Surah At Tawbah Tafseer
Tafseer of At-Tawbah : 25
Saheeh International
Allah has already given you victory in many regions and [even] on the day of Hunayn, when your great number pleased you, but it did not avail you at all, and the earth was confining for you with its vastness; then you turned back, fleeing.
Tafsir Abu Bakar Zakaria
Tafseer 'Tafsir Abu Bakar Zakaria' (BN)
[১] এ আয়াতের শুরুতে আল্লাহর সেই দয়া ও দানের উল্লেখ রয়েছে যা প্রতি ক্ষেত্রে মুসলিমরা লাভ করে। বলা হয়েছেঃ “আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক ক্ষেত্রে " এরপর বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় হুনাইন যুদ্ধের কথা। কারণ, সে যুদ্ধে এমনসব ধারণাতীত অদ্ভুত ঘটনার প্রকাশ ঘটেছে, যেগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মানুষের ঈমানী শক্তি প্রবল ও কর্মপ্রেরণা বৃদ্ধি পায়।
‘হুনাইন’ মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী একটি জায়গার নাম। যা মক্কা শরীফ থেকে পূর্ব দিকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি অনেকটা আরাফার দিকে। বর্তমানে এ স্থানকে আশ-শারায়ে' বলা হয়। [আতেক গাইস আল-বিলাদী, মু’জামুল মা'আলিমিল জুগরাফিয়্যাহ ১০৭] অষ্টম হিজরীর রমযান মাসে যখন মক্কা বিজিত হয় আর মক্কার কুরাইশগণ অস্ত্র সমর্পণ করে, তখন আরবের বিখ্যাত ধনী ও যুদ্ধবাজ হাওয়াযেন গোত্র-যার একটি শাখা তায়েফের বনূ-সকীফ নামে পরিচিত, তাদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফলে তারা একত্রিত হয়ে আশংকা প্রকাশ করতে থাকে যে, মক্কা বিজয়ের পর মুসলিমদের বিপুল শক্তি সঞ্চিত হয়েছে, তখন পরবর্তী আক্রমণের লক্ষ্য হবে তায়েফ। তাই তাদের আগে আমাদের আক্রমণ পরিচালনা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পরামর্শ মত এ উদ্দেশ্যে হাওয়াযেন গোত্র মক্কা থেকে তায়েফ পর্যন্ত বিস্তৃত শাখা-গোত্রগুলোকে একত্রিত করে। আর বিশাল সে গোত্রের প্রায় সবাই যুদ্ধের জন্য সমবেত হয়।
এ অভিযানের নেতা ছিলেন মালেক ইবন আউফ। অবশ্য পরে তিনি মুসলিম হয়ে ইসলামের অন্যতম ঝাণ্ডাবাহী হন। তবে প্রথমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার তীব্র প্রেরণা ছিল তার মনে। তাই স্বগোত্রের সংখ্যাগুরু অংশ তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ করে। কিন্তু এ গোত্রের অপর দুটি ছোট শাখা- বনু-কাব ও বনু-কেলাব মতানৈক্য প্রকাশ করে। আল্লাহ তাদের কিছুদিব্যদৃষ্টি দান করেছিলেন। তারা বলতে থাকে, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমগ্র দুনিয়াও যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়, তথাপি তিনি সকলের উপর জয়ী হবেন, আমরা আল্লাহর শক্তির সাথে যুদ্ধ করতে পারব না।
এই দুই গোত্র ছাড়া বাকী সবাই যুদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। সেনানায়ক মালেক ইবন আউফ পূর্ণ শক্তির সাথে রণাঙ্গনে তাদের সুদৃঢ় রাখার জন্য এ কৌশল অবলম্বন করেন যে, যুদ্ধেক্ষেত্রে সকলের পরিবার-পরিজনও উপস্থিত থাকবে এবং প্রত্যেকের জীবিকার প্রধান সহায় পশুপালও সাথে রাখতে হবে। উদ্দেশ্য, কেউ যেন পরিবার-পরিজন ও সহায়-সম্পদের টানে রণক্ষেত্র ত্যাগ না করে। তাদের সংখ্যা সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের বিভিন্ন মত রয়েছে। হাফেযুল-হাদীস আল্লামা ইবন হাজার রাহিমাহুল্লাহ চব্বিশ বা আটাশ হাজারের সংখ্যাকে সঠিক মনে করেন। আর কেউ কেউ বলেনঃ এদের সংখ্যা চার হাজার ছিল। তবে এও হতে পারে যে, পরিবার-পরিজনসহ ছিল তারা চব্বিশ বা আটাশ হাজার, আর যোদ্ধা ছিল চার হাজার।
মোটকথা, এদের দূরভিসন্ধি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা শরীফেই অবহিত হন এবং তিনিও এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সংকল্প নেন। মক্কায় আত্তাব ইবন আসাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আমীর নিয়োগ করেন এবং মুআয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লোকদের ইসলামী তা’লীম দানের জন্য তার সাথে রাখেন। তারপর মক্কার কুরাইশদের থেকে অস্ত্র-শস্ত্র ধারস্বরূপ সংগ্রহ করেন। ইমাম যুহরীর বর্ণনামতে চৌদ্দ হাজার মুসলিম সেনা নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। এতে ছিলেন মদীনার বার হাজার আনসার যারা মক্কা বিজয়ের জন্য তার সাথে এসেছিলেন। বাকী দু'হাজার ছিলেন আশপাশের অধিবাসী, যারা মক্কা বিজয়ের দিন মুসলিম হয়েছিলেন এবং যাদের বলা হত ‘তোলাকা’ অর্থাৎ সাধারণ ক্ষমায় মুক্তিপ্রাপ্ত। ৮ম হিজরীর ৬ই শাওয়াল শুক্রবার রাসূলের নেতৃত্বে মুসলিম সেনাদলের যুদ্ধযাত্রা শুরু হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘ইনশাআল্লাহ, আগামীকাল আমাদের অবস্থান হবে খায়ফে বনী-কেনানার সে স্থানে, যেখানে মক্কার কুরাইশগণ ইতিপূর্বে মুসলিমদের সাথে সামাজিক বয়কটের চুক্তিপত্র সই করেছিল। চৌদ্দ হাজারের এ বিরাট সেনাদল জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ে তাদের সাথে মক্কার অসংখ্য নারী-পুরুষও যুদ্ধের দৃশ্য উপভোগের জন্যে বের হয়ে আসে। তাদের সাধারণ মনোভাব ছিল, এ যুদ্ধে মুসলিম সেনারা হেরে গেলে আমাদের পক্ষে প্রতিশোধ নেয়ার একটা ভাল সুযোগ হবে। আর যদি তারা জয়ী হয়ে যায় তা হলেও আমাদের ক্ষতি নেই। সে যা হোক, মুসলিম সেনা দল হুনাইন নামক স্থানে শিবির স্থাপন করে। এ সময় সুহাইল ইবন হানযালা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেনঃ জনৈক অশ্বারোহী এসে শক্রদলের সংবাদ দিয়েছে যে, তারা পরিবার-পরিজন ও সহায়-সম্পদসহ রণাঙ্গনে জমায়েত হয়েছে। স্মিতহাস্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চিন্তা করো না, ওদের সবকিছু গনীমতের মাল হিসাবে মুসলিমদের হস্তগত হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনে অবস্থান নিয়ে আব্দুল্লাহ ইবন হাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গোয়েন্দারূপে পাঠান। তিনি দুদিন তাদের সাথে অবস্থান করে তাদের সকল যুদ্ধ প্রস্তুতি অবলোকন করেন। এক সময় শক্ৰ সেনানায়ক মালেক ইবনে আউফকে স্বীয় লোকদের একথা বলতে শোনেনঃ মুহাম্মাদ এখনো কোন সাহসী যুদ্ধবাজদের পাল্লায় পড়েনি। মক্কার নিরীহ কুরাইশদের দমন করে তিনি বেশ দাম্ভিক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারবে কার সাথে তার মোকাবেলা। আমরা তার সকল দম্ভ চূর্ণ করে দেব। তোমরা কাল ভোরেই রণাঙ্গনে এরূপ সারিবদ্ধ হয়ে দাড়াবে যে, প্রত্যেকের পেছনে তার স্ত্রী-পরিজন ও মালামাল উপস্থিত থাকবে। তরবারীর কোষ ভেঙ্গে ফেলবে এবং সকলে একসাথে আক্রমণ করবে। বস্তুতঃ কাফেরদের ছিল প্রচুর যুদ্ধ অভিজ্ঞতা। তাই তারা বিভিন্ন ঘাটিতে কয়েকটি সেনাদল লুকায়িত রেখে দেয়। এ হল শক্রদের রণপ্রস্তুতির একটি চিত্র। কিন্তু অন্যদিকে এক হিসাবে এটি ছিল মুসলিমদের প্রথম যুদ্ধ যাতে অংশ নিয়েছে চৌদ্দ হাজারের এক বিরাট বাহিনী। এ ছাড়া অস্ত্রশস্ত্রও ছিল আগের তুলনায় প্রচুর। তাই কারো কারো মন থেকে বের হয়ে আসেঃ আজকের জয় অনিবার্য, পরাজয় অসম্ভব। যুদ্ধের প্রথম ধাক্কাতেই শত্রুদল পালাতে বাধ্য হবে। কিন্তু মুসলিমরা আল্লাহর উপর ভরসা না করে জনবলের উপর তৃপ্ত থাকবে এটা আল্লাহর পছন্দ ছিল না। এটাই হুনাইনের যুদ্ধে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে।
হাওয়াযেন গোত্র পূর্ব পরিকল্পনা মতে মুসলিমদের প্রতি সম্মিলিত আক্রমণ পরিচালনা করে। একই সাথে বিভিন্ন ঘাঁটিতে লুকায়িত কাফের সেনারা চতুর্দিক থেকে মুসলিমদের ঘিরে ফেলে। এ সময় আবার ধূলি-ঝড় উঠে সর্বত্র অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলে। এতে সাহাবাগণের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হলো না। ফলে তারা পিছু হটতে শুরু করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনের দিকে বাড়তে থাকেন। তার সাথে ছিলেন অল্প সংখ্যক সাহাবী। এরাও চাচ্ছিলেন যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্রসর না হন। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেনঃ উচ্চঃস্বরে ডাক দাও, বৃক্ষের নীচে জিহাদের বাই’আত গ্রহণকারী সাহাবীগণ কোথায়? সূরা বাক্বারাওয়ালারা কোথায়? জান কুরবানের প্রতিশ্রুতিদানকারী আনসারগণই বা কোথায়? সাবই ফিরে এস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানেই আছেন।
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ আওয়ায রণাঙ্গনকে প্রকম্পিত করে তোলে। পলায়নরত সাহাবীগণ ফিরে দাঁড়ান এবং প্রবল সাহসিকতার সাথে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে চলেন। ঠিক এ সময় আল্লাহ এদের সাহায্যে ফেরেশতাদল পাঠিয়ে দেন। এরপর যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। কাফের সেনানায়ক মালেক ইবন আউফ পরিবার-পরিজন ও মালামালের মায়া ত্যাগ করে পালিয়ে যায় এবং তায়েফ দূর্গে আত্মগোপন করে। এরপর গোটা শক্রদল পালাতে শুরু করে। যুদ্ধ শেষে হাজার উট, চব্বিশ হাজার ছাগল এবং চার হাজার উকিয়া রৌপ্য। [কুরতুবী; বাগভী; ইবন কাসীর; প্রমূখ। বিস্তারিত জানার জন্য আরও দেখুন, ইবরাহীম ইবন ইবরাহীম কুরাইবী কৃত মারওয়িয়াতু গাযওয়াতি হুনাইন ওয়া হিসারুত তায়িফ]
[২] অর্থাৎ তোমরা সংখ্যাধিক্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করছিলে, কারণ তারা সংখ্যায় ছিল বার হাজার, মতান্তরে ষোল হাজার। [কুরতুবী] এটা নিঃসন্দেহে এক বিরাট বাহিনী। তাদের কেউ কেউ বলেও বসল যে, আমরা আজ সংখ্যায় স্বল্পতার কারণে পরাজিত হব না। কিন্তু পরাজিত তাদের হতেই হলো, সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের কাজে আসল না। প্রশস্ত হওয়া সত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গেল। তারপর তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মুসলিমরা সংখ্যাধিক্যে কখনও জয়লাভ করে না। তারা জয়লাভ করে আল্লাহর সাহায্যে [কুরতুবী]। এরপর আল্লাহ তার রাসূল এবং তোমাদের উপর তাঁর সাকীনাহ বা প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং ফেরেশতাদের এমন সৈন্যদল প্রেরণ করেন যাদের তোমরা দেখনি। তারপর তোমাদের হাতে কাফেরদেরকে শাস্তি দিলেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings