Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 103
Saheeh International
And if they had believed and feared Allah, then the reward from Allah would have been [far] better, if they only knew.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১০২ ও ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, শয়তানদের হাতে যেসব জাদু ছিল সুলাইমান (আঃ) সেগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের থেকে নিয়ে তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখতেন। শয়তানরা সেখানে যেতে সমর্থ হত না। মানুষের নিকট এটা প্রকাশ পেয়ে গেলে। তখন শয়তান বলল: তোমরা কি জান, সুলাইমান কিসের দ্বারা এ রাজ্য পরিচালনা করে? তারা বলল হ্যাঁ, তা হল যা তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে। মানুষ তা বের করল এবং তার ওপর আমল শুরু করল। হিজাজবাসী বলল: সুলাইমান এ জাদুর দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করত। তখন সুলাইমান (আঃ)-কে জাদুর অপবাদ থেকে মুক্ত করে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াত নাযিল করেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যয় মুজাহিদ বলেন, শয়তানরা আকাশে ওয়াহী শুনত। যদি একটা ওয়াহী শুনত তাহলে তার সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা মিশ্রিত করে দিত। সুলাইমান (আঃ) বাহিনী প্রেরণ করলেন তাদের নিকট যা আছে নিয়ে আসার জন্য। তা নিয়ে আসলে সুলাইমান (আঃ) সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখেন। সুলাইমান (আঃ) মারা গেলে শয়তানরা তা বের করে মানুষকে জাদু শিক্ষা দেয়।
হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জাদু সুলাইমান (আঃ)-এর পূর্ব থেকেই ছিল। কেননা মূসা (আঃ)-এর যুগে অনেক জাদুকর ছিল। আর মূসা (আঃ) সুলাইমানের পূর্বের ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالُوْٓا اَرْجِھْ وَاَخَاھُ وَاَرْسِلْ فِی الْمَدَا۬ئِنِ حٰشِرِیْنَ﮾ﺫ یَاْتُوْکَ بِکُلِّ سٰحِرٍ عَلِیْمٍ﮿ وَجَا۬ئَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوْٓا اِنَّ لَنَا لَاَجْرًا اِنْ کُنَّا نَحْنُ الْغٰلِبِیْنَ)
“তারা বলল: ‘তাঁকে ও তাঁর ভ্রাতাকে কিঞ্চিত অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে (জাদুকর) সংগ্রাহকারীদেরকে পাঠাও, ‘যেন তারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে।’জাদুকরেরা ফির‘আউনের নিকট এসে বলল: ‘আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’” (সূরা বাকারাহ ২:২৪৬, ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অর্থাৎ ঐ ইয়াহূদীরা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং তাঁর অঙ্গীকারের কোন পরোয়া তো করলই না, উপরন্তু শয়তানের অনুসরণ করে তারা জাদুর ওপর আমল করতে লাগল। শুধু তাই নয়; বরং তারা এ দাবিও করল যে, সুলাইমান (আঃ) কোন নাবী ছিলেন না, তিনি একজন জাদুকর ছিলেন। জাদুর মাধ্যমে তিনি রাজত্ব্ করতেন। মহান আল্লাহ বলেন: সুলাইমান (আঃ) জাদুর মত নিকৃষ্ট কার্যকলাপ করতেন না। কারণ তা কুফরী কাজ, বরং শয়তান মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরী করেছে।
জাদুর শাব্দিক অর্থ হলো: যা গোপন থাকে এবং যার কারণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। পরিভাষায় জাদু বলা হয়: এমন সব মন্ত্র, ঝাড়-ফুঁক, পরিষেধক ও ধোঁয়া সেবনের সমষ্টি যার কু-প্রভাবে কেউ অসুস্থ হয়, নিহত হয় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। জাদুকে সিহ্র (السحر) বলে নামকরণের কারণ হলো জাদুকর অত্যন্ত গোপন ও সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে, বিভিন্ন মন্ত্র ও ঝাড়-ফুঁক দিয়ে অথবা এমন বন্ধন দেয় যা সূক্ষ্মভাবে অন্তর ও শরীরে প্রভাব ফেলে। কখনো এই আছর (প্রভাব) অসুস্থ করে ফেলে, কখনো হত্যা করে আবার কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে।
জাদুর অন্তর্ভুক্ত হলো الصرف অর্থাৎ স্ত্রীকে স্বামী বিমুখ করা ও স্বামীকে তার স্ত্রী বিমুখ করা। জাদুর মাধ্যমে স্বামীর কাছে স্ত্রীকে এমনকে তুলে ধরা যে, যখনই স্বামী স্ত্রীর কাছে আসে তখনই তাকে খারাপ আকৃতিতে দেখে ফলে স্ত্রী থেকে দূরে সরে যায়।
আর العطف হলো الصرف এর বিপরীত। অর্থাৎ কোন মেয়ের প্রতি কোন পুরুষকে আসক্ত করাতে এমনভাবে জাদু করা যে, সে পুরুষ ঐ মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তার কাছে খুব রূপবতী মনে হয়, যদিও সে মেয়ে কুৎসিত কদাকার হয়। অনুরূপভাবে যদি কোন মহিলাকে এমন জাদুগ্রস্ত করা হয় যে, সে তার স্বামীকে উত্তম ও সুন্দর মানুষ হিসেবে প্রত্যক্ষ করছে যদিও সে স্বামী অপছন্দনীয় হয়। জাদুর অন্তর্ভুক্ত আরো হলো التولة (তাওলা)। তাওলা বলা হয় এমন কিছুকে যা জাদুকরেরা তৈরি করে স্বামী অথবা স্ত্রীকে প্রদান করে- এ বিশ্বাস করে যে, এটা সাথে থাকার কারণে স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি আর স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে।
জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং জাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়া জাদুর কোন প্রভাব পড়বে না।
জাদু শির্কে আকবার ও তাওহীদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এর বাস্তবতাকে কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করতে হলে শয়তানের নৈকট্য লাভ করতে হয়। শয়তানের নৈকট্য লাভ ছাড়া কোন জাদুকরই জাদু বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। যে ব্যক্তি জাদু করবে, অথবা জাদু বিদ্যা শিখবে বা অন্যকে শেখাবে অথবা এ সকল কাজ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে বা সন্তুষ্ট থাকবে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কেননা কুফরী কাজে সন্তুষ্ট থাকা আর কাজ করা উভয়ই সমান। এসব ইয়াহূদীগণ জেনে-শুনেই তা গ্রহণ করেছে। তাই যে ব্যক্তি এ বিদ্যা অর্জন করতঃ সে অনুযায়ী আমল করবে তার জন্য কিয়ামাতের দিন জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَه۫ فِي الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ)
“নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, যে ব্যক্তি এ কাজ অবলম্বন করবে, তার জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই।”(সূরা বাকারাহ ২:১০২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ " قِيلَ: وَمَا هِيَ يَا رَسُولَ اللّٰهِ ؟ قَالَ: " الشِّرْكُ بِاللّٰهِ وَالسِّحْرُ
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে দূরে থাক। (সাহাবীগণ) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
অতএব জাদুবিদ্যা সম্পূর্ণ কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। জাদুকরের শাস্তি হল- তরবারী দ্বারা গর্দান উড়িয়ে দেয়া। (তিরমিযী হা: ১৪৬ আলবানী দুর্বল বলেছেন)
উমার (রাঃ) তাঁর গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন:
اقتلوا كل ساحر وساحرة
প্রত্যেক জাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৫৬)
এসব ইয়াহূদী যদি জাদু না শিখে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে ঈমান আনত তাহলে এটাই ছিল তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
(بِبَابِلَ ھَارُوْتَ وَمَارُوْتَ)
‘বাবেল শহরে হারূত-মারূত’অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক সুলাইমান (আঃ)-কে নাবীদের মধ্যে শামিল ও প্রশংসা করায় ইয়াহূদীরা বলতে লাগল, আশ্চর্যের কথা; মুহাম্মাদ সুলাইমানকে নাবীদের মধ্যে শামিল করে হক ও বাতিলের মধ্যে সংমিশ্রণ করছে। অথচ তিনি ছিলেন একজন জাদুকর। কেননা স্বাভাবিকভাবে মানুষ কি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে চলতে পারে? (ইবনু জারীর)।
এক্ষণে সুলাইমান (আঃ) যে সত্য নাবী, তিনি যে জাদুকর নন, জনগণকে তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং নাবীগণের মু‘জিযাহ ও শয়তানের জাদুর মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা হারূত ও মারূত নামে দু’জন ফেরেশতাকে ‘বাবেল’শহরে মানুষের বেশে পাঠিয়ে দেন। ‘বাবেল’হল ইরাকের একটি প্রাচীন নগরী, যা ঐসময় জাদু বিদ্যার কেন্দ্র ছিল। ফেরেশস্তাদ্বয় সেখানে এসে জাদুর স্বরূপ ও ভেল্কিবাজি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকেন এবং জাদুকরদের অনুসরণ থেকে বিরত হয়ে যেন সবাই সুলাইমানের নবুওয়াতের অনুসারী হয়, সেকথা বলতে লাগলেন।
বস্তুতঃ সুলাইমান (আঃ)-এর নবুওয়াতের সমর্থনেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়েকে বাবেল শহরে পাঠিয়েছিলেন।
সুলাইমান (আঃ)-কে জিন, বায়ু, পক্ষীকুল ও জীবজন্তুর ওপরে একচ্ছত্র ক্ষমতা দান করা ছিল আল্লাহ তা‘আলার এক মহা পরীক্ষা। শয়তান ও তাদের অনুসারী দুষ্ট লোকেরা সর্বদা এটাকে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দেখেছে এবং য্ুিক্তবাদের ধূম্রজালে পড়ে পথ হারিয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলার নাবী সুলাইমান (আঃ) সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমরাও তার নবুওয়াতের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন নাবী জাদু শেখেননি এবং শিক্ষাও দেননি।
২. জাদুবিদ্যা শিক্ষা ও জাদু করা শয়তানী ও কুফরী কাজ।
৩. জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাস্তব প্রমাণ।
৪. জাদুর পরিচয় ও তার অন্তর্ভুক্ত কিছু বিষয় জানা গেল।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings