Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 186
Saheeh International
And when My servants ask you, [O Muhammad], concerning Me - indeed I am near. I respond to the invocation of the supplicant when he calls upon Me. So let them respond to Me [by obedience] and believe in Me that they may be [rightly] guided.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রার্থনা শুনতে পান
একজন পল্লীবাসী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করেঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রভু কি নিকটে আছেন, না দূরে আছেন? যদি নিকটে থাকেন তবে চুপে চুপে ডাকবো আর যদি দূরে থাকেন তবে উচ্চস্বরে ডাকবো। এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব হয়ে যান। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসনাদ ইবনে আবি হাতিম, তাফসীরে ত্ববারী ৩/৪৮০, ৪৮১/২৯০৪)
একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, সাহাবীগণের মধ্য থেকে একজন জিজ্ঞেস করলেন আমাদের প্রভু কোথায় রয়েছেন,এই প্রশ্নের উত্তরে এটা অবতীর্ণ হয়। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীরে ‘আব্দুর রাজ্জাক-১/৯০/১৯৬) ‘আতা (রহঃ) বলেন যে, যখন ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।’ (৪০ নং সূরা আল মু’মিন, আয়াত ৬০) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন জনগণ জিজ্ঞেস করে আমরা কোন সময় প্রার্থনা করবো ? তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় (ইবনে জুরাইজ)
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ ‘আমরা এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথেই ছিলাম। আমরা প্রত্যেকে উঁচু স্থানে উঠার সময় এবং ঐ উপত্যকায় অবতরণের সময় উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি করতে করতে যাচ্ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أرْبعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ؛ فإنَّكم لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّمَا تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا، إِنَّ الذِي تَدْعُونَ أقربُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُق رَاحِلَتِهِ. يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ قَيْسٍ، أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَةً مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِالْلَّهِ.
‘হে জনমণ্ডলী! নিজেদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করো। তোমরা কোন কম শ্রবণকারী ও দূরে অবস্থানকারীকে ডাকছো না। যাঁকে তোমরা ডাকতে রয়েছ তিনি তোমাদের স্কন্ধ অপেক্ষাও নিকটে রয়েছেন। হে ‘আবদুল্লাহ ইবনে কায়িস! তোমাকে কি আমি জান্নাতের কোষাগারসমূহের সংবাদ দিবো না? তা হচ্ছে لَاحَوْلَوَلَاقُوَّةَإِلَّابِاللهِ এই কালিমাটি।’ (মুসনাদে আহমাদ ৪/৪০২, ফাতহুল বারী ২/৫০৯, সহীহ মুসলিম ৪/২০৭৬) এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রহঃ) ও ইমাম মুসলিম (রহঃ)-এর হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ), তিরমিযী (রহঃ), নাসাঈ (রহঃ) এবং ইবনে মাজাহ (রহঃ) অনুরূপ শব্দ প্রয়োগ করে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে আরো বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا دَعَانِي
মহান আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা পোষণ করে আমি তদ্রুপ, যখন সে আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সাড়া দেই। (সহীহুল বুখারী-১৩/৩৯৫/৭৪০৫,৭৫০৫, সহীহ মুসলিম-৪/১৯/২০৬৭, মুসনাদে আহমাদ-৩/২১০,২৭৭, ৪৯১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ
أَنَا مَعَ عَبْدِي مَا ذَكَرَنِي، وَتَحَرَّكَتْ بِي شَفَتَاهُ
আমার বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে এবং আমার যিকরে তার ওষ্ঠ নড়ে উঠে, তখন আমি তার সাথেই থাকি।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী ১৩/৫০৭, মুসনাদে আহমাদ ২/৫৪০, সুনান ইবনে মাজাহ-২/৩৭৯২) ইমাম আহমাদ (রহঃ) এটা বণনা করেছেন। এই বিষয়ের আয়াত আল কুর’আনের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। ঘোষণা হচ্ছে إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ ‘যারা আল্লাহভীরু ও সৎ কর্মশীল নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (১৬ নং সূরা আন নাহল, আয়াত ১২৮) মূসা (আঃ) ও হারুন (আঃ) কে মহান আল্লাহ বলেনঃ اننى معكع اسمع وارى
‘আমি তোমাদের দু’জনের সাথে রয়েছি, আমি শুনছি ও দেখছি।’ (২০ নং সূরা ত্বা-হা, আয়াত-৪৬) উদ্দেশ্য এই যে মহান আল্লাহ প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনা ব্যর্থ করেন না। এরকম হয় না যে, তিনি বান্দাদের প্রার্থনা হতে উদাসীন থাকেন বা শুনেন না। এর দ্বারা মহান আল্লাহ তার নিকট প্রার্থনা করার জন্য তার বান্দাদেরকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং তাদের প্রার্থনা ব্যর্থ না করার অঙ্গীকার করছেন। সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন যে, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَيَسْتَحْيِي أَنْ يَبْسُطَ الْعَبْدُ إِلَيْهِ يَدَيْهِ يَسْأَلُهُ فِيهِمَا خَيْرًا فَيَرُدُّهُمَا خَائِبَتَيْنِ
বান্দা যখন মহান আল্লাহ্র কাছে হাত উঁচু করে প্রার্থনা জানায় তখন সেই দয়ালু মহান আল্লাহ তার হাত দু’খানা শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ- ৫/২৩৮, ৪৩৮, সুনান আবূ দাউদ-২/৭৮/১৪৮৮, জামি‘ তিরমিযী- ৫/৫২০/৩৫৫৬, সুনান ইবনে মাজাহ-২/১২৭১/৩৮৬৫)
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রার্থনা কবূল করে থাকেন
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ، إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثِ خِصَالٍ: إِمَّا أَنْ يعجِّل لَهُ دَعْوَتَهُ، وَإِمَّا أَنْ يَدّخرها لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا" قَالُوا: إِذًا نُكْثِرُ. قَالَ: "اللَّهُ أَكْثَرُ.
‘যে বান্দা মহান আল্লাহ্র নিকট এমন প্রার্থনা করে যার মধ্যে পাপও নেই এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নতাও নেই তাহলে মহান আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি দান করে থাকেন। হয়তোবা তার প্রার্থনা ততক্ষণাৎ কবূল করে নিয়ে তার প্রার্থিত উদ্দেশ্য পুরা করেন, কিংবা তা জমা করে রেখে দেন এবং পরকালে দান করেন, কিংবা এরই কারণে এমন কোন বিপদ কাটিয়ে দেন যে বিপদ তার প্রতি আপতিত হতো।’ এই কথা শুনে জনসাধারণ বললোঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা যদি খুব বেশি বেশি করে প্রার্থনা করি?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘মহান আল্লাহ্র নিকট খুবই বেশি রয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ ৩/১৮)
উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَا عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِم يَدْعُو اللَّهَ، عَزَّ وَجَلَّ، بِدَعْوَةٍ إِلَّا آتَاهُ اللَّهُ إِيَّاهَا، أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا، مَا لَمْ يَدعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ.
‘ভূ-পৃষ্ঠের যে মুসলিম মহাসম্মানিত ও মর্যাদাবান মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা জানায় তা মহান আল্লাহ গ্রহণ করে থাকেন, হয় সে তার প্রার্থিত উদ্দেশ্য লাভ করে অথবা ঐ রকমই তার কোন বিপদ কেটে যায় যে পর্যন্ত না কোন পাপের কাজের বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নতার কাজে সে প্রার্থনা করে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৫/৩২৯, জামি‘ তিরমিযী ৫/৩৫৬৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
يُسْتَجَاب لِأَحَدِكُمْ مَا لَمْ يَعْجل، يَقُولُ: دعوتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِي
‘যে পর্যন্ত কোন ব্যক্তি প্রার্থনায় তাড়াহুড়া না করে, তার প্রার্থনা অবশ্যই কবূল হয়। তাড়াতাড়ি করার অর্থ এই যে, সে বলতে আরম্ভ করে, আমি সদা প্রার্থনা করতে রয়েছি, কিন্তু মহান আল্লাহ কবূল করছেন না। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-১১/১৪৫/৬৩৪০, সহীহ মুসলিম-৪/৯১/২০৯৬,মুসনাদে আহমাদ ৫/৩২৯, জামি‘ তিরমিযী-৫/৪৩৩/৩৩৮৭, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক-১/২৯/২১৩) ইমাম মুসলিম (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি হাদীস প্রসঙ্গে বলেনঃ
لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يستعجل قيل: يا رسول الله، وما الِاسْتِعْجَالُ؟ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ، فَلَمْ أَرَ يُسْتَجَابُ لِي، فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ ويدع الدُّعَاءَ.
মহান আল্লাহ প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা ততোক্ষণ পর্যন্ত কবূল করেন যতোক্ষণ তার দু‘আয় পাপ জনিত কোন কথা মিশ্রিত না থাকে অথবা নাড়ির (রক্তে) সম্পর্ক ছিন্ন না করে অথবা দু‘আর ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেনঃ ঐ ব্যক্তি বলে, আমি দু‘আ করতেই রয়েছি, অথচ দু‘আ কবূল হওয়ার কোন সুফল পাচ্ছিনা; এভাবে সে দু‘আ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে দু‘আ করা পরিত্যাগ করে। (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম ৪/৯২/২০৯৬, মুসনাদে আহমাদে-৩/১৯৩,২১০, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১৪৭, তারগীব ওয়াত তারহীব ২/৪৯০)
আবূ জা‘ফর তাবারী (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে এই উক্তিটি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন কোন বান্দা মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করতে থাকে। অতঃপর মহান আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করে দুনিয়াতে তা দিয়ে থাকেন অথবা আখিরাতের জন্য তা সঞ্চয় করে রাখেন যদি সে তাড়াহুড়া না করে কিংবা নিরাশ না হয়। ‘উরওয়াহ বললেন হে উম্মুল মু’মিনীন! তাড়াহুড়া ও নিরাশ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? তিনি বললেন প্রার্থনাকারী বলে যে, আমি আবেদন করলাম অথচ আমাকে দেয়া হলো না। আমি প্রার্থনা করলাম আমার ডাকে সাড়া দেয়া হলো না। (হাদীসটি হাসান। তাফসীরে ত্বাবারী)
‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
الْقُلُوبُ أَوْعِيَةٌ، وَبَعْضُهَا أَوْعَى مِنْ بَعْضٍ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ أَيُّهَا النَّاسُ فَاسْأَلُوهُ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالْإِجَابَةِ، فَإِنَّهُ لَا يَسْتَجِيبُ لِعَبْدٍ دَعَاهُ عَنْ ظَهْرِ قَلْبٍ غَافِلٍ.
‘অন্তর পাত্র সমূহের ন্যায়, একটি অপরটি হতে বেশি পর্যবেক্ষণকারী হয়ে থাকে। হে জনমণ্ডলী! মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করবে তো কবূল হওয়ার বিশ্বাস রেখে করো। জেনে রেখো যে, উদাসীনদের প্রার্থনা মহান আল্লাহ কবূল করেন না।’ (হাদীস সহীহ। মুসনাদে আহমাদ-২/১৭৭/৬৬৫৫, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১৪৮, তারগীব ওয়াত তারহীব ২/৪৯১, ৪৯২)
‘আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ‘আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।’ এই আয়াত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলেনঃ হে আল্লাহ! ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর এই প্রশ্নের উত্তর কি হবে? তখন জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং বলেনঃ মহান আল্লাহ আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলেছেন-এর উদ্দেশ্য ঐ ব্যক্তি যে সৎ কার্যাবলী সম্পাদনকারী হয় এবং খাঁটি নিয়ত ও আন্তরিকতার সাথে আমাকে ডেকে থাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে তার প্রয়োজন পুরো করে থাকি। (হাদীস য‘ঈফ। তাফসীর ইবনে মিরদুওয়াই) এই হাদীসটি সনদের দিক থেকে খুবই দুর্বল।
অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই আয়াতটি পাঠ করেন, অতঃপর বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মঞ্জুর করার অঙ্গীকার করেছেন। আমি হাজির হয়েছি, হে আমার মা‘বূদ! আমি হাজির হয়েছি, আমি হাজির আছি। হে অংশীদার বিহীন আল্লাহ! আমি উপস্থিত রয়েছি। হামদ, নি‘য়ামত এবং রাজ্য আপনারই জন্যে। আপনার কোন অংশীদার নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি এক ও অদ্বিতীয়। আপনি অতুলনীয়। আপনি এক ও পবিত্র। আপনি স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে দূরে রয়েছেন। না আপনার কেউ সঙ্গী রয়েছে। না আপনার কেউ সমকক্ষ রয়েছে, না আপনার মতো কেউ রয়েছে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনার ওয়া‘দা সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, আগত কিয়ামত সত্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর আপনি কবরবাসীকে পুনরুত্থান করবেন। (হাদীস য‘ঈফ। তাফসীর ইবনে মিরদুওয়াই)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার ইরশাদ হচ্ছেঃ হে ইবনে আদম! একটি জিনিস তো তোমার আর একটি জিনিস আমার এবং একটি জিনিস তোমার ও আমার মধ্যেস্থলে রয়েছে। খাঁটি আমার হক তো এটাই যে, তুমি শুধুমাত্র আমারই ‘ইবাদত করবে এবং আমার সাথে আর কাউকেও অংশীদার করবে না। তোমার জন্য নির্দিষ্ট এই যে, তোমার প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান আমি তোমাকে অবশ্যই দিবো। তোমার কোন পুণ্যই আমি নষ্ট করবো না। মধ্যবর্তী জিনিসটি এই যে তুমি প্রার্থনা করবে আর আমি কবূল করবো। তোমার একটি কাজ হচ্ছে প্রার্থনা করা আর আমার একটি কাজ হচ্ছে তা কবূল করা। (হাদীসটি য‘ঈফ। আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১/৫১, তাফসীরে বাযযার)
সাওমের অধ্যায়ে প্রার্থনার বিষয়টি নিয়ে আসার হিকমত
প্রার্থনার এই আয়াতটিকে সাওমের নির্দেশাবলী আয়াতসমূহের মধ্যস্থলে আনয়নের নিপুণতা এই যে, যেন সাওম শেষ করার প্রার্থনার প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মে এবং তারা যেন প্রত্যেহ ইফতারের সময় অত্যধিক দু‘আ করতে থাকে। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাওম পালনকারী ইফতারের সময় যে দু‘আ করে মহান আল্লাহ তা কবূল করে থাকেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) ইফতারের সময় স্বীয় পরিবারের লোককে এবং শিশুদেরকে ডেকে নিতেন ও তাদের সকলকে নিয়ে প্রার্থনা করতেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান--ই--আবূ দাউদ, তায়ালেসী) সুনান ইবনে মাজাহর মধ্যেও বর্ণনাটি রয়েছে যে, সাওম পালনকারীর জন্যে ইফতারের সময়কার আবেদন বা দু‘আ ফিরে দেয়া হয় না। অত্র হাদীসের মধ্যে সাহাবীগণের নিম্নের এই দু‘আটিও নকল করা হয়েছেঃ
اللهم انى اسا لك بر حمتك التى وسعت كل شيئ فاغفر لى
‘হে মহান আল্লাহ! আপনার যে দয়া প্রত্যেক জিনিসকে ঘিরে রয়েছে তা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আপনার নিকট প্রার্থনা জানাচ্ছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন!’ (হাদীসটি য‘ঈফ। সুনান ইবনে মাজাহ ১/১৭৫৩, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪২২, ইরওয়াউল গালীল ৯২১)
তিন ব্যক্তির প্রার্থনা ফিরিয়ে দেয়া হয় না
ইমাম আহমাদ (রহঃ) তাঁর মুসনাদ এবং ইমাম তিরমিযী (রহঃ), নাসাঈ (রহঃ) এবং ইবনে মাজাহ (রহঃ) তাদের সুনানে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الْإِمَامُ الْعَادِلُ، وَالصَّائِمُ حتى يُفْطِرَ، وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ يَرْفَعُهَا اللَّهُ دُونَ الْغَمَامِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَتُفْتَحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَيَقُولُ: بعزتي لأنصرنك ولو بعد حين.
‘তিন ব্যক্তির প্রার্থনা ফিরিয়ে দেয়া হয় না (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সিয়ামপালনকারী যতোক্ষণ সিয়াম পালন করা অবস্থায় থাকে এবং (৩) নির্যাতিত ব্যক্তি। কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহ তাদের উচ্চাসনের মর্যাদা দিবেন। তাদের বদ দু‘আর কারণে আকাশের দরজাসমূহ খুলে যাবে এবং মহান আল্লাহ বলবেনঃ আমার ইযযাতের শপথ! কিছুকাল পরে হলেও আমি তোমাদের প্রার্থনা কবূল করবো। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসনাদে আহমাদ-২/৩০৪-৩০৫, জামি‘ তিরমিযী-৫/৫৩৯/৩৫৯৮, সুনান ইবনে মাজাহ ১/৫৫৭/১৭৫২, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্ ১৯০১। অত্র হাদীসটি য‘ঈফ, তবে একটি সহীহ হাদীস রয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ, মুসাফির ব্যক্তির দু‘আ এবং নির্যাতিত ব্যক্তির দু‘আ প্রত্যাখ্যাত হয় না। বরং সন্দেহাতীত ভাবেই তা কবূল হয়। (সিলসিলাতু সহীহা ৫৯৬)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings