Surah Al Anfal Tafseer
Tafseer of Al-Anfal : 2
Saheeh International
The believers are only those who, when Allah is mentioned, their hearts become fearful, and when His verses are recited to them, it increases them in faith; and upon their Lord they rely -
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
২-৪ নং আয়াতের তাফসীর:
মুনাফিকরা যখন নামায আদায় করে তখন কুরআন কারীমের আয়াতসমূহ তাদের অন্তরে মোটেই ক্রিয়াশীল হয় না । না তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, না আল্লাহর উপর ভরসা করে। যখন তারা বাড়ীতে অবস্থান করে তখন নামায আদায় করে না। আর তারা যাকাতও দেয় না। আল্লাহ পাক এখানে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মুমিন কখনও এরূপ হয় না। এখানে মুমিনদের গুণাবলী এভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যখন তারা কুরআন পাঠ করে তখন ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। যখন তাদের সামনে কুরআনের আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা ওগুলো বিশ্বাস করে বলে তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় এবং তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারও উপর ভরসা করে না। মুমিনের প্রকৃত পরিচয় এই যে, কোন ব্যাপারে মধ্যভাগে আল্লাহর নাম এসে গেলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। তারা তাঁর নির্দেশ পালন করে থাকে এবং তাঁর নিষেধকৃত কাজ থেকে বিরত থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা এমন লোক যে, যখন তারা এমন কাজ করে বসে যাতে অন্যায় হয় অথবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে বসে তখন আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর নিজেদের পাপরাশির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে, আর আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে পাপসমূহ ক্ষমা করবে? আর তারা নিজেদের (মন্দ কর্মে) হঠকারিতা করে না এবং তারা অবগত।” অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আল্লাহর সামনে হাযির হওয়ার যাদের ভয় রয়েছে এবং যারা কুপ্রবৃত্তিকে অন্যায় ও অবৈধভাবে পূর্ণ করা থেকে বিরত থাকে, প্রকৃতপক্ষে তারাই জান্নাতের হকদার।”
সুদ্দী (রঃ) মুমিন ব্যক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ “সে ঐ ব্যক্তি যে পাপ কার্যের ইচ্ছা করে, কিন্তু যখন তাকে বলা হয়- ‘আল্লাহকে ভয় কর তখন তার অন্তর কেঁপে ওঠে।”
উম্মু দারদা (রাঃ) বলেন, যে অন্তর আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে শুরু করে এবং দেহে এমন এক জ্বালার সৃষ্টি হয় যে, লোম খাড়া হয়ে যায়। যখন এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যাবে তখন বান্দার উচিত যে, সে যেন সেই সময় স্বীয় মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে। কেননা, ঐ সময় দুআ কবূল হয়ে থাকে।
ইরশাদ হচ্ছে- কুরআন শুনে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। যেমন তিনি বলেনঃ যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন কেউ বলে, এই আয়াত দ্বারা তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে কথা এই যে, ঐ ব্যক্তির ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় যে পূর্ব থেকেই মুমিন। আর জান্নাতের সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্যেই। ইমাম বুখারী (রঃ) এবং অন্যান্য ইমামগণ এই প্রকারের আয়াতসমূহ দ্বারাই এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ঈমানের মধ্যে হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে। জমহুর ইমামদের মাযহাব এটাই। এমন কি বলা হয়েছে যে, বহু ইমামের এর উপরই ইজমা রয়েছে। যেমন ইমাম শাফিঈ (রঃ), ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম আবু উবাইদ (রঃ)। আমরা এটা শরহে বুখারীতে বর্ণনা করেছি।
(আরবী) অর্থাৎ তারা তিনি ছাড়া আর কারো কাছে কোন আশাই করে না, আশ্রয়দাতা একমাত্র তাঁকেই মনে করে থাকে। কিছু চাইলে তার কাছেই চেয়ে থাকে। প্রতিটি কাজে তার দিকেই ঝুঁকে পড়ে। তারা জানে যে, তিনি (আল্লাহ) যা চাইবেন তাই হবে এবং যা চাইবেন না তা হবে না। তিনি একক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। সব কিছুরই মালিক একমাত্র তিনিই। তাঁর হুকুমের পর আর কারও হুকুম চলতে পারে না। তিনি সত্বর হিসাব গ্রহণকারী। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, আল্লাহর উপর ভরসা হচ্ছে ঈমানের বন্ধন।
(আরবী) মুমিনদের বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করার পর তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ পাক সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা নামায পড়ে এবং তাদের প্রদত্ত মাল থেকে গরীব দুঃখীদেরকে দান করে থাকে। এ কাজ দু’টি এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, সমস্ত মঙ্গলজনক কাজ এ দু'টি কাজের অন্তর্ভুক্ত। নামায প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আল্লাহর হকসমূহের মধ্যে একটি হক। ইকামাতে সালাতের অর্থ হচ্ছে নামাযকে সময়মত আদায় করা, অযু করার সময় ভালরূপে হাত মুখ ধৌত করা, রুকু-সিজদায় তাড়াহুড়া না করা এবং আদব সহকারে কুরআন মাজীদ পাঠ করা এবং নবী (সঃ)-এর উপর তাশাহ্হুদ ও দরূদ পাঠ করা। এটাই ইকামাতে সালাত এবং (আরবী) দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে। আর (আরবী) -এর ভাবার্থ এই যে, যা কিছু আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন তা যদি যাকাতের নেসাবে পৌছে যায় তবে যাকাত প্রদান করবে এবং যা কিছু রয়েছে তা থেকেই মানুষকে দান করতে থাকবে। বান্দাদের ওয়াজিব ও মুসতাহাব আর্থিক হক আদায় করবে। আল্লাহর প্রদত্ত সম্পদ হতে সকল বান্দাকে সাহায্য করতে থাকবে। কেননা, সমস্ত লোকই আল্লাহর পরিবার ও সন্তান সন্ততি। আল্লাহ তা'আলার নিকট ঐ বান্দা সবচেয়ে বেশী স্বীকৃত যে তার সৃষ্টজীবের বেশী উপকার সাধন করে থাকে। তোমাদের মালধন আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যেন আমানত স্বরূপ। অতিসত্বরই তোমাদের মাল তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে। সুতরাং ওর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া উচিত নয়।
(আরবী) এসব গুণে যারা গুণান্বিত তারাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন। হারিস ইবনে মালিক (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আগমন করলে তিনি তাকে বলেনঃ “হে হারিস (রাঃ)! সকাল বেলা তোমার কিভাবে কেটেছে?” হারিস (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “খুব চিন্তা করে কথা বল। প্রত্যেক জিনিসেরই একটা হাকীকত বা মূলতত্ত্ব রয়েছে। বল তো, তোমার ঈমানের হাকীকত কি?” হারিস (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “আমি দুনিয়ার মহব্বত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, রাত্রে জেগে জেগে ইবাদত করি, দিনে রোযার কারণে পিপাসার্ত থাকি এবং নিজেকে এরূপ পাই যে, যেন আমার সামনে আল্লাহর আরশ খোলা রয়েছে, আমি যেন জান্নাতবাসীদেরকে পরস্পর মিলিত হতে দেখছি এবং জাহান্নামবাসীদেরকে দেখছি যে, তারা কষ্ট ও বিপদে পতিত হয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা, হে হারিস (রাঃ)! তাহলে তুমি ঈমানের হাকীকতে পৌছে গেছে। এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার চেষ্টা কর।” একথা তিনি তিনবার বললেন।
কুরআন কারীম আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং (আরবী) শব্দটি সাহিত্যিক মর্যাদা রাখে। যেমন বলা হয়ে থাকে (আরবী) অর্থাৎ ‘অমুক ব্যক্তি প্রকৃত সরদার’, যদিও কওমের মধ্যে অন্যান্য সরদারও রয়েছে। আরও বলা হয়- ‘অমুক প্রকৃত ব্যবসিক’, যদিও অন্যান্য ব্যবসিকও রয়েছে। অমুক ব্যক্তি প্রকৃত কবি', যদিও আরও বহু কবি রয়েছে।
(আরবী) অর্থাৎ জান্নাতে তারা বড় বড় পদ লাভ করবে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহর কাছে তাদের জন্যে বড় পদমর্যাদা রয়েছে এবং তারা যা কিছু করছে আল্লাহ তা সম্যক অবগত আছেন। আল্লাহ তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাদের পুণ্যগুলো কবূল করবেন।” জান্নাতবাসীরা একে অপরের অপেক্ষা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে। কিন্তু উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন লোকদেরকে দেখে অহংকার করবে না এবং নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা উচ্চ শ্রেণীর লোকদেরকে দেখে হিংসাও করবে না।
সহীহ মুসলিম ও সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ “উপরের লোকদেরকে নীচের লোকেরা এরূপভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশ প্রান্তে তারকারাজি দেখে থাক।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কি নবীদের মযিল, যা অন্য কেউ লাভ করবে না?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “কেন লাভ করবে না? আল্লাহর শপথ! যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং রাসলদেরকে সত্য জেনেছে তারাও এর অধিকারী হবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতবাসীরা উপরের জান্নাতবাসীদেরকে এরূপ দেখবে যেমন আকাশের উপর তারকারাজি দেখা যায়। আবু বকর (রাঃ) এবং উমার (রাঃ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। তারাও এই মর্যাদা লাভ করবে।”
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings