Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 19
Saheeh International
Or [it is] like a rainstorm from the sky within which is darkness, thunder and lightning. They put their fingers in their ears against the thunderclaps in dread of death. But Allah is encompassing of the disbelievers.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৯ ও ২০ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসউদ ও আরো কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত তারা বলেন: মদীনাবাসীদের মধ্যে দু’জন মুনাফিক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে পলায়ন করে মুশরিকদের কাছে চলে যায়। তখন পথিমধ্যে তাদেরকে বিদ্যুৎ ও প্রকট বজ্রধ্বনিসহ বৃষ্টি পেয়ে বসল, আল্লাহ তা‘আলা যে বৃষ্টির কথা এখানে উল্লেখ করেছেন। যখন তাদেরকে বজ্রাঘাত করত তখনই তারা উভয়ে তাদের কানের ছিদ্রে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিত। যাতে তাদের কানের ভেতরে বজ্রধ্বনি প্রবেশ করে তাদের মৃত্যুর কারণ না হয়। যখন বিদ্যুৎ চমকাত তখন উভয়ে আলো দেখে দেখে পথ চলত আর যখন বিুদ্যৎ চমকাত না তখন কিছুই দেখতে পেত না। এভাবে তারা হেঁটে তাদের স্বস্থানে ফিরে আসল এবং উভয়ে বলতে লাগল যদি আমরা সকাল করতে পারি তাহলে মুহাম্মাদের কাছে এসে আমরা তার হাতে আমাদের হাত রাখব।
পরদিন সকালে তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলো। অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করল, তাঁর হাতের ওপর হাত রাখল (বাইয়াত গ্রহণ করল) এবং তারা ইসলাম মেনে নিল। আল্লাহ তা‘আলা এ দু’জন মুনাফিকের দৃষ্টান্ত মদীনাবাসীর সকল মুনাফিকদের জন্য পেশ করেছেন। (মদীনার) মুনাফিকরা যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মজলিসে উপস্থিত হত তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা না শোনার জন্য তারা তাদের কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিত এ আশঙ্কায় যে, তাদের ব্যাপারে কোন কিছু নাযিল হয়ে যাবে। অথবা তাদের ব্যাপারে এমন কিছু উল্লেখ করবে ফলে তারা নিহত হয়ে যাবে। যেমন ঐ দু’জন মুনাফিক মৃত্যু ভয়ে তাদের কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছিল। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল, ১৭-১৮, ইবনু জারীর আত্ব-তাবারী, ১ম খণ্ড, ২২১, বর্ণনাটি হাসান)
(كُلَّمَآ أَضَا۬ءَ لَهُمْ مَّشَوْا فِيْهِ)
“তখন তাতে তারা চলতে থাকে যখন তিনি তাদের জন্য একটু আলো (বিদ্যুৎ) প্রজ্জ্বলিত করেন” অর্থাৎ যখন তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি অধিক হত এবং প্রচুর পরিমাণ গনীমত লাভ করত তখন দীন-ইসলামের ওপর তারা বহাল থাকত এবং বলত: মুহাম্মাদের দীন সত্য। যেমন ঐ দু’জন মুনাফিক বিদ্যুতের আলোতে পথ চলত।
(وَإِذَآ أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوْا)
“এবং যখন তাদের ওপর অন্ধকার আচ্ছন্ন করেন তখন তারা দাঁড়িয়ে থাকে।”অর্থাৎ যখন তাদের এ ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ধ্বংস হয়ে যেত এবং বালা-মুসিবত তাদের ওপর আপতিত হত তখন তারা বলত, এসব মুহাম্মাদের কারণেই। আর তারা মুরতাদ হয়ে যেত। যেমন ঐ দু’জন মুনাফিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন অবস্থায় বলেছিল।
الصيب- (اَوْ کَصَیِّبٍ)
(আস-সায়্যিবু)-এর অর্থ বৃষ্টি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে হিদায়াত ও জ্ঞান নিয়ে এসেছেন আল্লাহ তা‘আলা তা এ আয়াতে বৃষ্টির সাথে তুলনা করেছেন। কেননা হিদায়াত ও জ্ঞান হল আত্মার জীবন। যেমন বৃষ্টি হল শরীরের জীবন। উদাহরণের দিকে ঈঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُه۫ بِإِذْنِ رَبِّه۪ وَالَّذِي خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا)
“এবং উৎকৃষ্ট ভূমির ফসল তার প্রতিপালকের আদেশে উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট তাতে কঠোর পরিশ্রম না করলে কিছুই জন্মায় না।”(সূরা আ‘রাফ ৭:৫৮)
এ দিকে ইঙ্গিত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে হিদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার উদাহরণ হল বৃষ্টির মত। কোন একস্থানে বর্ষণ হল অতঃপর তার কিছু উর্বর জায়গা পানি ধারণ করল। ফলে প্রচুর পরিমাণে ঘাস জন্মাল। মানুষরা তাত্থেকে পান করল, পশু-পাখিদের পান করাল এবং শস্য উৎপন্ন করল। এটাই হল ঐ ব্যক্তির উপমা যে ব্যক্তি দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তা দ্বারা সে নিজে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে ইলম অর্জন করে এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দেয়। আর তার কিছু অংশ রয়েছে যা পানিও ধরে রাখতে পারে না এবং ঘাসও উৎপন্ন করে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২২৮২)
(فِيْهِ ظُلُمَاتٌ)
‘যাতে রয়েছে অন্ধকার’আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে বৃষ্টির অন্ধকার দ্বারা কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে দৃষ্টান্ত পেশ করছেন। তারা কুরআন সম্পর্কে যে সন্দেহ-সংশয় পোষণ করে, সে জন্য তাদের কষ্টে নিপতিত করা। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন, এটা তাদের কাছে অন্ধকারের মত। কেননা তা তাদের অন্ধত্বই বৃদ্ধি করে দেয়।
رَعْدٌ ‘গর্জন’আল্লাহ তা‘আলা বজ্রধ্বনি দ্বারা মুনাফিকদের উদাহরণ দিয়েছেন। কেননা কুরআনে তাদেরকে এমন ধমক দেয়া হয়েছে যা কানকে ছিদ্র করে দেয় এবং অন্তরকে ফাটিয়ে দেয়।
وَّبَرْقٌ ‘বিদ্যুৎ চমক’ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: এর ভাবার্থ এই যে, কুরআন মাজীদের মজবুত আয়াতগুলো এসব মুনাফিকদের প্রকৃত অবস্থা খুলে দেবে ও তাদের গোপনীয় দোষ প্রকাশ করবে এবং আপন উজ্জ্বলতার দ্বারা তাদেরকে হতভম্ব করে দিবে। যখন তাদের ওপর অন্ধকার ছেয়ে যায় তখন তারা দাঁড়িয়ে যায়। অর্থাৎ যখন তাদের ঈমান প্রকাশ পায় তখন তাদের অন্তর কিছু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং তারা এর অনুসরণ করতে থাকে। কিন্তু যখনই সন্দেহ ও সংশয়ের উদ্রেক হয় তখনই অন্তরের মধ্যে অন্ধকার ছেয়ে যায়, তখন সে হয়রান পেরেশান হয়ে যায়। অথবা এর ভাব এও হতে পারে যে, যখন ইসলামের কিছুটা উন্নতি সাধিত হয়, তখন তাদের মনে কিছুটা স্থিরতা আসে, কিন্তু যখনই তার বিপরীত পরিলক্ষিত হয় তখনই তারা কুফরীর দিকে ফিরে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ یَّعْبُدُ اللہَ عَلٰی حَرْفٍﺆ فَاِنْ اَصَابَھ۫ خَیْرُ اۨطْمَاَنَّ بِھ۪ﺆ وَاِنْ اَصَابَتْھُ فِتْنَةُ اۨنْقَلَبَ عَلٰی وَجْھِھ۪ﺥ خَسِرَ الدُّنْیَا وَالْاٰخِرَةَﺚ ذٰلِکَ ھُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِیْنُ)
“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ‘ইবাদত করে দ্বিধার সাথে; তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়াতে ও আখিরাতে; এটা তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।”(সূরা হাজ্জ ২২:১১)
সাহাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: তাদের আলোতে চলার অর্থ হচ্ছে সত্যকে জেনে ইসলামের কালিমা পাঠ করা এবং অন্ধকারে থেমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া। অধিকাংশ আলেমদের এটাই মত, আর এটাই সবচেয়ে সঠিক কথা। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
কিয়ামাতের দিনও তাদের এ অবস্থা হবে যখন ঈমানদারদেরকে তাদের ঈমানের পরিমাণ অনুযায়ী নূর দেয়া হবে, কেউ পাবে বহু মাইল পর্যন্ত আলো, কেউ পাবে তারও বেশি, কেউ তার চেয়ে কম, এমনকি শেষ পর্যন্ত কেউ এতটুকু পাবে যে, কখনো আলোকিত হবে আবার কখনো অন্ধকার হয়ে যাবে। কিছু লোক এমনও হবে যে, তারা একটু দূরে গিয়েই থেমে যাবে, আবার কিছুদূর পর্যন্ত আলো পাবে, আবার নিভে যাবে। আবার এমন দুর্ভাগা লোক হবে তাদের কোন আলোই থাকবে না। এরাই হল প্রকৃত মুনাফিক। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ یَقُوْلُ الْمُنٰفِقُوْنَ وَالْمُنٰفِقٰتُ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوا انْظُرُوْنَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُّوْرِکُمْﺆ قِیْلَ ارْجِعُوْا وَرَا۬ءَکُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًا)
“সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী মু’মিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে আমরা তোমাদের নূর হতে কিছু গ্রহণ করতে পারি। বলা হবে: তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও ও আলোর সন্ধান কর।”(সূরা হাদীদ ৫৭:১৩)
আবার মু’মিনদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ تَرَی الْمُؤْمِنِیْنَ وَالْمُؤْمِنٰتِ یَسْعٰی نُوْرُھُمْ بَیْنَ اَیْدِیْھِمْ وَبِاَیْمَانِھِمْ بُشْرٰٿکُمُ الْیَوْمَ جَنّٰتٌ)
“সেদিন (কিয়ামতের দিন) তুমি দেখবে মু’মিন নর-নারীদের সম্মুখভাগে ও ডান পার্শ্বে তাদের জ্যোতি প্রবাহিত হবে। (বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের।” (সূরা হাদীদ ৫৭:১২) অনুরূপ সূরা তাহরীমের ৮ নং আয়াতে এ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয় বুঝানোর জন্য উদাহরণ পেশ করা বৈধ, তবে তা বাস্তবতা ও সত্যার ভিত্তিতে হতে হবে।
২. বাতিলদের অপচেষ্টা যতই হোক না কেন এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
৩. কুরআন মু’মিনদের অন্তরকে এমনভাবে জীবিত করে বৃষ্টি যেমন মাটিকে জীবিত করে।
৪. কিয়ামত দিবসে মু’মিনরা তাদের ঈমান ও আমল অনুযায়ী নূর পাবে, যার দ্বারা তারা পথ চলবে। কিন্তু মুনাফিকদের প্রকৃতপক্ষে ঈমান না থাকায় তারা কোন নূর পাবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings