Surah Al Baqarah Tafseer

ঘুষ নেয়া নিষেধ এবং ইহা জঘন্য অপরাধ বা পাপ

‘আলী ইবনু তালহা (রাঃ) একটি সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বলেন যে, এ আয়াতটি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে যার নিকট অপরের ধন-সম্পদ রয়েছে এবং ঐ হকদার ব্যক্তির নিকট কোন প্রমাণ নেই। তখন ঐ লোকটি অস্বীকার করে বিচারকের নিকট গিয়ে নিজেকে নির্দোষ রূপে সাব্যস্ত করছে, অথচ সে জানে যে, ঐ দাবীদারের মাল তার নিকট রয়েছে। সুতরাং হারাম খাচ্ছে এবং নিজেকে পাপী দের অন্তর্ভুক্ত করেছে। (তাফসীর তাবারী ৩/৫৫০) মুজাহিদ (রহঃ) , সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) , ইকরামাহ (রহঃ) , হাসান বাসরী (রহঃ) , কাতাদাহ (রহঃ) , সুদ্দী (রহঃ) , মুকাতিল ইবনু হিব্বান (রহঃ) এবং ‘আবদুর রহমান ইবনু যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) -ও এই কথাই বলেন যে, ঐ ব্যক্তি যে অত্যাচারী এটা সে নিজে জানা সত্ত্বেও তার মোটেও বিবাদ করা উচিত নয়। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/৩৯৩, ৩৯৪, তাফসীর তাবারী ৩/৫৫০/৫৫১)

কোন বিচারকের বিচারের ফলে নিষিদ্ধ বিষয় জায়িয হয় না

উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

أَلَا إِنَّمَا أَنَا بَشَر، وَإِنَّمَا يَأْتِينِي الْخِصْمُ فَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُونَ أَلْحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ فَأَقْضِي لَهُ، فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ بِحَقِّ مُسْلِمٍ، فَإِنَّمَا هِيَ قِطْعَةٌ مِنْ نَارٍ، فَلْيَحْملْهَا، أَوْ ليذَرْها.

‘আমি একজন মানুষ। লোকেরা আমার নিকট বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হয়। সম্ভবত একজন অপরজন অপেক্ষা বেশি যুক্তিবাদী। তার যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে আমি হয়তো তারই স্বপক্ষে ফায়সালা করে থাকি অথচ ফায়সালা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত। তবে জেনে রেখো, যে ব্যক্তির পক্ষে এরূপ ফায়সালা করার ফলে কোন মুসলিমের হক আমি তাকে দিয়ে দেই, এটা হচ্ছে আগুনের টুকরা। সুতরাং সে যেন এটা না নেয়।’ (সহীহুল বুখারী-৫/৩৪০/২৬৮০, ১১/৩৫৫/৬৯৬৭, ১৩/১৬৮/৭১৬৯, ফাতহুল বারী -১৩/১৯০, সহীহ মুসলিম ৩/১৩৭৩) অতএব অত্র আয়াত এবং এই হাদীস এই বিষয়ের ওপর দলীল যে, বিচারকের বিচার কোন মামলার মূল শারী‘আতকে পরিবর্তন করে না। প্রকৃত পক্ষে যা হারাম তা কাযীর ফায়সালায় হালাল হয়ে যায় না এবং হালালও হারাম হয় না।

কাযী বা বিচারকের ফায়সালা শুধুমাত্র বাহ্যিকের ওপর হয়ে থাকে, অভ্যন্তরে তা পূরণ হয় না। বিচারকের ফায়সালা যদি প্রকৃত ব্যাপারের সাথে মিলে যায় তাহলে তো ভালোই। সাক্ষীর কারণে বিচার ভিন্নতর হলে বিচারক তো প্রতিদান পেয়ে যাবেন, কিন্তু এই মীমাংসার ওপর ভিত্তি করে হককে না হক এবং না হককে হকে পরিণতকারী সাক্ষ্যদানকারী মহান আল্লাহ্‌র নিকট অপরাধী বলে বিবেচিত হবে এবং তার ওপর ঐ শাস্তি আপতিত হবে। বলা হয়েছেঃ

﴿وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَ تُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِیْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾

‘তোমরা নিজেদের দাবীর অসারতা জেনে শুনে জনগণের মাল ভক্ষণের উদ্দেশ্যে মিথ্যা মোকদ্দমা সাজিয়ে এবং মিথ্যা সাক্ষী ঠিক করে অবৈধ পন্থার মাধ্যমে বিচারককে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের দাবীকে সাব্যস্ত করো না।’

কাতাদাহ (রহঃ) বলেনঃ ‘হে জনমণ্ডলী! জেনে রেখো, বিচারকের মীমাংসা তোমার জন্য হারামকে হালাল এবং অন্যায়কে ন্যায় করতে পারে না। কাযী তো নিজের বিবেকের মাধ্যমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুসারে বাহ্যিক ব্যবস্থা দেখে বিচারের রায় দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তিনি তো মানুষ, সুতরাং তার দ্বারা ভুল হওয়াও সম্ভব এবং তার ভুল থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব। তাহলে জেনে নাও যে, বিচারকের ফায়সালা যদি সত্য ঘটনার উল্টা হয় তাহলে শুধুমাত্র বিচারকের মীমাংসা বলেই একে বৈধ মাল মনে করো না। এই বিবাদ থেকেই গেলো। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্‌ দু’জনকেই একত্রিত করবেন এবং অন্যায়কারীদের ওপর হকদারদেরকে বিজয়ী করে তাদের হক অন্যায়কারীদের নিকট হতে আদায় করিয়ে দিবেন এবং দুনিয়ায় যে মীমাংসা করা হয়েছিলো তার বিপরীত মীমাংসা করে তার সাওয়াবসমূহ হতে হকদারকে তার বিনিময় দিয়ে দিবেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী -৩/৫৪৫/২০৭৩)