Surah Al Baqarah Tafseer

Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114

Al-Baqarah : 222

2:222
وَيَسْـَٔلُونَكَعَنِٱلْمَحِيضِقُلْهُوَأَذًىفَٱعْتَزِلُوا۟ٱلنِّسَآءَفِىٱلْمَحِيضِوَلَاتَقْرَبُوهُنَّحَتَّىٰيَطْهُرْنَفَإِذَاتَطَهَّرْنَفَأْتُوهُنَّمِنْحَيْثُأَمَرَكُمُٱللَّهُإِنَّٱللَّهَيُحِبُّٱلتَّوَّٰبِينَوَيُحِبُّٱلْمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢

Saheeh International

And they ask you about menstruation. Say, "It is harm, so keep away from wives during menstruation. And do not approach them until they are pure. And when they have purified themselves, then come to them from where Allah has ordained for you. Indeed, Allah loves those who are constantly repentant and loves those who purify themselves."

Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)

ঋতুবর্তী স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা নিষিদ্ধ

ইমাম আহমাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইয়াহূদীরা ঋতুবর্তী মহিলাদেরকে তাদের সাথে খেতে দিতো না এবং তাদের পাশেও রাখতো না। সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তারই উত্তরে

﴿وَیَسْـَٔلُوْنَكَعَنِالْمَحِیْضِ١ؕقُلْهُوَاَذًى١ۙفَاعْتَزِلُواالنِّسَآءَفِیالْمَحِیْضِ١ۙوَلَاتَقْرَبُوْهُنَّحَتّٰىیَطْهُرْنَ﴾

এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ اصْنَعُوا كُلَّ شَيْءٍ إِلَّا النِّكَاحَ ‘সহবাস ছাড়া অন্যান্য সব কিছু বৈধ।’ এই কথা শুনে ইয়াহূদীরা বলেঃ ‘আমাদের বিরুদ্ধাচরণই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উদ্দেশ্য।’ উসায়েদ ইবনু হুযায়র (রাঃ) এবং ইবাদ ইবনু বিশর (রাঃ) ইয়াহূদীদের এই কথা নকল করে বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমাদেরকে তাহলে ঋতুর সময়ও সহবাস করার অনুমতি দিন।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুখমণ্ডলের রং পরিবর্তিত হয়। অন্যান্য সাহাবীগণ ধারণা করেন যে, তিনি তাঁদের প্রতি রাগান্বিত হয়েছেন। অতঃপর এই মহান ব্যক্তিদ্বয় চলে যেতে থাকলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কোন এক ব্যক্তি উপঢৌকন স্বরূপ কিছু দুধ নিয়ে আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের পিছনে লোক পাঠিয়ে তাদেরকে ডেকে পাঠান এবং ঐ দুধ তাদেরকে পান করান। তখন জানা যায় যে, ঐ ক্রোধ প্রশমিত হয়েছে। (সহীহ মুসলিম-১/১৬/২৪৬, সুনান আবূ দাউদ-১/৬৭/২৫৮, মুসনাদ আহমাদ -৩/১৩২, ২৪৬)

সুতরাং ‘ঋতু অবস্থায় স্ত্রীদের হতে পৃথক থাকো’ এর ভাবার্থ হচ্ছে ‘সহবাস করো না, এছাড়া অন্যান্য সবকিছুই বৈধ।’ (সহীহ মুসলিম-১/২৪৬) অধিকাংশ ‘আলিমের অভিমত এই যে, সহবাস বৈধ নয় বটে কিন্তু প্রেমালাপ করা বৈধ। হাদীসসমূহেও রয়েছে যে, এরূপ অবস্থায় স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে আদর সোহাগ করতেন, কিন্তু তারা লজ্জাস্থান কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন। (হাদীস সহীহ। সুনান আবূ দাঊদ-১/৭১/২৭২) আম্মার (রাঃ) -এর ফুফু ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করেন, যদি স্ত্রী হায়িযের অবস্থায় থাকে এবং স্বামী-স্ত্রীর বিছানা একটিই হয় তবে তারা কি করবে ? অর্থাৎ এই অবস্থায় তার স্বামী তার পাশে শয়ন করতে পারে কি না? ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আমি তোমাকে সেই সংবাদই দিচ্ছি যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই করেছেন। আর তা হলো একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়িতে এসেই তাঁর সালাতের জায়গায় চলে যান এবং সালাতে লিপ্ত হয়ে পড়েন। অনেক বিলম্ব হয়ে যায়। ইতোমধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। তিনি শীত অনুভব করে আমাকে বলেনঃ

ادْنِي مِنِّي. فَقُلْتُ: إِنِّي حَائِضٌ. فَقَالَ: اكْشِفِي عَنْ فَخِذَيْكِ. فَكَشَفْتُ فَخِذِي، فَوَضَعَ خَدَّهُ وَصَدْرَهُ عَلَى فَخِذِي، وحنَيت عَلَيْهِ حَتَّى دَفِئَ وَنَامَ (রাঃ) .

‘এখানে এসো আমি বলিঃ আমি ঋতুবর্তী। তিনি আমাকে আমার জানুর ওপর হতে কাপড় সরাতে বলেন। অতঃপর তিনি আমার উরু ও গণ্ড দেশের ওপর বক্ষ রেখে শুয়ে পড়েন। আমিও তার ওপর ঝুঁকে পড়ি। ফলে ঠাণ্ডা কিছু প্রশমিত হয় এবং সেই গরমে ঘুমিয়ে যান।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান আবূ দাউদ-১/৭০/২৭০) মাসরূক (রহঃ) একবার ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর নিকট গমন করেন এবং বলেনঃ

السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَعَلَى أَهْلِهِ، فَقَالَتْ عَائِشَةَ: أبو عائشة! مَرْحَبًا مَرْحَبًا، فَأَذِنُوا لَهُ فَدَخَلَ فَقَالَ: إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَسْأَلَكِ عَنْ شَيْءٍ وَأَنَا أَسْتَحِي. فَقَالَتْ: إِنَّمَا أَنَا أُمُّكَ، وَأَنْتَ ابْنِي. فَقَالَ: مَا لِلرَّجُلِ مِنَ امْرَأَتِهِ وَهِيَ حَائِضٌ؟ فَقَالَتْ: لَهُ كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا فَرْجَهَا.

‘আসসালামু ‘আলান্ নবী ওয়া আহলিহি’ মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। উত্তরে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ হে আবূ ‘আয়িশাহ্! তোমাকে স্বাগতম। অতঃপর তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। মাসরূক (রহঃ) বলেনঃ আমি আপনাকে একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি, কিন্তু লজ্জাবোধ করছি।’ তিনি বলেনঃ ‘আমি তো তোমার মা এবং তুমি আমার ছেলে সুতরাং যা জিজ্ঞেস করতে চাও করো।’ তিনি বলেনঃ ‘আচ্ছা বলুন তো ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে তার স্বামীর কি করা কর্তব্য?’ তিনি বলেন লজ্জাস্থানে সহবাস ব্যতীত সবই জায়িয। (হাদীসটি সহীহ। তাফসীর তাবারী -৪/৩৭৮/৪২৪২, ৪২৪৫) অন্য সনদেও বিভিন্ন শব্দে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এই উক্তি বর্ণিত আছে তবে তাতে একটু বৃদ্ধি আছে যেঃ ل لَهُ مَا فَوْقَ الْإِزَارِ ‘কাপড়ের ওপর দিয়ে তার জন্য সবই বৈধ।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী -৪/৩৭৮/৪২৪৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মুজাহিদ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) এবং ইকরামাহ (রহঃ) -এর ফাতাওয়া এটাই। ভাবার্থ এই যে, ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে উঠাবসা, খাওয়া ও পান করা ইত্যাদি সবই সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আমি ঋতু অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথা ধৌত করতাম। (সহীহুল বুখারী-১/৪৭৮/২৯৫, সহীহ মুসলিম-২/৮-১০/১৪৪) তিনি আমার ক্রোড়ে হেলান দিয়ে শুইয়ে কুর’আন মাজীদ পাঠ করতেন। (সহীহুল বুখারী-১/৪৭৯/২৯৭, ফাতহুল বারী ১/৪৭৯, সহীহ মুসলিম-২/১৫/১৪৬। ) অন্যত্র ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ

كُنْتُ أَتَعَرَّقُ العَرْق وَأَنَا حَائِضٌ، فَأُعْطِيهِ النَّبِيَّ # فَيَضَعُ فَمَهُ فِي الْمَوْضِعِ الَّذِي وَضَعْتُ فَمِي فِيهِ، وَأَشْرَبُ الشَّرَابَ فَأُنَاوِلُهُ، فَيَضَعُ فَمَهُ فِي الْمَوْضِعِ الَّذِي كُنْتُ أَشْرَبُ.

আমি হাড় চুষতাম এবং তিনিও ওখানেই মুখ দিয়ে চুষতনে। আমি পানি পান করে তাঁকে গ্লাস দিতাম এবং তিনিও ওখানেই মুখ দিয়ে ঐ গ্লাস হতে ঐ পানিই পান করতেন।’ (সহীহ মুসলিম-১/১৪/২৪৫, ২৪৬, সুনান আবূ দাউদ-১/৬৮/২৫৯, সুনান নাসাঈ -১/৫৯-৬০/৭০, সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬৪৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ

كُنْتُ أَنَا وَرَسُولُ اللَّهِ # نَبِيتُ فِي الشِّعَارِ الْوَاحِدِ، وَإِنِّي حَائِضٌ طَامِثٌ، فَإِنْ أَصَابَهُ مِنِّي شَيْءٌ، غَسَلَ مَكَانَهُ لَمْ يَعْدُه، وَإِنْ أَصَابَ -يَعْنِي ثَوْبَهُ -شَيْءٌ غَسَلَ مَكَانَهُ لَمْ يَعْدُه، وَصَلَّى فِيْهِ.

‘আমার ঋতুকালীন অবস্থায় আমি ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই বিছানায় শয়ন করতাম। তাঁর কাপড়ের কোন জায়গা খারাপ হয়ে গেলে তিনি শুধু ঐটুকু জায়গাই ধুয়ে ফেলতেন, শরীরের কোন জায়গায় কিছু লেগে গেলে ঐ জায়গা টুকুও ধুয়ে ফেলতেন এবং ঐ কাপড়েই সালাত আদায় করতেন।’ (সুনান আবূ দাউদ-১/৭০/২৬৯, সুনান নাসাঈ -১/১৬৫/২৮৩, মুসনাদ আহমাদ -৬/৪৪) তবে সুনান আবূ দাউদের অন্য একটি বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি ঋতুর অবস্থায় বিছানা হতে নেমে গিয়ে মাদুরের ওপরে চলে আসতাম। আমি পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আগমন করতেন না।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান আবূ দাউদ-১/৭০/২৭১) এর ভাবার্থ এই হতে পারে যে, তিনি সতর্কতা মূলক বেঁচে থাকতেন, নিষিদ্ধতার জন্য নয়। এ সম্পর্কে কোন কোন মুফাস্সিরের উক্তি এই যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাপড় বাধানো অবস্থাই উপকার গ্রহণ করেছেন।

হারিস হিলালিয়াহ (রাঃ) -এর কন্যা মায়মুনাহ্ (রাঃ) বলেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর কোন সহধর্মিণীর সাথে আদর-সোহাগের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তাকে কাপড় বেঁধে দেয়ার নির্দেশ দিতেন। (সহীহুল বুখারী-১/৪৮৩/৩০৩, ফাতহুল বারী -১/৪৮৩, সহীহ মুসলিম-১/২৪৩/৩) এ রকমই সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এই হাদীসটি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। (সহীহুল বুখারী-১/৪৮১/৩০২, ফাতহুল বারী -১/৪৮০, সহীহ মুসলিম-১/১/২৪২) এ ছাড়া ইমাম আহমাদ (রহঃ) , আবূ দাঊদ (রহঃ) , তিরমিযী (রহঃ) এবং ইবনু মাজাহ (রহঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সা‘দ আল আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেনঃ

مَا يَحِلُّ لِي مِنَ امْرَأَتِي وَهِيَ حَائِضٌ؟ قَالَ: مَا فَوْقَ الْإِزَارِ.

‘আমার স্ত্রীর ঋতু অবস্থায় তার সাথে আমার কোন কিছু বৈধ আছে কি?’ ‘তিনি বলেনঃ ‘কাপড়ের ওপর সব কিছুই বৈধ।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাঊদ-১/৫৫/২১২, জামি‘ তিরমিযী-১/২৪০/১৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ-১/২১৩/৬৫১, মুসনাদ আহমাদ ৪/৩৪২) সুনান আবূ দাউদের অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘কাপড়ের ওপর সব কিছুই বৈধ। তবে এটা হতে বেঁচে থাকা উত্তম।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান আবূ দাঊদ-১/৫৫/২১৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) , ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) এবং শুরাইহ্ (রহঃ) -এর অভিমতও এটাই। আর ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) -এর এই ব্যাপারে দু’টি উক্তি রয়েছে, তন্মধ্যে এটাও একটি। অধিকাংশ ‘ইরাকী প্রভূতি মনীষীরও অভিমত এটাই। তারা বলেন যে, সহবাস যে হারাম এটাতো সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। কাজেই এর আশপাশ থেকেও বেঁচে থাকা উচিত যাতে হারামের মধ্যে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। ঋতুর অবস্থায় সহবাসের নিষিদ্ধতা এবং যে ব্যক্তি এই কার্যে পতিত হবে তার পাপী হওয়া, এটা তো নিশ্চিত কথা। তাকে অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কিন্তু তাকে কাফ্ফারাও দিতে হবে কি-না। এ বিষয়ে ‘আলিমগণের দু’টি উক্তি রয়েছে।

প্রথম উক্তি এই যে তাকে কাফ্ফারাও দিতে হবে। মুসনাদ আহমাদ ও সুনানের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

الَّذِي يَأْتِي امْرَأَتَهُ وَهِيَ حَائِضٌ: يَتَصَدَّقُ بِدِينَارٍ، أَوْ نِصْفِ دِينَارٍ.

‘যে ব্যক্তি তার ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করে সে যেন একটি স্বর্ণ মুদ্রা বা অর্ধ মুদ্রা দান করে।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ-১/৬৯/২৬৪, জামি‘ তিরমিযী-১/২৪৪/১৩৬, সুনান নাসাঈ -১/২০৫, ২০৬/৩৬৮, ১/১৬৮/২৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ-১/২১০/৬৪০, সুনান দারিমী-১/২৭০/১১০৬, মুসনাদ আহমাদ -১/২৭২, ৩২৫, ৩৬৭, সুনান বায়হাক্বী-১/৩১৬,৩১৭) জামি‘ তিরমিযীর মধ্যে রয়েছে যেঃ

إِذَا كَانَ دَمًا أَحْمَرَ فَدِينَارٌ، وَإِنْ كَانَ دَمًا أَصْفَرَ فَنِصْفُ دِينَارٍ.

‘যদি রক্ত লাল হয় তবে একটা স্বণ মুদ্রা আর যদি রক্ত হলদে বণের হয় তবে অর্ধ স্বর্ণ মুদ্রা।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। জামি‘ তিরমিযী-১৩৭)

মুসনাদ আহমাদের মধ্যে রয়েছে যে, যদি রক্ত শেষ হয়ে গিয়ে থাকে এবং এখন পর্যন্ত স্ত্রী গোসল না করে থাকে, এই অবস্থায় যদি স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় তবে অর্ধ দীনার, নচেৎ এক দীনার। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -১/৩৬৭)

দ্বিতীয় উক্তি এই যে, কাফ্ফারা কিছুই নেই। শুধুমাত্র মহান আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেই চলবে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) ও এ কথাই বলেন। তাছাড়া অধিকতর সঠিক মাযহাবও এটাই এবং জামহূর ‘উলামাও এই মতই পোষণ করেন। কারণ পূর্বে বর্ণিত কাফ্ফারার হাদীসগুলো মারফূ হিসেবে বর্ণিত হলেও তাদের মতে এগুলো মাওকূফ হাদীস হওয়ায় বিশুদ্ধ। কেননা বর্ণনা হিসেবে এগুলো মারফূ‘ও মাওকূফ উভয় রূপে বর্ণিত হয়েছে। আবার অধিকাংশ হাদীসশাস্ত্রবিদগণের মতেও সঠিক কথা এই যে, এগুলো মাওকূফ হাদীস।

অতঃপর মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ ﴿وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى یَطْهُرْنَ﴾ ‘তাদের নিকটে যেয়ো না, যে পর্যন্ত তারা পবিত্র না হয়।’ এ নির্দেশের তাফসীর হচ্ছে যে, ঋতুর অবস্থায় স্ত্রীগণ হতে তোমরা পৃথক থাকবে। এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, ঋতু শেষ হয়ে গেলে তাদের নিকট যাওয়া বৈধ। ইমাম আবূ ‘আবদিল্লাহ আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) বলেন, পবিত্রতা বলে দিচ্ছে যে, এখন তার নিকটে যাওয়া জায়িয। মায়মুনাহ (রাঃ) এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আমাদের মধ্যে যখন কেউ ঋতুবর্তী হতেন তখন তিনি কাপড় বেঁধে নিতেন এবং মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে চাদরে শুয়ে যেতেন। এর দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হচ্ছে যে, নিকটে যাওয়া হতে নিষেধ করার অর্থ সহবাস হতে নিষেধ করা। এছাড়া তার সাথে শয়ন , উপবেশন ইত্যাদি সবই বৈধ।

এরপরে ইরশাদ হচ্ছেঃ ﴿فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَاْتُوْهُنَّ مِنْ حَیْثُ اَمَرَكُمُ اللّٰهُ﴾ ‘তারা যখন পবিত্র হবে তাদের সাথে সহবাস করো।’ ইমাম ইবনু হাযাম (রহঃ) বলেন যে, প্রত্যেক হায়িযের পবিত্রতার ওপর সহবাস করা ওয়াজিব। তার দলীল হচ্ছে فاتوهن অর্থাৎ তাদের নিকটে এসো এই শব্দটি। কিন্তু এটা কোন শক্ত দলীল নয়। এটা শুধু অবৈধতা সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা। এছাড়া অন্য কোন দলীল তার কাছে নেই।

উসূল শাস্ত্রের ‘আলিমগণের মধ্যে কেউ কেউ বলেন যে আমর অথাৎ নির্দেশ সাধারণত অবশ্যকরণীয়রূপে এসে থাকে। তাঁদের পক্ষে ইমাম ইবনু হাযাম (রহঃ) -এর কথার উত্তর দেয়া খুব কঠিন।

আবার কেউ কেউ বলেন যে, এই নির্দেশ শুধু অনুমতির জন্য। এর পূর্বে নিষিদ্ধতার কথা এসেছে বলে এটা এরই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এখানে আমর তথা নির্দেশটি অবশ্য করণীয়ের জন্য নয়। কিন্তু এটা বিবেচ্য বিষয়।

অতএব দলীল দ্বারা যা সাব্যস্ত হয়েছে তা এই যে, এরূপ স্থলে অর্থাৎ পূর্বে নিষিদ্ধ এবং পরে নির্দেশ, এ অবস্থায় নির্দেশ স্বীয় মূলের ওপরেই বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ তা নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে যেমন ছিলো এখন তেমনি হয়ে যাবে। অর্থাৎ নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে যদি কাজটি ওয়াজিব থেকে থাকে তবে এখনো ওয়াজিবই থাকবে। যেমন কুর’আন মাজীদের মধ্যে রয়েছেঃ

﴿فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِیْنَ﴾

অর্থাৎ যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতীত হয়ে যাবে তখন তোমরা মুশরিকদের হত্যা করো। (৯ নং সূরাহ আত তাওবাহ, আয়াত-৫)

আর যদি নিষিদ্ধতার পূর্বে তা বৈধ থেকে থাকে তবে তা বৈধ থাকবে। যেমন আল কুর’আনের বাণীঃ ﴿وَ اِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوْا﴾ ‘যখন তোমরা ইহরাম খুলে দিবে তখন তোমরা শিকার করো।’ (৫ নং সূরাহ আল মায়িদাহ, আয়াত-২) অন্য স্থানে রয়েছেঃ ﴿فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِی الْاَرْضِ﴾ ‘যখন সালাত পুরো করা হয়ে যাবে তখন তোমরা যমিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ো।’ (৬২নং সূরাহ আল জুমু‘আহ, আয়াত-১০) উক্ত ‘আলিমগণের এই সিদ্ধান্ত ঐ বিভিন্ন উক্তিগুলোকে একত্রিত করে দেয় যে, যা ‘আমর’ এর অবশ্যকরণীয় ইত্যাদি সম্বন্ধে রয়েছে। ইমাম গাযালী (রহঃ) প্রভূতি মনীষীও এটা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী কতোগুলো ইমাম এটা পছন্দও করেছেন। আর এটাই সঠিকও বটে। এই জিজ্ঞাস্যঃ বিষয়টি ও স্মরণীয় যে, যখন হায়িযের রক্ত আসা বন্ধ হবে এবং সময় অতিক্রান্ত হবে, এর পরেও স্ত্রীর সাথে স্বামীর সহবাস হালাল হবে না যে পর্যন্ত সে গোসল না করবে। তবে হ্যাঁ, যদি তা কোন ওযর থাকে এবং গোসলের পরিবর্তে যদি তার জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয হয় তাহলে তায়াম্মুম করার পর তার কাছে স্বামী আসতে পারবে। এতে সমস্ত ‘আলিমের মতৈক্য রয়েছে। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এ সমস্ত ‘আলিমের বিপরীত মত পোষণ করেন। তিনি বলেন যে, যদি হায়িয শেষ সময়কাল অর্থাৎ দশ দিন পর্যন্ত থেকে বন্ধ হয়ে যায় তবে সে গোসল না করলেও তার স্বামী তার সাথে সহবাস করতে পারবে।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, একবারতো يَطْهُرْنَ রয়েছে; এর ভাবার্থ হচ্ছে হায়িযের রক্ত বন্ধ হওয়ার পর তাতাহ্হারনা’ শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে গোসল করা। মুজাহিদ (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) , লায়িস ইবনু সা‘দ (রহঃ) প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণও এটাই বলেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৬৮২, ৬৮৩)

স্ত্রীদের মলদ্বার ব্যবহার করা নিষেধ

অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ ﴿مِنْحَیْثُاَمَرَكُمُاللّٰهُ ...﴾‘তোমরা ঐ জায়গা দিয়ে এসো, মহান আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে যার নির্দেশ দিচ্ছেন।’ এর ভাবার্থ হচ্ছে সম্মুখের স্থান। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) প্রমুখ অনেক মুফাস্সিরও এই অর্থই বর্ণনা করেছেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে শিশুদের জন্মগ্রহণের জায়গা। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৬৮৪) এ ছাড়া অন্য স্থান অর্থাৎ পায়খানার রাস্তায় সঙ্গম করা নিষেধ। এ রকম কাজ যারা করে তারা সীমা অতিক্রমকারী। সাহাবী (রাঃ) এবং তাবি‘ঈন (রহঃ) হতে এর ভাবার্থ বর্ণিত হচ্ছেঃ ‘হায়িয অবস্থায় যে স্থান হতে তোমাদেরকে বিরত রাখা হয়েছিলো এখন ঐ স্থান তোমাদের জন্য হালাল হয়ে গেলো। এর দ্বারা পরিস্কারভাবে বুঝা গেলো যে, বায়ু পথে অর্থাৎ পায়খানার জায়গায় সহবাস করা হারাম। এর বিস্তারিত বর্ণনাও ইনশা’আল্লাহ্‌ আসছে। পবিত্রতার অবস্থায় এসো যখন সে হায়িয হতে বেরিয়ে আসে এ অর্থও নেয়া হয়েছে। এজন্যই এর পরবর্তী বাক্য পাপ কার্য হতে প্রত্যাবর্তনকারী ও হায়েযের অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হতে দূরে অবস্থানকারীকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা ভালোবাসেন। অনুরূপভাবে প্রস্রাবের স্থান ছাড়া অন্য স্থান হতে যারা বিরত থাকে মহান আল্লাহ্‌ তাদেরকেও ভালোবাসেন।

‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের ক্ষেত্র বিশেষ’ এর অর্থ

এরপর মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ نِسَآؤُكُمْحَرْثٌلَّكُمْ ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের ক্ষেত্র বিশেষ।’ অর্থাৎ সন্তান বের হওয়ার স্থানে তোমরা যেভাবেই চাও তোমাদের ক্ষেত্রে এসো। নিয়ম ও পদ্ধতি পৃথক হলেও স্থান একই। অর্থাৎ সম্মুখ দিক দিয়ে অথবা পিছন দিক দিয়ে। সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ ‘ইয়াহূদীরা বলতো যে, স্ত্রীর সাথে সম্মুখ দিক দিয়ে সহবাস না করলে, স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয় তাহলে টেরা চক্ষু বিশিষ্ট সন্তান জন্মলাভ করবে। ‘তাদের এ কথার খণ্ডনে এই আয়াতংশটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহুল বুখারী-৯/৩৭/৪৫২৮, ফাতহুল বারী -৪/৩৯৭, সহীহ মুসলিম-২১১৭//১০৫৮, সুনান আবূ দাঊদ-২/২৪৯/২১৬৩) এতে বলা হয় যে, স্বামীর এ ব্যাপারে স্বাধীনতা রয়েছে। ‘ইবনু আবী হাতিম গ্রন্থে রয়েছে যে, ইয়াহূদীরা এই কথাটিই মুসলিমদেরকেও বলেছিলো। ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই স্বাধীনতা দিয়েছেন যে, সম্মুখের দিক দিয়ে আসতে পারে এবং পিছনের দিক দিয়েও আসতে পারে। কিন্তু স্থান একটিই হবে। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৬৯৩) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, আনসারগণের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলোঃ ‘আমরা আমাদের স্ত্রীদের নিকট কিরূপে আসবো এবং কিরূপে ছাড়ব?’ তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘তারা তোমাদের ক্ষেত্র বিশেষ, যেভাবেই চাও এসো; তবে তা অবশ্যই জন্মন্দ্রিয় হতে হবে। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৬৮) বর্ণিত আছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাবিত (রাঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) -এর কন্যা হাফসার (রাঃ) নিকট এসে বলেন, ‘আমি একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চাই, কিন্তু লজ্জাবোধ করছি।’ তিনি বলেন, হে ভ্রাতুস্পুত্র! লজ্জা করো না, যা জিজ্ঞেস করতে চাও জিজ্ঞেস করো।’ তিনি বলেন, আচ্ছা বলুন তো, স্ত্রীদের সাথে পিছনের দিক দিয়ে সহবাস করা বৈধ কি?’ তিনি বলেন, ‘উম্মু সালামাহ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, আনসারগণ (রাঃ) স্ত্রীদেরকে উল্টা করে শুইয়ে দিতেন এবং ইয়াহূদীরা বলতো যে, এভাবে সহবাস করলে সন্তান টেরা হয়ে থাকে, অতঃপর যখন মুহাজিরগণ মাদীনায় আগমন করেন এবং এখানকার মহিলাদের সাথে তাদের বিয়ে হয়,তখন তারাও এরূপ করতে চাইলে একজন মহিলা তার স্বামীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত আপনার কথা মানতে পারি না। সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দরবারে এসে উপস্থিত হোন। উম্মু সালামাহ (রাঃ) তাকে বসতে দিয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখনই এসে যাবেন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে ঐ আনসারী মহিলাটি তো লজ্জায় জিজ্ঞেস করতে না পেরে ফিরে যান। কিন্তু উম্মু সালামাহ (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আনসারী মহিলাটিকে ডেকে পাঠাও।’ তিনি তাকে ডেকে আনলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে

﴿نِسَآؤُكُمْحَرْثٌلَّكُمْ١۪فَاْتُوْاحَرْثَكُمْاَنّٰىشِئْتُمْ﴾

এই আয়াতটি পাঠ করে শোনান এবং বলেন, ‘স্থান একটিই হবে।’(হাদীসহাসান। মুসনাদ আহমাদ -৬/৩০৫, জামি‘তিরমিযী -৫/২০০/২৯৭৯) ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

মুসনাদ আহমাদের মধ্যে রয়েছে যে, একবার ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলেন, হে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি তো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন কিসে তোমাকে ধ্বংস করছে? ‘উমার (রাঃ) বলেন, গতরাতে আমি আমার সোয়ারী উল্টো করেছি। তিনি কোন উত্তর দিলেন না। সেই সময়েই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং তিনি বলেন, তুমি সম্মুখের দিক হতে বা পিছনের দিক হতে এসো, তোমার দু’টোরই অধিকার রয়েছে। কিন্তু ঋতুর অবস্থায় এসো না। পায়খানার জায়গায় এসো না। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -১/২৯৭/২৭০৩, জামি‘তিরমিযী -৫/২০০/২৯৮০)

আনসারীর ঘটনা সম্বলিত হাদীসটি কিছু বিস্তারিতভাবেও বর্ণিত হয়েছে। আর তাতে এটাও রয়েছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে মহান আল্লাহ্‌ ক্ষমা করুন, তিনি কিছু সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়েছেন। কথা এই যে আনসারদের দল প্রথমে মূর্তি পূজক ছিলেন এবং ইয়াহূদীরা আহলে কিতাব ছিলো। মূর্তি পূজকরা কিতাবীদের মর্যাদা ও বিদ্যার কথা স্বীকার করতো। ইয়াহূদীরা একই প্রকারে তাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতো। আনসারদেরও এই অভ্যাসই ছিলো। পক্ষান্তরে মাক্কাবাসীরা কোন নির্দিষ্ট নিয়মের অনুসারী ছিলো না। তারা যথেচ্ছা সাথে মিলিত হতো। ইসলাম গ্রহণের পর মাক্কাবাসী মুহাজিরগণ (রহঃ) যখন মাদীনায় আগমন করেন তখন মাক্কা থেকে আগত একজন মুহাজির পুরুষ মাদীনায় একজন আনসারিয়াহ মহিলাকে বিয়ে করেন এবং মনমতো পন্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মহিলাটি অস্বীকার করে বসেন এবং ¯পষ্ট ভাষায় বলে দেন, আমি ঐ একই নিয়ম ছাড়া অনুমতি দিবো না। কথা বাড়তে বাড়তে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অতঃপর এই নির্দেশ অবতীর্ণ হয়। সুতরাং সামনে বা পিছনে যেভাবে ইচ্ছা সহবাসের অধিকার রয়েছে, তবে স্থান একটিই হবে। (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ-২/২৪৯/২১৬৪, মুসতাদরাক হাকিম-২/১৯৫, ২৭৯, সুনান বায়হাক্বী-৭/১৯৫, ১৯৬, তাফসীর তাবারী -৪/৪০৯/৪৩৩৭) মুজাহিদ (রাঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর নিকট কুর’আন মাজীদ শিক্ষা করেছি। প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত তাঁকে শুনিয়েছি। এক একটি আয়াতের তাফসীর ও ভাবার্থ তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। এই আয়াতে পৌঁছে যখন আমি তাঁকে এর ভাবার্থ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি তখন তিনি এটাই বর্ণনা করেন যা ওপরে বর্ণিত হয়েছে। কতোগুলো বর্ণনায় রয়েছেঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) কুর’আন মাজীদ পাঠের সময় কাউকেও কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। কিন্তু একদিন পাঠের সময় যখন এই আয়াতে পৌছেন তখন তিনি নাফি‘ (রহঃ) নামক তার একজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেন, এই আয়াতটি কি সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলো তা তুমি জানো কি?তিনি বলেনঃ না, তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এটা স্ত্রী লোকদের অন্য জায়গায় সহবাস সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলো। (সহীহুল বুখারী-৮/৩৭/৪৫৬২, ৪৫২৮) অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, একজন লোক তার স্ত্রীর পিছন দিক দিয়ে সহবাস করেছিলো। ফলে এই আয়াতটি ঐ কাজের অনুমতি প্রদান হিসেবে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু প্রথমত হাদীস শাস্ত্রবিদগণ এতে কিছুটা ত্রুটি বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয়ত এর অর্থও এই হতে পারে যে, পিছনের দিকে দিয়ে সম্মুখের স্থানে করেছিলেন এবং ওপরের বর্ণনাগুলোও সনদ হিসেবে সহীহ নয়। বরং ইমাম নাসাঈ (রহঃ) কা‘ব ইবনু ‘আলকামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার নাফি‘ (রহঃ) -কে আবূ নায্র (রহঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ লোকেরা বলা-বলি করছে যে, আপনি নাকি ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সূত্রে বলেছেন যে, মহিলাদের গুহ্যদ্বারে গমন করা জায়িয রয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ তারা আমার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলেছে। তাহলে শোন! তোমাদেরকে আমি একটি ঘটনার বর্ণনা করছি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) কুর’আন পাঠ করছিলেন, এমতাবস্থায় আমি সেখানে উপস্থিত হই, যখন তিনি ﴿نِسَآؤُكُمْحَرْثٌلَّكُمْ١۪فَاْتُوْاحَرْثَكُمْاَنّٰىشِئْتُمْ﴾‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত্রস্বরূপ, অতএব তোমরা যখন যেভাবে ইচ্ছা ক্ষেত্রে গমণ করো’ পাঠ করেন তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ হে নাফি‘! তুমি কি জানো, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পিছনে কি কারণ ছিলো? আমি বললামঃ না জানি না। তিনি বললেনঃ আমরা মাক্কার কুরাইশরা কখনো কখনো স্ত্রীদের পিছন থেকে সহবাস করতাম। যখন আমরা মাদীনায় হিজরত করি এবং সেখানকার আনসারী মহিলাদেরকে বিয়ে করি তখন তাদের সাথেও পিছন দিক থেকে সহবাস করার ইচ্ছা করি। কিন্তু এটি তারা অপছন্দ করে এবং এটি একটি বিশেষ আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর আনসারী মহিলাগণ ইয়াহূদীদের অনুরূপ পদ্ধতি অবলম্বন করে পার্শ্বদেশ ফিরে শয়ন করে সহবাস কাজ সম্পন্ন করতে থাকে, তখন মহান আল্লাহ্‌ এ আয়াতটি নাযিল করেন। (হাদীস সহীহ। সুনান নাসাঈ -৫/৩১৫/৮৯৭৮) এ বর্ণনাটি ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে সঠিক এবং এর বিপরীত সনদগুলো সঠিক নয়। এর ভাবার্থ অন্যরূপও হতে পারে। তাছাড়া স্বয়ং ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকেও এর বিপরীত বর্ণনা এসেছে। এটা না বৈধ,না হালাল, বরং এটা একটি হারাম বিষয়। যদিও মাদীনার কোন কোন বিদ্যানগণের প্রতি বৈধতার উক্তির সম্মন্ধ লাগানো হয়েছে। আর কেউ কেউ তো ইমাম মালিক (রহঃ) -এর দিকেই জুড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক এটা অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, এটা কখনো ইমাম মালিক (রহঃ) -এর কথা নয়। বহু সহীহ হাদীস দ্বারা এ কাজের অবৈধতা প্রমাণিত হয়েছে। আর সেই বর্ণনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

اسْتَحْيُوا، إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ، لَا يَحِلُّ مَأْتَى النِّسَاءِ فِي حُشُوشِهِنَّ.

‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা লজ্জাবোধ করো। মহান আল্লাহ্‌ সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না।’ স্ত্রীদের গুহ্যদ্বারে সহবাস করা বৈধ নয়।’ (১৭২৮. হাদীসটি সহীহ। সুনান দারাকুতনী-৩/২৮৮, তারগীবওয়াততারহীব-৩/২৯০, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৪/২৯৯)

ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন যে, খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত আল খাতামী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

لَا يَسْتَحْيِي اللَّهُ من الحق، لا يستحي اللَّهُ مِنَ الْحَقِّ -ثَلَاثًا -لَا تَأْتُوا النِّسَاءَ فِي أَعْجَازِهِنَّ.

‘মহান আল্লাহ্‌ সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। মহান আল্লাহ্‌ সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। মহান আল্লাহ্‌ সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। তোমরা স্ত্রীদের গুহ্যদ্বারে সহবাস করো না।’(হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -৫/২১৩, ২১৪, ২১৫, তাহযীবততাহযীব-৫/২২২, সুনান ইবনু মাজাহ-১/৬১৯/১৯২৪, সুনান নাসাঈ -৫/৩১৬-৩১৮, সুনান দারিমী-১/২৭৭/১১৪৪, ১/১৯৬/২২১৩, সুনান বায়হাক্বী-৭/১৯৬, ১৯৭) আরো একটি বর্ণনায় রয়েছেঃ

لَا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى رَجُلًا أَوِ امْرَأَةً فِي الدُّبُرِ.

‘যে ব্যক্তি কোন স্ত্রী বা পুরুষের গুহ্যদ্বারে এ কাজ করে, তার দিকে মহান আল্লাহ্‌ করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেননা। (১৭৩০. হাদীসটি সহীহ। জামি‘তিরমিযী -৩/৪৬৯/১১৬৫, সুনান নাসাঈ -৫/৩২০৯০০১, ইবনুহিব্বান-৬/২০২) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি হাসান।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -কে এক ব্যক্তি এই সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তুমি কি কুফরী করা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছো। (হাদীসটি সহীহ। সুনান নাসাঈ কুবরা-৪/৩২১/৯০০৪) এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলেন انىشئتم এর এই অর্থ বুঝেছি এবং এর ওপর ‘আমল করেছি। তখন তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন, তাকে ভৎসনা করেন এবং বলেন, ভাবার্থ এই যে, দাঁড়িয়ে করো অথবা পেটের ভরে শোয়া অবস্থায় করো, কিন্তু জায়গা একটিই হবে। অন্য একটি মারফূ‘ হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর শুহ্যদ্বারে সহবাস করে সে ছোট লুতী অর্থাৎ লুত (আঃ) -এর সম্প্রদায়ভুক্ত। (মুসনাদ আহমাদ -২/১০, ২১০, ১৮২) আবূদ্ দারদা (রাঃ) বলেন যে, এটা কাফিরদের কাজ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকেও এটা নকল করা হয়েছে এবং এটা অধিকতর সঠিক। মহান আল্লাহ্‌ ভালো জানেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

سَبْعَةٌ لَا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يُزَكِّيهِمْ، وَيَقُولُ ادْخُلُوا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِينَ: الْفَاعِلُ، وَالْمَفْعُولُ بِهِ، وَالنَّاكِحُ يَدَهُ، وَنَاكِحُ الْبَهِيمَةِ، وَنَاكِحُ الْمَرْأَةِ فِي دُبُرِهَا، وَجَامِعٌ بَيْنَ الْمَرْأَةِ وَابْنَتِهَا، وَالزَّانِي بِحَلِيلَةِ جَارِهِ.

‘সাত প্রকার লোক রয়েছে যাদের দিকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা কিয়ামতের দিন করুণার দৃষ্টিতে দেখবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। বরং তিনি তাদেরকে বলে দিবেনঃ জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাও। (১) ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী (২) হস্ত মৈথুনকারী (৩) চতুস্পদ জন্তুর সাথে এই কাযকারী (৪) স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাসকারী (৫) স্ত্রী ও তার মেয়েকে বিয়েকারী। (৬) প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারকারী এবং (৭) প্রতিবেশীকে এমন ভাবে শাসন গর্জনকারী যে, শেষ পর্যন্ত সে তাকে অভিশাপ দেয়। (হাদীসটি য‘ঈফ। ইরওয়াউল গালীল-৮/৫৯) কিন্তু এর সনদের মধ্যে লাহইয়াহ এবং তার শিক্ষক দু’জনই দুর্বল।

একটি হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য পথে সহবাস করে তাকে মহান আল্লাহ্‌ দয়ার দৃষ্টিতে দেখবেন না। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ -২/২৭২/৭৬৭০) মুসনাদ আহমাদ এবং সুনানের মধ্যে বর্ণিত আছে যেঃ

مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ.

‘যে ব্যক্তি ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে সহবাস করে অথবা অন্য পথে সহবাস করে কিংবা যাদুকরের নিকট গমন করে এবং তাকে সত্যবাদী বলে মনে করে সে ঐ জিনিসকে অস্বীকার করলো যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাউদ-৪/১৫/৩৯০৪, জামি‘তিরমিযী -১/২৪২/১৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ-১/২০৯/৬৩৯, মুসনাদ আহমাদ -২/৪০৮, ৪৭৬, সুনান দারিমী-১/২৭৫/১১৩৬, সুনান বায়হাক্বী-৭/১৯৮) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন যে, ইমাম বুখারী (রহঃ) এই হাদীসকে দুর্বল বলেছেন।

জামি‘ তিরমিযীর মধ্যে বর্ণিত আছে যে, গুহ্যদ্বারে সহবাস করাকে আবূ সালামাহ (রাঃ) ও হারাম বলতেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেনঃ লোকদের স্ত্রীদের সাথে এই কাজ করা কুফরী। (সুনান নাসাঈ ) এই অর্থের একটি মারফূ‘ হাদীসও বর্ণিত আছে। কিন্তু হাদীসটির মাওকূফ হওয়াই অধিকতর সঠিক কথা। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, এই স্থানটি হারাম। ইবনু মাস‘উদ (রহঃ) এই কথাই বলেন। ‘আলী (রাঃ) এই সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ সেই ব্যক্তি অত্যন্ত বর্বর। তুমি আল্লাহ্‌র কালাম শুনোনি? আল কুর’আনের মধ্যে মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ যখন লুত (আঃ) -এর কাওমকে বলা হলোঃ

﴿اَتَاْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ اَحَدٍ مِّنَ الْعٰلَمِیْنَ﴾

‘তোমরা কি এমন নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কোনদিন করেনি?’ (৭নংসূরাহআলআ‘রাফ, আয়াত-৮০) সুতরাং বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ থেকে এবং সাহাবায়ি কিরাম (রাঃ) থেকে বহু বর্ণনা ও সনদ দ্বারা এই কার্যের নিষিদ্ধতা বর্ণিত হয়েছে। অতএব এই কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এই কাজকে অবৈধই বলেছেন।

যেমন আবূ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) তার মুসনাদ বর্ণনা করেছেন যে, সা‘ঈদ ইবনু ইয়াসার আবূ হুবাব (রহঃ) বলেছেনঃ আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে বললামঃ স্ত্রীদের পিছনদ্বারে গমন করার ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? তিনি জানতে চাইলেনঃ তুমি কি বলতে চাচ্ছো? আমি বললামঃ গুহ্যদ্বারে সহবাস করি। তিনি বললেনঃ কোন মুসলিম কি এটা করতে পারে? (হাদীসটি সহীহ। তাফসীর তাবারী -৪/৪০৫/৪৩২৯, সুনান নাসাঈ -৫/৩১৫, ৩১৬/৮৯৭৯, ৮৯৭০, ফাতহুল বারী -৮/৩৮, সুনান দারিমী-১/২৭৭/১১৪৩) এ হাদীসটির ধারা বর্ণনায় সঠিকতা রয়েছে এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে মহিলাদের গুহ্যদ্বারে সহবাস করার বিষয়টি পরিস্কারভাবে নাকচ করা হয়েছে।

আবূ বাকর ইবনু যায়দ নিশাপুরী (রহঃ) বর্ণনা করেন, ইসমা‘ঈল ইবনু রূহ (রহঃ) বলেন যে, তিনি মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) -কে জিজ্ঞেস করেনঃ মহিলাদেরকে পিছন দিকে অর্থাৎ গুহ্যদ্বারে সহবাস করার ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ সে কি আবার? যে জায়গা দিয়ে গর্ভ হয় তা ছাড়া অন্য স্থান দিয়ে কি সহবাস করা যায়? যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবে স্ত্রী-অঙ্গ ব্যবহার করো। আমি তাকে বললামঃ ‘জনাব! জনগণ তো এ কথাই বলে থাকে যে, আপনি কি এই কাজকে বৈধ বলেন।’ তখন তিনি বলেন, ‘তারা মিথ্যাবাদী। আমার ওপর তারা অপবাদ দিচ্ছে।’ (ফাতহুল বারী -৮/৩৮,৩৯) সুতরাং ইমাম মালিক (রহঃ) , ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) এবং তাদের সমস্ত ছাত্র ও সহচর যেমন সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহঃ) , আবূ সালামাহ (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) তাউস (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) এবং হাসান বাসরী (রহঃ) প্রমুখ মনীষীগণ সবাই এই কাজকে অবৈধ বলেছেন এবং এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করেছেন। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ এ কাজকে কুফরী পর্যন্ত বলেছেন। এর অবৈধতার জামহূর ‘উলামাগণেরও ইজমা রয়েছে। যদিও কতোগুলো লোক মাদীনার ফকীহগণ হতে এমন কি ইমাম মালিক (রহঃ) হতেও এর বৈধতা নকল করেছেন, কিন্তু এগুলো সঠিক নয়। ‘আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (রহঃ) বলেন কোনো ধমভীরু লোককে আমি এর অবৈধতা সম্বন্ধে সন্দেহ করতে দেখিনি। অতঃপর তিনি نساءكمحرثلكم পাঠ করে বলেন, স্বয়ং حرث অথর্ِাৎ ক্ষেত্র শব্দটিই এর অবৈধতা প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট। কেননা, অন্য জায়গা ক্ষেত্র নয় ক্ষেত্রে যাবার পদ্ধতির স্বাধীনতা রয়েছে বটে কিন্তু ক্ষেত্র পরিবর্তনের স্বাধীনতা নেই। ইমাম মালিক (রহঃ) হতে এটা বৈধ হওয়ার বর্ণনাসমূহ নকল করা হলেও সেগুলোর ইসনাদের মধ্যে অত্যন্ত দুবলতা রয়েছে। অনুরূপভাবে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) হতেও লোকেরা একটি বর্ণনা বানিয়ে নিয়েছেন। অথচ তিনি তার ছয়খানা গ্রন্থে ¯পষ্ট ভাষায় এটাকে হারাম লিখেছেন।

এরপর মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ وَقَدِّمُالأَنفُسِكُمْ‘নিজেদের জন্যে তোমরা আগেই কিছু পাঠিয়ে দাও।’ অর্থাৎ নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে বিরত থাকো এবং সৎকার্যাবলী সম্পাদন করো, যেন সাওয়াব আগে চলে যায়। এরপর তিনি বলেনঃ ﴿وَاتَّقُوااللّٰهَوَاعْلَمُوْۤااَنَّكُمْمُّلٰقُوْهُ﴾‘মহান আল্লাহ্‌কে ভয় করো এবং বিশ্বাস রেখো যে, তাঁর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাৎ করতে হবে’ এবং তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তোমাদের হিসাব নিবেন। ঈমানদারগণ সদা আনন্দিত থাকবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘ভাবার্থ এটাও হতে পারে যে, সহবাসের ইচ্ছা করলে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। (তাফসীর তাবারী ৪/৪১৭/৪৩৫০) অন্যত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার সময় নিম্নের দু‘আটি পাঠ করবেঃ

بِسْمِ اللهِ اللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقَتْنَا.

‘মহান আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি। হে মহান আল্লাহ্‌! তুমি আমাদেরকে শায়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচাও এবং আমাদের যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তান থেকে রক্ষা করো।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘যদি এই সহবাস দ্বারা শুক্র ধরে যায় তাহলে শায়তান ঐ সন্তানের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহীহুল বুখারী-১/২৯১/১৪১, ৯/১৩৬/৫১৬৫, সহীহ মুসলিম-২/১০৫৮/১১৯, ফাতহুল বারী ৯/১৩৬)

Quran Mazid
go_to_top
Quran Mazid
Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114
Settings