিনের সম্মান করা তাদের ওপর ফরয করে দেয়া হয়েছিলো। ঐ দিন শিকার করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। আর মহান আল্লাহর হুকুমে সেই দিনই নদীর তীরে মাছ খুব বেশি আসতো। তারা একটা কৌশল অবলম্বন করতো। একটা গর্ত খনন করে শনিবারে এর মধ্যে জাল, রশি ও ঝোপ-ঝাড় ফেলে রাখতো। শনিবার মাছসমূহ ঐ ফাঁদে পড়তো এবং রোববার রাতে তারা সেগুলো ধরে নিতো। ঐ অপরাধের কারণে মহান আল্লাহ তাদের রূপ পাল্টে দেন।
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, তাদের আকার পরিবর্তন হয়নি। বরং অন্তর পরিবর্তন হয়েছিল। এটা শুধুমাত্র উপমা দেয়ার জন্য আনা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ‘আমলহীন ‘আলিমের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন গাধার সাথে। কিন্তু এ উক্তিটি দুর্বল। তাছাড়া এটা কুর’আনুল কারীমের প্রকাশ্য শব্দের বিপরীত।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যুবকেরা বানর হয়েছিলো এবং বুড়োরা শূকর হয়েছিলো। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/২১০) কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, নারী পুরুষ সবাই লেজযুক্ত বানর হয়ে গিয়েছিলো। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/২০৯) আকাশ থেকে বাণী হয়ঃ ‘তোমরা সব বানর হয়ে যাও।’ আর তেমনই সব বানর হয়ে যায়। যেসব লোক তাদেরকে ঐ কৌশল অবলম্বন করতে নিষেধ করেছিলো তারা তখন তাদের নিকট এসে বলতে থাকেঃ ‘আমরা কি তোমাদেরকে পূর্বেই নিষেধ করিনি?’ তখন তারা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, অল্প সময়ের মধ্যে তারা সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি হয়নি। (হাদীসটির সনদ হাসান। তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/২০৯) দুনিয়ার কোন আকার পরিবর্তিত বিকৃত গোত্র তিন দিনের বেশি বাঁচেনি। এরাও তিন দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। নাক ঘসতে ঘসতে তারা সব মারা যায়। পানাহার ও বংশ বৃদ্ধি সবই বিদায় নেয়। যে বানরগুলো এখন আছে এবং তখনও ছিলো, এরা তো জন্তু এবং এরা গতানুগতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ যা চান এবং যেভাবে চান সেভাবেই সৃষ্টি করেন। (তাফসীর তাবারী ২/১৬৭) তিনি মহান, ক্ষমতাবান।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
ইবনু ‘আব্বাস (হাদীসটির সনদ য‘ঈফ) (রাঃ) বলেন যে, শুক্রবারের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা তাদের ওপর ফরয করা হয়, কিন্তু তারা শুক্রবারের পরিবর্তে শনিবারকে পছন্দ করে। ঐ দিনের সম্মানার্থে তাদের জন্য ঐ দিন শিকার করা হারাম করা হয়। এদিকে মহান আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে ঐদিনই সমস্ত মাছ নদীর ধারে চলে আসতো এবং লাফ-ঝাঁপ দিতো। অন্য দিন সেগুলো দেখাই যেতো না। কিছু দিন পর্যন্ত তো ঐসব লোক নীরবই থাকে এবং শিকার করা হতে বিরত থাকে। একদিন এদের মধ্যে এক লোক এই ফন্দি বের করে, শনিবার মাছ ধরে জালের মধ্যে আঁটকে দেয় এবং তীরের কোন জিনিসের সাথে বেঁধে রাখে। এরপর রোববার দিন গিয়ে সেগুলো বের করে নেয় এবং বাড়ীতে এনে রান্না করে খায়। মাছের সুঘ্রাণ পেয়ে লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলেঃ ‘আমি তো আজ রোববার মাছ শিকার করেছি।’ অবশেষে এ রহস্য প্রকাশ হয়ে যায়। লোকেরাও ঐ কৌশল পছন্দ করে এবং ঐভাবে তারাও মাছ শিকার করতে থাকে। কেউ কেউ নদীর তীরে গর্ত খনন করে। শনিবার মাছগুলো ঐ গর্তের ভিতরে জমা হলে তারা এর মুখ বন্ধ করে দিতো। রোববার ধরে নিতো। তাদের মধ্যে যারা খাঁটি মু’মিন ছিলো তারা তাদেরকে এ কাজে বাধা দিতো এবং নিষেধ করতো। কিন্তু তাদের উত্তর এই হতো ‘আমরা তো শনিবার শিকারই করি না, শিকার করি আমরা রোববার।’
শিকারীরা ও নিষেধকারীদের ছাড়া আরো একটি দল সৃষ্টি হয়, যারা দুই দলকেই সন্তুষ্ট রাখতো। তারা নিজেরা শিকার করতো না বটে, কিন্তু যারা শিকার করতো তাদেরকে নিষেধও করতো না। বরং নিষেধকারীগণকে বলতোঃ
﴿لِمَ تَعِظُوْنَ قَوْمَا١ۙ اِ۟للّٰهُ مُهْلِكُهُمْ اَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِیْدًا١ؕ قَالُوْا مَعْذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ یَتَّقُوْنَ﴾
‘তোমরা এমন সম্প্রদায়কে উপদেশ কেন দিচ্ছো যাদেরকে মহান আল্লাহ ধ্বংস করবেন কিংবা কঠিন শাস্তি দিবেন? তোমরা তো তোমাদের কর্তব্য পালন করেছো যেহেতু তাদেরকে নিষেধ করেছো। তারা যখন মানছে না তখন তাদেরকে তাদের কাজের ওপর ছেড়ে দাও।’ তখন নিষেধকারীগণ উত্তর দিতোঃ ‘প্রথমতঃ এ জন্য যে, আমরা মহান আল্লাহর নিকট ওযর পেশ করতে পারবো। দ্বিতীয়তঃ এ জন্যও যে, তারা হয়তো আজ না হয় কাল কিংবা কাল না হয় পরশু আমাদের কথা মানতে পারে এবং মহান আল্লাহর কঠিন শাস্তি হতে মুক্তি পেয়ে যেতে পারে।’ (৭ নং সূরাহ আল আ‘রাফ, আয়াত নং ১৬৪) অবশেষে এই মু’মিন দলটি সেই কৌশলীদল হতে সম্পূর্ণ রূপে সম্পর্ক ছিন্ন করলো এবং তাদের থেকে পৃথক হয়ে গেলো। গ্রামের মধ্যস্থলে একটি প্রাচীর দিয়ে দিলো। একটি দরজা দিয়ে এরা যাতায়াত করতো এবং অপর দরজা দিয়ে ঐ ফাঁকিবাজরা যাতায়াত করতো। এভাবেই দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়। হঠাৎ এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। একবার রাত্রি শেষে ভোর হলো। মু’মিনরা সব জেগে উঠেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ঐ ফাকিবাজরা তাদের দরজা খুলছে না এবং কোন সাড়া শব্দও পাওয়া যাচ্ছেনা। মু’মিনরা বিষ্মিত হলেন যে, ব্যাপার কি? অনেক বিলম্বের পরেও যখন তাদের কোন খোঁজ পাওয়া গেলো না তখন তারা প্রাচীরের ওপর উঠে গেলো। সেখানে এক বিষ্ময়কর দৃশ্য তারা অবলোকন করলো। তারা দেখলো যে, ঐ ফন্দিবাজরা নারী ও শিশুসহ সবাই বানর হয়ে গেছে। তাদের ঘরগুলো রাতে যেমন বন্ধ ছিলো ঐরূপ বন্ধই আছে, আর ভিতরের সমস্ত মানুষ বানরের আকার বিশিষ্ট হয়ে গেছে এবং তাদের লেজও গজিয়েছে। শিশুরা ছোট বানর, পুরুষেরা বড় বানর এবং নারীরা বানরীতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেককেই চেনা যাচ্ছে যে, এ অমুক লোক সে অমুক নারী এবং এ অমুক শিশু ইত্যাদি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, মহান আল্লাহ যদি নিষেধকারীদলকে রক্ষা করেছেন মর্মে সংবাদ না দিতো তাহলে আমরা বলতাম মহান আল্লাহ তাদের সবাইকে ধ্বংস করেছেন। তিনি আরো বলেন এটাই হলো সেই গ্রাম যার সম্পর্কে মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ বলেনঃ
﴿وَسْـَٔلْهُمْ عَنِ الْقَرْیَةِ الَّتِیْ كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ﴾
‘তাদের জিজ্ঞেস করো ঐ জনবসতি সম্পর্কে যা সমুদ্রের উপকূলে বিদ্যমান ছিলো।’ (৭ নং সূরাহ আল আ‘রাফ, আয়াত-১৬৩)
এতে যে শুধু মাছ শিকারকারীরাই ধ্বংস হয়েছিলো তা নয়, বরং যারা তাদেরকে শুধু নিষেধ করেই চুপচাপ বসে থাকতো এবং তাদের সাথে মেলা-মেশা বন্ধ করতো না তারাও ধ্বংস হয়েছিলো। এ শাস্তি থেকে শুধুমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছিলো যারা তাদেরকে নিষেধ করে তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়েছিলো।
যে ইয়াহূদীদের বানর ও শুকরে রূপান্তিরত করা হয়েছিলো তাদের বংশধর বর্তমানের বানর ও শুকর নয়
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ ﴿فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَ الْاُوْلٰى﴾
‘অতঃপর মহান আল্লাহ তাকে ধৃত করলেন আখিরাত ও ইহকালের দণ্ডের নিমিত্ত।’ (৭৯ নং সূরাহ্ নাযি‘আত, আয়াত নং ২৫) অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَ لَقَدْ اَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰى وَ صَرَّفْنَا الْاٰیٰتِ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ﴾
আমি তো ধ্বংস করেছিলাম তোমাদের চতুস্পার্শ্ববর্তী জনপদসমূহ; আমি তাদেরকে বিভিন্নভাবে আমার নিদর্শনাবলী বিবৃত করেছিলাম, যাতে তারা ফিরে আসে সৎ পথে। (৪৬ নং সূরাহ্ আহকাফ, আয়াত নং ২৭)
যাহ্হাক (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, বানী ইসরাঈলের পাপের শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে বানরে রূপান্তিরত করা হয়। তারা পৃথিবীতে মাত্র তিন দিন জীবিত ছিলো, কারণ রূপান্তিরত কোন ব্যক্তি তিন দিনের বেশি বাঁচেনা। তারা আহার করতো না, পান করতো না এবং তারা কোন বংশধরও রেখে যায়নি। মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন, যাকে যেমনভাবে ইচ্ছা তেমনভাবে রূপান্তিরত করেন। বানর, শুকর এবং অন্যান্য প্রাণী মহান আল্লাহ ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন যা তাঁর কিতাব থেকে জানা যায়। (তাফসীর তাবারী ২/১৬৭)
পবিত্রতা লঙ্ঘন করার কারণে সাব্বাদবাসীদের জন্যও মহান আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিলেন। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ ফির‘আউন সম্পর্কে বলেনঃ
﴿ فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَ الْاُوْلٰى﴾
ফলে মহান আল্লাহ তাকে ধৃত করলেন আখিরাত ও ইহকালের দণ্ডের নিমিত্ত। (৭৯ নং সূরাহ্ নাযি‘আত, আয়াত নং ২৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ মহান আল্লাহ ঐ জনপদকে এর পার্শ্ববর্তী অন্যান্যদের জন্য একটি উপমা হিসেবে রেখে দিয়েছেন, যাতে তারা এ থেকে শিক্ষা লাভ করে। তারা দেখুক যে, কেমন ছিলো সেই শাস্তি! অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَلَقَدْ اَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰى وَ صَرَّفْنَا الْاٰیٰتِ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ﴾
‘আমি তো ধ্বংস করেছিলাম তোমাদের চতুস্পার্শ্ববর্তী জনপদসমূহ; আমি তাদেরকে বিভিন্নভাবে আমার নিদর্শনাবলী বিবৃত করেছিলাম, যাতে তারা ফিরে আসে সৎ পথে। (৪৬ নং সূরাহ্ আহকাফ, আয়াত নং ২৭)
অতএব মহান আল্লাহর ‘আযাবের নিদর্শন ও শিক্ষণীয় তাদের জন্যও যারা পরবর্তী সময়ে পৃথিবীতে আগমন করবে এবং কিতাবের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পারবে। আয়াতের ভাবার্থ এও যে, গ্রামবাসী যে বিপর্যয় ও শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিলো তার কারণ ছিলো মহান আল্লাহর নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা ও তাদের কপটতা। সুতরাং যাদের অন্তরে মহান আল্লাহ-ভীতি রয়েছে তারা এ থেকে শিক্ষা লাভ করবে যাতে গ্রামবাসীদের প্রতি যে শাস্তি নেমে এসেছিলো তা তাদের ওপর পতিত না হয়। ইমাম আবূ ‘আবদুল্লাহ ইবনু বাত্তাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ
"لا ترتكبوا ما ارتكب (২) اليهود، فتستحلوا محارم الله بأدنى الحيل"
‘তোমরা তেমনটি করো না যা ইয়াহূদীরা করেছিলো। মহান আল্লাহ তাদেরকে যা নির্দেশ করেছিলেন তা তারা অমান্য করেছে ফন্দি করার মাধ্যমে।’ (হাদীস সহীহ। ইরওয়া আল গালীল ৫/৩৭৫, ১৫৩৫)এ হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ, এর সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings