Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 275
Saheeh International
Those who consume interest cannot stand [on the Day of Resurrection] except as one stands who is being beaten by Satan into insanity. That is because they say, "Trade is [just] like interest." But Allah has permitted trade and has forbidden interest. So whoever has received an admonition from his Lord and desists may have what is past, and his affair rests with Allah . But whoever returns to [dealing in interest or usury] - those are the companions of the Fire; they will abide eternally therein.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
সুদের সাথে জড়িতদের শাস্তিদান প্রসঙ্গ
এর পূর্বে ঐ লোকদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে যারা সৎ, দাতা, যাকাত প্রদানকারী, অভাবগ্রস্ত ও আত্মীয়-স্বজনের দেখাশুনাকারী এবং সদা-সর্বদা তাদের উপকার সাধনকারী। এবার ঐসব লোকের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যারা সুদ খায়, দুনিয়া লোভী, অত্যাচারী এবং অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণকারী। এখানে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঐ সব লোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন যাদরকে কিয়ামত দিবসে কবর থেকে পুর্নজীবন দিয়ে উত্থিত করা হবে এবং বিচারের জন্য সমবেত করা হবে। তিনি বলেনঃ ‘যারা সুদ ভক্ষণ করে তারা শায়তানের স্পর্শে মোহাভিভূত ব্যক্তির ন্যায় কিয়ামত দিবসে দণ্ডায়মান হবে; এর কারণ এই যে, তারা বলেঃ ব্যবসা সুদের অনুরূপ বৈ তা নয়। ঐ সুদখোর লোকেরা তাদের কবর থেকে অজ্ঞান অথবা পাগলের মতো দিকভ্রান্ত হয়ে উত্থিত হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যারা সুদ ভক্ষণ করে তাদেরকে কিয়ামত দিবসে শৃঙ্খলিত বন্দী হিসেবে কবর থেকে তোলা হবে। (তাফসীর তাবারী-৬/৯) ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) ’ও এটা বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, ‘আউফ ইবনু মালিক (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , সুদ্দী (রহঃ) , বারী ‘ ইবনু আনাস (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) অনুরূপ তাফসীর করেছেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ৩/১১৩০, ১১৩১)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে منالمس এরপর يومالقيامة শব্দটি এসেছে। অর্থাৎ তারা দাড়াতে সক্ষম হবে না। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম)
ইবনু জারীর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে, কিয়ামতের দিন সুদখোরকে বলা হবে তোমার অস্ত্র ধারণ করো এবং তোমাদের প্রতিপালকের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। (তাফসীর তাবারী -৬/৯/৬২৪১)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَتَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عَلَى قَوْمٍ بُطُونُهُمْ كَالْبُيُوتِ فِيهَا الْحَيَّاتُ تُرَى مِنْ خَارِجِ بُطُونِهِمْ. فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ أَكَلَةُ الرِّبَا.
‘মি‘রাজের রাতে একটি সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছি যাদের পেটগুলো বড় বড় ঘরের মতো, যার ভিতরে অনেকগুলো সাপ। যা পেটের বাহির থেকেই প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছিলো। আমি বললাম, হে জিবরাঈল (আঃ) -এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো সুদখোর। (সনদ য‘ঈফ। সুনান ইবনু মাজাহ-২/৭৬৩/২২৭৩, মুসনাদ আহমাদ -২/৩৫৩, ৩৬৩)
ইমাম বুখারী (রহঃ) সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে স্বপ্নে দেখানো হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
فَأَتَيْنَا عَلَى نَهْرٍ-حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: أَحْمَرُ مِثْلُ الدَّمِ -وَإِذَا فِي النَّهْرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهْرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ، [مَا يَسْبَحُ] ثُمَّ يَأْتِي ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ الْحِجَارَةَ عِنْدَهُ فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ فَيُلْقِمُهُ حَجَرًا وَذَكَرَ فِي تَفْسِيرِهِ: أَنَّهُ آكِلُ الرِّبَا.
‘যখন আমি লাল রঙ বিশিষ্ট একটি নদীতে পৌঁছি যার পানি রক্তের মতো লাল ছিলো, তখন আমি দেখি যে, এক লোক অতি কষ্টে নদীর তীরে আসছে। কিন্তু তীরে একজন ফিরিশতা বহু পাথর জমা করে বসে আছেন এবং তাঁর পাশে আরো একজন ফিরিশতা রয়েছেন। নদীতে থাকা লোকটি সাতরে তীরের কাছে আসার সাথে সাথে একজন ফিরিশতা তার মুখ হা করে ধরছেন এবং অপর ফিরিশতা তার মুখে পাথর ভরে দিচ্ছেন। তখন সে ওখানে থেকে পলায়ন করছে। অতঃপর পুনরায় এরূপই হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করে জানতে পারি যে, তার শাস্তির কারণ এই যে, সে সুদ খেতো। (সহীহুল বুখারী-১২/৪৫৭/৭০৪৭, মুসনাদ আহমাদ -৫/৮, ১০। ফাতহুল বারী ৩/২৯৫)
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْۤا اِنَّمَا الْبَیْعُ مِثْلُ الرِّبٰوا١ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا﴾
‘এর কারণ এই যে, তারা বলে, ব্যবসা সুদের অনুরূপ; অথচ মহান আল্লাহ্ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ এটা মনে রাখার বিষয় যে, তারা যেন সুদকে ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর অনুমান করে সুদ লেনদেন করতো এমনটি নয়, কেননা মুশরিকরা পূর্ব হতে ক্রয়-বিক্রয়কেও শারী‘আত সম্মত বলতো না। তাদেরকে উত্তর দেয়া হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী ঐ বৈধতা ও অবৈধতা সাব্যস্ত হয়েছে। এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এটা কাফিরদেরই উক্তি। তাহলে সুক্ষ্মতার সাথে একটি উত্তরও হয়ে যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ্ একটিকে হারাম করেছেন এবং অপরটিকে হালাল করেছেন এই জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও প্রতিবাদ কিসের?’ সর্বজ্ঞাতা ও মহাবিজ্ঞানময় মহান আল্লাহ্র নির্দেশের ওপর প্রতিবাদ উত্থাপন করার তোমরা কে? তাঁর কাজের বিচার বিশ্লেষণ করার কার অধিকার রয়েছে? সমস্ত কাজের মূল তত্ত্ব তাঁরই জানা রয়েছে। তার বান্দাদের জন্য প্রকৃত উপকার কোন জিনিসে রয়েছে এবং প্রকৃত ক্ষতি কোন বস্তুতে রয়েছে সেটা তো তিনিই ভালো জানেন। তিনি উপকারী বস্তু হালাল করেন এবং ক্ষতিকর বস্তু হারাম করেন। মা তার দুগ্ধপায়ী শিশুর ওপর ততো করুণাময়ী হতে পারে না যতোটা করুণাময় মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের ওপর। তিনি যা হতে নিষেধ করেন তার মধ্যে মঙ্গল নিহিত রয়েছে এবং যা করতে আদেশ করেন তার মধ্যেও মঙ্গল রয়েছে।
অতঃপর বলা হচ্ছে, ‘মহান আল্লাহ্র উপদেশ শ্রবণের পর যে ব্যক্তি সুদ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকে তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿عَفَا اللّٰهُ عَمَّا سَلَفَ﴾
‘সেই অতীত ত্রুটি মহান আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (৫নং সূরাহ্ আল মায়িদাহ, আয়াত নং ৯৫) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন মাক্কা বিজয়ের দিন বলেছিলেনঃ
وَكُلُّ رِبًا فِي الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ تَحْتَ قَدَمَيْ هَاتَيْنِ، وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَا الْعَبَّاسِ.
‘অজ্ঞতাপূর্ণ যুগে সমস্ত সুদ আমার পদদ্বয়ের নীচে ধ্বংস হয়ে গেলো। সর্বপ্রথম সুদ যা আমি মিটিয়ে দিচ্ছি তা হচ্ছে ‘আব্বাস (রাঃ) -এর সুদ।’ (সহীহ মুসলিম-২/১৪৭/৮৮৬, সুনান আবূ দাঊদ-২/১৮২/১৯০৫, সুনান ইবনু মাজাহ-২/১০২২/৩০৭৪, মুসনাদ আহমাদ -৫/৭৩) সুতরাং অন্ধকার যুগের যেসব সুদ গ্রহণ করা হয়েছিলো সেগুলো ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং যা অতীত হয়ে গিয়েছে সে গুলো তিনি ক্ষমা করেছেন। এই জন্যই মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿فَلَه مَا سَلَفَ وَ اَمْرُهۤ اِلَى সুতরাং যা অতীত হয়েছে তার কৃতকর্ম মহান আল্লাহ্র ওপর নির্ভর।’ অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, উম্মু মুহাব্বাহ যিনি যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) -এর উম্মু ওয়ালাদ (ক্রীতদাসীর সাথে মনিবের সহবাসের ফলে সন্তান জন্মলাভ করলে উক্ত ক্রীতদাসীকে উম্মু ওয়ালাদ বলা হয়) ছিলেন, তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন! আপনি কি যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) -কে চিনেন? তিনি বলেন হ্যাঁ। তখন উম্মু মুহাব্বাহ বলেন ঐ যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) -এর নিকট আমি আট শো’তে একটি গোলাম বিক্রি করি এই শর্তে যে, আতা আসলে সে টাকা পরিশোধ করবে। এরপর তার নগদ টাকার প্রয়োজন হয় এবং নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সে ঐ গোলামটি বিক্রি করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। ফলে আমি তা ছ'শোতে ক্রয় করে নেই। উত্তরে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তুমি এবং সে উভয়েই একটি অন্যায় কাজ করেছো। কেননা এটা সম্পূর্ণ শারী‘আত বিরোধী কাজ। যাও যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) -কে বলো যে, যদি সে তাওবাহ না করে তাহলে তার জিহাদের পুণ্য সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাবে, যে জিহাদ সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে করেছে। উম্মু মুহাব্বাহ বলেন, আমি বললাম , যে দু’শো আমি তার কাছে পাবো তা যদি ছেড়ে দেই এবং ছয়শ’ আদায় করে নেই তাহলে আমি আটশোই পেয়ে যাবো। তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, ‘এতে কোন দোষ নেই।’ অতঃপর তিনি ﴿فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ﴾ এই আয়াতটি (২নং সূরাহ আল বাকারা, আয়াত-২৭৫) পড়ে শোনান। (সুনান বায়হাক্বী-৫/৩৩০, ৩৩১, তাবাকাতু ইবনু সা‘ঈদ-৮/৪৮৭, মুসান্নাফ ‘আব্দুর রায্যাক-৮/১৮৪, ১৮৫, সুনান দারাকুতনী-২/৩১১, নাসবুর রায়াহ-৪/১৬,)
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَ مَنْ عَادَ فَاُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ النَّارِ١ۚ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ﴾ সুদের নিষিদ্ধতা তার কর্ণকূহরে প্রবেশ করার পরেও যদি সে সুদ গ্রহণ পরিত্যাগ না করে তাহলে সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। চিরকাল সে জাহান্নামে অবস্থান করবে।’ ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন ‘যারা সুদ ভক্ষণ করে তারা শায়তানের স্পর্শে মোহাভিভূত ব্যক্তির অনুরূপ কিয়ামত দিবসে দণ্ডায়মান হবে’ নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ مَنْ لَمْ يَذْرِ الْمُخَابَرَةَ، فَلْيَأْذَنْ بِحَرْبٍ مِنَ اللهِ وَرَسُوْلِهِ.
‘যে ব্যক্তি এখন সুদ পরিত্যাগ করলো না, সে যেন মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান আবূ দাঊদ-৩/১৬২/৩৪০৬, মুসতাদরাক হাকিম-২/২৮৫, ২৮৬, সুনান বায়হাক্বী-৩/১২৮, হিলইয়াতুল আওলিয়া-৯/২৩৬, সিলসিলাতুয য‘ঈফাহ-৯৯০)
مُخَابِرَة শব্দের অর্থ এই যে, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির ভূমিতে শস্যের বীজ বপন করলো এবং চুক্তি করলো ভূমির এই অংশে যা উৎপন্ন হবে তা আমার এবং অবশিষ্ট তোমার।’ هُزَابَنَة শব্দের অর্থ এই যে, একটি লোক অপর একটি লোককে বলেঃ ‘তোমার এই গাছের যা খেজুর রয়েছে তা আমার এবং এর বিনিময়ে আমি তোমাকে এই পরিমাণ খেজুর প্রদান করবো। ” مُحَاقَلَة শব্দের অর্থ হচ্ছে এই যে, এক ব্যক্তি অপর একটি ব্যক্তিকে বলেঃ ‘তোমার শস্যক্ষেতে যে শস্য রয়েছে তা আমি ক্রয় করছি এবং তার বিনিময়ে আমার নিকট হতে কিছু শস্য তোমাকে প্রদান করছি।’ ক্রয়-বিক্রয়ের এই পদ্ধতিগুলো শারী‘আতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যেন সুদের মূল কর্তিত হয়। এগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ বর্ণনায় ‘আলিমগণের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেউ বলেছেন এক রকম এবং কেউ বলেছেন অন্য রকম। আমীরুল মু’মিনীন দ্বিতীয় খালীফা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -এর একটি বক্তব্য এখানে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি। তিনি বলেছেনঃ আমার খুবই আশা ছিলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি বিষয় আমাদের কাছে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিবেন যাতে ঐ বিষয়সমূহে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তা হলো- (১) দাদার উত্তরাধিকার, (নাতী-নাতনীদের সম্পদ থেকে দাদার অংশ) (২) ‘কালালাহ’দের (যে মৃত ব্যক্তি সন্তান অথবা মাতাপিতা রেখে যায়নি তাকে কালালাহ বলা হয়) উত্তরাধিকার এবং (৩) বিভিন্ন সুদের ফায়সালা সংক্রান্ত বিষয়। (সহীহুল বুখারী- ১০/৪৮/হা ৫৫৮৮, ফাতহুল বারী -১০/৪৮, সহীহ মুসলিম-৪/৩২/ পৃষ্ঠা-২৩২২, সুনান আবূ দাউদ-৩/৩২৪/হা৩৬৬৯)
‘উমার (রাঃ) ঐ সমস্ত লেনদেনের কথা উল্লেখ করতে চেয়েছেন যে বিষয়ে পরিস্কারভাবে বলা হয়নি যে, তা সুদ বলে গণ্য হবে, কি হবে না। শারী‘আত বর্ণনা করছে, যে বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার সাথে যদি হালাল কোন কিছু যোগ করা হয় তাহলে তাও নিষিদ্ধ বা হারাম বলে গণ্য হবে। কারণ হারাম কাজের সাথে মিশ্রিত হওয়ার ফলে হালাল জিনিসও আর হালাল থাকে না। অনুরূপভাবে কোন কিছু করার জন্য যদি বাধ্য-বাধ্যকতা থাকে এবং ঐ কাজের সাথে যদি কোন কিছু যোগ করা ছাড়া সম্পূর্ণ করা না যায় তাহলে ঐ জিনিসটিও বাধ্য-বাধকতার আওতায় আসবে।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ وَبَيْنَ ذَلِكَ أُمُورٌ مُشْتَبِهَاتٌ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبَهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبَهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيْهِ.
‘হালাল স্পষ্ট ও হারামও স্পষ্ট। কিন্তু এর মধ্যে কতোগুলো জিনিস সন্দেহযুক্ত রয়েছে। এগুলো হতে দূরে অবস্থানকারীগণ নিজেদের ধর্ম ও সম্মান বাঁচালো। ঐ সন্দেহযুক্ত জিনিসগুলোর মধ্যে পতিত ব্যক্তিরাই হচ্ছে হারামের মধ্যে পতিত ব্যক্তি। যেমন কোন রাখাল কোন এক ব্যক্তির রক্ষিত চারণ ভূমির আশ-পাশে তার পশুপাল চরিয়ে থাকে। সেখানে এই সম্ভাবনাও রয়েছে যে, ঐ পশুপাল ঐ ব্যক্তির চারণ ভূমিতে ঢুকে পড়বে।’ (সহীহুল বুখারী-১/১৫৩/হা-৫২, ফাতহুল বারী -১/১৫৩, সহীহ মুসলিম-৩/১২১৯/হা-১০৭, সুনান আবূ দাউদ-৩/২৪৩/২৩৩০, জামি‘ তিরমিযী-৩/৫১১/হা১২০৫, সুনান নাসাঈ -৭/২০৭৭/৪৪৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ-২/১৩১৮/৩৯৮৪, মুসনাদ আহমাদ -৪/২৬৭)
সুনানে হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ دَعْ مَا يُرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يُرِيبُكَ.
‘যে জিনিস তোমাকে সন্দেহের মধ্যে নিক্ষেপ করে তা ছেড়ে দাও এবং যা পবিত্র তা গ্রহণ করো। (সহীহুল বুখারী-৪/৩৪১, তিরমিযী-৪/৫৭৬/২৫১৮, সুনান নাসাঈ -৮/৭৩২/৫৭২৮) অন্য হাদীসে আছেঃ الْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي الْقَلْبِ وَتَرَدَّدَتْ فِيهِ النَّفْسُ، وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ.
‘পাপ সেটাই, যা অন্তরে খটকা দেয়, মনে সন্দেহের উদ্রেক করে এবং যা জনগণের মধ্যে জানাজানি হওয়াটা তুমি পছন্দ করো না।’ (সহীহুল মুসলিম-৪/১৪/পৃষ্ঠা-১৯৮০, জামি‘ তিরমিযী- ৪/৫১৫/হা২৩৮৯, মুসনাদ আহমাদ -৪/১৮২) অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছেঃ
اسْتَفْتِ قَلْبَكَ، وَإِنْ أَفْتَاكَ النَّاسُ وَأَفْتَوْكَ.
‘তোমার মনকে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করো, যদিও মানুষ অন্য ফাতাওয়া প্রদান করে।’ (হাদীসটি হাসান। সুনান দারিমী-২/৩১৯/২৫৩৩, মুসনাদ আহমাদ -৪/২২৮, তারিখুল কাবীর-১/১৪৫)
‘উমার (রাঃ) বলতেনঃ ‘বড়ই আফসোস যে, আমি সুদের তাফসীর পূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারিনি এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করলেন। হে জনমণ্ডলী! তোমরা সুদ গ্রহণ পরিত্যাগ করো এবং প্রত্যেকে ঐ জিনিস পরিত্যাগ করো যার মধ্যে সামান্যতম সন্দেহ রয়েছে। (সনদ মুনকাতি‘। মুসনাদ আহমাদ -১/৩৬, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৭৬৩/হা-২২৭৬)
একটি হাদীসে রয়েছে যেঃ الرِّبَا ثَلَاثَةٌ وَسَبْعُونَ بَابًا ‘সুদের তিয়াত্তরটি পাপ রয়েছে।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান ইবনু মাজাহ-২/৭৬৩/২২৭৫) ইমাম হাকিম (রহঃ) একটু বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেছেন যে, أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ، وَإِنَّ أَرْبَى الرِّبَا عِرْضُ الرَّجُلِ الْمُسْلِمِ.
‘সবচেয়ে হালকা পাপ হচ্ছে মায়ের সাথে ব্যভিচার করা। সবচেয়ে বড় সুদ হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তির সম্মান নষ্ট করা।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম২/৩৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
الرِّبَا سَبْعُوْنَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ.
‘সুদের সত্তরটি পাপ রয়েছে।’ ‘সবচেয়ে হালকা পাপ হচ্ছে মায়ের সাথে ব্যভিচার করা।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান ইবনু মাজাহ-২/৭৬১/২২৭৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَأْكُلُونَ فِيْهِ الرِّبَا قَالَ: قِيلَ لَهُ: النَّاسُ كُلُّهُمْ؟ قَالَ: مَنْ لَمْ يَأْكُلْهُ مِنْهُمْ نَالَهُ مِنْ غُبَارِهِ.
‘এমন যুগ আসবে যে, মানুষ সুদ গ্রহণ করবে।’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ ‘সবাই কি সুদ গ্রহণ করবে? তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘যে গ্রহণ করবে না তার কাছেও তার ধূলী পৌঁছবে।’ (সনদ মুনকাতি‘। মুসনাদ আহমাদ -২/৪৯৪, সুনান আবূ দাউদ-৩/২৪৩/হা৩৩৩১, সুনান নাসাঈ -৭/২৭৯, ২৮০/হা-৪৪৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৭৬৩/হা২২৭৮) এ ধূলী হতে বাঁচার উদ্দেশ্যে ঐ কারণগুলোর পাশেও যাওয়া উচিত নয় যেগুলো হারামের দিকে নিয়ে যায়।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যখন সূরাহ্ বাক্বারার শেষ আয়াতটি সুদের নিষিদ্ধতার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে এসে তা পাঠ করেন এবং সুদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করেন। (মুসনাদ আহমাদ ৬/৪৬) (মুসনাদ আহমাদ ৬/৪৬) এ ছাড়া ছয়টি হাদীসগ্রন্থের তিরমিযী বাদে অন্যান্য গ্রন্থে এটি বর্ণনা করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী ৮/৫১, সহীহ মুসলিম৩/১২০৬, সুনান আবু দাঊদ৩/৭৫৯, সুনান নাসাঈ ৬/৩০৬, ইবনু মাজাহ ২/১০২২) অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَعَنَ اللهُ الْيَهُودَ، حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُومُ فَجَمَّلُوهَا فَبَاعُوهَا وَأَكَلُوا أَثْمَانَهَا.
‘ইয়াহূদীদেরকে মহান আল্লাহ্ অভিশপ্ত করেছেন; কেননা যখন তাদের ওপর চর্বি হারাম করা হয় তখন তারা কৌশল অবলম্বন করে ঐগুলো গলিয়ে বিক্রি করে এবং মূল গ্রহণ করে।’ (সহীহুল বুখারী-৬/৫৭০/হা৩৪৬০, ফাতহুল বারী -৬/৫৭২, সহীহ মুসলিম-৩/৭২/পৃষ্ঠা-১২০৭, সুনান ইবনু মাজাহ-২/১১২২/হা-৩৩৮৩, সুনান দারিমী-২/১৫৬/২১০৪, মুসনাদ আহমাদ -১/২৫) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَعَنَ اللهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ، وَشَاهِدَيْهِ وَكَاتِبَهُ.
‘সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্যদানকারী এবং লেখকদের প্রতি মহান আল্লাহ্র অভিশাপ।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম-৩/১০৯/ পৃষ্ঠা-১২১৯, সুনান আবূ দাউদ-৩/২৪৪/হা-৩৩৩৩, জামি‘তিরমিযী -৩/৫১২/হা১২০৬, মুসনাদ আহমাদ -৩/৩০৪)
তাহলে এটা স্পষ্ট কথা যে, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষ্যদাতাদের অযথা মহান আল্লাহ্র অভিশাপ স্কন্ধে বহন করার কি প্রয়োজন? ভাবার্থ এই যে, শারী‘আতের বন্ধনে এনে কৌশল অবলম্বন করে তারা ঐ সুদের লেখা-পড়া করে, এ জন্য তারাও অভিশপ্ত। সহীহ হাদীসে এসেছে যেঃ
إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلَا إِلَى أَمْوَالِكُمْ، وَإِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ.
‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ তোমাদের আকৃতি এবং সম্পদের দিকে কোন দৃষ্টিপাত করবেন না। তবে তিনি তোমাদের অন্তর ও ‘আমলের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন।’ (সহীহ মুসলিম- ৪/৩৩/১৯৮৬, সুনান ইবনু মাজাহ-২/১৩৮৬/হা-৪১৪৩, মুসনাদ আহমাদ -২/২৮৫)
‘আল্লামাহ ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) এই কৌশল খণ্ডন করার ব্যাপারে إِبْطَالِالتَّحْلِيلِ নামে একখানা পৃথক কিতাব রচনা করেছেন। কিতাবটি এই বিষয়ে উত্তম কিতাবই বটে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings