Surah Al Qadr Tafseer

Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114

Al-Qadr : 1

97:1
إِنَّآأَنزَلْنَٰهُفِىلَيْلَةِٱلْقَدْرِ ١

Saheeh International

Indeed, We sent the Qur'an down during the Night of Decree.

Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)

১-৫ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ রাব্বল আলামীন লায়লাতুল কদরে কুরআন কারীম অবতীর্ণ করেন। এই রাত্রিকে লায়লাতুল মুবারকও বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে।” (৪৪ ৩) কুরআন কারীম দ্বারাই এটা প্রমাণিত যে, এ রাত্রি রামাযানুল মুবারক মাসে রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “রমযান মাস, এতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।” (২:১৮৫)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী হতে বর্ণিত আছে যে, লায়লাতুল কাদরে সমগ্র কুরআন লাওহে মাহফুয হতে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর ঘটনা অনুযায়ী দীর্ঘ তেইশ বছরে ধীরে ধীরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর আল্লাহ তা'আলা লায়লাতুল কাদরের শান শওকত ও বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বলেনঃ এই রাত্রির এক বিরাট বরকত হলো এই যে, এ রাত্রে কুরআন মজীদের মত মহান নিয়ামত নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী (সঃ) লায়লাতুল কাদর যে কি কি তোমার জানা আছে? লায়লাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) তাঁর জামে গ্রন্থে এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ) আমীর মুআবিয়ার (রাঃ) সঙ্গে সন্ধি করার পর এক ব্যক্তি হযরত হাসান (রাঃ) কে বললেনঃ “আপনি ঈমানদারদের মুখ কালো করে দিয়েছেন।” অথবা এভাবে বলেছিলেনঃ “হে মু'মিনদের মুখ কালোকারী।” একথা শুনে হযরত হাসান (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা তোমার প্রতি রহম করুন! তুমি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ো না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে দেখানো হয়েছে যে, তার মিম্বরে যেন বানূ উমাইয়া অধিষ্ঠিত হয়েছে। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিছুটা মনক্ষুন্ন হন। আল্লাহ তা'আলা তখন (আরবি) সূরাটি অবতীর্ণ করেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে জান্নাতে হাউযে কাওসার দান করার সুসংবাদ প্রদান করেন। এছাড়া (আরবি) সূরাটিও অবতীর্ণ করেন।

হাজার মাস দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ) পরে বানূ উমাইয়ার রাজত্ব হাজার মাস টিকে থাকাকে বুঝানো হয়েছে। কাসিম ইবনে ফ্যল (রঃ) বলেনঃ “আমি হিসাব করে দেখেছি, পুরো এক হাজার মাসই হয়েছে, একদিনও কম বেশী হয়নি।” ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল। এর একজন বর্ণনাকারী ইউসুফ মাজহুল বা অজ্ঞাত। শুধু ঐ একটি সনদ হতেই এটা বর্ণিত হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

কিন্তু কাসিম ইবনে ফযলের (রঃ) এ কথা সঠিক নয়। কেননা, হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর স্বতন্ত্র রাজত্ব ৪০ (চল্লিশ) হিজরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইমাম হাসান (রাঃ) ঐ সময় হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং খিলাফতের দায়িত্ব তাঁর হাতে ন্যস্ত করেন। অন্যসব লোকও মুআবিয়ার (রাঃ) হাতে রায়আত নেন। একত্রিত ভাবে সবাই মুআবিয়ার (রাঃ) হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন বলে ঐ বছরটি ‘আমুল জামাআই নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। তারপর সিরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বানী উমাইয়া সাম্রাজ্য অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। তবে নয় বছর পর্যন্ত হারামাইন শারীফাইন অর্থাৎ মক্কা-মদীনা, আহওয়ায় এবং আরো কতিপয় শহরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ)-এর খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। তথাপি এই সময়ের মধ্যেও বান্ উমাইয়ার হাত হতে সাম্রাজ্য সম্পূর্ণরূপে চলে যায়নি বরং কয়েকটি শহর শুধু তাদের হাত ছাড়া হয়েছিল।

১৩২ হিজরীতের বানূ আব্বাস বানূ উমাইয়ার হাত হতে সাম্রাজ্য ছিনিয়ে নেয়। কাজেই বানূ উমাইয়ার সাম্রাজ্য ৯২ বছর টিকেছিল। এটা এক হাজার মাসের চেয়ে অনেক বেশী। কেননা, এক হাজার মাসে হয় ৮৩ বছর ৪ মাস। হযরত ইবনে যুবায়ের (রাঃ)-এর শাসনকাল যদি ৯২ বছর হতে বাদ দেয়া যায় তাহলে কাসিম ইবনে ফযলের হিসাব মোটামুটিভাবে নির্ভুল হয়। এ সব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

এই বর্ণনাটি যঈফ বা দুর্বল হওয়ার আরেকটি কারণ এই যে, বানূ উমাইয়ার শাসনামলে নিন্দে করা ও মন্দ অবস্থা তুলে ধরা এ বর্ণনার উদ্দেশ্য হলেও ঐ যুগের উপর লায়লাতুল কদরের ফযীলত প্রমাণিত হওয়া ঐ যুগ নিন্দনীয় হওয়ার প্রমাণ নয়। লায়লাতুল কাদর আপনা আপনিই সকল প্রকার মর্যাদার অধিকারী। এই সূরার সমগ্র অংশেই উক্ত মুবারক রাত্রির মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং বানূ উমাইয়া যুগের নিন্দা প্রকাশের মাধ্যমে লায়লাতুল কদরের ফযীলত প্রমাণিত হবে কি করে? এটা তো ঠিক কোন ব্যক্তির তরবারীর প্রশংসা করতে গিয়ে ওর হাতলের কাষ্ঠখণ্ডের প্রশংসা করার মত ব্যাপার। উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে নিকৃষ্টমানের কোন ব্যক্তির উপর মর্যাদা দিয়ে তুলনা করলে ঐ উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির অসম্মানই করা হবে। এই বর্ণনার ভিত্তিতে এক হাজার বছরের যে উল্লেখ রয়েছে তাতে বানী উমাইয়া খিলাফাতের অধিষ্ঠানের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে মক্কা শরীফে, সুতরাং এতে বানূ উমাইয়া যুগের মাসের বরাত দেয়া যায় কি করে? শব্দ বা ভাষাগত কোন ব্যাপারেই সে রকম কিছু বুঝা যায় না। মিম্বর স্থাপিত হয়েছে মদীনায়। হিজরতের বেশ কিছু দিন পর একটি মিম্বর তৈরি করে মদীনায় স্থাপন করা হয়েছিল। এ সব কারণে পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এই বর্ণনাটি দুর্বল এবং মুনকারও বটে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বাণী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির উল্লেখ করে বলেনঃ “ঐ লোকটি .এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে অস্ত্র ধারণ করেছিল অর্থাৎ জিহাদে অংশ নিয়েছিল।” মুসলমানরা এ কথা শুনে বিস্মিত হওয়ায় আল্লাহ তা'আলা এ সূরা অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তা'আলা জানিয়ে দেন যে, লায়লাতুল কদরের ইবাদত ঐ ব্যক্তির এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, বানী ইসরাঈলের একটি লোক সন্ধ্যা হতে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন এবং দিনের বেলায় সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত দ্বীনের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতেন। এক হাজার মাস পর্যন্ত তিনি এই ভাবে কাটিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা এই সুরা অবতীর্ণ করে তাঁর প্রিয় নবী (সঃ)-এর উম্মতকে সুসংবাদ দেন যে, এই উম্মতের কোন ব্যক্তি যদি লায়লাতুল কাদরে ইবাদত করে তবে সে বানী ইসরাঈলের ঐ ইবাদতকারীর চেয়ে অধিক পুণ্য লাভ করবে।

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আলী ইবনে উরওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বাণী ইসরাঈলের চারজন আবেদের কথা উল্লেখ করেন। তাঁরা আশি বছর পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে ক্ষণিকের জন্যে তারা আল্লাহর নাফরমানী করেননি। তাঁরা। হলেন হযরত আইউব (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ), হযরত হাকীল ইবনে আ’জয় (আঃ) এবং হযরত ইউশা ইবনে নুন (আঃ)। সাহাবীগণ (রাঃ) এ ঘটনা শুনে খুবই অবাক হলেন। তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বললেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনার উম্মত এই ঘটনায় বিস্ময়বোধ করেছেন, জেনে রাখুন যে, আল্লাহ তা'আলা আপনার উপর এর চেয়েও উত্তম জিনিষ দান করেছেন। আপনার উম্মত যে ব্যাপারে বিস্মিত হয়েছে এটা তার চেয়েও উত্তম।” তারপর তিনি তাঁর কাছে এই সূরাটি পাঠ করলেন। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও সাহাবায়ে কিরাম অত্যন্ত খুশী হলেন।

হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ লায়লাতুল কাদরের ইবাদত, নামায, রোযা ইত্যাদি পুণ্যকর্ম এক হাজার মাসের লায়লাতুল কাদর বিহীন সময়কালের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। তাফসীরকারগণও এরকমই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) লায়লাতুল কাদর বিহীন সময়ের এক হাজার মাসের চেয়ে একটি লায়লাতুল কদর উত্তম বলে মত প্রকাশ করেছেন। একথাই যথার্থ, অন্য কোন কথা সঠিক নয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এক রাতের জিহাদের প্রস্তুতি সেই রাত ছাড়া অন্য এক হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অনুরূপভাবে অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি সৎ নিয়তে এবং ভালো অবস্থায় জুমআর নামায আদায়ের জন্যে যায় তার আমলনামায় এক বছরের রোযা ও নামাযের সওয়াব লিখা হয়। এ ধরনের আরো বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে। মোটকথা, এক হাজার মাস বলতে এমন এক হাজার মাসের কথা বুঝানো হয়েছে যে সময়ের মধ্যে লায়লাতুল কদর থাকবে না। যেমন এক হাজার রাত বলতে সেই সব রাতের কথাই বলা হয়েছে যে সব রাতে সেই ইবাদতের রাত থাকবে না। একইভাবে জুমআর নামাযে যাওয়ার সওয়াবের যে কথা বলা হয়েছে তাতে এমন এক বছরের পুণ্যের বা সওয়াবের কথা বলা হয়েছে যার মধ্যে জুমআ থাকবে না।

মুসনাদে আহমদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রমাযান মাস এসে গেলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেন “(হে জনমণ্ডলীঃ) তোমাদের উপর রমাযান মাস এসে পড়েছে। এ মাস খুবই বরকত পূর্ণ বা কল্যাণময়। আল্লাহ তা'আলা তোমাদের উপর এ মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে বন্দী করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত্রি রয়েছে যে রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাসের কল্যাণ হতে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হয় সে প্রকৃতই হতভাগ্য। সুনানে নাসাঈতেও এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত্রিতে ইবাদত করে, তার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মার্জনা করে দেয়া হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এ রাত্রির বরকতের আধিক্যের কারণে এ রাত্রে বহু সংখ্যক ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। এমনিতেই ফেরেশতারা সকল বরকত ও রহমতের সাথেই অবর্তীণ হন। যেমন কুরআন তিলাওয়াতের সময়ে অবতীর্ণ হন, জিরের মজলিস ঘিরে ফেলেন এবং দ্বীনী ইলম বা বিদ্যা শিক্ষার্থীদের জন্যে সানন্দে নিজেদের পালক বিছিয়ে দেন ও তাদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন।

রূহ্ দ্বারা এখানে হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, রূহ নামে এক ধরনের ফেরেশতা রয়েছেন। সূরা (আরবি) তাফসীরে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ কদরের রাত্রি আগাগোড়াই শান্তির রাত্রি। এ রাত্রে শয়তান কোন অনিষ্ট করতে পারে না, কাউকে কোন কষ্ট দিতে পারে না। হযরত কাতাদা (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এই রাত্রে সমস্ত কাজের ফায়সালা করা হয়, বয়স ও রিক নির্ধারণ করা হয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ, “এই রাত্রে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।" (৪৪:৪) হযরত শাবী (রঃ) বলেন যে, এই রাত্রে ফেরেশতারা মসজিদে অবস্থানকারীদের প্রতি সকাল পর্যন্ত সালাম প্রেরণ করতে থাকেন। ইমাম বায়হাকী (রঃ) তাঁর 'ফাযায়েলে আকওয়াত' নামক গ্রন্থে হযরত আলী (রাঃ)-এর একটি খুবই গরীব বা দুর্বল রিওয়াইয়াত আনয়ন করেছেন, তাতে রয়েছে যে, ফেরেশতারা অবতীর্ণ হন, নামায আদায়কারীদের মধ্যে গমন করেন এবং এতে নামায আদায়কারীরা বরকত লাভ করেন।

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত কাব আহবার (রাঃ) হতে একটি বিস্ময়কর দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে, তাতে বহু কিছুর সাথে এও বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা সিদরাতুল মুনতাহা থেকে হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং মুসলিম নারী পুরুষের জন্যে আল্লাহর কাছে দু'আ করেন। আবু দাউদ তায়ালেসী (রাঃ) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ লায়লাতুল কদর সাতাশতম অথবা উনত্রিশতম রাত্রি। এই রাত্রে ফেরেশতারা পৃথিবীতে প্রস্তর খণ্ডের সংখ্যার চেয়েও অধিক সংখ্যায় অবস্থান করেন। এ রাত্রে নতুন কোন কিছু (বিদআত) হয় না। হযরত কাতাদা (রঃ) এবং হযরত ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এ রাত্রে পরিপূর্ণ শান্তি বিরাজ করে। কোন অকল্যাণ বা অনিষ্ট সকাল পর্যন্ত এ রাত্রিকে স্পর্শ করতে পারে না।

মুসনাদে আহমাদে হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “(রযমান মাসের) শেষ দশ রাত্রির মধ্যে। লায়লাতুল কদর রয়েছে। যে ব্যক্তি এই রাত্রে সওয়াবের আশায় ইবাদত করে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মার্জনা করে দেন। এটা হলো বেজোড় রাত্রি। অর্থাৎ একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ ও উনত্রিশতম রাত্রি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) আরো বলেনঃ “লায়লাতুল কাদরের নিদর্শন এই যে, এটা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার এবং এমন উজ্জ্বল হয় যে, যেন চন্দ্রোদয় ঘটেছে। এ রাত্রে শান্তি ও শৈত্য বিরাজ করে। ঠাণ্ডা ও গরম কোনটাই বেশী থাকে না। সকাল পর্যন্ত নক্ষত্র আকাশে জ্বল জ্বল করে। এ রাত্রির আর একটি নিদর্শন এই যে, এর শেষ প্রভাতে সূর্য প্রখর কিরণের সাথে উদিত হয় না। বরং চতুর্দশ রাত্রির চন্দ্রের মত উদিত হয়। সেদিন ওর সাথে শয়তানও আত্মপ্রকাশ করে না।” (এ হাদীসটির সনদ সহীহ বা বিশুদ্ধ, কিন্তু মতন গারীব। কিছু কিছু শব্দের মধ্যে নাকারাত রয়েছে)

আবু দাউদ তায়ালিসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “লায়লাতুল কদর পরিষ্কার, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ এবং শীত গরম হতে মুক্ত রাত্রি। এ রাত্রি শেষে সূর্য স্নিগ্ধ আলোকআভায় রক্তিম বর্ণে উদিত হয়।”

হযরত আবূ আসিম নুবায়েল (রঃ) স্বীয় সনদে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একবার বলেছিলেনঃ “আমাকে লায়লাতুল কাদর দেখানো হয়েছে। তারপর ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রমযান মাসের শেষ দশ রাত্রির মধ্যে এটা রয়েছে। এ রাত্রি খুবই শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এ রাত্রে শীতও বেশী থাকে না এবং গরমও বেশি থাকে না। এ রাত্রি এতো বেশি রওশন ও উজ্জ্বল থাকে যে, মনে হয় যেন চাদ হাসছে। রৌদ্রের তাপ ছড়িয়ে পড়ার আগে সূর্যের সাথে শয়তান আত্মপ্রকাশ করে না।”

লায়লাতুল কাদর পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যেও ছিল, না শুধু উম্মতে মুহাম্মদীকেই (সঃ) বিশেষভাবে এটি দান করা হয়েছে এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। হযরত মালিক (রঃ)-এর নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, পূর্ববর্তী উম্মতদের বয়স খুব বেশী হতো এবং উম্মতে মুহাম্মদীর (সঃ) আয়ু খুব কম, এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) লক্ষ্য করলেন। তুলনামূলকভাবে তার উম্মত পুণ্য কাজ করার সুযোগ খুব কম পায়। তাই আল্লাহ তা'আলা তাকে এই লায়লাতুল কাদর দান করেন এবং এ রাত্রির ইবাদতের সওয়াব এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে অধিক দেয়ার অঙ্গীকার করেন। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, এই লায়লাতুল কদর শুধু মাত্র উম্মতে মুহাম্মদীকেই (সঃ) প্রদান করা হয়েছে।

শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ‘ইদ্দাহ’ গ্রন্থের রচয়িতা একজন ইমাম জমহুর উলামার এ বাণী উদ্ধৃত করেছেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহপাকই সবচেয়ে ভাল জানেন।

খাত্তাবী (রঃ) বলেন যে, এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে। কিন্তু একটি হাদীস দৃষ্টে মনে হয় যে, উম্মতে মুহাম্মদী (সঃ)-এর মতই পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যেও লায়লাতুল কাদর বিদ্যমান ছিল।

হযরত মুরসিদ (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আবু যারকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলামঃ লায়লাতুল কাদর সম্পর্কে আপনি নবী কারীম (সঃ) কে কি প্রশ্ন করেছিলেন? হযরত আবু যার (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ জেনে রেখো যে, আমি নবী করীম (সঃ)-কে প্রায়ই নানা কথা জিজ্ঞেস করতাম। একবার আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আচ্ছা, লায়লাতুল কাদর কি রমযান মাসেই রয়েছে, না অন্য মাসে রয়েছে? নবী করীম (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “লায়লাতুল কাদর রমযান মাসেই রয়েছে। আমি আবার প্রশ্ন করলামঃ এ রাত্রি কি নবীদের (আঃ) জীবদ্দশা পর্যন্তই থাকে, না কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে? রাসুলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেন, “কিয়ামত পর্যন্তই অবশিষ্ট থাকবে।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এ রাত্রি রমযানের কোন্ অংশে রয়েছে? তিনি জবাবে বললেনঃ “এ রাত্রি রমযানের প্রথম দশকে ও শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।” আমি তখন নীরব হয়ে গেলাম। নবী করীম (সঃ) অন্য দিকে মনোনিবেশ করলেন। কিছুক্ষণ পর সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) আপনার উপর আমার যে হক রয়েছে এ কারণে আপনাকে কসম দিচ্ছি, দয়া করে আমাকে সংবাদ দিন, কদরের নির্দিষ্ট রাত্রি কোনটি? তিনি একথা শুনে অত্যন্ত রেগে গেলেন, তাকে আমার উপর এরকম রাগতে এর পূর্বে আমি কখনো দেখিনি। অতঃপর তিনি বললেনঃ “শেষ দশ রাত্রে তালাশ কর, আর কিছু জিজ্ঞেস করো না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এতে প্রমাণিত হয় যে, কদরের রাত্রি পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যেও ছিল। হাদীস থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত প্রতি বছর আসতে থাকবে। শিয়া পন্থী কতকগুলো লোকের অভিমত এই যে, এ রাত্রি সম্পূর্ণরূপে উঠে গেছে। কিন্তু তাদের এ অভিমত সঠিক নয়। তাদের এ ভ্রান্ত ধারণার কারণ এই যে, একটি হাদীসে রয়েছেঃ “কদরের রাত্রি উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং তোমাদের জন্য এতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ উক্তির তাৎপর্য এই যে, এ রাত্রির নির্দিষ্টতা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, এ রাত্রি উঠিয়ে নেয়া হয়নি। উপরোক্ত হাদীস দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কদরের রাত্রি রমযান মাসেই আসে, অন্য কোন মাসে নয়।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও কূফার আলেমদের মতে সারা বছর একটি রাত্রি রয়েছে এবং প্রতি মাসেই তা থাকার সম্ভাবনা আছে। এ হাদীস উপরে উল্লিখিত হাদীসের পরিপন্থী। যিনি হলেন যে, সারা রমযান মাসে লায়লাতুল কাদর রয়েছে, তার দলীলরূপে সুনানে আবী দাউদে একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। তাতে এই হাদীস আনয়ন করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে লায়লাতুল কাদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “এটা সারা রমযান মাসে রয়েছে। এ হাদীসের সমস্ত বর্ণনাকারীই নির্ভরযোগ্য। এটা মাওকুফ রূপেও বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইমাম আবু হানীফা (রঃ) হতে একটি রিওয়াইয়াত রয়েছে যে, রমযানুল মুবারকের পুরো মাসে লায়লাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইমাম গাজ্জালী (রঃ) এ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। রমযানের প্রথম রাত্রিই কদরের রাত্রি।' এ কথার উপরও একটি রিওয়াইয়াত রয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রীস আশশাফিয়ীর (রঃ) মতে রমযান মাসের সপ্তদশ রাত্রিই হলো কদরের রাত্রি। হযরত হাসান বসরীর (রঃ) মাযহাবও এটাই। রমযানের সপ্তদশ রাত্রিকে কদরের রাত্রি বলার স্বপক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, রমযানের এই সপ্তদশ রাত্রি ছিল জুমআর রাত্রি এবং বদরের যুদ্ধের রাত্রি। সতরই রমযান বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। কুরআনে কারীমে ঐ দিনকে ‘ইয়াওমূল ফুরকান' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) এবং হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রমযানের উনিশতম রাত্রি হলো কদরের রাত্রি। আবার একুশতম রাত্রিকেও কদরের রাত্রি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরীর (রাঃ) হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) রমযান মাসের প্রথম দশদিনে ই'তেফাক করেন, আমরাও তার সাথে ই'তেকাফ করতে থাকি। এমন সময় জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেনঃ “আপনি যেটাকে খুঁজছেন সেটাতো এখনো সামনে রয়েছে। অর্থাৎ কদরের রাত্রি।" তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মধ্যভাগের দশদিন ই'তেকাফ করেন এবং আমরাও তার সাথে ই'তেকাফ করি। আবার হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেনঃ “আপনি যেটা খুঁজছেন সেটাতো এখনো সামনে রয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) রমানের বিশ তারিখের সকালে দাঁড়িয়ে খুত্বাহ দেন এবং বলেনঃ “আমার সাথে ই'তেকাফকারীদের পুনরায় ই'তেকাফে বসে পড়া উচিত। আমি কদরের রাত্রি দেখেছি, কিন্তু এরপর ভুলে গেছি। কদরের রাত্রি রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিতে রয়েছে। আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে যে, আমি যেন কাদা ও পানির মধ্যে সিজদা করছি।” মসজিদে নববী (সঃ)-এর ছাদ ছিল খেজুর পাতার তৈরি। আকাশে তখন মেঘের কোন চিহ্নই ছিল না। হঠাৎ মেঘ উঠলো এবং বৃষ্টি হলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর স্বপ্ন সত্য প্রমাণিত হলো। আমি দেখেছি যে, তার কপালে ভেজা মাটি লেগে রয়েছে। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে) ইমাম শাফিয়ী (রঃ) বলেন যে, হাদীসসমূহের মধ্যে এ হাদীসটি সবচেয়ে বেশী সহীহ বা বিশুদ্ধ। এ ঘটনা রমযান মাসের একুশ তারিখের রাত্রির ঘটনা বলে এ ধরনের রিওয়াইয়াতে উল্লিখিত রয়েছে।

একটি হাদীসে রয়েছে যে, রমযান মাসের তেইশতম রাত্রি হলো কদরের রাত্রি। সহীহ মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদীসের মাধ্যমে এটা জানা গেছে। রমযান মাসের চব্বিশতম রাত্রি হলো কদরের রাত্রি। এ কথাও একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কদরের রাত্রি হলো চব্বিশতম রাত্রি।” (আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের সনদও বিশুদ্ধ। মুসনাদে আহমাদেও এটা রয়েছে কিন্তু এর বর্ণনাকারীর মধ্যে ইবনে লাহিয়া রয়েছেন এবং তিনি যইফ বা দুর্বল। সহীহ বুখারীতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুআযযিন হযরত বিলাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রমযান মাসের শেষ দশ রাত্রির প্রথম সাত রাত্রির মধ্যে কদরের রাত্রি রয়েছে। উসূলে হাদীসের পরিভাষায় এ রিওয়াইয়াতটি মাওকুফ। কিন্তু এটা বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ হয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত জাবির (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে অহাব (রাঃ) এবং হযরত কাতাদাহ (রাঃ) বলেন যে, চব্বিশতম রাত্রি হলো কদরের রাত্রি। এক হাদীসের মর্মানুযায়ী কুরআন কারীম রমযান মাসের চব্বিশ তারিখে অবতীর্ণ হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, পঁচিশতম রাত্রিই কদরের রাত্রি। এদের যুক্তি হলো এই যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “কদরের রাত্রিকে রমযানের শেষ দশকে খোঁজ কর। প্রথমে নয়, তারপর সাত, তারপর পাঁচ বাকি থাকে।” অধিকাংশ মুহাদ্দিস বলেছেন যে, এর দ্বারা বেজোড় রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। এটাই সর্বাধিক সুস্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ উক্তি। তবে কারো কারো মতে লায়লাতুল কাদর জোড় রাত্রিতে রয়েছে। যেমন সহীহ মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে এটাই বর্ণিত হয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এবং তাঁর জ্ঞানই পূর্ণাঙ্গ ও নিখুত।

কদরের রাত্রি রমযানের সাতাশতম রাত্রি বলেও উল্লেখ রয়েছে। সহীহ মুসলিমে সংকলিত একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এটা সাতাশতম রাত্রি।”

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) কে বলা হলোঃ আপনার ভাই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলতেনঃ যে ব্যক্তি বছরের প্রত্যেক রাত্রে জেগে থাকবে সে কদরের রাত্রি পেয়ে যাবে। এ কথা শুনে উবাই (রাঃ) বললেনঃ “আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন, তিনি জানতেন যে, এ রাত্রি রমযান মাসের মধ্যে রয়েছে। আমি কসম করে বলছি যে, কদরের রাত্রি যে রমযানের সাতাইশতম রাত্রি এটাও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) জানতেন। হযরত কা'বকে (রাঃ) আবার জিজ্ঞেস করা হলোঃ আপনি এটা কি করে জানলেন? জবাবে তিনি বললেনঃ আমাদের যে সব নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে সে সব দেখেই আমরা বুঝতে পেরেছি। যেমন, ঐ দিন সূর্য উদিত হওয়ার সময় কিরণহীন অবস্থায় উদিত হয়।

অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত উবাই (রাঃ) বললেনঃ যে আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বূদ নেই তার কসম! কদরের রাত্রি রমযানের মধ্যেই রয়েছে। এ কথার উপরে হযরত উবাই (রাঃ) ইনশাআল্লাহ বলেননি, বরং সরাসরি কসম খেয়েছেন। তারপর বলেছেনঃ আমি বিলক্ষণ জানি সেই রাত কোনটি। সেই রাতে রাসূলুল্লাহ ইবাদতের জন্যে খুবই তাগীদ করতেন। সেই রাত্রি হলো রমযানের সাতাশতম রাত্রি। তার নিদর্শন এই যে, সেই দিন সূর্য কিরণহীন অবস্থায় উদিত হয়। তার রঙ থাকে সাদা ও স্বচ্ছ। তাছাড়া সূর্যের তেজ বেশী থাকে না। হযরত মুআবিয়া (রাঃ), হযরত ইবনে উমার (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রভৃতি গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কদরের রাত্রি হলো রমযানের সাতাশতম রাত্রি।” পূর্ব যুগীয় গুরুজনদের একটি জামাআতও এ কথা বলেছেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের (রঃ) স্বীকৃত মতও এটাই। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) হতেও অনুরূপ একটি রিওয়াইয়াত বর্ণিত হয়েছে। পূর্বযুগীয় কোন কোন মণীষী এই কুরআন কারীমের শব্দ দ্বারাও এই উক্তির স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করেছেন। যেমন তারা বলেন যে, (আরবি) এটা শব্দটি এই সূরার সাতাশতম শব্দ। অবশ্য আল্লাহ তা'আলাই সবকিছু ভাল জানেন।

হাফিয আবুল কাসিম তিবরাণী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) সাহাবায়ে কিরামকে (রাঃ) সমবেত করে কদরের রাত্রি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন সবাই ঐক্যমত প্রকাশ করলেন যে, এ রাত্রি রমযান মাসের শেষ দশকে রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন বললেনঃ “ঐ রাত্রি কোন রাত্রি সেটাও আমি জানি।" হযরত উমার (রাঃ) তখন প্রশ্ন করলেনঃ ‘ওটা কোন্ রাত্রি?" হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) জবাবে বললেনঃ “শেষ দশকের সাত দিন অতীত হবার পর অথবা সাত দিন বাকি থাকার পূর্বে।” “এটা কি করে জানলেন?" জিজ্ঞেস করলেন হযরত উমার (রাঃ)। উত্তরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ “দেখুন, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আকাশ ও সৃষ্টি করেছেন সাতটি জমীনও সৃষ্টি করেছেন সাতটি এবং মাস ও সপ্তাহ হিসেবে অর্থাৎ সাতদিনে আবর্তিত হয়। মানুষের জন্ম সাত থেকে, মানুষ সাত বস্তু থেকে খায়, সাতটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সিজদাহ করে, কাবাগৃহের তাওয়াফের সংখ্যা সাত এবং মিনা বাজারে শয়তানের প্রতি নিক্ষেপ করার প্রস্তর খণ্ডের সংখ্যাও সাত। সাত সংখ্যা এ ধরনের আরো বহু কিছু রয়েছে।”

একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “আমাদের বিবেক বুদ্ধি যেখানে পৌঁছেনি, আপনার বিবেক বুদ্ধি সেখানে পৌঁছেছে।” খাদ্য দ্রব্যের সংখ্যা যে সাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেটা করা হয়েছে পবিত্র কুরআনের নিম্নের আয়াত দ্বারাঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি ওতে উৎপন্ন করি শস্য, দ্রাক্ষা, শাক-সবজি, যয়তুন, খর্জুর বহুবৃক্ষ বিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদির খাদ্য, এটা তোমাদের ও তোমাদের গৃহ পালিত পশুর ভোগের জন্যে।" (৮০:২৭-৩২) এ আয়াতে খাদ্য বস্তু হিসেবে সাতটি বস্তুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীসটি সনদও উসূলে হাদীসের পরিভাষায় কাজী অর্থাৎ সবল কিন্তু মতন বা ভাষা শব্দ গারীব বা দুর্বল। অবশ্য আল্লাহ তাআলাই এসম্পর্কে ভাল জানেন।

লায়লাতুল কদর রমযান মাসের ঊনত্রিশতম রাত্রি বলেও উল্লেখ রয়েছে। হযরত উবদি ইবনে সামিতের (রাঃ) প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এ রাত্রিটিকে রমযান মাসের শেষ দশকে বেজোড় রাত্রিসমূহে অনুসন্ধান কর অর্থাৎ একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ, উনত্রিশ অথবা শেষ রাত্রে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বর্ণনা করেছেন মুসনাদে আহমাদে)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “লায়লাতুল কাদর হলো সাতাশতম অথবা ঊনত্রিশতম রাত্রি। ঐ রাত্রে ফেরেশতারা প্রস্তর খণ্ডের সংখ্যার চেয়েও অধিক সংখ্যায় পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়।” এ হাদীসের সনদও উত্তম।

রমযানের সর্বশেষ রাত্রিও কদরের রাত্রি’ এর উপরও একটি বর্ণনা রয়েছে। জামে তিরমিযী এবং সুনানে নাসাঈতে রয়েছেঃ “নয়টি রাত যখন বাকী থাকে বা সাত পাঁচ বা তিন অথব্য শেষ রাত অর্থাৎ এ রাতগুলোতে কদরের রাত তালাশ করো।” ইমাম তিরমিযী (রঃ) এই বর্ণনাকে হাসান সহীহ বলেছেন।

মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “কদরের রাত্রি হলো রমযানের শেষ রাত্রি।” হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেনঃ এ সব বিভিন্ন প্রকারের হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উপায় এই যে, এসব ছিল বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর। আসল কথা হলো এই যে, কদরের রাত্রি নির্ধারিত, এতে কোন পরিবর্তন হতে পারে না। ইমাম তিরমিযী (রঃ) ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর এ ধরনের অর্থবোধক উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। আবু কালাবা (রঃ) বলেন যে, রমযানের শেষ দশদিনের রাত্রির মধ্যে এ রদবদল হয়ে থাকে। ইমাম মালিক (রঃ) ইমাম সাওরী (রঃ), ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ), ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রঃ), ইমাম আবু সাওর মুযানী (রঃ), ইমাম আবু বকর ইবনে খুযাইমা (রঃ) প্রমুখ গুরুজনও এ কথাই বলেছেন। আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে ভাল জানেন। এ উক্তির কম বেশী সমর্থন এতেও পাওয়া যায় যে, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে উল্লিখিত হয়েছেঃ কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) স্বপ্নে দেখেন যে, রযমানের শেষ সাত রাতে নবী করীম (সঃ)-কে 'লায়লাতুল কদর' দেখানো হয়েছে। তিনি বলেনঃ “আমি দেখছি যে, তোমাদের স্বপ্নেও শেষ সাত রাত্রির ইঙ্গিত রয়েছে। কদরের রাত্রি অনুসন্ধানকারীর এ সাত রাত্রেই তা সন্ধান করা উচিত।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “রমযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে লায়লাতুল কদর তালাশ করো।” ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেন যে, কদরের রাত্রি প্রত্যেক রমযানের একটি নির্দিষ্ট রাত্রি। তার কোন রদ বদল হয় না। এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসের স্বপক্ষে যুক্তি বলে প্রমাণিত হতে পারে। ঐ হাদীসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ (একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে লায়লাতুল কদরের খবর দেয়ার জন্যে বের হন। কিন্তু দেখলেন যে, দু’জন মুসলমান পরস্পর ঝগড়া করছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “আমি তোমাদেরকে কদরের রাত্রির খবর দিতে এসেছিলাম। কিন্তু অমুক অমুকের ঝগড়ার কারণে ঐ রাত্রির বিষয়টি আমার স্মৃতি থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্যে কল্যাণ নিহিত হয়েছে। এখন ওটাকে রমযানের শেষ দশকের নবম, সপ্তম এবং পঞ্চম রাত্রে তালাশ করো।” এ রাত্রি সব সময়ের জন্যে নির্ধারিত না হলে প্রতি বছরের কদরের রাত্রি কবে তা জানা যেতো না। এখানে এটাই বুঝানো হয়েছে। লায়লাতুল কাদরের মধ্যে যদি রদবদল হতো তাহলে সেই বছরের কদরের রাত্রি কবে তা জানা যেতো না। এখানে এটাই বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য বছরের জন্যে এ নির্ধারণ কাজে আসতো। তবে হ্যা, একটা জবাব এও হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ বছরের লায়লাতুল কদরের সংবাদ দেয়ার জন্যেই এসেছিলেন। এ হাদীসটি থেকে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, ঝগড়া বিবাদ, কল্যাণ, বরকত এবং ফলপ্রসূ জ্ঞান বিনষ্ট করে দেয়। অন্য একটি সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, বান্দা নিজের পাপের কারণে, আল্লাহর দেয়া রিক থেকে বঞ্চিত হয়।

এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে, কাদরের রাত্রি তুলে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হলোঃ কদরের রাত নির্ধারণের জ্ঞান তুলে নেয়া হয়েছে। কদরের রাত্রিই যে তুলে নেয়া হয়েছে এমন নয়, কিন্তু অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত শিয়া সম্প্রদায় বলে যে, কদরের রাত্রিই তুলে নেয়া হয়েছে। কদরের রাত্রি যে তুলে নেয়া হয়নি তার বড় প্রমাণ হলো এই যে, উপরোক্ত কথার পরই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “লায়লাতুল কদর রমযানের শেষ দশকের নবম, সপ্তম এবং পঞ্চম রাত্রে তালাশ করো।" নবী করিম (সঃ) যে বলেছেনঃ “লায়লাতুল কদরের নির্ধারণ সম্পর্কিত জ্ঞান তুলে নেয়ার মধ্যে সম্ভবতঃ তোমাদের জন্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এর ভাবার্থ হলো এই যে, এই রাত্রি সন্ধানকারী সম্ভাব্য সমস্ত রাত্রে ভক্তি বিনয়ের সাথে ইবাদত করবে। আর এই রাত্রি নির্ধারিত হয়ে গেলে শুধু ঐ রাত্রেই ইবাদত করবে। আর এই রাত্রি নির্ধারণ না করার মধ্যে বিজ্ঞানময় আল্লাহর হিকমত এই যে, এর ফলে এই রাত্রি পাওয়ার আশায় পবিত্র রমান মাসে বান্দা মন দিয়ে ইবাদত করবে এবং রমযানের শেষ দশকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ইবাদতের কাজেই নিয়োজিত করবে। নবী করীম (সঃ)ও ইন্তেকাল পর্যন্ত প্রত্যেক রমযান মাসের শেষ দশকে ই'তেকাফ করতেন। তার ইন্তেকালের পর তাঁর সহধর্মীরা উক্ত সময়ে ই'তেকাফ করতেন। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে) হযরত ইবনে উমারের (রাঃ) বর্ণনায় রয়েছে। যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) রমযানের শেষ দশকে ই'তেকাফ করতেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, রমযানের দশদিন বাকি থাকার সময়েই রাসূলুল্লাহ (সঃ) সারা রাত্রি জেগে কাটাতেন এবং গৃহবাসীদেরকেও জাগাতেন এবং কোমর কষে নিতেন (অর্থাৎ ইবাদতের জন্যে উঠে পড়ে লেগে যেতেন) (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই সময়ে যেরূপ পরিশ্রমের সাথে ইবাদত করতেন অন্য কোন সময়ে সেরূপ পরিশ্রমের সাথে ইবাদত করতেন না। কোমর বেঁধে নিতেন বা কোমরে তহবন্দ বাঁধতেন এর ভাবার্থ এই যে,ইবাদতে সম্পূর্ণরূপে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। এর অর্থ এও হতে পারে যে, তিনি ঐ সময়ে স্ত্রী সহবাস করতেন না। আবার উভয় অর্থও হতে পারে। অর্থাৎ ঐ সময়ে তিনি স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন না। এবং সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ইবাদত করতেন।

মুসনাদে আহমদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন রমযান মাসের দশ দিন বাকী থাকতো তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তহবন্দ বেঁধে নিতেন এবং স্ত্রীদের সংস্পর্শ হতে দূরে থাকতেন।

ইমাম মালিক (রঃ) বলেন যে, রমযানের শেষ দশ রাতে লায়লাতুল কাদরকে সমান গুরুত্বের সাথে তালাশ করতে হবে। কোন রাতকে কোন রাত্রের উপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।

এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, সব সময়েই তো দূআর আধিক্য মুসতাহাব, তবে রমযান মাসে দু’আ আরো বেশী করে করতে হবে, বিশেষ করে রমযানের শেষ দশকে এবং বেজোড় রাত্রে। নিম্নের দু'আটি খুব বেশী পাঠ করতে হবেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে আপনি ভালবাসেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন!”

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি আমি কদরের রাত্রি পেয়ে যাই তবে আমি কি দু'আ পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেনঃ (আরবি) এই দু'আটি পাঠ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসায়ীও (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে ইবনে মাজাহতেও এটা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। মুসতাদরাকে হাকিম গ্রন্থেও এটা বর্ণিত হয়েছে)

ইমাম আবু মুহাম্মদ ইবনে আবী হাতিম (রঃ) এই সূরার তাফসীর প্রসঙ্গে একটি বিস্ময়কর রিওয়াইয়াত আনয়ন করেছেন। হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন যে, সপ্তম আকাশের শেষ সীমায় জান্নাতের সাথে সংযুক্ত রয়েছে সিদরাতুল মুনতাহা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের দূরত্বের উপর অবস্থিত। এর উচ্চতা জান্নাতে এবং এর শিকড় ও শাখা প্রশাখাগুলো কুরসীর নিচে প্রসারিত। তাতে এতো ফেরেশতা অবস্থান করেন যে, তাদের সংখ্যা নির্ণয় করা আল্লাহপাক ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এমন কি কোন চুল পরিমাণও জায়গা নেই যেখানে ফেরেশতা নেই। ঐ বৃক্ষের মধ্যভাগে হযরত জিবরাঈল (আঃ)! অবস্থান করেন।

আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে ডাক দিয়ে বলা হয়, হে জিবরাঈল (আঃ) কদরের রাত্রিতে সমস্ত ফেরেশতাকে নিয়ে পৃথিবীতে চলে যাও।” এই ফেরেশতাদের সবারই অন্তর স্নেহ ও দয়ায় ভরপুর। প্রত্যেক মুমিনের জন্যে তাঁদের মনে অনুগ্রহের প্রেরণা রয়েছে। সূর্যাস্তের সাথে সাথেই কদরের রাত্রিতে এসব ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে নেমে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন এবং সব জায়গায় সিজদায় পড়ে যান। তাঁরা সকল ঈমানদার নারী পুরুষের জন্যে দু'আ করেন। কিন্তু তারা গীর্জায় মন্দিরে, অগ্নি পূজার জায়গায়, মূর্তি পূজার জায়গায়, আবর্জনা ফেলার জায়গায়, নেশা খোরের অবস্থান স্থলে, নেশাজাত দ্রব্যাদি রাখার জায়গায়, মূর্তি রাখার জায়গায়, গান বাজনার সাজ সরঞ্জাম রাখার জায়গায় এবং প্রস্রাব পায়খানার জায়গায় গমন করেন না। বাকি সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাঁরা ঈমানদার নারীপুরুষদের জন্য দু'আ করে থাকেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) সকল ঈমানদারের সাথে করমর্দন করেন। তাঁর কর মর্দনের সময় মুমিন ব্যক্তির শরীরের লোমকুপ খাড়া হয়ে যায়, মন নরম হয় এবং চোখে অশ্রু ধারা নেমে আসে। এসব নিদর্শন দেখা দিলে বুঝতে হবে তার হাত হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর হাতের মধ্যে রয়েছে। হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন যে, ঐ রাত্রে যে ব্যক্তি তিনবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে, তার প্রথমবারের পাঠের সাথে সাথেই সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়, দ্বিতীয়বার পড়ার সাথে সাথেই আগুন থেকে সে মুক্তি পেয়ে যায় এবং তৃতীয়বারের পাঠের সাথে সাথেই জান্নাতে প্রবেশ সুনিশ্চিত হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ হে আবু ইসহাক (রঃ)! যে ব্যক্তি সত্য বিশ্বাসের সাথে এ কালেমা উচ্চারণ করে তার কি হয়? জবাবে তিনি বলেনঃ সত্য বিশ্বাসীর মুখ হতেই তো এ কালেমা উচ্চারিত হবে। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! লায়লাতুল কাদর কাফির ও মুনাফিকদের উপর এতো ভারী বোধ হয় যে, যেন তাদের পিঠে পাহাড় পতিত হয়েছে। ফজর পর্যন্ত ফেরেশতারা এভাবে রাত্রি কাটিয়ে দেন। তারপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) উপরের দিকে উঠে যান এবং অনেক উপরে উঠে স্বীয় পালক ছড়িয়ে দেন। অতঃপর তিনি সেই বিশেষ দুটি সবুজ পালক প্রসারিত করেন যা অন্য কোন সময় প্রসারিত করেন না। এর ফলে সূর্যের কিরণ মলিন ও স্তিমিত হয়ে যায়। তারপর তিনি সমস্ত ফেরেশতাকে ডাক দিয়ে নিয়ে যান। সব ফেরেশতা উপরে উঠে গেলে তাদের নূর এবং জিবরাঈল (আঃ)-এর পালকের নুর মিলিত হয়ে সূর্যের কিরণকে নিষ্প্রভ করে দেয়। ঐ দিন সূর্য অবাক হয়ে যায়। সমস্ত ফেরেশতা সে দিন আকাশ ও জমীনের মধ্যবর্তী স্থানের ঈমানদার নারী পুরুষের জন্য রহমত কামনা করে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তারা ঐ সব লোকের জন্যেও দু'আ করেন যারা সৎ নিয়তে রোযা রাখে এবং সুযোগ পেলে পরবর্তী রমযান মাসেও আল্লাহর ইবাদত। করার মনোভাব পোষণ করে। সন্ধ্যায় সবাই প্রথম আসমানে পৌঁছে যান। সেখানে অবস্থানকারী ফেরেশতারা এসে তখন পৃথিবীতে অবস্থানকারী ঈমানদারকে অমুকের পুত্র অমুক, অমুকের কন্যা অমুক, বলে বলে খবরাখবর জিজ্ঞেস করেন। নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর কোন কোন ব্যক্তি সম্পর্কে ফেরেশতারা বলেনঃ তাকে আমরা গত বছর ইবাদতে লিপ্ত দেখে ছিলাম, কিন্তু এবার সে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। আবার অমুককে গত বছর বিদআতে লিপ্ত দেখেছিলাম, কিন্তু এবার তাকে ইবাদতে লিপ্ত দেখে এসেছি। প্রশ্নকারী ফেরেশতারা তখন শেষোক্ত ব্যক্তির জন্যে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত, রহমতের দুআ করেন। ফেরেশতারা প্রশ্নকারী ফেরেশতাদেরকে আরো জানান যে, তারা অমুক অমুককে আল্লাহর যিক্র করতে দেখেছেন, অমুক অমুককে রুকূ’তে, অমুক অমুককে সিজদায় পেয়েছেন। এবং অমুক অমুককে কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখেছেন। একরাত একদিন প্রথম আসমানে কাটিয়ে তাঁরা দ্বিতীয় আসমানে গমন করেন। সেখানেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমনি করে তাঁরা নিজেদের জায়গা সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে পৌঁছেন। সিদরাতুল মুনতাহা তাদেরকে বলেঃ আমাতে অবস্থানকারী হিসেবে তোমাদের প্রতি আমার দাবী রয়েছে। আল্লাহকে যারা ভালবাসে আমিও তাদেরকে ভালবাসি। আমাকে তাদের অবস্থার কথা একটু শোনাও, তাদের নাম শোনাও। হযরত কা'ব (রাঃ) বলেনঃ ফেরেশতারা তখন আল্লাহর পুণ্যবনি বান্দাদের নামও পিতার নাম জানাতে শুরু করেন। তারপর জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহাকে সম্বোধন করে বলেঃ তোমাতে অবস্থানকারীরা তোমাকে যে সব খবর শুনিয়েছে সে সব আমাকেও একটু শোনাও। তখন সিদরাতুল মুনতাহা জান্নাতকে সব কথা শুনিয়ে দেয়। শোনার পর জান্নাত বলেঃ অমুক পুরুষ ও নারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! অতি শীঘ্রই তাদেরকে আমার সাথে মিলিত করুন।

হযরত জিবরাঈল (আঃ) সর্বপ্রথম নিজের জায়গায় পৌঁছে যান। তাঁর উপর তখন ইলহাম হয় এবং তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার অমুক অমুক বান্দাকে সিজদারত অবস্থায় দেখেছি। আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ তা'আলা তখন বলেনঃ আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তখন আরশ বহনকারী ফেরেশতাদেরকে এ কথা শুনিয়ে দেন। তখন ফেরেশতারা পরস্পর বলাবলি করেন যে, অমুক অমুক নারী পুরুষের উপর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত হয়েছে। তারপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ হে আল্লাহ গত বছর আমি অমুক অমুক ব্যক্তিকে সুন্নাতের উপর আমলকারী এবং আপনার ইবাদতকারী হিসেবে দেখেছি কিন্তু এবার সে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এবং আপনার বিধিবিধানের অবাধ্যতা করেছে। তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ হে জিবরাঈল (আঃ)! সে যদি মৃত্যুর তিন মিনিট পূর্বেও তাওবা করে নেয় তাহলে আমি তাকে মাফ করে দিবো। হযরত জিবরাঈল। (আঃ) তখন হঠাৎ করে বলেনঃ হে আল্লাহ আপনারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা। আপনি সমস্ত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। হে আমার প্রতিপালক! আপনি আপনার সৃষ্ট জীবের উপর সবচেয়ে বড় মেহেরবান। বান্দা তার নিজের উপর যেরূপ মেহেরবানী করে থাকে আপনার মেহেরবানী তাদের প্রতি তার চেয়েও অধিক। ঐ সময় আরশ এবং ওর চার পাশের পর্দাসমূহ এবং আকাশ ও ওর মধ্যস্থিত সবকিছুই কেঁপে ওঠে বলেঃ (আরবি) অর্থাৎ “করুণাময় আল্লাহর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা” হযরত কাব (রাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি রমযানের রোযা পূর্ণ করে রমযানের পরেও পাপমুক্ত জীবন যাপনের মনোভাব পোষণ করে সে বিনা প্রশ্নে ও বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

Quran Mazid
go_to_top
Quran Mazid
Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114
Settings