Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 220
Saheeh International
To this world and the Hereafter. And they ask you about orphans. Say, "Improvement for them is best. And if you mix your affairs with theirs - they are your brothers. And Allah knows the corrupter from the amender. And if Allah had willed, He could have put you in difficulty. Indeed, Allah is Exalted in Might and Wise.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মাদকদ্রব্য ক্রমান্বয়ে নিষিদ্ধ করণ
ইমাম আহমাদ (রহঃ) একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে, যখন মদ হারাম হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্! আপনি এটা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিন।’ তখন সূরাহ্ বাক্বারার এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কিন্তু ‘উমার (রাঃ) পুনরায় এ দু‘আ করেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্! এটা আপনি আমাদের জন্য আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করুন। তখন সূরাহ্ আন্ নিসার এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ঃ
﴿یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلٰوةَ وَ اَنْتُمْ سُكٰرٰى﴾
‘হে মু’মিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের জন্য দণ্ডায়মান হয়ো না।’ (৪নং সূরাহ্ আন্ নিসা, আয়াত নং ৪৩)
প্রত্যেক সালাতের সময় ঘোষিত হতে থাকে যে, নেশাগ্রস্ত মানুষ যেন সালাতের নিকটেও না আসে। ‘উমার (রাঃ) -কে ডেকে এ আয়াতটিও পাঠ করে শোনানো হয়। ‘উমার (রাঃ) পুনরায় এ প্রার্থনাই করেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্! আপনি আমাদের জন্য এটা আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করুন!’ এবার সূরাহ্ মায়িদার আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। যখন ‘উমার (রাঃ) -কে এ আয়াতটিও পাঠ করে শোনানো হয় এবং তাঁর কানে যখন আয়াতটির فَهَلْ أَنْنُمْ مُّنْتَهُوْنَ ‘তোমরা কি বিরত হবে না? (৫নং সূরাহ্ মায়িদাহ, আয়াত নং ৯১) এই শেষ কথাটি পৌঁছে তখন তিনি বলেনঃ إِنْتَهَيْنَا إِنْتَهَيْنَا অর্থাৎ আমরা বিরত থাকলাম, আমরা দূরে থাকলাম।’ (মুসনাদ আহমাদ -১/৫৩/৩৭৮, সুনান আবূ দাঊদ-৩/৩২৫/৩৬৭০, জামি‘ তিরমিযী-৫/২৩৬/৩০৪৯, সুনান নাসাঈ -৮/১৮১/৫৫৫৫) ইমাম ‘আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেন যে, এর ইসনাদ উত্তম ও সঠিক। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এটাকে সঠিক বলেছেন।
মুসনাদ ইবনু আবী হাতিম গ্রন্থে ‘উমার (রাঃ) -এর إِنْتَهَيْنَا إِنْتَهَيْنَا উক্তির পরে এই কথাগুলোও রয়েছেঃ মদ সম্পদকে ধ্বংস করে এবং জ্ঞানলোপ করে। এ বর্ণনাটি এবং এর সাথে মুসনাদ আহমাদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত অন্যান্য বর্ণনাগুলো সূরাহ্ মায়িদায় মদ হারাম সম্বন্ধীয় আয়াতটির তাফসীরে ইনশা’আল্লাহ্ বিস্তারিত বর্ণিত হবে। (৫নং সূরাহ্ মায়িদাহ, আয়াত নং ৯০)
‘উমার (রাঃ) বলেনঃ خَمْرٌ ‘মদ’ ঐ জিনিসের প্রত্যেকটিকে বলা হয় যা জ্ঞানলোপ করে। مَيْسِرٌ বলা হয় জুয়া খেলাকে। মদ এবং জুয়া ইসলামী কার্যক্রমকে বিঘিœত করে। তা থেকে যে উপকার হয় তা পার্থিব বা ইহলৌকিক। যেমন এটা সাময়িকভাবে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, হজম কাজে সাহায্য করে, মেধা শক্তি বৃদ্ধি হয়, এক ধরনের শিহরণ অনুভূত হয় এবং কখনো কখনো আর্থিক লাভবান হওয়া যায়। হাসান ইবনু সাবিত (রাঃ) জাহিলিয়াত যামানার কবিতায় লিখেছিলেনঃ মদ পান করে আমরা বাদশাহ ও বীরপুরুষ হয়ে যাই। অনুরূপভাবে এর ব্যবসায়েও লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এরকমই জুয়া খেলায় বিজয় লাভের সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু এগুলোর উপকারের তুলনায় ক্ষতি ও অপকারই বেশি। কেননা এর দ্বারা জ্ঞান লোপ পাওয়ার সাথে সাথে ধর্মও ধ্বংস হয়ে থাকে। এ আয়াতের মত হারাম পূর্বাভাস থাকলেও স্পষ্টভাবে হারাম হওয়ার কথা বর্ণিত হয়নি। তাই ‘উমার (রাঃ) চাচ্ছিলেন যে, স্পষ্ট ভাষায় মদ হারাম হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হোক। অতএব সূরাহ্ মায়িদার আয়াতে পরিস্কার ভাষায় বলে দেয়া হয়ঃ ‘মদ পান, জুয়া খেলা, পাশা খেলা এবং তীরের সাহায্যে পূর্ব লক্ষণ গ্রহণ করা সবই হারাম ও শায়তানী কাজ।’ যেমন মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَ الْمَیْسِرُ وَ الْاَنْصَابُ وَ الْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّیْطٰنِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ۹۰ اِنَّمَا یُرِیْدُ الشَّیْطٰنُ اَنْ یُّوْقِعَ بَیْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَ الْبَغْضَآءَ فِی الْخَمْرِ وَالْمَیْسِرِ وَ یَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللّٰهِ وَ عَنِ الصَّلٰوةِ١ۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ﴾
‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শায়তানী কাজ, তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারো। মদ আর জুয়ার মাধ্যমে শায়তান তো চায় তোমাদের মাঝে শত্রুতা আর বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে, মহান আল্লাহ্র স্মরণ আর সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। কাজেই তোমরা কি এসব থেকে বিরত থাকবে?’ (৫নং সূরাহ্ মায়িদাহ, আয়াত নং ৯০-৯১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) , শা‘বী (রহঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) ও ‘আবদুর রহমান ইবনু যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) বলেন যে, মদের ব্যাপারে প্রথম সূরাহ্ বাক্বারার এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এরপর অবতীর্ণ হয় সূরাহ্ নিসার আয়াতটি। সর্বশেষে সূরাহ্ মায়িদার আয়াতটি অবতীর্ণ করে মহান আল্লাহ্ মদকে সম্পূর্ণরূপে হারাম করেন। (তাফসীর তাবারী ৪/৩৩১-৩৩৬)
সাধ্যমত দান করা উচিত
‘কুলিল ‘আফওয়া’ এর একটি পঠন ‘কুলিল ‘আফউ’ও রয়েছে অর্থাৎ العفو শব্দের ওয়াও বর্ণে যবর এবং যের উভয় পঠনই বিশুদ্ধ। দু’টির অর্থ প্রায় একই। আল-হাকাম (রহঃ) মিকসাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন ‘তারা জানতে চায় তারা কি পরিমাণ ব্যয় করবে’ এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের পরিবারের জন্য যতোটুকু দরকার ততোটুকু ব্যয় করার পর যা অতিরিক্ত হবে তাই ব্যয় করবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) , মুজাহিদ (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , আল কাসিম (রহঃ) , সালিম (রহঃ) , ‘আতা আল খুরাসানী (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) -সহ প্রমুখ العفو এর অর্থ ‘অতিরিক্ত বস্তু’ বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ২/৬৫৬, ৬৫৭) রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে এ অভিমতও রয়েছে যে, العفو এর অর্থ হলো সর্বোত্তম সম্পদ। তবে সবগুলোই অতিরিক্ত বস্তু হওয়ার প্রতিই প্রমাণ বহন করে।
‘আবদ ইবনু হুমাইদ স্বীয় তাফসীরে বলেন, এর অর্থ হলো তোমার সম্পত্তিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করো না যার ফলে তোমাকে মানুষের নিকট ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয়। আর এর প্রতি সমর্থন পাওয়া যায় ইবনু জারীর (রহঃ) -এর বর্ণিত হাদীসটি যা তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর সূত্রে বর্ণনা করেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেনঃ ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললোঃ
يَا رَسُولَ اللَّهِ، عِنْدِي دِينَارٌ؟ قَالَ: "أَنْفِقْهُ عَلَى نَفْسِكَ". قَالَ: عِنْدِي آخَرُ؟ قَالَ: "أَنْفِقْهُ عَلَى أَهْلِكَ". قَالَ: عِنْدِي آخَرُ؟ قَالَ: "أَنْفِقْهُ عَلَى وَلَدِكَ". قَالَ: عِنْدِي آخَرُ؟ قَالَ: "فَأَنْتَ أبصَرُ.
‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমার কাছে একটি স্বর্ণ মুদ্রা রয়েছে।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘তোমার কাজে লাগাও।’ লোকটি বললোঃ ‘আমার নিকট আরো একটি রয়েছে।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘তোমার স্ত্রীর জন্য খরচ করো।’ সে বললোঃ ‘আরো একটি আছে।’ তিনি বললেনঃ তোমার ছেলে মেয়ের প্রয়োজনে লাগাও।’ সে বললো আমার নিকট আরো একটি রয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘ তাহলে এখন তুমি চিন্তা ভাবনা করে দেখতে পারো।’ (তাফসীর তাবারী -৪/৩৪০/৪১৭০, মুসনাদ আহমাদ -২/২৫১/৭৪১৩, সুনান আবূ দাউদ-২/১৩২/১৬৯১, সুনান নাসাঈ -৫/৬৬/২৫৩৪, মুসতাদরাক হাকিম-১/৪১৫, সহীহ ইবনু হিব্বান-৫/১৪১/৩৩২৬) অবশ্য হাদীসটি ইমাম মুসলিমও স্বীয় সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম মুসলিম জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন লোককে বললেনঃ
ابْدَأْ بِنَفْسِكَ فَتَصَدَّقْ عَلَيْهَا، فَإِنْ فَضَل شَيْءٌ فَلِأَهْلِكَ، فَإِنْ فَضُلَ شَيْءٌ عَنْ أَهْلِكَ فَلِذِي قَرَابَتِكَ، فَإِنْ فَضُلَ عَنْ ذِي قَرَابَتِكَ شَيْءٌ فَهَكَذَا وَهَكَذَا.
‘প্রথমে তুমি তোমার নিজ থেকে আরম্ভ করো। প্রথমে তারই ওপর সাদাকাহ করো। অতিরিক্ত থাকলে ছেলে মেয়ের জন্য খরচ করো। এরপরেও থাকলে নিজের আত্মীয় স্বজনের ওপর সাদাকাহ করো। এরপরেও যদি থাকে তাহলে অন্যান্য অভাগ্রস্তদের ওপর সাদাকাহ করো।’ (সহীহ মুসলিম-২/৪১/৬৯২, ৬৯৩, সুনান নাসাঈ -৫/৭৩,৭৪/২৫৪৫) অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ
خير الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْر غِنًى، وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولَ.
‘উত্তম দান হচ্ছে তা, যা মানুষ নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস দান করে। ওপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। প্রথমে তাদেরকে দাও যাদের খরচ বহন তোমার দায়িত্বে রয়েছে। (সহীহুল বুখারী-৩/৩৪৫/১৪২৬, সহীহ মুসলিম-২/৯৫/৭১৭, সুনান আবূ দাউদ-২/১২৯/১৬৭৬, সুনান নাসাঈ -৫/৬৬/২৫৩৩, মুসনাদ আহমাদ -২/২৪৫, ৪৩৪) অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ
ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ إِنْ تبذُل الفضلَ خيرٌ لَكَ، وَإِنْ تُمْسِكْهُ شَرٌّ لَكَ، وَلَا تُلام عَلَى كَفَافٍ.
‘হে আদম সন্তান! তোমার হাতে তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা রয়েছে তা মহান আল্লাহ্র পথে ব্যয় করাই তোমার জন্য মঙ্গলকর এবং তা ব্যয় না করা তোমার জন্য ক্ষতিকর। তবে হ্যাঁ, নিজের প্রয়োজন অনুপাতে খরচ করায় তোমার প্রতি কোন ভর্ৎসনা নেই। (সহীহ মুসলিম-২/৯৭/৭১৮,জামি‘ তিরমিযী-৪/৪৯৫/২৩৪৩, মুসনাদ আহমাদ -৫/২৬২) তবে বলা হয়ে থাকে যে, যাকাতের আয়াতের দ্বারা অত্র আয়াতটি মানসূখ তথা রহিত হয়ে গিয়েছে। আর মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, যাকাতের আয়াতটি যেন এই আয়াতেরই তাফসীর এবং এর স্পষ্ট বর্ণনা। আর এটাই সঠিক উক্তি। অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ
﴿كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمُ الْاٰیٰتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَۙ فِی الدُّنْیَا وَ الْاٰخِرَةِ﴾
‘এভাবে মহান আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি আদেশাবলী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা চিন্তা করো। দুনিয়া এবং আখিরাত সম্বন্ধে।’ অর্থাৎ আমি যেমন এই নির্দেশাবলী স্পষ্ট ও খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছি, তদ্রুপ অবশিষ্ট নির্দেশাবলীও আমি পরিস্কার ও বিস্তারিত বর্ণনা করবো। জান্নাতের অঙ্গীকার ও জাহান্নাম হতে ভয় প্রদর্শনের কথাও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হবে, যেন তোমরা এই নশ্বর জগত হতে বিরত বীতশ্রদ্ধ হয়ে পরলৌকিক জগতের প্রতি আগ্রহী হতে পারো, যা অনন্তকালের জন্য স্থায়ী হবে। (তাফসীর তাবারী ৪/৩৪৮)
হাসান বাসরী (রহঃ) এ আয়াতটি পাঠ করে বলেন যে, ‘মহান আল্লাহ্র শপথ! যে চিন্তা ও গবেষণা করবে সে অবশ্যই জানতে পারবে যে, পার্থিব ঘর হচ্ছে বিপদের ঘর এবং পরিণামে এটা ধ্বংস হয়ে যাবে, আর পরজগতই হচ্ছে প্রতিদানের ঘর এবং তা চিরস্থায়ী থাকবে।’ আর কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, দুনিয়ার ওপর আখিরাতের যে কি মর্যাদা রয়েছে তা একটু চিন্তা করলেই পরিস্কারভাবে জানতে পারা যাবে। সুতরাং জ্ঞানীদের উচিত যে, তারা যেন পরকালের পুণ্য সংগ্রহ করার কাজে সদা সচেষ্ট থাকে। অবশ্য আমরা সূরাহ আলি ‘ইমরানের خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ الَّیْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الْاَلْبَابِ﴾ ﴿اِنَّ فِیْ ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে।’ (৩নং সূরাহ আলি ‘ইমরান, আয়াত-১৯০) আয়াতটিতে تفكر প্রসঙ্গে পূর্ববর্তীদের অনেক আসার তথা বাণী উল্লেখ করেছি।
ইয়াতীমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْيَتَامَى قُلْ إِصْلَاحٌ لَهُمْ خَيْرٌ وَإِنْ تُخَالِطُوهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ الْمُفْسِدَ مِنَ الْمُصْلِحِ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَأَعْنَتَكُمْ.
‘আর তারা তোমাকে ইয়াতীমদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; বলো, ‘তাদের উপকার করা উত্তম’ এবং যদি তাদের সাথে তোমরা একত্রে থাকো, তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই। বস্তুত মহান আল্লাহ্ জানেন কে অনিষ্টকারী আর কে কল্যাণকামী এবং মহান আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন, নিশ্চয়ই এ বিষয়ে তোমাদেরকে কঠোরতার মধ্যে নিক্ষেপ করতেন।’
অত্র আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ পিতৃহীনদের সম্পর্কে নিদর্শনাবলী অবতীর্ণ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, পূর্বে এর নির্দেশ ছিলোঃ
﴿وَ لَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ ﴾
‘আর ইয়াতীমরা বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ব্যতীত তাদের বিষয়ে সম্পত্তির কাছেও যেয়ো না। (৬নং সূরাহ্ আন‘আম, আয়াত নং ১৫২) এবং
﴿اِنَّ الَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْیَتٰمٰى ظُلْمًا اِنَّمَا یَاْكُلُوْنَ فِیْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَ سَیَصْلَوْنَ سَعِیْرًا﴾
‘যারা অন্যায়ভাবে পিতৃহীনদের ধন-সম্পত্তি গ্রাস করে, নিশ্চয়ই তা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করে না এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নি শিখায় প্রবেশ করবে। এই আয়াতগুলো শ্রবণ করে পিতৃহীনদের অভিভাবকগণ ইয়াতীমদের আহার্য ও পানীয় হতে নিজেদের আহার্য ও পানীয় সম্পূর্ণরূপে পৃথক করে দেন। তখন ঐ পিতৃহীনদের জন্য রান্নাকৃত খাদ্য বেঁচে গেলে হয়তো তারাই অন্য সময় খেয়ে নিতো, নচেৎ নষ্ট হয়ে যেতো। এর ফলে একদিকে যেমন ইয়াতীমদের ক্ষতি হতে থাকে, অপরদিকে তেমনই তাদের অভিভাবকগণ অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। সুতরাং তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে এই সম্বন্ধে আরয করেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং সৎ উদ্দেশ্যে ও বিশ্বস্ততার সাথে তাদের সম্পদ নিজেদের সম্পদের সাথে মিলিয়ে রাখার অনুমতি দেয়া হয়। আবূ দাঊদ, নাসাঈ , হাকিম ইত্যাদিতে এই বর্ণনাটি বিদ্যমান রয়েছে এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মনীষীদের একটি দল এর শানে নযুল এটাই বর্ণনা করেছেন। মুজাহিদ (রহঃ) , ‘আতা (রহঃ) , আশ শাবী (রহঃ) , ইবনু আবী লাইলা (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং সালাফগণের অনেকে একই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘ইয়াতীমদের খাদ্য ও পানীয় পৃথক করা ছাড়া খুঁটিনাটিভাবে তাদের মাল দেখাশোনা করা খুবই কঠিন।’
إِصْلَاحٌلَّهُمْخَيْرٌ-এর ভাবার্থ এই পৃথক করণই বটে। কিন্তু وَإِنْتُخَالِطُوْهُمْ বলে মিলিত রাখার অনুমতি দেয়া হয়। কেননা তারা তো ধর্মীয় ভাই। তবে নিয়ত সৎ হওয়া উচিত। ইয়াতীমদের ক্ষতি করার যদি উদ্দেশ্য থাকে তাহলে সেটাও মহান আল্লাহ্র নিকট অজানা নেই। আর যদি ইয়াতীমদের মঙ্গলের ও তাদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্য থাকে তাহলে সেটাও মহান আল্লাহ্ খুব ভালোই জানেন।’ মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿وَ لَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ ﴾
‘আর ইয়াতীমরা বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ব্যতীত তাদের বিষয় সম্পত্তির কাছেও যেয়ো না।’
অতঃপর বলা হচ্ছে যে, ‘মহান আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট ও বিপদের মধ্যে জড়িত করতে চাননা।’ পিতৃহীনদের আহার্য ও পানীয় পৃথক করণের ফলে তোমরা যে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলে মহান আল্লাহ্ তা দূর করে দিলেন। এখন একই হাঁড়িতে রান্না করা এবং মিলিতভাবে কাজ করা তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ্ বৈধ করলেন। এমনকি পিতৃহীনদের অভিভাবক যদি দরিদ্র হয় তাহলে ন্যায়সঙ্গতভাবে সে নিজের কাজে ইয়াতীমের মাল খরচ করতে পারে। আর যদি কোন ধনী অভিভাবক প্রয়োজনবশত ইয়াতীমের মাল নিজের কাজে লাগায় তাহলে সে পরে তা আদায় করে দিবে। এই জিজ্ঞাস্য বিষয়গুলো সূরাহ্ নিসার’ তাফসীরে ইনশা’আল্লাহ্ বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings