শাস্তিদানের ভয় প্রদর্শন ﴿وَ اتَّقُوْا یَوْمًا لَّا تَجْزِیْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَیْـًٔا﴾নি‘য়ামতসমূহের বর্ণনার পর এখন শাস্তি হতে ভয় দেখানো হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন কেউ কারো কোন উপকার করবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেনঃ﴿وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى﴾কেউ কারো বোঝা বহন করবে না। (৩৫ নং সূরাহ্ ফাতির, আয়াত নং ১৮) অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ یَوْمَىِٕذٍ شَاْنٌ یُّغْنِیْهِ﴾সেদিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণ রূপে ব্যস্ত রাখবে। (৮০ নং সূরাহ্ ‘আবাসা, আয়াত নং ৩৭) অন্য স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَ اخْشَوْا یَوْمًا لَّا یَجْزِیْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖ١٘ وَ لَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَیْـًٔا﴾হে মানব জাতি! তোমারা তোমাদের রাব্বকে ভয় করো এবং ভয় করো সেই দিনের যখন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবেনা এবং সন্তানও কোন উপকারে আসবেনা তার পিতার। (৩১ নং সূরাহ্ লুকমান, আয়াত নং ৩৩) কাফিরদের ব্যাপারে কোন সুপারিশ, মুক্তিপণ কিংবা সাহায্য গ্রহণ করা হবে না বলা হয়েছে যে, না কোন কাফিরের জন্য কেউ সুপারিশ করবে, না তার সুপারিশ কবূল করা হবে। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ ﴿فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشّٰفِعِیْنَ﴾ফলে সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবেনা। (২৬ নং সূরাহ্ শু‘আরা, আয়াত নং ১০০-১০১) অন্য এক জায়গায় জাহান্নামবাসীদের এ উক্তি নকল করা হয়েছেঃ﴿فَمَا لَنَا مِنْ شَافِعِیْنَۙ۝۱۰۰ وَ لَا صَدِیْقٍ حَمِیْمٍ﴾পরিণামে আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই. কোন সুহৃদয় বন্ধুও নেই। আরো বলা হয়েছে, ﴿وَّ لَا یُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ﴾ তাদের থেকে মুক্তিপণও গ্রহণ করা হবে না।’ অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ﴿اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ مَاتُوْا وَ هُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِمْ مِّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَّ لَوِ افْتَدٰى بِهٖ﴾নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে ও অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে তাদের মুক্তির বিনিময়ে যদি পৃথিবীপূর্ণ স্বর্ণ দেয়া হয় তবুও কক্ষনো তা গ্রহণ করা হবে না। (৩ নং সূরাহ্ আলি ‘ইমরান, আয়াত নং ৯১) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا لَوْ اَنَّ لَهُمْ مَّا فِی الْاَرْضِ جَمِیْعًا وَّ مِثْلَهٗ مَعَهٗ لِیَفْتَدُوْا بِهٖ مِنْ عَذَابِ یَوْمِ الْقِیٰمَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ١ۚ وَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ﴾নিশ্চয়ই যারা কাফির, যদি তাদের কাছে বিশ্বের সমস্ত সম্পদও থাকে এবং এর সাথে সমপরিমাণ আরো থাকে এবং এগুলোর বিনিময়ে কিয়ামতের শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়, তবুও এই সম্পদ তাদের থেকে কবূল করা হবে না, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (৫ নং সূরাহ্ মায়িদাহ, আয়াত নং ৩৬) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿وَ اِنْ تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا یُؤْخَذْ مِنْهَا﴾তারা দুনিয়ার সমস্ত কিছু বিনিময় দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না। (৬ নং সূরাহ্ আন‘আম. আয়াত নং ৭০) অন্যত্র মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿فَالْیَوْمَ لَا یُؤْخَذُ مِنْكُمْ فِدْیَةٌ وَّ لَا مِنَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا١ؕ مَاْوٰىكُمُ النَّارُ١ؕ هِیَ مَوْلٰىكُمْ١ؕ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ﴾আজ তোমাদের নিকট হতে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না এবং যারা কুফরী করেছিলো তাদের নিকট থেকেও নয়। জাহান্নামই তোমাদের আবাস্থল, এটাই তোমাদের মাওলা বা যোগ্য স্থান! (৫৭ নং সূরাহ্ হাদীদ, আয়াত নং ১৫) ভাবার্থ এই যে, ঈমান ছাড়া শুধুমাত্র সুপারিশের ওপর নির্ভর করলে তা কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না। তাদের মুক্তিপণ হিসেবে যদি পৃথিবীপূর্ণ স্বর্ণও প্রদান করা হয় তবুও তা গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ﴿مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ یَوْمٌ لَّا بَیْعٌ فِیْهِ وَ لَا خُلَّةٌ وَّ لَا شَفَاعَةٌ﴾সেদিন সমাগত হওয়ার পূর্বে ব্যয় করো যেদিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ নেই। (২ নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ২৫৪) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ ﴿لَّا بَیْعٌ فِیْهِ وَ لَا خِلٰلٌ﴾সেদিন আসার পূর্বে যেদিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না। (১৪সূরাহ্ ইবরাহীম, আয়াত নং ৩১)﴿وَلَا هُمْ یُنْصَرُوْنَ﴾‘তাদেরকে সাহায্য করা হবো’ এর অর্থ এই যে, তার কোন সাহায্যকারী থাকবে না, আত্মীয়তার বন্ধন কেটে যাবে, তার জন্য কারো অন্তরে দয়া থাকবে না এবং তার নিজেরও কোন শক্তি থাকবে না। কুর’আন মাজীদের অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَّ هُوَ یُجِیْرُ وَ لَا یُجَارُ عَلَیْهِ﴾তিনি আশ্রয় দেন এবং তাঁর পাকড়াও হতে আশ্রয়দাতা কেউ নেই। (২৩ নং সূরাহ্ মু’মিনূন, আয়াত নং ৮৮) অন্যত্র মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿فَیَوْمَىِٕذٍ لَّا یُعَذِّبُ عَذَابَهٗۤ اَحَدٌۙ۝۲۵ وَّ لَا یُوْثِقُ وَ ثَاقَهٗۤ اَحَدٌ﴾সেদিন তাঁর শাস্তির মতো শাস্তি কেউ দিতে পারবে না এবং তাঁর বন্ধনের মতো বন্ধন কেউ করতে পারবে না। (৮৯ নং সূরাহ্ ফাজ্র, আয়াত নং ২৫-২৬) অন্যত্র মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿مَا لَكُمْ لَا تَنَاصَرُوْنَ۝۲۵ بَلْ هُمُ الْیَوْمَ مُسْتَسْلِمُوْنَ﴾তোমাদের কি হলো যে, তোমরা একে অপরের সাহায্য করছো না? বস্তুত সেদিন তারা আত্মসমর্পন করবে। (৩৭ নং সূরাহ্ সাফফাত, আয়াত নং ২৫-২৬) অন্য স্থানে রয়েছেঃ﴿فَلَوْ لَا نَصَرَهُمُ الَّذِیْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ قُرْبَانًا اٰلِهَةً١ؕ بَلْ ضَلُّوْا عَنْهُمْ﴾তারা মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য মহান আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে মা‘বূদ রূপে গ্রহণ করেছিলো তারা তাদেরকে সাহায্য করলো না কেন? বস্তুত তাদের মা‘বূদগুলো তাদের নিকট হতে অন্তর্হিত হয়ে পড়লো। (৪৬সূরাহ্ আহকাফ, আয়াত নং ২৮) ভাবার্থ এই যে, প্রমাণাদি নষ্ট হয়ে গেছে, ঘুষ প্রদানের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, সুপারিশও বন্ধ হয়েছে, পরস্পরের সাহায্য সহানুভূতি দূর হয়ে গেছে। আজ মুকাদ্দমা চলে গেছে সেই ন্যায় বিচারক, মহাপ্রতাপশালী সারা জাহানের মালিক মহান আল্লাহর হাতে, যাঁর বিচারালয়ে সুপারিশকারীদের সুপারিশ এবং সাহায্যকারীদের সাহায্য কোন কাজে আসবে না, বরং সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতে হবে। তবে বান্দার প্রতি তাঁর পরম করুণা ও দয়া এই যে, তাদেরকে তাদের পাপের প্রতিদান ঠিক পাপের সমানুপাতেই দেয়া হবে, আর সাওয়াবের প্রতিদান দেয়া হবে কমপক্ষে দশগুণ বাড়িয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুর’আন মাজীদের এক জায়গায় বলেছেনঃ﴿وَ قِفُوْهُمْ اِنَّهُمْ مَّسْـُٔوْلُوْنَۙ۝۲۴ مَا لَكُمْ لَا تَنَاصَرُوْنَ۝۲۵ بَلْ هُمُ الْیَوْمَ مُسْتَسْلِمُوْنَ﴾তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে; তোমাদের কি হলো যে, তোমরা একে অপরের সাহায্য করছো না? বস্তুত সেদিন তারা আত্মসমর্পন করবে। (৩৭ নং সূরাহ্ সাফফাত, আয়াত নং ২৪-২৬। তাফসীর তাবারী ২/৩৫)