Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 2
Saheeh International
This is the Book about which there is no doubt, a guidance for those conscious of Allah -
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
আল কুর’আন সংশয়-সন্দেহ মুক্ত একটি ঐশি গ্রন্থ
ইবনু জারীর (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে বলেন, ذٰلِكَ এর অর্থ হলো هٰذَا তথা এই কিতাব। মুজাহিদ, ইকরামাহ, সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর, সুদ্দী মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান, যায়দ ইবনু আসলাম ও ইবনু জুরাইজ (রহঃ)-এর মত এটাই। ‘আরবগণ এ দু’টি ইঙ্গিত বাচক বিশেষ্যের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য করে না, বরং একটিকে অপরটির স্থলাভিষিক্ত হিসেবে তারা ব্যবহার করে থাকে। আর এটা তাদের মাঝে একটি প্রসিদ্ধ বিষয়। ইমাম বুখারী (রহঃ)ও আবূ উবাইদের সূত্রে এমনটিই বর্ণনা করেছেন। আর যামাখশারী (রহঃ) বলেন, ذلك এর مشار إليه হলো الم। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, لَّا فَارِضٌ وَّ لَا بِكْرٌ عَوَانٌۢ بَیْنَ ذٰلِكَ ‘তা এমন এক গরু যা বৃদ্ধও নয় এবং অল্প বয়স্কও নয় বরং মধ্য বয়সী।’ (২ নং সূরাহ্ আল বাকারা আয়াত-৬৮)
আর মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ ذٰلِكُمْ حُكْمُ اللّٰهِ یَحْكُمُ بَیْنَكُمْ ‘এটা মহান আল্লাহ্র নির্দেশ। তিনি তোমাদের মাঝে ফায়সালা করে দেন।’ (৬০ নং সূরাহ্ আল মুমতাহিনা, আয়াত-১০) অন্য জায়গায় এসেছে, ذلكمُ الله অর্থাৎ ইনিই হলেন মহান আল্লাহ। এ রকম আরো অনেক জায়গাহ রয়েছে যেখানে ذلك এর মাধ্যমে পূর্বোল্লিখিত বস্তুর দিকে ইশারা বা ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
অবশ্য কোন কোন মুফাস্সির ذلك এর মাধ্যমে কুর’আনের দিকে ইশারা বা ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। যে কুর’আনের ওয়া‘দা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেয়া হয়েছিলো। আবার কেউ তাওরাতের প্রতি এবং কেউ ইনজীলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এরূপ প্রায় দশটি উক্তি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ এ উক্তিগুলোকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
كِتَبٌ-এর অর্থ কুর’আনুল কারীম। যারা বলেছেন যে, ذلك বলে তাওরাত ও ইনজীলের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তারা খুব দূরের রাস্তা অনুসন্ধান করেছেন অথবা খুব কষ্ট স্বীকার করেছেন। তারা এমন উক্তি করেছেন যে বিষয়ে তাদের আদৌ কোন সঠিক জ্ঞান নেই। رَيْبَ-এর অর্থ হচ্ছে সংশয় ও সন্দেহ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) এবং আরো কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) থেকে এ অর্থ বর্ণিত হয়েছে। (তাফসীর তাবারী ১/২৮) আবূদ দারদা (রাঃ), ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রহঃ), সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ), আবূ মালিক নাফি‘ (রহঃ), যিনি ইবনু ‘উমারের কৃতদাস, ‘আতা (রহঃ), আবুল ‘আলিয়া (রহঃ), রাবী‘ ইবনু আনাস (রহঃ), মুকাতিল ইবনু হিব্বান (রহঃ), সুদ্দী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ), এবং ইসমা‘ঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ‘আদী ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) বলেন যে, মুফাস্সিরগণের মধ্যে এতে কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৩১) رَيْبَ শব্দটি ‘আরবদের কবিতায় অপবাদের অর্থেও এসেছে। যেমন কবির উক্তিঃ
بثينة قالت يا جميل أربتني ... فقلت كلانا يا بثين مريب ...
‘বুসাইনাহ বললো, হে জামীল! তুমি কি আমাকে অপবাদ দিচ্ছো? তখন আমি বললাম, হে বুসাইনাহ আমরা উভয়েই তো একজন অপরজনকে অপবাদ দাতা।’ আবার হাজত বা প্রয়োজন অর্থেও ريب শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন কোন একজন কবির উক্তিঃ
قضينا من تهامة كل ريب ... وخيبر ثم أجمعنا السيوفا
‘তিহামার নিম্নভূমি থেকে এবং খাইবারের মালভূমি থেকেও সব প্রয়োজন মিটিয়ে নিলাম, অবশেষে তলোয়ার গুটিয়ে নিলাম।’
অতএব لَا رَیْبَۛۖۚ فِیْهِ -এর অর্থ হলো এই যে, এই কিতাব অর্থাৎ আল কুর’আন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। যেমন সূরাহ্ সাজদায় মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ ﴿الٓمّٓۚ تَنْزِیْلُ الْكِتٰبِ لَا رَیْبَ فِیْهِ مِنْ رَّبِّ الْعٰلَمِیْنَ﴾
‘আলিফ-লাম-মীম। কিতাব জগতসমূহের রবের নিকট থেকে অবতীর্ণ।’ (৩২ নং সূরাহ্ সাজদাহ, আয়াত নং ১-২)
কেউ কেউ বলেছেন যে, এটা خَبَر হলেও نَهِىْ-এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ لَا تَرْتَابُوْا فِيْهِ তোমরা এতে আদৌ সন্দেহ করো না।’ কোন কোন কারী لَا رَيْبَ-এর ওপরে وَقْف করে থাকেন এবং فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ-কে পৃথক বাক্য রূপে পাঠ করেন। কিন্তু لَا رَیْبَ فِیْهِ-এর ওপর وَقْف করা বা না থামা খুবই উত্তম। কেননা এই একই বিষয় এভাবেই সূরাহ্ সাজদার আয়াতে উল্লেখ হয়েছে এবং এর মধ্যে তুলনামূলকভাবে فِيْهِ هُدًى-এর চেয়ে বেশি مُبَالَغَة হয়। هُدًى শব্দটি ‘আরবী ব্যাকরণ হিসবে صفت হয়ে مرفوع হতে পারে এবং حال হিসেবে منصوب ও হতে পারে।
হিদায়াত অর্জনকারীদের জন্য তাকওয়া
এ স্থানে হিদায়াতকে মুত্তাক্বীনের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
﴿قُلْ هُوَ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّ شِفَآءٌ١ؕ وَ الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ فِیْۤ اٰذَانِهِمْ وَقْرٌ وَّ هُوَ عَلَیْهِمْ عَمًى١ؕ اُولٰٓىِٕكَ یُنَادَوْنَ مِنْ مَّكَانٍۭ بَعِیْدٍ﴾
বলোঃ মু’মিনদের জন্য এটি পথ নির্দেশ ও ব্যাধির প্রতিকার। কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং আল কুর’আন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব। তারা এমন যে, যেন তাদেরকে আহ্বান করা হয় বহু দূর হতে। (৪১ নং সূরাহ্ হা-মীম সাজদাহ, আয়াত নং ৪৪) অন্যত্র রয়েছেঃ
﴿وَ نُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ١ۙ وَ لَا یَزِیْدُ الظّٰلِمِیْنَ اِلَّا خَسَارًا﴾
আমি অবতীর্ণ করি কুর’আন, যা বিশ্বাসীদের জন্য সুচিকিৎসা ও দয়া। কিন্তু তা সীমালঙ্ঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। (১৭ নং সূরাহ্ ইসরাহ, আয়াত নং ৮২)
এ বিষয়ের আরো বহু আয়াত রয়েছে এবং এগুলোর ভাবার্থ এই যে, যদিও কুর’আনুল কারীম সকলের জন্যই হিদায়াত স্বরূপ, তথাপিও শুধু সৎ লোকেরাই এর দ্বারা উপকার পেয়ে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ شِفَآءٌ لِّمَا فِی الصُّدُوْرِ١ۙ۬ وَ هُدًى وَّ رَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ﴾
হে মানবজাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এমন বিষয় সমাগত হয়েছে যা হচ্ছে নাসীহত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী, আর মু’মিনদের জন্য এটা পথ প্রদর্শক ও রহমত। (১০ নং সূরাহ্ ইউনুস, আয়াত নং ৫৭)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হিদায়াতের অর্থ হচ্ছে আলো।
মুত্তাক্বীর পরিচয়
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, মুত্তাক্বী তারাই যারা মহান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে র্শিক থেকে দূরে থাকেন এবং আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশাবলী মেনে চলেন। (হাদীসটি য‘ঈফ) অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, মুত্তাক্বী তারাই যারা মহান আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে হিদায়াতকে পরিত্যাগ করেন না এবং তাঁর রহমতের আশা রেখে তাঁর নিকট থেকে অবতীর্ণ কিতাবকে বিশ্বাস করে থাকেন। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, মুত্তাক্বী তারাই যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আলোচ্য আয়াতের পরে বলেনঃ
﴿الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِالْغَیْبِ وَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ . وَالَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ یُوْقِنُوْنَ﴾
‘যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোতে বিশ্বাস করে এবং যথা নিয়মে সালাত কায়িম করে, আর আমি তাদেরকে যে সব রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতিও তারা নিশ্চিত বিশ্বাসী।’ (২ নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ৩-৪)
ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, এসব গুণ মুত্তাক্বীদের মধ্যে একত্রে জমা হয়। জামি‘ তিরমিযী ও সুনান ইবনু মাজায় ‘আতিয়াহ সা‘দী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَا يَبْلُغُ الْعَبدُ أنْ يَكُونَ منَ المُتَّقِينَ حَتَّى يَدَعَ مَا لاَ بَأسَ بِهِ ، حَذَراً مِمَّا بِهِ بَأسٌ.
‘বান্দা প্রকৃত মুত্তাক্বী হতে পারে না যে পর্যন্ত না সে ঐ সমুদয় জিনিস ছেড়ে দেয় যাতে কোন দোষ নেই এই ভয়ে যে, দোষের মধ্যে যেন না পড়ে। (জামি‘ তিরমিযী ৪/১৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২/১৪০৯। ‘আল্লামাহ্ শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসের সনদটি দুর্বল। ‘‘গায়াতুল মারাম ফী তাখরীজে আহাদীসিল হালাল ওয়াল হারাম’’ গ্রন্থের ১৭৮ পৃষ্ঠাতে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে ‘‘মিশকাত’’ গ্রন্থের ২৭৭৫ পূর্বে হাসান আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পরে এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। কারণ সনদের বর্ণনাকারী ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ইয়াযীদ দিমাশকী দুর্বল) ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে গারীব বলেছেন।
ইবনু আবী হাতিম মায়মূন আবূ হামযার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আবূ হামযা বলেছেন, আমি একবার আবূ ওয়ায়িলের নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, এমতাবস্থায় একজন লোক প্রবেশ করলো যাকে আবূ ‘আফীফ বলা হয়, যিনি মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-এর ছাত্র ছিলেন। শাকীক ইবনু আবূ সালামাহ সেই লোকটিকে সম্মোধন করে বললেন, হে আবূ ‘আফীফ! আপনি কি মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করবেন না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মানুষদেরকে একটি ময়দানে আটকিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর একজন ঘোষক এই বলে ঘোষণা দিবে যে, মুত্তাক্বীগণ কোথায়? তখন তারা দয়াময় আল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তাদেরকে পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত করবেন না। আমি বললাম মুত্তাক্বী কারা? তিনি বললেন, তাঁরা এমন সম্প্রদায়, যারা শিরক থেকে বিরত থাকে এবং প্রতিমা পূজা থেকেও বিরত থাকে। আর একমাত্র একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে মত্ত থাকে। তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হিদায়াত দু’ ধরনের
কখনো কখনো হিদায়াতের অর্থ হয় অন্তরের মধ্যে ঈমানের স্থিতিশীলতা। বান্দার অন্তরে এই হিদায়াতের ওপর মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখে না। পবিত্র কুর’আনে ঘোষণা হচ্ছেঃ
﴿اِنَّكَ لَا تَهْدِیْ مَنْ اَحْبَبْتَ﴾
তুমি যাকে ভালোবাসো, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। (২৮ নং সূরাহ্ কাসাস, আয়াত নং ৫৬)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ ﴿لَیْسَ عَلَیْكَ هُدٰىهُمْ﴾
তাদেরকে সুপথে আনার দায়িত্ব তোমার নয়। (২ নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ২৭২)
অন্য স্থানে তিনি বলেনঃ ﴿مَنْ یُّضْلِلِ اللّٰهُ فَلَا هَادِیَ لَهٗ﴾
যাদেরকে মহান আল্লাহ বিপথগামী করেন, তাদের কোন পথ প্রদর্শক নেই। (৭ নং সূরাহ্ আ‘রাফ, আয়াত নং ১৮৬)
অন্যত্র তিনি বলেনঃ ﴿مَنْ یَّهْدِ اللّٰهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ١ۚ وَ مَنْ یُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِیًّا مُّرْشِدًا﴾
মহান আল্লাহ যাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন সে সৎ পথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। (১৮ নং সূরাহ্ কাহফ, আয়াত নং ১৭)
কখনো কখনো হিদায়াতের অর্থ হয়ে থাকে সত্যকে প্রকাশ করা এবং সত্য পথ প্রদর্শন করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ اِنَّكَ لَتَهْدِیْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ﴾
তুমি তো প্রদর্শন করো শুধু সরল পথ। (৪২ নং সূরাহ্ শুরা, আয়াত নং ৫২)
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿اِنَّمَاۤ اَنْتَ مُنْذِرٌ وَّ لِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ﴾
তুমি তো শুধু ভয় প্রদর্শনকারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শক। (১৩ নং সূরাহ্ রা‘দ, আয়াত নং ৭)
পবিত্র কুর’আনে অন্য স্থানে আছেঃ ﴿وَ اَمَّا ثَمُوْدُ فَهَدَیْنٰهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمٰى عَلَى الْهُدٰى﴾
আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি তাদেরকে পথ নির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎ পথের পরিবর্তে ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করেছিলো। (৪১ নং হা-মীম সাজদাহ, আয়াত নং ১৭)
অন্য স্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ هَدَیْنٰهُ النَّجْدَیْنِ﴾
আমি তাদেরকে দু’টি পথ দেখিয়েছি। (৯০ নং সূরাহ্ বালাদ, আয়াত নং ১০)
তাকওয়া কি?
তাক্বওয়া শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো খারাপ বা অপছন্দনীয় জিনিস থেকে বেঁচে থাকা। এটা মূলে ছিলো وقي যা وقاية হতে নেয়া হয়েছে। যেমন কবি বলেনঃ
سَقَطَ النَّصِيْفُ وَلَمْ تُرِدْ إِسْقَاطَهُ ... فَتَنَاوَلَتْهُ واتَّقَتْنَا بِالْيَدِ ...
ওড়না পড়ে গেলো, অথচ সে তার পড়ে যাওয়ার ইচ্ছা করেনি। অতঃপর সে তাকে ধরলো এবং হাত দ্বারা আমাদের থেকে নিজেকে রক্ষা করলো। অন্য একজন কবি বলেনঃ
فَأَلْقَتْ قَنَاعًا دُوْنَهُ الشَّمْسُ وَاتَّقَتْ ... بِأَحْسَنِ مَوْصُوْلِيْنَ كَفٍّ وَمِعْصَمٍ ...
সূর্যের কিরণকে আড়াল করে সে তার ওড়না ফেলে দিলো, আর নিজের হাতের তালু ও কব্জি মিলিয়ে সুন্দর ভাবে নিজেকে রক্ষা করলো।
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উবাই ইবনু কা‘বকে (রাঃ) প্রশ্ন করেনঃ তাক্ওয়া কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘কাঁটাযুক্ত দুর্গম পথে চলার আপনার কোন দিন সুযোগ ঘটেছে কি?’ তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।’ তখন উবাই (রাঃ) বলেনঃ ‘সেখানে আপনি কি করেন?’ ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘কাপড় ও শরীরকে কাঁটা থেকে রক্ষা করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করি।’ তখন উবাই (রাঃ) বলেনঃ تَقْوَى ও ঐ রকমই নিজেকে রক্ষা করার নাম।
কবি ইবনু মু‘তায্ এমনই অর্থ গ্রহণ করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ
خل الذنوب صغيرها ... وكبيرها ذاك التقى ...
واصنع كماش فوق أر ... ض الشوك يحذر ما يرى ...
لا تحقرن صغيرة ... إن الجبال من الحصى ...
‘তুমি ছোট-বড় গুনাহগুলো পরিত্যাগ করো, কেননা এটাই তাক্বওয়া, আর এমনভাবে কাজ করো, যেন তুমি একজন কাঁটাযুক্ত পথের পথিক, যা দেখে সে সতর্ক ও সজাগ থাকে। ছোট পাপ গুলোকে হালকা মনে করো না, নিশ্চয় ছোট ছোট কঙ্কর দ্বারাই পাহাড় গড়ে উঠে।
একবার আবূদ দারদা কবিতা আবৃত্তি করে বললেন,
يريد المرء أن يؤتى مناه ... ويأبى الله إلا ما أرادا ...
يقول المرء فائدتي ومالي ... وتقوى الله أفضل ما استفادا ...
মানুষ কামনা করে তার অন্তরের বাসনা পূরণ হোক, কিন্তু মহান আল্লাহ তা অস্বীকার করেন। তবে তিনি যা ইচ্ছা করেন শুধু মাত্র সেটাই পূরণ হয়। মানুষ বলে এটা আমার অর্জন ও সম্পদ। অথচ অর্জন ও সম্পদ এর চেয়ে আল্লাহ ভীতিই হলো সর্বাধিক উত্তম।
আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَا اسْتَفَادَ الْمَرْءُ بَعْدَ تَقْوَى اللهِ خَيْرًا لَهُ مِنْ زَوْجَةٍ صَالِحَةٍ إِنْ أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِنْ أَقْسَمَ عَلَيْهَا أَبَرَّتْهُ وَإِنْ غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهِ.
‘মানুষ সর্বোত্তম কল্যাণমূলক যা কিছু লাভ করে তা হলো আল্লাহ ভীতি, এরপর সতী সাধ্বী স্ত্রী, স্বামী যখন তার দিকে তাকায়, তখন সে তাকে সন্তুষ্ট করে এবং তাকে যা নির্দেশ দেয় তা সে পালন করে, কোন কসম দিলে তা পূর্ণ করে দেখায়, আর সে অনুপস্থিত থাকলে তার স্ত্রী তার মাল এবং স্বীয় নাফসের রক্ষণাবেক্ষণ করে।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান ইবনু মাজাহ ১/১৮৫৭)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings