Surah Al Anfal Tafseer
Tafseer of Al-Anfal : 69
Saheeh International
So consume what you have taken of war booty [as being] lawful and good, and fear Allah . Indeed, Allah is Forgiving and Merciful.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৬৭-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, বদরের বন্দীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীবর্গের সাথে পরামর্শ করেন। তিনি তাদের বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা এই বন্দীদেরকে তোমাদের অধিকারে দিয়েছেন। বল, তোমাদের ইচ্ছা কি?” উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাদেরকে হত্যা করা হাক।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহ তাআলা এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, এরা কাল পর্যন্তও তোমাদের ভাইই ছিলো।” উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে তাঁর উত্তরের পুনরাবৃত্তি করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং পুনরায় ঐ কথা বললেন। এবার আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) দাড়িয়ে গিয়ে আরয করলেন- “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার মত এই যে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করুন।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চেহারা থেকে চিন্তার লক্ষণ, দূরীভূত হয়। তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিপণ নিয়ে সকলকেই মুক্ত করে দেন। তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এই সূরারই শুরুতে ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমেও এরূপ একটি হাদীস আছে যে, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেনঃ “এই বন্দীদের ব্যাপারে তোমরা কি চাও?” আবু বকর (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরা তো আপনার কওমের লোক এবং আপনার পরিবারেরই মানুষ। সুতরাং এদেরকে জীবিতই ছেড়ে দেয়া হাক এবং তাওবা করিয়ে নেয়া যাক। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, হয়তো কাল আল্লাহ এদের উপর দয়া করবেন।” কিন্তু উমার (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরা আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী এবং আপনাকে দেশ থেকে বিতাড়নকারী। সুতরাং এদের গর্দান উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দান করুন।” আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এ মাঠে বহু খড়ি রয়েছে। এগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিন এবং এদেরকে এ আগুনে ফেলে দিয়ে জ্বালিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এদের কথা শুনে নীরব হয়ে যান। কাউকেও কোন জবাব না দিয়ে উঠে চলে গেলেন। এই তিন মহান ব্যক্তিরই পক্ষ অবলম্বনকারী লোক জুটে গেলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এসে বলতে লাগলেনঃ কারও কারও অন্তর দুধের চেয়েও নরম হয়ে গেছে এবং কারও কারও হৃদয় পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। হে আবূ বকর! তোমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ)-এর মত। তিনি আল্লাহর নিকট আরয করেছিলেনঃ “যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা তো আমারই লোক, আর যারা আমার অবাধ্য হয়েছে তাদের ব্যাপারেও আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” হে আবূ বকর! তোমার দৃষ্টান্ত ঈসা (আঃ)-এর দৃষ্টান্তের ন্যায়ও বটে। যিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনার বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” হে উমার! তোমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে মূসা (আঃ)-এর ন্যায়। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন এবং তাদের অন্তর কঠোর করে দিন, সুতরাং তারা ঈমান আনবে না যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।হে আব্দুল্লাহ! তোমার দৃষ্টান্ত নূহ (আঃ)-এর ন্যায়ও বটে। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রভু! আপনি কাফিরদের মধ্য হতে যমীনের উপর একজনকেও অবশিষ্ট রাখবেন না।” দেখো, তোমরা এখন দারিদ্রপীড়িত। সুতরাং এই বন্দীদের। কেউই ফিদইয়া প্রদান ছাড়া মুক্তি পেতে পারে না। আর ফিদইয়া না দিলে তাদেরকে হত্যা করা হবে। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এদের থেকে সাহল ইবনে বায়যাকে বিশিষ্ট করে নিন। কেননা, সে ইসলামের আলোচনা করে থাকে।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নীরব হয়ে যান। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি সারা দিন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকলাম যে, না জানি আমার উপর আকাশ থেকে পাথরই বর্ষিত হয়। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সাহীল ইবনে বায়যা ব্যতীত।” তখন আল্লাহ তা'আলা... (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম হাকিম (রঃ) এটাকে তাঁর মুসতাদরিক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আর বলেছেন যে, এর ইসনাদ বিশুদ্ধ এবং তারা দুজন এটাকে তাখরীজ করেননি) এই কয়েদীদের মধ্যে আব্বাস (রাঃ) ছিলেন। তাঁকে একজন আনসারী গ্রেফতার করেছিলেন। এই আনসারীর ধরণা ছিল যে, তাঁকে হত্যা করা হবে। রাসূলুল্লাহও (সঃ) এ অবস্থা অবগত ছিলেন। তিনি বলেনঃ “এই চিন্তায় রাত্রে আমার ঘুম হয়নি।” উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “আপনার অনুমতি হলে আমি এ ব্যাপারে আনসারদের নিকট গমন করি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে অনুমতি দিলেন। সুতরাং উমার (রাঃ) আনসারদের নিকট গমন করে বললেনঃ “আব্বাস (রাঃ)-কে ছেড়ে দিন। তারা বললেনঃ “আল্লাহর কসম! আমরা তাকে ছাড়বো না।” তখন উমার (রাঃ) বললেনঃ “এতেই যদি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সন্তুষ্টি নিহিত থাকে তবুও কি ছাড়বেন না?” তারা তখন বললেনঃ “যদি এটাই হয় তবে আপনি তাঁকে নিয়ে যান। আমরা খুশী মনে তাকে ছেড়ে দিচ্ছি।” উমার (রাঃ) আব্বাস (রাঃ)-কে বললেনঃ “হে আব্বাস (রাঃ)! আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! আপনার ইসলাম গ্রহণ আমার কাছে। আমার পিতার ইসলাম গ্রহণের চাইতেও বেশী আনন্দের কারণ হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আপনার ইসলাম গ্রহণে খুশী হবেন।” এই সব কয়েদীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করলেন। তখন তিনি বললেনঃ “এরা তো আমাদের গোত্রেরই লোক। সুতরাং এদেরকে ছেড়ে দিন।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) উমার (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করলে তিনি বললেনঃ “এদের সকলকেই হত্যা করে দিন।” শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বন্দীদের কাছে মুক্তিপণ নিয়ে সকলকেই ছেড়ে দেন। আলী (রাঃ) বলেন যে, জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! আপনার সাহাবীদেরকে ইখতিয়ার দিন যে, তারা দুটোর মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারেন। হয় তাঁরা মুক্তিপণ নিয়ে বন্দীদেরকে ছেড়ে দিবেন, না হয় তাদেরকে হত্যা করে ফেলবেন। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে যে, মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হলে আগামী বছর বন্দীদের সমান সংখ্যক মুসলমান শহীদ হয়ে যাবেন।” সাহাবীগণ বলেন যে, তারা প্রথমটিই গ্রহণ করলেন এবং বন্দীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিবেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি অত্যন্ত গারীব ও দুর্বল)
এই বদরী বন্দীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “ হে সাহাবীর দল! যদি চাও তবে মুক্তিপণ আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দাও। অথবা ইচ্ছা করলে হত্যা করে দাও। কিন্তু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলে তাদের সমান সংখ্যক তোমাদের লোক শহীদ হয়ে যাবে।” এই সত্তরজন শহীদের মধ্যে সর্বশেষ শহীদ হচ্ছেন সাবিত ইবনে কায়েস (রাঃ), যিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। এই রিওয়ায়াতটি মুরসালরূপে উবাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ পাকের জ্ঞানই সবচেয়ে বেশী।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহর কিতাবে প্রথম থেকেই যদি তোমাদের জন্যে গনীমতের মাল হালাল রূপে লিপিবদ্ধ না করা হতো এবং বর্ণনা করে দেয়ার পূর্বে আমি শাস্তি প্রদান করি না- এটা যদি আমার নীতি না হতো তবে যে ফিদইয়া বা মুক্তিপণ তোমরা গ্রহণ করেছে তার কারণে আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করতাম। এভাবেই আল্লাহ তা'আলা ফায়সালা করে রেখেছিলেন যে, কোন বদরী সাহাবীকে তিনি শাস্তি দিবেন না। তাদের জন্যে ক্ষমা লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। উম্মুল কিতাবে তোমাদের জন্যে গনীমতের মাল হালাল বলে লিখে দেয়া হয়েছে। সুতরাং গনীমতের মাল তোমাদের জন্যে হালাল ও পবিত্র। ইচ্ছামত তোমরা তা খাও, পান কর এবং নিজেদের কাজে লাগাও।" পূর্বেই এটা লিখে দেয়া হয়েছিল যে, এই উম্মতের জন্যে এটা হালাল। এটাই ইবনে জারীর (রঃ)-এর নিকট পছন্দনীয় উক্তি। আর সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এর সাক্ষ্য মিলে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস প্রদান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে অন্য কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। (১) এক মাসের পথ পর্যন্ত ভয় ও প্রভাব দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (২) যমীনকে আমার জন্যে মসজিদ ও পবিত্র বানানো হয়েছে। (৩) গনীমতের মাল আমার জন্যে হালাল করা হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কারো জন্যে হালাল ছিল না। (৪) আমাকে শাফাআতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। (৫) প্রত্যেক নবীকে বিশেষভাবে তাঁর নিজের কওমের কাছে প্রেরণ করা হতো। কিন্তু আমি সাধারণভাবে সকল মানবের নিকট প্রেরিত হয়েছি।”
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদের ছাড়া কোন কালো মাথা বিশিষ্ট মানুষের জন্যে গনীমতের মাল হালাল করা হয়নি। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “তোমরা যে গনীমতের মাল লাভ করেছো তা হালাল ও পবিত্ররূপে ভক্ষণ কর।” সাহাবীগণ কয়েদীদের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করেছিলেন । সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, প্রত্যেকের নিকট থেকে চারশ করে আদায় করা হয়েছিল। সুতরাং জমহুরে উলামার মতে প্রতি যুগের ইমামের এ ইখতিয়ার রয়েছে যে, তিনি ইচ্ছা করলে বন্দী কাফিরদেরকে হত্যা করতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানু কুরাইযার বন্দীদেরকে হত্যা করেছিলেন। আর ইচ্ছা করলে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরী বন্দীদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে আযাদ করে দিয়েছিলেন। আবার ইচ্ছা করলে মুসলমান বন্দীদের বিনিময়ে মুক্ত করে দিতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মাসলামা ইবনে আকওয়া গোত্রের একটি স্ত্রীলোক ও তার মেয়েকে মুশরিকদের নিকট বন্দী মুসলমানদের বিনিময়ে তাদেরকে প্রদান করেছিলেন। আর ইচ্ছা করলে ঐ বন্দীদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখতে পারে। এটাই ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও উলামায়ে কিরামের একটি দলের মাযহাব, যদিও অন্যেরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এখানে এর বিস্তারিত আলোচনা করার তেমন কোন সুযোগ নেই।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings