Surah At Tawbah Tafseer
Tafseer of At-Tawbah : 100
Saheeh International
And the first forerunners [in the faith] among the Muhajireen and the Ansar and those who followed them with good conduct - Allah is pleased with them and they are pleased with Him, and He has prepared for them gardens beneath which rivers flow, wherein they will abide forever. That is the great attainment.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১০০-১০২ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে চারশ্রেণির লোকের বিবরণ প্রদান করা হচ্ছে:
প্রথম শ্রেণি:
মুহাজিরগণ: যারা দীনের স্বার্থে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মক্কা ও অন্যান্য এলাকা থেকে হিজরত করত নিজের সকল কিছু ত্যাগ করে মদীনায় চলে আসেন।
দ্বিতীয় শ্রেণি: আনসারগণ:
এরা মদীনার অধিবাসী ছিলেন। এরা সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহায্য ও সুরক্ষা করেছিলেন। মদীনায় আগত মুহাজিরদের যথাযথ সম্মান করেছিলেন এবং নিজেদের সবকিছু তাদের খিদমতে কুরবান করে দিয়েছিলেন। এ সকল মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা ঈমান আনার দিক দিয়ে অগ্রগামী ও প্রথম সারির তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট। তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।
অগ্রগামী ও প্রথম সারির সাহাবী কারা সে ব্যাপারে কয়েকটি মত পাওয়া যায়-
বিশিষ্ট তাবেয়ী শাবী বলেন: ইসলামের সূচনা থেকে হুদায়বিয়ার বছর যারা বাইয়াতে রিদওয়ান পেয়েছেন।
আবূ মূসা আল-আশআরীসহ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন: যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে দুই কেবলার দিকে ফিরে সালাত আদায় করেছেন।
ইমাম শাওকানী (রাঃ) বলেন: উভয় মতই সঠিক হতে পারে। (ফাতহুল কাদীর, ২/৫০৩)
তৃতীয় শ্রেণি:
ঐ সকল ব্যক্তি যারা মুহাজির ও আনসারদের একনিষ্ট অনুসারী, এদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা শর্ত করেছেন (باحسان) অর্থাৎ যারা কথায়, কাজে ও আক্বীদায় তাদের একনিষ্ঠ অনুসারী। একনিষ্ঠতা থাকলেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সন্তুষ্ট, অন্যথায় তাদের ওপর সন্তুষ্ট না।
এ শ্রেণির সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কারা, সে ব্যাপারে অনেক বক্তব্য পাওয়া যায়।
কেউ বলেছেন: তারা পারিভাষিক অর্থে তাবেয়ীগণ, যারা নাবী (সাঃ)-এর দর্শন লাভ করতে পারেননি। কিন্তু সাহাবাদের অনুসরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
কেউ বলেছেন: কিয়ামত পর্যন্ত যে সকল মুসলিম আনসার ও মুহাজিরদের একনিষ্ঠ অনুসারী হবে। এতে তাবেয়ীগণও এসে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সন্তুষ্ট, এর অর্থ হল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সৎ কর্ম গ্রহণ করেছেন, মানুষ হিসেবে তাঁদের কৃত-ভুল ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তিনি তাদের ওপর অসন্তুষ্ট নন।
অতএব দুর্ভোগ তাদের যারা সাহাবাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, গালি-গালাজ করে এবং কটাক্ষ করে কথা বলে। বিশেষ করে আবূ বকর (রাঃ)কে যিনি সকল সাহাবাদের নেতা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পরেই যার স্থান।
সকল সাহাবীদের ব্যাপারে আমাদের অন্তর থাকবে সম্পূর্ণ বিদ্বেষহীন আর জবান থাকবে সকল অসংগতিপূর্ণ কথা থেকে মুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ جَا۬ءُوْ مِنْمبَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَآ إِنَّكَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ)
“যারা তাদের পরে এসেছে (পৃথিবীতে) তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইদেরকে ক্ষমা কর যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।” (সূরা হাশর ৫৯:১০)
যেমন নাবী (সাঃ) বলেন: তোমরা আমার সাহাবাদের গালি-গালাজ কর না, ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ যদি উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলে তাদের এক মুদ বা তার অর্ধেক (আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করার সমান) পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩৬৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ২৫৪১)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা অবগত করছেন যে, মদীনার আশেপাশে মরুবাসী ও মদীনাতে কতিপয় মুনাফিক রয়েছে যারা নিফাকীতে অটল।
(سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ)
‘আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব’ - হাসান বসরী (রাঃ) বলেন: দুনিয়াতে শাস্তি ও কবরের শাস্তি।
আবদুর রহমান বিন জায়েদ বলেন: দুনিয়ার শাস্তি হল, সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি। তখন তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন-
(فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَلَآ أَوْلَادُهُمْ ط إِنَّمَا يُرِيْدُ اللّٰهُ لِيُعَذِّبَهُمْ بِهَا فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كٰفِرُوْنَ)
“সুতরাং তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাকে যেন আশ্চর্য না করে, আল্লাহ তার দ্বারাই তাদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান। তারা কাফির থাকা অবস্থায় তাদের আত্মা দেহত্যাগ করবে।”(সূরা তাওবাহ ৯: ৫৫)
এসব মুসিবত হল তাদের জন্য দুনিয়ার শাস্তি আর মু’মিনদের জন্য পুণ্য। পরকালের শাস্তি হল জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ثُمَّ يُرَدُّوْنَ إِلٰي عَذَابٍ عَظِيْمٍ)
“পরে তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে।”
চতুর্থ শ্রেণি:
যারা সৎ আমল করেছে এবং পাপ কাজও করেছে। আবার পাপ কাজের কথা স্বীকারও করেছে। আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। এ আয়াত অবতীর্ণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, জাবের (রাঃ) বলেন: যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তারা ছয়জন: ১. আবূ লুবাবা, ২. আউস বিন খিযাম, ৩. সালাবা বিন ওয়াদিয়া ৪. কাব বিন মালিক, ৫. মুরারা বিন রবী এবং হিলাল বিন উমাইয়া।
আবূ লুবাবা, আউস ও সালাবা এসে নিজেদেরকে মাসজিদে নববীতে বাঁধল সাথে সকল সম্পদও নিয়ে আসল। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! এসব গ্রহণ করুন আপনার জন্য সবকিছু বরাদ্দ করে রেখেছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন:
لا أحلهم حتي يكون قتال
তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সনদ মজবুত, লুবাবুন নুকূল. পৃঃ ১৫০)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আজ রাতে দুজন আগুন্তুক আমার নিকট আগমন করে এবং আমাকে এমন এক শহর পর্যন্ত নিয়ে যা স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত ছিল। সেখানে আমি এমন কতগুলো লোক দেখতে পেলাম যাদের দেহের অর্ধাংশ খুবই সুন্দর ছিল এবং বাকি অর্ধাংশ ছিল অত্যন্ত কুৎসিত। ওদিকে তাকাতেই বললো: তোমরা এই নদীতে ডুব দিয়ে এসো। তারা ডুব দিয়ে যখন বের হয়ে আসল তখন তাদের দেহের সর্বাংশ সুন্দর দেখালো। আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে বলল: এটা হল জান্নাতে আদন। এটা আপনার মঞ্জিল। অতঃপর তারা বলল: এই যে কতগুলো লোক দেখলেন যাদের দেহের অর্ধাংশ ছিল খুবই সন্দুর এবং বাকি অর্ধাংশ ছিল অত্যন্ত কুৎসিত, তারা ঐ সমস্ত লোক যারা নেক আমলের সাথে বদ আমলও মিশিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৭৪)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কল্যাণ কাজে অগ্রবর্তী হওয়ার ফযীলত।
২. অন্যান্যদের ওপর সাহাবাদের ফযীলত।
৩. সাহাবাদের প্রতি আমাদের কেমন আক্বীদাহ বিশ্বাস ও আচরণ দেখানো প্রয়োজন তা জানতে পারলাম।
৪. অন্যান্য মু’মিনগণ যখন সাহাবাদের মত আক্বীদাহ গ্রহণ ও আমল করবে তাদের ফযীলত কেমন তাও জানতে পারলাম।
৫. যারা সৎ আমলের সাথে অসৎ আমল করেছে আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করবেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings