Surah Al Anfal Tafseer
Tafseer of Al-Anfal : 11
Saheeh International
[Remember] when He overwhelmed you with drowsiness [giving] security from Him and sent down upon you from the sky, rain by which to purify you and remove from you the evil [suggestions] of Satan and to make steadfast your hearts and plant firmly thereby your feet.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
১১-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে স্বীয় নিয়ামত ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, যুদ্ধের সময় তিনি তাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে তাদের প্রতি ইহসান করেছেন। নিজেদের সংখ্যার স্বল্পতা এবং শত্রুদের সংখ্যাধিক্যের অনুভূতি তাদের মনে জেগেছিল বলে তারা কিছুটা ভীত হয়ে পড়েছিল। তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে তাদের মনে প্রশান্তি আনয়ন করেন। এরূপ তিনি উহুদের যুদ্ধেও করেছিলেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অনন্তর আল্লাহ সেই দুঃখের পর তোমাদের প্রতি নাযিল করলেন শান্তি অর্থাৎ তন্দ্রা যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল।” (৩:১৫৪) হযরত আবু তালহা (রাঃ) বলেনঃ “উহুদের যুদ্ধের দিন আমারও তন্দ্রা এসেছিল এবং আমার হাত থেকে তরবারী পড়ে যাচ্ছিল। আমি তা উঠিয়ে নিচ্ছিলাম। আমি জনগণকেও দেখছিলাম যে, তারা ঢাল মাথার উপর করে তন্দ্রায় ঢলে পড়ছে।” হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “বদরের দিন হযরত মিকদাদ (রাঃ) ছাড়া আর কারো কাছে সওয়ারী ছিল না। আমরা সবাই নিদ্রিত অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি গাছের নীচে সকাল পর্যন্ত নামায পড়ছিলেন এবং আল্লাহর সামনে কান্নাকাটি করছিলেন।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, যুদ্ধের দিন এই তন্দ্রা যেন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে এক প্রকার শান্তি ও নিরাপত্তা ছিল। কিন্তু নামাযে এই তন্দ্রাই আবার শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তন্দ্রা মাথায় হয় এবং ঘুম অন্তরে হয়। আমি বলি উহুদের যুদ্ধে মুমিনদেরকে তন্দ্রা আচ্ছন্ন করেছিল। আর এ খবর তো খুবই সাধারণ ও প্রসিদ্ধ। কিন্তু এখানে এই আয়াতে কারীমার সম্পর্ক রয়েছে বদরের ঘটনার সাথে। আর এ আয়াতটি এটা প্রমাণ করে যে, বদরের যুদ্ধেও মুমিনদের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করা হয়েছিল এবং কঠিন যুদ্ধের সময় এভাবে মুমিনদের উপর তন্দ্রা ছেয়ে যেতো, যাতে তাদের অন্তর আল্লাহ তাআলার সাহায্যে প্রশান্ত ও নিরাপদ থাকে। আর মুমিনদের উপর এটা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পা । যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই বর্তমান মুশকিলসমূহের সাথেই আসানী রয়েছে। এ জন্যেই সহীহ হাদীসে এসেছে যে, বদরের দিন নবী (সঃ) তাঁর জন্যে নির্মিত কুটিরে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে অবস্থান করছিলেন। ইতিমধ্যে নবী (সঃ)-এর উপর তন্দ্রা ছেয়ে যায়। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে তন্দ্রার ভাব কাটিয়ে উঠেন এবং বলেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)! সুসংবাদ গ্রহণ কর। ঐ দেখ, জিবরাঈল (আঃ) ধূলিমলিন বেশে রয়েছেন!” অতঃপর তিনি কুটির হতে বেরিয়ে আসলেন এবং পাঠ করলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শত্রুদের পরাজয় ঘটেছে এবং তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক পলায়ন করবে।” (৫৪:৪৫) ইরশাদ হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ “তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন।” আলী ইবনে আবি তালহা (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, বদরে যেখানে নবী (সঃ) অবতরণ করেছিলেন সেখানে মুশরিকরা বদর ময়দানের পানি দখল করে নিয়েছিল এবং মুসলমান ও পানির মাঝখানে তারা প্রতিবন্ধক রূপে দাঁড়িয়েছিল। মুসলমানরা দুর্বলতাপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন। ঐ সময় শয়তান মুসলমানদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে দেয়। সে তাদেরকে বলে- “তোমরা তো নিজেদেরকে বড়ই আল্লাহওয়ালা মনে করছে। আর তোমাদের মধ্যে স্বয়ং রাসূল (সঃ) বিদ্যমান রয়েছেন। পানির উপর দখল তো মুশরিকদের রয়েছে। আর তোমরা পানি থেকে এমনভাবে বঞ্চিত রয়েছে যে, নাপাক অবস্থাতেই নামায আদায় করছো!” তখন আল্লাহ তাআলা প্রচুর পানি বর্ষণ করলেন। মুসলমানরা পানি পান করলেন এবং পবিত্রতাও অর্জন করলেন। মহান আল্লাহ শয়তানের কুমন্ত্রণাও খাটো করে দিলেন। পানির কারণে মুসলমানদের দিকের বালু জমে শক্ত হয়ে গেল। ফলে জনগণের ও জানোয়ারগুলোর চলাফেরার সুবিধা হলো। আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ) ও মুমিনদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করলেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) একদিকে পাঁচশ' ফেরেশতা নিয়ে বিদ্যমান ছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, মুশরিক কুরায়েশরা যখন আবু সুফিয়ানের কাফেলাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসে তখন তারা বদর কূপের উপর এসে শিবির স্থাপন করে। আর মুসলমানরা পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। পিপাসায় তারা ছটফট করে । নামাযও তারা নাপাকী এবং হাদাসের অবস্থায় পড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাদের অন্তরে বিভিন্ন প্রকারের খেয়াল চেপে বসে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাঠে পানি বইতে শুরু করে। মুসলমানেরা পানিতে পাত্র ভর্তি করে নেয় এবং জানোয়ারগুলোকে পানি পান করায়। তাতে তারা গোসলও করে। এভাবে তারা পবিত্রতা লাভ করে। এর ফলে তাদের পাগুলোও অটল ও স্থির থাকে। (অনুরূপ বর্ণনা কাতাদা (রঃ) ও যহাক (রঃ) হতে বর্ণিত আছে) মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্য ভাগে বালুকারাশি ছিল। বৃষ্টি বর্ষণের ফলে বালু জমে শক্ত হয়ে যায়। কাজেই মুসলমানদের চলাফেরার সুবিধা হয়।
প্রসিদ্ধ ঘটনা এই যে, নবী (সঃ) বদর অভিমুখে রওয়ানা হয়ে পানির নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করেন। হাবাব ইবনে মুনযির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! আপনি যে এ স্থানে অবতরণ করেছেন এটা কি আল্লাহর নির্দেশক্রমে, যার বিরোধিতা করা যাবে না, না যুদ্ধের পক্ষে এটাকে উপযুক্ত স্থান মনে করেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যুদ্ধের জন্যে উপযুক্ত স্থান হিসেবেই আমি এখানে অবস্থান করেছি।” তখন হযরত হাবাব (রাঃ) বলেনঃ “তাহলে আরও সামনে অগ্রসর হোন এবং পানির শেষাংশ পর্যন্ত দখল করে নিন। ওখানে হাউয তৈরী করে এখানকার সমস্ত পানি জমা করুন। তাহলে পানির উপর অধিকার আমাদেরই থাকবে এবং শক্রদের পানির উপর কোন দখল থাকবে না।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সামনে বেড়ে যান এবং ঐ কাজই করেন।
বর্ণিত আছে যে, হাবাব (রাঃ) যখন এই পরামর্শ দেন তখন ঐ সময়ে একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে অবতরণ করেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। ঐ ফেরেশতা বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আল্লাহ তা'আলা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, হাবাব ইবনে মুনযির (রাঃ)-এর পরামর্শ আপনার জন্যে সঠিক পরামর্শই বটে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি এই ফেরেশতাকে চিনেন কি?” হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে দেখে বলেন, আমি সমস্ত ফেরেশতাকে চিনি না বটে, তবে এটা যে একজন ফেরেশতা এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা শয়তান অবশ্যই নয়।
হযরত ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে নবী (সঃ)-এর দিকের ভূমি জমে গিয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং ওর উপর চলতে সুবিধা হয়। পক্ষান্তরে কাফিরদের দিকের ভূমি নীচু ছিল। কাজেই ওখানকার মাটি দলদলে হয়ে যায়। ফলে তাদের পক্ষে ঐ মাটিতে চলাফেরা কষ্টকর হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রতি তার দ্বারা ইহসান করার পূর্বে বৃষ্টি বর্ষিয়ে ইহসান করেছিলেন। ধূলাবালি জমে গিয়েছিল এবং মাটি শক্ত হয়েছিল। সুতরাং মুসলমানরা খুব খুশী হয়েছিলেন এবং তাদের পায়ের স্থিরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। অতঃপর তাদের চোখে তন্দ্রা নেমে আসে। তাদের মন মগজ তাজা হয়ে যায়। সকালে যুদ্ধ। রাত্রে হালকা বৃষ্টি হয়ে গেছে। আমরা গাছের নীচে গিয়ে বৃষ্টি থেকে আশ্রয় গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) জেগে থেকে জনগণের সাথে যুদ্ধ সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করতে থাকেন।”
(আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা হাদাসে আসগার (অযু না থাকা অবস্থা) এবং হাদাসে আকবার (গোসল ফরয হওয়ার অবস্থা) থেকে পবিত্র করার জন্যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যেন তিনি তোমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণার পর পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করেন। এটা ছিল অন্তরের পবিত্রতা। যেমন জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ “পরিধানের জন্যে তাদেরকে রেশমী কাপড় দেয়া হবে, আর দেয়া হবে তাদেরকে সোনা ও রূপার অলংকার।” এটা হচ্ছে বাহ্যিক সৌন্দর্য। আর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পবিত্র সুরা পান করাবেন এবং হিংসা বিদ্বেষ থেকে তাদেরকে পাক-পবিত্র করবেন। এটা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য। বৃষ্টি বর্ষণ করার এটাও উদ্দেশ্য ছিল যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের অন্তরে প্রশান্তি আনয়ন করে তোমাদেরকে ধৈর্যশীল করবেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদেরকে অটল রাখবেন। এই ধৈর্য ও মনের স্থিরতা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ বীরত্ব এবং যুদ্ধে অটল থাকা হচ্ছে বাহ্যিক বীরত্ব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। মহান আল্লাহর উক্তি-(আরবী) অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! ঐ সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের কাছে অহী করলেন আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং তোমরা ঈমানদারদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত ও অবিচল রাখো। এটা হচ্ছে গোপন নিয়ামত যা আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদের উপর প্রকাশ করছেন, যেন তারা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। তিনি হচ্ছেন কল্যাণময় ও মহান। তিনি ফেরেশতাদেরকে জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁরা যেন নবী (সঃ)-কে, নবী (সঃ)-এর দ্বীনকে এবং মুসলিম জামাআতকে সাহায্য করেন। যাতে তাদের মন ভেঙ্গে না যায় এবং তারা সাহস হারা না হয়। সুতরাং হে ফেরেশতার দল! তোমরাও ঐ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর। কথিত আছে যে, ফেরেশতা কোন মুসলমানের কাছে আসতেন এবং বলতেন, আমি এই কওমকে অর্থাৎ মুশরিকদেরকে বলতে শুনেছি- “যদি মুসলমানরা আমাদেরকে আক্রমণ করে তবে আমরা যুদ্ধের মাঠে টিকতে পারবো না।” এভাবে কথাটি এক মুখ হতে আর এক মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সাহাবীদের মনোবল বাড়তে থাকে এবং তাঁরা বুঝতে পারেন যে, মুশরিকদের যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি কাফিরদের হৃদয়ে ভীতি সৃষ্টি করে দেবো।” অর্থাৎ হে ফেরেশতামণ্ডলী! তোমরা মুমিনদেরকে অটল ও স্থির রাখে এবং তাদের হৃদয়কে দৃঢ় কর।
(আরবী) অর্থাৎ তোমরা তাদের স্কন্ধে আঘাত হাননা।' (আরবী) অর্থাৎ ‘তোমরা আঘাত হাননা তাদের অঙ্গুলিসমূহের প্রতিটি জোড়ায় জোড়ায়।' মুফাসসিরগণ (আরবী)-এর অর্থের ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ মাথায় মারা অর্থ নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ অর্থ নিয়েছেন গর্দানে মারা। এই অর্থের সাক্ষ্য নিম্নের আয়াতে পাওয়া যায়ঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করবে তখন তাদের গর্দানে মারবে, শেষ পর্যন্ত যখন তাদেরকে খুব বেশী হত্যা করে ফেলবে তখন (হত্যা করা বন্ধ করে অবশিষ্টদেরকে) দৃঢ়ভাবে বেঁধে ফেলবে।” (৪৭:৪) হযরত কাসিম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আল্লাহর শাস্তিতে জড়িত করার জন্যে প্রেরিত হইনি। (অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত শাস্তি, যেমন পূর্ববর্তী উম্মতবর্গের উপর অবতীর্ণ হতো), বরং তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি তাদের গর্দান উড়িয়ে দেবো এবং তাদেরকে শক্তভাবে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করবো এ জন্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি।” ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা গর্দানে আঘাত করা ও মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়া বুঝানো হয়েছে। মাগাযী উমভী’তে রয়েছে যে, বদরের যুদ্ধের দিন নবী (সঃ) নিহতদের পার্শ্ব দিয়ে গমনের সময় বলছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ মাথা কর্তিত অবস্থায় পড়ে আছে।' তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) ঐ কথার সাথেই ছন্দ মিলিয়ে দিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এমন লোকদের মাথাগুলো কর্তিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে যারা আমাদের উপর অহংকার প্রকাশ করতো। কেননা, তারা ছিল বড় অত্যাচারী ও অবাধ্য।” এখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি ছন্দের প্রাথমিক দু'টি শব্দ উচ্চারণ করলেন এবং অপেক্ষমান থাকলেন যে, আবু বকর (রাঃ) একে কবিতা বানিয়ে ছন্দ পূর্ণ করে দিবেন। কেননা, কবি রূপে পরিচিত হওয়া তাঁর জন্যে শোভনীয় ছিল না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং এটা তার জন্যে উপযুক্তও নয়।” (৩৬:৬৯) বদরের দিন জনগণ ঐ নিহত ব্যক্তিদেরকে চিনতে পারতো যাদেরকে ফেরেশতাগণ হত্যা করেছিলেন। কেননা ঐ নিহতদের যখম ঘাড়ের উপর থাকতো বা জোড়ের উপর থাকতো। আর ঐ যখম এমনভাবে চিহ্নিত হয়ে যেতে যেন আগুনে দগ্ধ করা হয়েছে।
(আরবী) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের শত্রুদেরকে তাদের জোড়ের উপর আঘাত কর, যেন তাদের হাত-পা ভেঙ্গে যায়। (আরবী) শব্দটি হচ্ছে শব্দের বহুবচন। প্রত্যেক জোড়কে (আরবী) বলা হয়। ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে ফেরেশতামণ্ডলী! তোমরা ঐ কাফিরদের চেহারা ও চোখের উপর আঘাত কর এবং এমনভাবে আহত করে দাও যে, যেন ওগুলোকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দ্বারা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর কোন কাফিরকে বন্দী করে নেয়ার পর হত্যা করা জায়েয নয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বদরের ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, অবুি জেহেল বলেছিলঃ “তোমরা মুসলমানদেরকে হত্যা করার পরিবর্তে জীবিত ধরে রাখো, যেন তোমরা তাদেরকে আমাদের ধর্মকে মন্দ বলা, আমাদেরকে বিদ্রুপ করা এবং লতি' ও উ’কে অমান্য করার স্বাদ গ্রহণ করাতে পার।” তাই আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলে দিয়েছিলেনঃ “আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। তোমরা মুমিনদেরকে অটল রাখো। আমি কাফিরদের অন্তরে মুসলমানদের আতঙ্ক সৃষ্টি করবো। তোমরা তাদের গর্দানে ও জোড়ে জোড়ে মারবে। বদরের নিহতদের মধ্যে আবু জেহেল ৬৯ (উনসত্তর) নম্বরে ছিল। অতঃপর উকবা ইবনে আবি মুঈতকে বন্দী করে হত্যা করে দেয়া হয় এবং এভাবে ৭০ (সত্তর) পূর্ণ হয়।
(আরবী) -এর কারণ এই ছিল যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং শরীয়ত ও ঈমান পরিহারের নীতি অবলম্বন করেছিল। (আরবী) শব্দটি (আরবী) থেকে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ “সে লাঠিকে দু'টুকরো করেছে।” ইরশাদ হচ্ছে- “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরোধিতা করে, তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর হস্ত । তিনি কোন কিছুই ভুলে যাবেন না। তাঁর গযবের মুকাবিলা কেউই করতে পারে না।”
(আরবী) এটাই হচ্ছে তোমাদের শাস্তি, সুতরাং তোমরা এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, তোমাদের জানা উচিত যে, সত্য অস্বীকারকারীদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের শাস্তি। এখানে এ কথা কাফিরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা দুনিয়াতে এই শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর এবং জেনে রেখো যে, কাফিরদের জন্যে আখিরাতেও জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings