Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 23
Saheeh International
And if you are in doubt about what We have sent down upon Our Servant [Muhammad], then produce a surah the like thereof and call upon your witnesses other than Allah, if you should be truthful.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের আলোচনা করার পর এখানে নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি কাফিরদের সম্বোধন করে বলেন:
(وَاِنْ کُنْتُمْ فِیْ رَیْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلٰی عَبْدِنَا فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِھ۪ﺕ وَادْعُوْا شُھَدَا۬ءَکُمْ مِّنْ دُوْنِ اللہِ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ)
“এবং আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও, তবে তার সমতুল্য একটি ‘সূরা’তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকে আহ্বান কর; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
এখানে “عبد” (আবদ) বা বান্দা দ্বারা উদ্দেশ্য নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
অন্যএ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلٰي مُحَمَّدٍ)
“আর তারা ঈমান আনে যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি।”(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:২)
সুতরাং এখানে عبد (আবদ) দ্বারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝানো হয়েছে। আর “আবদ” হল একটি অধিক সম্মানসূচক উপাধি। কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “আবদ”বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللّٰهِ وَمَآ أَنْزَلْنَا عَلٰي عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ)
“যদি তোমরা ঈমান রাখ আল্লাহর ওপর এবং যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার (মুহাম্মাদের) প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম তার ওপর।”(সূরা আনফাল ৮:৪১)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرٰي بِعَبْدِه۪)
“পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে (মুহাম্মাদকে) রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন।”(সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:১)
এভাবে সূরা ফুরকান ১, সূরা নাজম ১০, সূরা হাদীদ ৯ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে عبد (আবদ) বা দাস বলে উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার বান্দা বা দাস, আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর স্রষ্টা ও মা‘বূদ।
এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে পছন্দ করেন তাদের ব্যাপারে এ উপাধি ব্যবহার করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِه۪)
“তবে তার সমতুল্য একটি ‘সূরা’তৈরি করে নিয়ে এসো”
কাফিররা যখন কুরআনকে পূর্বকালের উপকথা বা মুহাম্মাদের কথা বলে প্রত্যাখ্যান করতে লাগল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলেন, এ কুরআনের মত একটি কিতাব রচনা করে নিয়ে আসতে। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَالْجِنُّ عَلٰٓی اَنْ یَّاْتُوْا بِمِثْلِ ھٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا یَاْتُوْنَ بِمِثْلِھ۪ وَلَوْ کَانَ بَعْضُھُمْ لِبَعْضٍ ظَھِیْرًا)
‘‘যদি এ কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য সব মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবে না।”(সূরা ইসরা ১৭:৮৮)
তারা যখন এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারল না তখন আল্লাহ তা‘আলা দশটি সূরার মত কিছু তৈরি করে আনতে বললেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ فَأْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِه۪ مُفْتَرَيَاتٍ)
“তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি স্বরচিত সূরা আনয়ন করো।”(সূরা হূদ ১১:১৩)
এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে একটি সূরার কথা বলেও চ্যালেঞ্জ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِه۪)
– এর সমতুল্য একটি মাত্র সূরা নিয়ে এসো। (সূরা বাকারাহ ২:২৩)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তাদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(فَإِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا وَلَنْ تَفْعَلُوْا)
অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনো করতে পারবে না। (সূরা বাকারাহ ২:২৪)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِيْ وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ)
“তা হলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর যা তৈরি করে রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্য।”(সূরা বাকারাহ ২:২৪)
আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ অবান্তর চিন্তা-ভাবনা ও অপকৌশল পরিহার করে সে জাহান্নামকে ভয় করার নির্দেশ দিলেন যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।
“وُقُوْدٌ” এর অর্থ হচ্ছে জ্বালানি, যা দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। যেমন গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَمَّا الْقَاسِطُوْنَ فَكَانُوْا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا)
“অপরপক্ষে অত্যাচারীরা তো জাহান্নামেরই ইন্ধন হবে।”(সূরা জিন ৭২:১৫)
এখানে الحجارة (হিজারা) বা পাথর দ্বারা উদ্দেশ্য গন্ধকের পাথর যা অত্যন্ত কাল, বড় এবং অত্যন্ত দুর্গন্ধময়। যার আগুন অত্যন্ত উত্তপ্ত হবে।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন: এটা গন্ধকের পাথর যা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে। কাফিরদের জন্য এগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (তাফসীর ইবনু জারীর আত-তাবারী, অত্র আয়াতের তাফসীর, বর্ণনাটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুপাতিক)
সুদ্দী স্বীয় সনদে ইবনু মাসউদ (রাঃ) প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেন যে, জাহান্নামে গন্ধকের পাথর থাকবে যার প্রজ্জ্বলিত অগ্নি দ্বারা কাফিরদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন: এ পাথরগুলোর দুর্গন্ধ মৃত দেহের দুর্গন্ধের চেয়েও কঠিন দুর্গন্ধময়।
আবার কেউ বলেছেন: এগুলো হল সেই সব মূর্তি, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার অংশীদার হিসেবে ইবাদত করা হত। যাতে মুশরিকরা বুঝতে পারে তারা এসব মূর্তির ইবাদত করেছে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের জন্য। কিন্তু সেগুলো কোন উপকার করা তো দূরের কথা, আজ তাদের সাথে জাহান্নামে জ্বলছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّکُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللہِ حَصَبُ جَھَنَّمَﺚ اَنْتُمْ لَھَا وٰرِدُوْنَﮱلَوْ کَانَ ھٰٓؤُلَا۬ئِ اٰلِھَةً مَّا وَرَدُوْھَاﺚ وَکُلٌّ فِیْھَا خٰلِدُوْنَ)
“তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদত করো সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে।। যদি তারা ইলাহ্ হতো তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করতো না; তাদের সকলেই তাতে স্থায়ী হবে।”(সূরা আম্বিয়া ২১:৯৮-৯৯)
(أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِيْنَ)
“তৈরি করে রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্য।”থেকে বুঝা যাচ্ছে মূলত জাহান্নাম কাফির ও মুশরিকদের জন্য, কোন মু’মিন সেখানে চিরস্থায়ী থাকবে না। আরো বুঝা যাচ্ছে জান্নাত এবং জাহান্নামের অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান।
হাফেয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: এ আয়াত দ্বারা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জমায়াতের ইমামগণ দলীল পেশ করে থাকেন যে, জাহান্নাম এখনো বিদ্যমান।
এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। যেমন একটি সুদীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত রয়েছে:
تَحَاجَتِ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ
জান্নাত ও জাহান্নাম ঝগড়া করল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৮৫০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জাহান্নাম তার রবের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে বলল: হে আমার প্রতিপালক! আমার কিছু অংশ কিছু অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন তাকে দু’টি শ্বাস ছাড়ার অনুমতি দেয়া হল। একটি শীতকালে এবং অপরটি গ্রীষ্মকালে। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৬০)
ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক সময় আমরা একটি প্রকট আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমরা বললাম: এটি কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সত্তর বছর পূর্বে একটি পাথর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তা আজ পৌঁছল। (সহীহ মুসলিম হা: ২১৮৪-২১৮৫)
এরূপ অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা প্রমাণ করে জান্নাত ও জাহান্নাম এখনো বিদ্যমান। এটাই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর আক্বীদা-বিশ্বাস।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. তৎকালীন আরবরা সাহিত্যে বিশ্ব-সেরা ছিল। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এ কুরআনের সবচেয়ে একটি ছোট সূরার মত সূরা তৈরি করে আনতে। কিন্তু তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারেনি। এ চ্যালেঞ্জ কিয়ামত অবধি সকল মানুষের জন্য বিদ্যামান থাকবে।
২. আবদ বা দাস একটি সম্মানসূচক উপাধি। আল্লাহ তা‘আলা কেবল তাদের জন্য এ উপাধি ব্যবহার করেন যাদের তিনি ভালবাসেন।
৩. জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এখনো বিদ্যমান।
৪. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও রাসূল; তাঁর কোন অংশ নয়।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings