Surah Al Baqarah Tafseer

ফির‘আউন ও তার সেনাবাহিনী হতে বানী ইসরাঈলকে রক্ষা করা হয়েছিলো

এ আয়াতসমূহে মহান আল্লাহ ইয়া‘কূব (আঃ)-এর সন্তানদেরকে লক্ষ্য করে বলেন যে, মহান আল্লাহর সেই অনুগ্রহের কথা তাদের স্মরণ করা উচিত যে, তিনি তাদেরকে ফির‘আউনের জঘন্যতম শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। অভিশপ্ত ফির‘আউন স্পপ্নে দেখেছিলো যে, বায়তুল মুকাদ্দাসের দিক হতে এক আগুন জ্বলে উঠে মিসরের প্রত্যেক কিবতীর ঘরে প্রবেশ করেছে, কিন্তু তা বানী ইসরাঈলের ঘরে যায়নি। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা ছিলো এই যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে এমন একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করবে যার তার অহঙ্কার চূর্ণ হয়ে যাবে এবং তার আল্লাহ দাবীর চরম শাস্তি তার হাতেই হবে। এ জন্যই সেই অভিশপ্ত ব্যক্তি চারদিকে এ নির্দেশ জারী করে দিলো যে, বানী ইসরাঈলের ঘরে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সরকারী লোক যাচাই করে দেখবে। যদি পুত্র সন্তান হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ তাকে মেরে ফেলা হবে। আর যদি মেয়ে সন্তান হয় তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। আরো ঘোষণা করলো যে, বানী ইসরাঈলের দ্বারা কঠিন ও ভারী কাজ করিয়ে নেয়া হবে এবং তাদের মাথার ওপর ভারী ভারী বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে। এখানে শাস্তির তাফসীর পুত্র সন্তান হত্যার দ্বারা করা হয়েছে। সূরাহ্ ইবরাহীমে একের সংযোগ অন্যের ওপর করা হয়েছে। ﴿ یَسُوْمُوْنَكُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِ وَ یُذَبِّحُوْنَ اَبْنَآءَكُمْ ﴾- (১৪ নং সূরাহ্ ইব্রাহীম, আয়াত নং ৬)এর পূর্ণ ব্যাখ্যা সূরাহ্ কাসাসের প্রথমে দেয়া হয়েছে।

یَسُوْمُوْنَكُمْ-এর অর্থ হচ্ছে ‘লাগিয়ে দেয়া’ এবং ‘সর্বদা করতে থাকা।’ অর্থাৎ তারা বরাবরই কষ্ট দিয়ে আসছিলো, যেহেতু এই আয়াতের পূর্বে বলা হয়েছিলো যে, তারা যেন মহান আল্লাহর পুরস্কার রূপে দেয়া নি‘য়ামতের কথা স্মরণ করে। এ জন্য ফির‘আউনীদের শাস্তিকে ব্যাখ্যা হিসেবে পুত্র সন্তান হত্যা দ্বারা বর্ণনা করেছেন। আর সূরাহ্ ইবরাহীমের প্রথমে অর্থাৎ ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, তারা যেন মহান আল্লাহর নি‘য়ামতকে স্মরণ করে। এ জন্য সেখানে সংযোগের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন যাতে নি‘য়ামতের সংখ্যা বেশি হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন শাস্তি হতে এবং পুত্র সন্তান হত্যা হতে তাদেরকে মূসা (আঃ)-এর মাধ্যমে রক্ষা করেছিলেন।

মিসরের আমালীক কাফির বাদশাহকে ফির‘আউন বলা হতো। যেমন রোমের কাফির বাদশাহকে কাইসার বলা হয়। পারস্যে শাসকের উপাধি হলো কিসরা ইয়ামানের রাজার উপাধি ছিলো তুব্বা, আবিসিনিয়ার অর্থাৎ ইথিওপিয়া রাজার উপাধি ছিলো নিগাস বা নাজাসী এবং ভারতের কাফির বাদশাহকে বলা হতো বাতলীমুস।

ইবনু জারীর (রহঃ) মন্তব্য করেছেন যে, এ আয়াতাংশের অর্থ হলো, তোমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে ফির‘আউনের কবল থেকে রক্ষা করা ছিলো তোমাদের রবের তরফ থেকে রহমত। (তাফসীর তাবারী ২/৪৮) আমরা বলতে চাই যে, কষ্ট প্রদানের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করা দ্বারা তাদের প্রতি মহান আল্লাহ রহমত করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ﴿وَ نَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَ الْخَیْرِ فِتْنَةً﴾

আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করি। (২১ নং সূরাহ্ আম্বিয়া, আয়াত নং ৩৫) অপর আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ ﴿وَ بَلَوْنٰهُمْ بِالْحَسَنٰتِ وَ السَّیِّاٰتِ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ﴾

আর আমি ভালো মন্দের মধ্যে নিপতিত করে তাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি যাতে তারা আমার পথে ফিরে আসে। (৭ নং সূরাহ্ আ‘রাফ, আয়াত নং ১৬৮)

আশুরায় সিয়াম পালন করা প্রসঙ্গ

মুসনাদ আহমাদে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় এসে যখন দেখলেন যে, ইয়াহূদীরা আশুরার সিয়াম পালন করছে, তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ দিন তোমরা সিয়াম পালন করো কেন?’ তারা উত্তরে বললোঃ ‘এ জন্য যে, এ কল্যাণময় দিনে বানী ইসরাঈল ফির‘আউনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলো এবং তাদের শত্রুরা ডুবে মরেছিলো। তারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশরূপে মূসা (আঃ) এ সিয়াম পালন করেছিলেন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘তোমাদের অপেক্ষা মূসা (আঃ)-এর ব্যাপারে আমিই বেশি হকদার।’ সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও ঐ দিন সিয়াম পালন করেন এবং জনগণকে সিয়াম পালন করতে নির্দেশ দেন। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৯১, ফাতহুল বারী ৪/২৮৭, মুসলিম ২/৭৯৬, ইবনু মাজাহ ১/৫৫৩, নাসাঈ ২/১৫৭)