Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 30
Saheeh International
And [mention, O Muhammad], when your Lord said to the angels, "Indeed, I will make upon the earth a successive authority." They said, "Will You place upon it one who causes corruption therein and sheds blood, while we declare Your praise and sanctify You?" Allah said, "Indeed, I know that which you do not know."
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
আদম-সন্তান বংশ পরম্পরায় পৃথিবীতে বসবাস করছে
মহান আল্লাহর এই অনুগ্রহের কথা চিন্তা করলে বুঝা যাবে যে, তিনি আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পূর্বে ফিরিশতাগণের মধ্যে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন, যার বর্ণনা অত্র আয়াতে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ যেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলছেন যে, হে মুহাম্মাদ! তুমি মানব সৃষ্টির ঘটনাটি স্মরণ করো এবং তোমার উম্মাতকে জানিয়ে দাও।
خَلِيْفَةٌ শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে পরস্পর স্থলাভিষিক্ত হওয়া। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَكُمْ خَلٰٓىِٕفَ الْاَرْضِ﴾
আর তিনি এমন সত্তা, যিনি তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করেছেন। (৬ নং সূরাহ্ আন‘আম, আয়াত নং ১৬৫)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছেঃ ﴿وَ یَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْاَرْضِ﴾
আর তিনি তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন? (২৭ নং সূরাহ্ নামল, আয়াত নং ৬২)
﴿وَ لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَا مِنْكُمْ مَّلٰٓىِٕكَةً فِی الْاَرْضِ یَخْلُفُوْنَ﴾
আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য থেকে ফিরিশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো। (৪৩ নং সূরাহ্ যুখরুফ, আয়াত নং ৬০)
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿فَخَلَفَ مِنْۢ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ﴾
অতঃপর তাদের অযোগ্য উত্তরসূরী একের পর এক তাদের স্থলভিষিক্ত হয়। (৭ নং সূরাহ্ আ‘রাফ, আয়াত নং ১৬৯)
একটি অপ্রচলিত পঠনে خَلِيْفَة এর স্থলে خلائفة বা খালাইফাহ্ও পড়া হয়েছে। কোন কোন মুফাস্সির বলেন যে, খালীফা শব্দ দ্বারা শুধুমাত্র আদম (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এটা বিবেচনার বিষয়। ‘তাফসীর রাযী’ প্রভৃতি কিতাবে এই মতভেদ বর্ণনা করা হয়েছে। বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, ভাবার্থ এটা নয়। এর প্রমাণ তো ফিরিশতার নিম্নের উক্তিটিঃ أَتَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ ‘আপনি কি যমীনে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা তন্মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করবে।’ এটা স্পষ্ট কথা যে, তারা এটা আদম (আঃ)-এর সন্তানদের সম্পর্কে বলেছিলেন, খাস করে তাঁর সম্পর্কে নয়।
ফিরিশতা এটা কি করে জেনেছিলেন সেটা অন্য কথা। হয়তো মানব প্রকৃতির চাহিদা লক্ষ্য করেই তাঁরা এটা বলেছিলেন। কেননা এটা বলে দেয়া হয়েছিলো যে, তাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হবে। কিংবা হয়তো ‘খালীফা’ শব্দের ভাবার্থ জেনেই তারা এটা বুঝেছিলেন যে, মানুষ হবে ন্যায় অন্যায়ের ফায়সালাকারী, অনাচারকে প্রতিহতকারী। আর অবৈধ ও পাপের কাজে বাধাদানকারী। অথবা তারা যমীনের প্রথম সৃষ্টজীবকে দেখেছিলেন বলেই মানুষকেও তাদের মাপকাঠিতে ফেলেছিলেন। এটা মনে রাখা দরকার যে, ফিরিশতাগণের এই আরয প্রতিবাদমূলক ছিলো না বা তাঁরা যে এটা বানী আদম (আঃ)-এর প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে বলেছিলেন তাও নয়। ফিরিশতাগণের মর্যাদা সম্পর্কে কুর’আনে ঘোষণা হয়েছেঃ ‘যে কথা বলার তাদের অনুমতি নেই, তাতে তারা মুখ খুলে না।’ এটাও স্পষ্ট কথা যে, ফিরিশতার স্বভাব হিংসা হতে পবিত্র। বরং সঠিক ভাবার্থ এই যে তাদের এ প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য ছিলো শুধুমাত্র এর হিকমাত জানার ও এর রহস্য প্রকাশ করার, যা তাদের বোধশক্তির উর্ধ্বে ছিলো। মহান আল্লাহ তো জানতেনই যে, এ শ্রেষ্ঠ জীব বিবাদ ও ঝগড়াটে হবে। কাজেই ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘এ রকম মাখলূক সৃষ্টি করার মধ্যে বিশ্ব প্রভুর কি নিপুণতা রয়েছে? যদি ‘ইবাদতেরই উদ্দেশ্য হয় তাহলে ‘ইবাদত তো আমরাই করছি। আমাদের মুখেই তো সদা তাঁর তাস্বীহ ও প্রশংসাগীত উচ্চারিত হচ্ছে এবং আমরা ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদি থেকেও পবিত্র। তথাপি এরূপ বিবাদী মাখলূক সৃষ্টি করার মধ্যে কি যৌক্তিকতা রয়েছে?
মহান আল্লাহ তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, তারা দুনিয়ায় ঝগড়া-বিবাদ, কাটাকাটি, মারামারি ইত্যাদি করবে এই জ্ঞান তাঁর আছে। তথাপিও তাদেরকে সৃষ্টি করার মধ্যে যে নিপুণতা ও দূরদর্শিতা রয়েছে তা একমাত্র তিনিই জানেন। তিনি জানেন যে, তাদের মধ্যে নবী-রাসূল; সত্যবাদী, শহীদ, সত্যের উপাসক, ওয়ালী, সৎ. মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী, ‘আলিম, আল্লাহভীরু, প্রভৃতি মহা-মানবদের জন্ম লাভ ঘটবে, যারা তাঁর নির্দেশাবলী যথারীতি মান্য করবে এবং তারা তাঁর বার্তাবাহকদের ডাকে সাড়া দিবে।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আছে যেঃ
يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِى صَلاَةِ الْفَجْرِ وَصَلاَةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ.
দিনের ফিরিশতা সুবহি সাদিকের সময় আসেন এবং ‘আসরের সময় চলে যান। সে সময় রাতের ফিরিশতা আগমন করেন তারা আবার সকালে চলে যান। আগমনকারী যখন আগমন করেন তখন অন্যেরা চলে যান। অতএব তারা ফজর ও ‘আসরে জনগণকে পেয়ে থাকেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর প্রশ্নের উত্তরে দুই দলই এ কথা বলেনঃ
أَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ ، وَتَرَكْنَاهُمْ وَهُمَ يُصَلُّونَ
‘আমরা যাবার সময় আপনার বান্দাদেরকে সালাতে পেয়ে ছিলাম এবং আসার সময়ও তাদেরকে সালাতে ছেড়ে এসেছি।’ (হাদীস সহীহ। ফাতহুল বারী ১৩/৪২৬। সহীহুল বুখারী ৫৩০, ৬৯৯২, ৭০৪৮, সহীহ মুসলিম-১৪৬৪, ১৪৬৫) এটাই হলো মানব সৃষ্টির যৌক্তিকতা যার সম্বন্ধে মহান আল্লাহ ফিরিশতাকে বলেছিলেনঃ “নিশ্চয় আমি যা জানি তোমরা তা জাননা।” ঐ ফিরিশতাকে তা দেখার জন্যও পাঠানো হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"يرفع إليه عمل الليل قبل النهار، وعمل النهار قبل الليل"
‘রাতের ‘আমলগুলো দিনের পূর্বে আর দিনের ‘আমলগুলো রাতের পূর্বে মহান আল্লাহর নিকট উঠে যায়।’ (সহীহ মুসলিম ১৭৯) মোট কথা, মানব সৃষ্টির মধ্যে যে ব্যাপক দূরদর্শিতা নিহিত ছিলো সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন যে, এটা তাদের ‘আমরাই তো আপনার তাস্বীহ পাঠ করি, এ কথার উত্তরে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহই সব জানেন অর্থাৎ ফিরিশতা নিজেদের দলের সবাইকে সমান মনে করে থাকে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তা নয়। কেননা তাদের মধ্যে ইবলীসও একজন।
তৃতীয় অভিমত এই যে, ফিরিশতার এটা বলার উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের পরিবর্তে যেন তাদেরকেই যমীনে বাস করতে দেয়া হয়। এর উত্তরেই মহান আল্লাহ বলেন যে, আকাশই তাদের বসোবাসের উপযুক্ত স্থান। এটা একমাত্র মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
হাসান বাসরী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ)-সহ অনেক মনীষীই বলেন যে, মহান আল্লাহ ফিরিশতাকে একটি সংবাদ দিয়েছিলেন মাত্র। সুদ্দী (রহঃ) বলেন, পরামর্শ নিয়েছিলেন। তবে এর অর্থও সংবাদ দেয়া হতে পারে। তা না হলে এ কথাটি অর্থহীন হয়ে পড়ে।
মুসনাদ ইবনু আবী হাতিমে আছে যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাক্কা হতে যখন সম্পূর্ণ যমীনকে সম্প্রসারিত করা হয় তখন সর্বপ্রথম বায়তুল্লার তাওয়াফ করেন ফিরিশতা বা ফিরিশতাগণ। তখন মহান আল্লাহ বললেন, আমি যমীনে অর্থাৎ মাক্কায় খলীফা বা প্রতিনিধি বানাবো। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীরে দুররুল মানসূর ১/৪৬) এ হাদীসটি মুরসাল। আবার এতে যেমন দুর্বলতা রয়েছে তেমনই এতে মুদরাজও হয়েছে। অতএব যমীন থেকে উদ্দেশ্য মাক্কা নগরী নেয়া, এটা বর্ণনাকারী সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি অভিব্যক্তি ব্যতীত অন্য কিছুই নয়। বরং যমীন দ্বারা সাধারণ যমীন উদ্দেশ্য। যা দ্বারা পুরো পৃথিবীকেই বুঝানো হয়েছে। ফিরিশতাগণ মহান আল্লাহর অভিপ্রায় জানতে পেরে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, সেই খালীফার কাজ কি হবে? উত্তরে বলা হয়েছিলো যে, তার সন্তারদের মধ্যে এমন লোকও হবে যারা পৃথিবীতে ঝগড়া-বিবাদ, কাটাকাটি, মারামারি করবে এবং একে অপরকে প্রতিহিংসা করবে। তাদের মধ্যে তারা সুবিচার করবে। আর আমার দেয়া বিধানাবলী তাদের মাঝে চালু রাখবে।
অতএব ভাবার্থ এই দাড়ায় যে, আদম (আঃ) মহান আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে এবং সৃষ্টজীবের মধ্যে ইনসাফ বা ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তাঁর স্থলাভিষিক্ত। কিন্তু বিবাদীরা ও খুন-খারাবিকারীগণ তার খালীফা বা স্থলাভিষিক্ত নয়।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর পূর্ব হতেই জিনেরা পৃথিবীতে বসোবাস করতো।
আবুল ‘আলিয়া বলেন যে, ফিরিশতাদেরকে বুধবারে, জ্বিনদেরকে বৃহস্পতিবারে এবং আদম (আঃ)-কে জুমু‘আবারে সৃষ্টি করা হয়েছে।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন আদম (আঃ)-এর সৃষ্টিকার্য সূচনা করা হয় তখন ফিরিশতাগণ বলেছিলেন, আমাদের চেয়ে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন ও জ্ঞানী জাতি সৃষ্টি করা হবে না। ফলে তাদের ওপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা আসে। আর এ রূপ পরীক্ষা হতে কোন সৃষ্টিজীবই রক্ষা পায়নি। এমনকি যমীন ও আসমানের ওপরও পরীক্ষা এসেছিলো। কিন্তু তারা অবনত মস্তকে ও সন্তুষ্ট চিত্তে মহান আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করেছিলো।
ফিরিশতাগণের তাসবীহ দ্বারা উদ্দেশ্য
وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ‘আমরাই তো আপনার প্রশংসামূলক গুণগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।’ আয়াতাংশে ফিরিশতাগণের তাসবীহ ও তাক্বদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা, সালাত আদায় করা, বেয়াদবী হতে বিরত থাকা, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা এবং তাঁর অবাধ্য না হওয়া। قدوس এর অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা। একদা মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসিত হলেন, কোন কালামটি সর্বোত্তম? তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ
ما اصطفى الله لملائكته سبحان الله وبحمده
যা মহান আল্লাহ স্বীয় ফিরিশতাগণের জন্য চয়ন করেছেন। আর তা হলোঃ سبحان الله وبحمده
মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মি‘রাজে যান তখন ফিরিশতাদের মুখে নিম্নোক্ত তাসবীহ শুনেছিলেনঃ سبحان الله العلي الأعلى سبحانه وتعالى
খালীফা বা প্রতিনিধি নিয়োগ করার বাধ্য-বাধকতা
ইমাম কুরতবী (রহঃ) প্রভৃতি মনীষীগণ এই আয়াত হতে দালীল গ্রহণ করেছেন যে, খালীফা নির্ধারণ করা ওয়াজিব। তিনি মতবিরোধ মীমাংসা করবেন, ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দিবেন, অত্যাচারী হতে অত্যাচারিত ব্যক্তির প্রতিশোধ নিবেন, ‘হুদূদ’ কায়িম করবেন, অন্যায় ও পাপের কাজ হতে জনগণকে বিরত রাখবেন ইত্যাদি বড় বড় কাজগুলো যার সমাধান ইমাম ছাড়া হতে পারে না। এসব কাজ ওয়াজিব এবং এগুলো ইমাম ছাড়া সম্পন্ন হতে পারে না, আর যা ছাড়া কোন ওয়াজিব সম্পন্ন হয় না ওটাও ওয়াজিব। সুতরাং খালীফা নির্ধারণ করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।
ইমামতি হয়তো বা কুর’আন ও হাদীসের স্পষ্ট শব্দের দ্বারা লাভ করা যাবে। যেমন আহলে সুন্নাতের একটি জামা‘আতে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) সম্পর্কে ধারণা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খিলাফতের জন্য তাঁর নাম দিয়েছিলেন। কিংবা কুর’আন ও হাদীসে সে দিকে ইঙ্গিত আছে। যেমন আহলে সুন্নাতেরই অপর একটি দলের প্রথম খালীফার ব্যাপারে ধারণা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইঙ্গিতে খিলাফতের জন্য তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন। অথবা হয়তো একজন খালীফা তাঁর পরবর্তী খালীফার নাম বলে যাবেন। যেমন আবূ বাকর (রাঃ) ‘উমার (রাঃ)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে গিয়েছিলেন। কিংবা তিনি হয়তো সৎলোকদের একটি কমিটি গঠন করে খালীফা নির্বাচনের দায়িত্বভার তাদের ওপর অর্পণ করে যাবেন, যেমন ‘উমার (রাঃ)-এরূপ করেছিলেন। অথবা আহলে হিল্লওয়াল ‘আক্দ অর্থাৎ প্রভাবশালী সেনাপতিগণ, ‘আলিমগণ, সৎলোকগণ ইত্যাদি একত্রিতভাবে তার হাতে বায়‘আত করবেন, তাদের কেউ কেউ বায়‘আত করে নিলে অধিকাংশের মতে তাকে মেনে নেয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে। ইমামুল হারামাইন এ ব্যাপারে ইজমা‘ নকল করেছেন। কেউ যদি জনগণকে জোরপূর্বক তার কর্তৃত্বাধীন করে নেয় সে ক্ষেত্রে হাঙ্গামা ও গোলযোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে তারও আনুগত্য স্বীকার করা ওয়াজিব। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) পরিস্কার ভাষায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
ইমাম গ্রহণের ক্ষেত্রে সাক্ষীর গুরুত্ব
এ বায়‘আত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের উপস্থিতি ওয়াজিব কি না এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এটা শর্ত। আবার কারো মতে শর্ততো বটেই, কিন্তু দু’জন সাক্ষীই যথেষ্ট। জবাঈ (রহঃ) বলেন যে, বায়‘আত গ্রহণকারী ও যার হাতে বায়‘আত গ্রহণ করা হচ্ছে এ দু’জন ছাড়াও চারজন সাক্ষীর প্রয়োজন। যেমন ‘উমার (রাঃ) পরামর্শ সভার জন্যে ছয়জন লোক নির্ধারণ করেছিলেন। অতঃপর তাঁরা ‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-কে অধিকার দিয়েছিলেন এবং তিনি বাকী চারজনের উপস্থিতিতে ‘উসমান (রাঃ)-এর হাতে বায়‘আত করেছিলেন। কিন্তু এটা হতে দালীল গ্রহণের ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। সঠিকতার ব্যাপারে মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
ইমাম বা খালীফা হওয়ার যোগ্যব্যক্তি কে?
ইমাম হওয়ার জন্য পুরুষ লোক হওয়া, আযাদ হওয়া, বালিগ হওয়া, বিবেক সম্পন্ন হওয়া, মুসলিম হওয়া, সুবিচারক হওয়া, ধর্ম বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়া, যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী হওয়া, সাধারণ অভিমত সম্পর্কে অভিজ্ঞ হওয়া এবং কুরাইশী হওয়া ওয়াজিব। তবে হ্যাঁ, হাশিমী হওয়া ও দোষমুক্ত হওয়া শর্ত নয়। গালী রাফিযী এ শর্ত দু’টি আরোপ করে থাকে। ইমাম যদি ফাসিক হয়ে যায় তাহলে তাকে পদচ্যুত করা উচিত কিনা এ বিষয়ে মতভেদ আছে। সঠিক মত এই যে, তাকে পদচ্যুত করা হবে না। কেননা হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ
إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ.
‘যে পর্যন্ত না তোমরা এমন খোলাখুলি কুফরী লক্ষ্য করো যার কুফরী হওয়ার প্রকাশ্য দালীল মহান আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট বিদ্যমান থাকে।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী- ৬৬৪৭, ৭০৫৬, সহীহ মুসলিম-৪৮৭৭, সুনান বায়হাক্বী-১৬৩৩০, ১৬৯৯৪, তাফসীর তাবারী ১/৪৭৭) অনুরূপভাবে ইমাম নিজেই পদত্যাগ করতে পারে কিনা সে বিষয়েও মতবিরোধ রয়েছে। হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) নিজে নিজেই পদত্যাগ করেছিলেন এবং ইমামের দায়িত্ব মু‘আবিয়াকে (রাঃ) অর্পণ করেছিলেন। কিন্তু এটা ওজরের কারণে ছিলো এবং যার জন্য তার প্রশংসা করা হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠে একাধিক ইমাম একই সময়ে হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
من جاءكم وأمركم جميع يريد أن يفرق بينكم فاقتلوه كائنًا من كان.
‘যখন তোমাদের মধ্যে কোন কাজ সম্মিলিতভাবে হতে যাচ্ছে এমন সময় কেউ যদি বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে তাহলে তাকে হত্যা করো, সে যে কেউই হোক না কেন।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম ১/১৪৭০) জমহুরের এটাই মাযহাব এবং বহু বিজ্ঞজনও এর ওপর ইজমা’ নকল করেছেন, যাদের মধ্যে ইমামুল হারামাইন (রহঃ)-ও একজন।
শী‘আদের একটি শাখা দল কারামিয়াদের মতে একই সময়ে দুই বা ততোধিক ইমাম হতে পারে। যেমন ‘আলী (রাঃ) ও মু‘আবীয়া মু‘আবিয়া (রাঃ) দু’জনই আনুগত্যের যোগ্য ছিলেন। তাদের দাবী যে, যখন একই সময়ে দুই অথবা ততোধিক নবী হওয়া জায়িয, তখন একাধিক ইমাম হওয়া জায়িয হবে না কেন? নাবুওয়াতের মর্যাদা তো নিঃসন্দেহে ইমামতের মর্যাদা হতে বহু ঊর্ধ্বে।
ইমামুল হারামাইন স্বীয় উস্তায আবূ ইসহাক (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একই সময়ে দুই বা ততোধিক ইমাম নিযুক্ত করা তখনই জায়িয হবে, যখন মুসলমানদের সাম্রাজ্য খুবই প্রশস্ত হয় এবং চতুর্দিকে বিস্তার লাভ করে ও দু‘জন ইমামের মধ্যে কয়েকটি দেশের ব্যবধান থাকে। ইমামুল হারামাইন এতে সন্দেহ পোষণ করেন। খুলাফায়ি বানী ‘আব্বাস ‘ইরাকে, খুলাফায়ি বানী ফাতিমা মিসরে এবং উমাইয়া বংশধরগণ পশ্চিমে ইমামতের কার্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার ধারণায় তো অবস্থা এইরূপই ছিলো।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings