Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 185
Saheeh International
The month of Ramadhan [is that] in which was revealed the Qur'an, a guidance for the people and clear proofs of guidance and criterion. So whoever sights [the new moon of] the month, let him fast it; and whoever is ill or on a journey - then an equal number of other days. Allah intends for you ease and does not intend for you hardship and [wants] for you to complete the period and to glorify Allah for that [to] which He has guided you; and perhaps you will be grateful.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
রামাযান মাসের গুরুত্ব, মর্যাদা এবং এ মাসে কুর’আন নাযিল হওয়া
মহান আল্লাহ এখানে অন্য সব মাসের ওপর রামাযান মাসের সম্মান ও মর্যাদার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, এই পবিত্র মাসেই কুর’আনুল কারীম অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘ইব্রাহীম (আঃ)-এর ‘সহীফা’ রামাযানের প্রথম রাতে, ‘তাওরাত’ ছয় তারিখে, ‘ইনজীল’ তেরো তারিখে এবং কুর’আনুল কারীম চব্বিশ তারিখে অবতীর্ণ হয়। (হাদীসটি হাসান। মুসনাদে আহমাদ ৪/১০৭, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১/১৯৭)
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, যাবুর ১২ তারিখে এবং ইনজীল ১৮ তারিখে অবতীর্ণ হয়। পূর্বে সমস্ত সহীফা' এবং তাওরাত, ইনজীল ও যাবুর যে যে নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিলো তা একবারই অবতীর্ণ হয়েছিলো। কিন্তু কুর’আনুল কারীম বায়তুল ইযযাহ' হতে দুনিয়ার আকাশ পযন্ত তো একবারই অবতীর্ণ হয়। অতঃপর মাঝে মাঝে প্রয়োজন হিসেবে পৃথিবীর বুকে অবতীর্ণ হতে থাকে। অতএব মহান আল্লাহ্র বাণীঃ ﴿اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِیْ لَیْلَةِ الْقَدْرِ﴾ এবং ﴿اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِیْ لَیْلَةٍ مُبَارَكَةٍ﴾ এবং ﴿اُنْزِلَفِیْهِالْقُرْاٰنُ﴾ এর ভাবার্থ এটাই। অর্থাৎ কুর’আনুল কারীমকে একই সাথে প্রথম আকাশের ওপরে রামাযান মাসে ‘কাদরের’ রাতে অবতীর্ণ করা হয় এবং ঐ রাতকে لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ অর্থাৎ বরকতময় রাতও বলা হয়। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ মনীষী হতে এটাই বর্ণিত আছে।
একবার যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসিত হন যে কুর’আন মাজীদ তো বিভিন্ন বছর অবতীর্ণ হয়েছে, তাহলে রামাযান মাসে ও কদরের রাতে অবতীর্ণ হওয়ার ভাবার্থ কি? তখন তিনি উত্তরে এই ভাবার্থই বর্ণনা করেন। (তাফসীরে ইবনে মিরদুওয়াই প্রভৃতি)
তিনি এটাও বর্ণনা করেন যে এর অর্থ রামাযানে কুর’আনুল কারীম দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হয় এবং বায়তুল ইযযায় রাখা হয়। অতঃপর প্রয়োজন মতো ঘটনাবলী ও প্রশ্নাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হতে থাকে এবং বিশ বছরে পূর্ণ হয়। অনেকগুলো আয়াত কাফিরদের কথার উত্তরেও অবতীর্ণ হয়। তাদের একটা প্রতিবাদ এটাও ছিলো যেঃ
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا نُزِّلَ عَلَيْهِ الْقُرْآَنُ جُمْلَةً وَاحِدَةً
‘কাফেররা বলতো যে, কুর’আনুল কারীম সম্পূর্ণ একই সাথে অবতীর্ণ হয় না কেন?’ (২৫ নং সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৩২) এরই উত্তরে বলা হয়ঃ
كَذَلِكَ لِنُثَبِّتَ بِهِ فُؤَادَكَ وَرَتَّلْنَاهُ تَرْتِيلًا. وَلَا يَأْتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئْنَاكَ بِالْحَقِّ وَأَحْسَنَ تَفْسِيرًا
‘যেন আমি এর দ্বারা তোমার অন্তরকে দৃঢ় রাখি এবং এটা আমি স্পষ্ট করে বর্ণনা করি।’ তোমার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি।’ (২৫ নং সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৩২, ৩৩)
পবিত্র কুর’আনের মর্যাদা
কুর’আনুল কারীমের প্রশংসায় বলা হচ্ছে যে, এটি বিশ্ব মানবের জন্য পথ প্রদর্শক এবং এতে প্রকাশ্য ও উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী রয়েছে। ভাবুক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিরা এর মাধ্যমে সঠিক পথে পৌঁছাতে পারে। এটা সত্য-মিথ্যা, হারাম-হালালের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টিকারী। সুপথ-কুপথ এবং ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য আনয়নকারী।
রামাযানকে شهررمضان বলতে হবে এমন দাবী ভিত্তিহীন
পূর্ববর্তী কোন একজন মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে,শুধু রামাযান বলা মাকরুহ, شهررمضان অর্থাৎ রামাযানের মাস বলা উচিত। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ তোমরা রামাযান বলো না। এটা মহান আল্লাহ্র নাম। তোমরা شهررمضان অর্থাৎ রামাযানের মাস বলতে থাকো। (হাদীসটি মাওযু‘ (জাল হাদীস)। সুনান বায়হাক্বী ৪/২০১, আল মাওযূ‘আত ২/১৮৭) মুজাহিদ (রহঃ) এবং মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব (রহঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। ইবনে ‘আব্বাস (রহঃ) এবং যায়দ ইবনে সাবিত (রাঃ) এর মাহযাব এর উল্টো। রামাযান না বলা সম্বন্ধে একটি মারফূ‘ হাদীসও রয়েছে। কিন্তু সনদ হিসেবে সেটা একেবারেই ভিত্তিহীন।
ইমাম বুখারী (রহঃ) ও এর খণ্ডনে ‘রামাযান’ নামে অধ্যায় রচনা করে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটিতে রয়েছে যেঃ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
‘যে ব্যক্তি বিশ্বাস রেখে ও সৎ নিয়তে রামাযানের সাওম রাখে তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী ১/১১৫/৩৮, ৪/১৩৫, ৪/১৩৮/১৯০১, সহীহ মুসলিম-১/৫২৩/১৭৫, সুনান আবূ দাউদ-২/৪৯/১৩৭২, জামি‘ তিরমিযী-৩/৬৮৭, সুনান নাসাঈ-৪/৪৬৬/২২০২, মুসনাদে আহমাদ ২/২৩২)
রামাযান মাসে সিয়াম পালন করা ফরয
এই আয়াত দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, রামাযানের চন্দ্র উদয়ের সময় যে ব্যক্তি বাড়িতে অবস্থান করবে, মুসাফির হবে না এবং সুস্থ ও সবল থাকবে, তাকে বাধ্যতামূলকভাবেই সিয়াম পালন করতে হবে। পূর্বে এদের জন্য সিয়াম ছেড়ে দেয়ার অনুমতি ছিলো; কিন্তু এখন আর অনুমতি রইলো না। এটা বর্ণনা করার পর মহান আল্লাহ রুগ্ন ও মুসাফিরের জন্য সিয়াম ছেড়ে দেয়ার অনুমতির কথা বর্ণনা করেন। এদের জন্য বলা হচ্ছে যে, ‘এরা এই সময় সিয়াম পালন করবে না এবং পরে আদায় করে নিবে।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তির শারীরিক কোন কষ্ট রয়েছে যার ফলে তার পক্ষে সিয়াম পালন করা কষ্টকর হচ্ছে কিংবা সফরে রয়েছে, সে সিয়াম ছেড়ে দিবে এবং এভাবে যে কয়টি সিয়াম ছুটে যাবে তা পরে আদায় করে নিবে।
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে যে, ‘এরূপ অবস্থায় সিয়াম ছেড়ে দেয়ার অনুমতি দিয়ে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বড়ই করুণা প্রদর্শন করেছেন এবং ইসলামের নির্দেশাবলী সহজ করে দিয়ে তাঁর বান্দাদেরকে কষ্ট হতে রক্ষা করেছেন।’
সফরে সিয়ামপালন সম্পর্কিত কতিপয় বিধি-বিধান
এখানে এই আয়াতের সাথে স¤পর্ক যুক্ত গুটি কয়েক জিজ্ঞাস্য বিষয়ের বর্ণনা দেয়া হচ্ছেঃ (১) পূর্ববর্তী মনীষীগণের একটি দলের ধারণা এই যে, কোন লোক বাড়িতে অবস্থানরত অবস্থায় রামাযানের চাঁদ উদয়ের ফলে রামাযানের মাস এসে পড়ে অতঃপর মাসের মধ্যেই তাকে সফরে যেতে হয় এই সফরে সাওম ছেড়ে দেয়া তার জন্য জায়িয নয়। কেননা এরূপ লোকদের জন্য রোযা রাখার পরিস্কার নির্দেশ কুর’আনুল কারীমের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। হ্যাঁ, তবে ঐ লোকদের সফরের অবস্থায় সাওম ছেড়ে দেয়া জায়িয, যারা সফরে রয়েছে এমতাবস্থায় রমযান মাস এসে পড়েছে। কিন্তু এই উক্তিটি অসহায়। আবূ মুহাম্মাদ ইবনু হাযম স্বীয় গ্রন্থ মুহাল্লীর মধ্যে সাহাবা এবং তাবি‘ঈগণের একটি দলের এই মাযহাবই নকল করেছেন। কিন্তু এতে সমালোচনা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানুল মুবারাক মাসে মাক্কা বিজয় অভিযানে সিয়াম পালন অবস্থায় রওয়ানা হোন। ‘কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছে সিয়াম ছেড়ে দেন এবং সাহাবীগণকেও সিয়াম ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। (সহীহুল বুখারী ৪/২১৩/১৯৪৪, ফাতহুল বারী ৩/২১৩, সহীহ মুসলিম ২/৮৮/৭৮৪)
(২) সাহাবী এবং তাবি‘ঈগণের একটি দল বলেছেন যে, সফরের অবস্থায় সাওম ভেঙ্গে দেয়া ওয়াজিব। কেননা কুর’আনুল কারীমের মধ্যে রয়েছেঃ فعدة من ايام اخر অর্থাৎ তার জন্য অপর দিন হতে গণনা করবে। কিন্তু সঠিক উক্তি হচ্ছে জামহুরের উক্তি। তা হচ্ছে এই যে, তার জন্য স্বাধীনতা রয়েছে, সে রাখতেও পারে, আবার ইচ্ছা করলে নাও রাখতে পারে। কেননা রামাযান মাসে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফরে বের হতেন। তাঁদের কেউ কেউ সিয়াম করতেন আবার কেউ কেউ পালন করতেন না। এমতাবস্থায় সিয়াম পালনকারীগণ বে-সিয়াম পালনকারীগণের ওপর এবং সিয়াম না পালনকারীগণ সিয়াম পালনকারীগণের ওপর কোনরূপ দোষারোপ করতেন না। (সহীহুল বুখারী-৪/২১৯/১৯৪৭, ফাতহুল বারী ৩/২১৩, সহীহ মুসলিম-২/৯৮/৭৮৭) সুতরাং যদি সিয়াম ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব হতো তাহলে সিয়াম পালনকারীগণকে অবশ্যই সিয়াম পালন করতে নিষেধ করা হতো। এমনকি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সফর অবস্থায় সিয়াম পালন করার সাব্যস্ত আছে। সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে, আবূদ দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ ‘রামাযানুল মুবারাক মাসে কঠিন গরমের দিনে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এক সফরে ছিলাম। কঠিন গরমের কারণে আমরা মাথায় হাত রেখে রেখে চলছিলাম। আমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) ছাড়া আর কেউই সিয়াম পালনকারী ছিলেন না। (সহীহুল বুখারী-৪/২১৫/১৯৪৫, সহীহ মুসলিম-২/১০৮/৭৯০)
(৩) ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) সহ ‘আলিমগণের একটি ধারণা এই যে, সফরে সাওম বর্জন না করে সাওম রাখাই উত্তম। কেননা, সফরের অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাওম রাখা সাব্যস্ত আছে। একটি দলের ধারণা এই যে, সিয়াম পালন না করাই উত্তম। কেননা এ দ্বারা ‘রুখসাতের’ বা অবকাশের ওপর ‘আমল করা হয়। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, সফরে সিয়াম পালন করা সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেসিত হলে তিনি বলেনঃ
مَنْ أَفْطَرَ فحَسَن، وَمَنْ صَامَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ
‘যে ব্যক্তি সিয়াম ত্যাগ করে সে উত্তম কাজ করে এবং যে ত্যাগ করে না তার কোন পাপ নেই।’ (সহীহ মুসলিম ২/৭৯০১০৭) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ عَلَيْكُمْ بِرُخْصَةِ اللَّهِ التِي رَخَّصَ لَكُمْ
‘মহান আল্লাহ তোমাদের যে অবকাশ দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ করো।’ (সহীহ মুসলিম ২/৭৮৬)
তৃতীয় দলের উক্তি এই যে, সিয়াম পালন করা ও না করা দু’টিই সমান। তাঁদের দালীল হচ্ছে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নিম্নের এই হাদীসটিঃ হামযা ইবনে ‘আমর আসলামী (রাঃ) বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি প্রায়ই সিয়াম পালন করে থাকি। সুতরাং সফরেও কি আমার সিয়াম পালন করার অনুমতি রয়েছে? ‘ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ إِنْ شِئْتَ فَصُمْ، وَإِنْ شِئْتَ فَأَفْطِرْ
‘ইচ্ছা হলে পালন করো, না হলে ছেড়ে দাও।’ (সহীহুল বুখারী ৪/২১১/১৯৪১, সহীহ মুসলিম-২/১০৩/৭৮৯, ফাতহুল বারী ৪/২১১) কোন কোন লোকের উক্তি এই যে, যদি সিয়াম পালন করা কঠিন হয় তাহলে ছেড়ে দেয়াই উত্তম। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি লোককে দেখেন যে, তাকে ছায়া করা হয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ
مَا هَذَا؟ قَالُوا: صَائِمٌ، فَقَالَ: لَيْسَ مِنَ الْبَرِّ الصِّيَامُ فِي السَّفَرِ
‘ব্যাপার কি?’ জনগণ বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! লোকটি সিয়াম পালনকারী।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেনঃ ‘সফরে সিয়াম পালন করা সাওয়াবের কাজ নয়। (সহীহুল বুখারী-৪/২১৬/১৯৪৬, সহীহ মুসলিম-২/৯২/৭৮৬, ফাতহুল বারী ৪/২১৬, সুনান আবূ দাউদ-২/৩১৭/২৪০৭) এটা স্মরণীয় বিষয় যে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সফর অবস্থায়ও সিয়াম ছেড়ে দেয়া মাকরূহ মনে করে, তার জন্য সিয়াম ছেড়ে দেয়া জরুরী এবং সিয়াম পালন করা হারাম। ইবনে ‘উমার (রাঃ), জাবির (রাঃ) প্রমুখ মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ্র অবকাশকে গ্রহণ করে না। ‘আরাফাতের পর্বত সমান তার পাপ হবে।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ ২/৭১, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৩/১৬২)
(৪) চতুর্থ জিজ্ঞাস্য হলোঃ কাযা সিয়ামসমূহ ক্রমাগত পালন করা কি জরুরী, নাকি পৃথক পৃথকভাবে পালন করায়ও কোন দোষ নেই? কতোগুলো লোকের মাযহাব এই যে কাযা সাওমকে ‘হালী’ সাওমের মতোই পুরো করতে হবে। অন্য আরো একটি মাযহাব এই যে, ক্রমাগত সিয়াম পালন করা ওয়াজিব নয়। একসাথেও পালন করতে পারে, আবার পৃথক পৃথকভাবে অর্থাৎ মাঝে মাঝে ছেড়ে ছেড়েও সিয়াম পালন করতে পারে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মনীষীদেরও এই উক্তিই রয়েছে এবং দালীল প্রমাণাদি দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হচ্ছে। রামাযান মাসে ক্রমাগতভাবে এজন্যই সিয়াম পালন করতে হয় যে, এটা সম্পূর্ণ সিয়ামেরই মাস। আর রামাযান মাস শেষ হওয়ার পর শুধুমাত্র গণনা করে পুরা করতে হয়। তা যেকোন দিনই হতে পারে। এ জন্যই তো কাযার নির্দেশের পরে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের যে সহজ পন্থা বলে দিয়েছেন, তার এই নি‘য়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন। মুসনাদে আহমাদের মধ্যে একটি হাদীসে রয়েছে আবূ ‘উরওয়া (রাঃ) বলেনঃ একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম এমন সময়ে তিনি আগমন করেন এবং তার মাথা হতে পানির ফোঁটা টপটপ করে পড়ছিলো। মনে হচ্ছে যে সবে মাত্র তিনি ওযূ বা গোসল করে আসলেন। সালাত সমাপনান্তে জনগণ তাকে জিজ্ঞেস করতে আরম্ভ করেঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! অমুক কাজে কোন ক্ষতি আছে কি এবং অমুক কাজে কোন ক্ষতি আছে কি? অবশেষে তিনি বলেনঃ إِنَّ دِينَ اللَّهِ فِي يُسْرٍ
‘মহান আল্লাহ্র দ্বীন সহজের মধ্যেই রয়েছে।’ এটাই তিনবার বলেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসনাদে আহমাদ ৫/৬৯, তারীখুল কাবীর ১/১৯৬/৬৯, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১/৬২)
সহজ, কোন কিছু কঠিন করা নয়
একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
يَسِّرُوا، وَلَا تُعَسِّرُوا، وسكِّنُوا وَلَا تُنَفِّروا
‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না এবং সুখবর দাও, ঘৃণার উদ্রেক করো না।’ (সহীহুল বুখারী-১/১৯৬/৬৯, সহীহ মুসলিম ৩/৮/১৩৫৯, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৩১, ২০৯, ফাতহুল বারী ১০/৫৪১) অন্য হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইয়ামান পাঠানোর সময় বলেনঃ بَشِّرَا وَلَا تُنَفِّرَا، وَيَسِّرَا وَلَا تُعَسِّرَا، وَتَطَاوَعَا وَلَا تَخْتَلِفَا
‘তোমরা জনগণকে সুসংবাদ প্রদান করবে, ঘৃণা করবে না পরস্পর একমতের ওপর থাকবে, মতভেদ সৃষ্টি করবে না।’ (সহীহুল বুখারী-৬৬/১৮৮/৩০৩৮, সহীহ মুসলিম-৩/৭/১৩৫৯, ফাতহুল বারী ৭/৬৬০) সুনান ও মুসনাদসমূহে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
بُعِثْتُ بالحنيفيَّة السَّمْحَةِ
‘আমি সুদৃঢ় এবং নরম ও সহজ বিশিষ্ট ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছি।’ (সহীহুল বুখারী-১/১১৬, আদাবুল মুফরাদ ২৮৭, সহীহ মুসলিম-৩/৮/১৩৫৯, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৬৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৯২৪)
মুহজিন ইবনে আদরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে সালাতের অবস্থায় দেখেন। তিনি তাকে কিছুক্ষণ ধরে চিন্তা যুক্ত দৃষ্টির সাথে লক্ষ্য করতে থাকেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ তুমি কি মনে করো যে সে সত্য অন্তঃকরণ নিয়ে সালাত পড়ছে? বর্ণনাকারী বলেন আমি বলিঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সমস্ত মাদীনাবাসী অপেক্ষা সে বেশি সালাত আদায়কারী। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে শুনায়োনা। না জানি এটা তার ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়। তারপরে তিনি বলেনঃ إِنَّ اللَّهَ إِنَّمَا أَرَادَ بِهَذِهِ الْأُمَّةِ اليُسْر، وَلَمْ يَرِدْ بِهِمُ العُسْر
নিশ্চয় মহান আল্লাহ এই উম্মাতের ওপর সহজের ইচ্ছা করেছেন, তিনি তাদের ওপর কঠিনের ইচ্ছা করেন নি। (সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৬৩৫, মুসনাদে আহমাদ-৫/৩২) সুতরাং বর্ণিত আয়াতটির ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, রুগ্ন, মুসাফির প্রভৃতিকে অবকাশ দেয়া এবং তাদেরকে অপারগ মনে করার কারণ এই যে, মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা তাঁর বান্দাদের প্রতি এটাই যা তাদের জন্য সহজসাধ্য এবং তাদের পক্ষে যা দুঃসাধ্য তার ইচ্ছা মহান আল্লাহ পোষণ করেন না। আর ‘কাযার’ নির্দেশ হচ্ছে গণনা পুরা করার জন্য। সুতরাং তাঁর বান্দাদের উচিত তাঁর এই দয়া, নি‘য়ামত এবং সুপথ প্রদর্শনের জন্য মহান আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা।
‘ইবাদত করতে হবে মহান আল্লাহ্র যিকর করার সাথে সাথে
মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَ لِتُكَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰى مَا هَدٰىكُمْ﴾ সাথে তোমাদেরকে হিদায়াত দান করার জন্য মহান আল্লাহ্র মহানত্ম ঘোষণা করো। এর অর্থ হলো ‘ইবাদত বা সালাত আদায়ের পর তোমরা তাঁকে স্মরণ করো।
একই ধরনের বাণী রয়েছে নিম্নের আয়াতটিতেঃ
﴿فَاِذَا قَضَیْتُمْ مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللّٰهَ كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ اَوْ اَشَدَّ ذِكْرًا﴾
‘অনন্তর যখন তোমরা তোমাদের (হাজ্জের) অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করে ফেলো তখন যেরূপ তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ করতে তদ্রুপ মহান আল্লাহকে স্মরণ করো, বরং ততোপেক্ষা দৃঢ়তরভাবে স্মরণ করো।’ (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ২০০)
অন্য জায়গায় তিনি জুমু‘আর সালাত সম্বন্ধে বলেনঃ
﴿ فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِی الْاَرْضِ وَ ابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللّٰهِ وَ اذْكُرُوا اللّٰهَ كَثِیْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ﴾
‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং মহান আল্লাহ্র অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও মহান আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (৬২ নং সূরা জুমু‘আহ, আয়াত নং ১০)
অন্য স্থানে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ
﴿ فَاصْبِرْ عَلٰى مَا یَقُوْلُوْنَ وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ الْغُرُوْبِۚ۳۹ وَ مِنَ الَّیْلِ فَسَبِّحْهُ وَ اَدْبَارَ السُّجُوْدِ ﴾
আর তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের পূর্বে। তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো রাতের একাংশে এবং সালাতের পরেও। (৫০ নং সূরা কাহফ, আয়াত নং ৩৯-৪০)
এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণীয় পন্থা এই যে, প্রত্যেক ফরয সালাতের পর মহান আল্লাহ্র হামদ,তাসবীহ এবং তাকবীর পাঠ করতে হবে। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের সমাপ্তি শুধুমাত্র তাঁর ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির মাধ্যমেই জানতে পারতাম। (সহীহুল বুখারী হাঃ ৮৪২) এই আয়াতটি এ বিষয়ের দালীল যে, ‘ঈদুল ফিতরেও তাকবীর পাঠ করা উচিত।
তারপর বলা হচ্ছে যে, ‘যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ্র নির্দেশাবলী পালন করে তাঁর ফরযগুলো আদায় করে, তাঁর নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থেকে এবং তাঁর সীমারেখার হিফাযত করে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাও।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings