Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 107
Saheeh International
Do you not know that to Allah belongs the dominion of the heavens and the earth and [that] you have not besides Allah any protector or any helper?
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
১০৬-১০৭ নং আয়াতের তাফসীর
‘নখ’ এর মূলতত্ত্বঃ
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, নস’ এর অর্থ হচ্ছে পরিবর্তন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে সরিয়ে দেয়া, যা লিখার সময় (কখনও) অবশিষ্ট থাকে, কিন্তু হুকুম পরিবর্তন হয়ে যায়। হযরত ইবনে মাসউদের (রাঃ) ছাত্র হযরত আবুল আলিয়া (রঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ বিন কাব কার্যীও (রঃ) এ রকমই বর্ণনা করেছেন। যহ্হাক (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে ভুলিয়ে দেয়া। আতা (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ ছেড়ে দেয়া। সুদী (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ উঠিয়ে নেয়া। যেমন নিম্নের আয়াতটিঃ (আরবি) ব্যভিচারী বৃদ্ধ ব্যভিচারিণী বৃদ্ধাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা।' আরও একটি আয়াতঃ (আরবি) অর্থাৎ যদি বানী আদমের জন্যে স্বর্ণের দুইটি উপত্যকা হয় তবে সে অবশ্যই তৃতীয়টি অনুসন্ধান করবে।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা আয়াতের হুকুম পরিবর্তন করে থাকেন। যেমন হালালকে হারাম, হারামকে হালাল, জায়েযকে নাজায়েয এবং নাজায়েযকে জায়েয ইত্যাদি নির্দেশ ও নিষেধাজ্ঞা, বাধা ও অনুমতি এবং বৈধ ও অবৈধ কাজে নস’ হয়ে থাকে। তবে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে বা যে ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে তাতে রদবদল এবং নাসিখ ও মানসূখ হয় না। নস’ এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে নকল করা। যেমন একটি পুস্তক থেকে আর একটি পুস্তক নকল করা হয়। এরকমই এখানেও যেহেতু একটি নির্দেশের পরিবর্তে আর একটি নির্দেশ দেয়া হয় এ জন্যে একে নসখ বলে। ওটা হয় নির্দেশের পরিবর্তন হোক বা শব্দের পরিবর্তন হোক।
‘নস’ এর মূলতত্ত্বের উপর মূলনীতির পণ্ডিতগণের অভিমত
এ জিজ্ঞাস্য বিষয়ে ধর্মীয় মূলনীতির পণ্ডিতগণের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রূপ হলেও অর্থ হিসেবে সবগুলো প্রায় একই। নস’ এর অর্থ হচ্ছে-কোন শরঈ নির্দেশ পরবর্তী দলীলের ভিত্তিতে সরে যাওয়া। কখনও সহজের পরিবর্তে কঠিন এবং কখনও কঠিনের পরিবর্তে সহজ হয়, আবার কখনও বা কোন পরিবর্তনই হয় না। তাবরানীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে একটি হাদীস আছে যে, দুই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হতে একটি সূরা মুখস্থ করেছিলেন। সূরাটি তারা পড়তেই থাকেন। একদা রাত্রির নামাযে সূরাটি তারা পড়ার ইচ্ছে করেন কিন্তু কোনক্রমেই স্মরণ করতে পারেন না। হতবুদ্ধি হয়ে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হন এবং ওটা বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাদেরকে বলেনঃ “এটা মানসূখ হয়ে গেছে এবং এর পরিবর্তে উত্তম দেয়া হয়েছে। তোমাদের অন্তর হতে ওটা বের করে নেয়া হয়েছে। দুঃখ করো না, নিশ্চিন্ত থাক।'
হযরত যুহরী (রঃ) (আরবি) পেশ এর সঙ্গে পড়তেন। এর, একজন বর্ণনাকারী সুলাইমান বিন রাকিম দুর্বল। আবু বকর আম্বারীও (রঃ) অন্য সনদে মারফুরূপে এটাকে বর্ণনা করেছেন, যেমন কুরতুবীর (রঃ) বর্ণনায় রয়েছে (আরবি) কে (আরবি) ও (আরবি) পড়া হয়েছে (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে পিছনে সরিয়ে দেয়া। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর তাফসীরে বর্ণনা করেনঃ অর্থাৎ আমি ওকে ছেড়ে দেই, মানসূখ করি না। হযরত ইবনে মাসউদের (রাঃ) ছাত্র বলেনঃ ‘অর্থাৎ আমি ওর শব্দ ঠিক রেখে হুকুম পরিবর্তন করে দেই।' আবৃদ বিন উমাইর (রঃ), মুজাহিদ (রঃ) এবং আতা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে অর্থাৎ আমি ওকে পিছনে সরিয়ে দেই। আতিয়া আওফী (রঃ) বলেনঃ ‘অর্থাৎ মানসূখ করি।' সুদ্দী (রঃ) এবং রাবী' বিন আনাসও (রঃ) এটাই বলেন। যহহাক (রঃ) বলেনঃ “অর্থাৎ নাসিখকে মানসূখের পিছনে রাখি। আবুল আলিয়া (রঃ) বলেনঃ ‘অর্থাৎ আমার নিকট ওটা টেনে নেই।' হযরত উমার (রাঃ) খুত্বায় পড়েছেন এবং এর অর্থ ‘পিছনে হওয়া বর্ণনা করেছেন (আরবি) পড়লে ওর ভাবার্থ হবে ‘আমি ওটা ভুলিয়ে দেই। আল্লাহ তা'আলা যে হুকুম উঠিয়ে নিতে ইচ্ছে করতেন ওটা নবী (সঃ) কে ভুলিয়ে দিতেন। এভাবেই ঐ আয়াতটি উঠে। যেতে।
হযরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) (আরবি) পড়তেন। এতে তাঁকে হযরত কাসিম বিন আবদুল্লাহ (রঃ) বলেন যে, হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়্যাব (রঃ) তো একে (আরবি) পড়তেন। তখন তিনি বলেন যে, সাঈদের (রঃ) উপর কিংবা তাঁর বংশের উপর কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ হয়নি। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! আমি তোমাকে অতি সত্বরই পড়িয়ে দিবো, অতঃপর তুমি ভুলবে না। (৮৭:৬) আরও বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ যখন তুমি ভুলে যাবে তখন তোমার প্রভুকে স্মরণ কর।' (১৮:২৪)
হযরত উমারের (রাঃ) ঘোষণা রয়েছেঃ “হযরত আলী (রাঃ) উত্তম ফায়সালাকারী এবং হযরত উবাই (রাঃ) সবচেয়ে বেশী কুরআনের পাঠক। আমরা হযরত উবাই (রাঃ)-এর কথা ছেড়ে দেই। কেননা, তিনি বলেন, 'আমি যা আল্লাহর রাসূলের (সঃ) মুখে শুনেছি তা ছাড়বো না, অথচ আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি যা মানসূখ করি বা ভুলিয়ে দেই, তা হতে উত্তম বা তারই মত আনয়ন করি।' (সহীহ বুখারী ও মুসনাদ-ই-আহমাদ)।
‘তা হতে উত্তম হয় অর্থাৎ বান্দাদের জন্যে সহজ ও তাদের আরাম হিসেবে, কিংবা ‘তারই মত হয়। কিন্তু আল্লাহ পাকের দূরদর্শিতা তার পরেরটাতেই রয়েছে। সৃষ্টজীবের হেরফেরকারী এবং সৃষ্টি ও হুকুমের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। তিনি যাকে যেভাবে চান সেভাবেই গঠন করেন। তিনি যাকে চান ভাগ্যবান করেন এবং যাকে চান হতভাগ্য করেন। যাকে চান সুস্থতা প্রদান করেন এবং যাকে চান রোগাক্রান্ত করেন। যাকে চান ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যাকে চান দুর্ভাগা করেন। বান্দাদের মধ্যে তিনি যে হুকুম জারী করতে চান। তাই জারী করেন। যা চান হারাম করেন, যা চান হালাল করেন, যা চান অনুমতি দেন এবং যা চান নিষেধ করেন। তিনি ব্যাপক বিচারপতি। তিনি যা চান সেই আহকামই জারী করেন,তার হুকুম কেউ অগ্রাহ্য করতে পারেনা। তিনি যা চান তাই করেন। কেউই তাকে বাধা দান করতে পারে না। তিনি বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন এবং দেখেন যে, তারা নবী ও রাসূলদের কিরূপ অনুসারী হয়। তিনি কোন যৌক্তিকতার কারণে নির্দেশ দেন, আর কোন যৌক্তিকতার কারণে ঐ হুকুমকেই সরিয়ে দেন। তখন পরীক্ষা হয়ে যায়। ভাল লোকেরা তখনও আনুগত্যে প্রস্তুত ছিল এবং এখনও আছে কিন্তু যাদের অন্তর খারাপ, তারা তখন সমালোচনা শুরু করে দেয় এবং নাক মুখ চড়িয়ে থাকে। অথচ সমস্ত সৃষ্টজীবের সৃষ্টিকর্তার সমস্ত কথাই মেনে নেয়া উচিত এবং সর্বাবস্থায়ই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অনুসরণ করা উচিত। তিনি যা বলেন তাই সত্য জেনে পালন করা এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। এস্থলেও ইয়াহুদীদের কথাকে চরমভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং তাদের কুফরীর বর্ণনা রয়েছে। তারা নসখ’কে স্বীকার করতো না। কেউ কেউ বলেন যে, বিবেক অনুসারেও এতে অসুবিধে রয়েছে। আবার কেউ কেউ শরীয়তের দৃষ্টিতে একে অসুবিধাজনক মনে করে থাকেন। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)কে সম্বোধন করা হলেও প্রকৃত পক্ষে এটা ইয়াহূদীদের কথার প্রতিবাদেই বলা হয়েছে। তারা ইঞ্জীল ও কুরআনকে মানতো না। কারণ এই যে, এ দুটির মধ্যে তাওরাতের কতকগুলো হুকুম পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এই একই কারণে তারা এই নবীগণকেও স্বীকার করতো না। এটা শুধু অবাধ্যতা ও অহংকারই বটে। নচেৎ বিবেক হিসেবে তা নসখ’ অসম্ভব নয়। কেননা, মহান আল্লাহ স্বীয় কার্যে সর্বাধিকারী। তিনি যা চান ও যখন চান সৃষ্টি করে থাকেন। যা চান, যেভাবে চান সে ভাবে রাখেন। এভাবেই যা চান এবং যখন চান হুকুম করে দেন। এটা স্পষ্ট কথা যে, তার হুকুমের উপর কারও হুকুম বের হতে পারে না। এভাবেই শরীয়তের ভিত্তিতেও এটা প্রমাণিত বিষয়। পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ ও শরীয়তসমূহে এটা বিদ্যমান রয়েছে।
হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তানেরা পরস্পর ভাই বোন হতো। কিন্তু তাদের মধ্যে বিয়ে বৈধ ছিল। অতঃপর পরবর্তী যুগে এটা হারাম করে দেয়া হয়েছে। হযরত নূহ (আঃ) যখন নৌকায় উঠছেন তখন সমুদয় প্রাণীর গোশত বৈধ রাখা হয়েছে। কিন্তু পরে কতকগুলোর গোশত অবৈধ ঘোষণা করা হয়। দুই বোনকে এক সঙ্গে বিয়ে করা হযরত ইসরাঈল (আঃ) এবং তাঁর সন্তানদের জন্যে বৈধ ছিল। অতঃপর তাওরাতে এবং তার পরেও অবৈধ করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীমকে তার পুত্র ইসমাঈলের (আঃ) কুরবানীর নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু কুরবানীর পূর্বেই এই হুকুম মানসূখ করে দেয়া হয়। বানী ইসরাঈলকে হুকুম দেয়া হয়েছিল যে, যারা বাছুর পূজা করেছিল তাদেরকে যেন তারা হত্যা করে; অথচ অনেক বাকি থাকতেই এ হুকুম উঠিয়ে নেয়া হয়। এরকম আরও বহু ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে। আর স্বয়ং ইয়াহূদীরাও ওটা স্বীকার করে। কিন্তু তথাপিও তারা কুরআন মাজীদকে ও শেষ নবীকে (সঃ) এ বলে মানছে না যে, আল্লাহর কালামের পরিবর্তন অপরিহার্য হচ্ছে এবং এটা অসম্ভব। এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা নখের বৈধতা বর্ণনা করতঃ ঐ অভিশপ্ত দলের দাবী খণ্ডন করেছেন। সূরা-ই-আলে-ইমরানের মধ্যেও-যার প্রারম্ভে বানী ইসরাঈলকে সম্বোধন করা হয়েছে, নসখ’ সংঘটিত হওয়ার বর্ণনা বিদ্যমান। রয়েছে।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ প্রত্যেক খাদ্য বানী ইসরাঈলের উপর হালাল ছিল, কিন্তু ইসরাঈল (আঃ) তার উপর যে জিনিস হারাম করে নিয়েছিল (ওটা তাদের উপর ও হারাম করা হয়েছে)। এর বিস্তারিত তাফসীর ইনশাআল্লাহ ওর স্থানে আসবে। সব মুসলমানই এতে একমত যে, আল্লাহর আহকামের মধ্যে নখ’ হওয়া বৈধ, বরং সংঘটিত হয়ে গেছে এবং ওতেই আল্লাহ তা'আলার পূর্ণ নৈপূণ্য প্রকাশ পেয়েছে। মুফাসির আবু মুসলিম ইস্পাহানী লিখেছেন যে, কুরআনের মধ্যে নসখ’ সংঘটিত হয়নি। কিন্তু তার এই কথা দুর্বল। কুরআন মাজীদের যেখানে যেখানে নসখ’ বিদ্যমান রয়েছে ওর উত্তর দিতে গিয়ে যদিও তিনি বহু পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু সবই বিফল হয়েছে। যে স্ত্রী লোকের স্বামী মারা যায় তার অন্যত্র বিয়ে সিদ্ধ হওয়ার জন্যে পূর্বে সময়কাল ছিল এক বছর। কিন্তু পরে এর জন্যে সময় করা হয়েছে চার মাস দশ দিন। এ দুটো আয়াতই কুরআন পাকের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।
পূর্বে কিবলাহ ছিল বাইতুল মুকাদ্দাস। কিন্তু পরে পবিত্র কাবাকে কিবলাহ করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতটি স্পষ্ট এবং প্রথম আয়াতটিও আনুষঙ্গিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। পূর্বে মুসলমানদের উপর এই নির্দেশ ছিল যে,তারা এক একজন মুসলমান দশ জন কাফিরের মুকাবিলা করবে এবং পিছনে সরে আসবে না; কিন্তু পরে এ হুকুম মানসূখ হয়ে গিয়ে একজন মুসলমানকে দু’জন কাফিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং দুটি আয়াতই আল্লাহ তা'আলার কালামে বিদ্যমান রয়েছে।
পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সঙ্গে আলাপ করার আগে কিছু সাদকা করার নির্দেশ ছিল। পরে এটা মানসূখ করে দেয়া হয়। আর এ দুটি আয়াতই কুরআন কারীমের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহই সবচেয়ে বেশী জানেন।'
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings