Surah Al Fajr Tafseer
Tafseer of Al-Fajr : 24
Saheeh International
He will say, "Oh, I wish I had sent ahead [some good] for my life."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২১-৩০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে কিয়ামতের ভয়াবহতা ও মানুষ সেদিন আফসোস করে যা বলবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। كَلّاَ অর্থাৎ ইয়াতিমদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ ও তাদের সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কখনও উচিত নয়। বরং তোমাদের সামনে এমন দিন আগমন করছে যেদিন জমিন চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। সেদিন তোমাদেরকে সেসব অন্যায় কর্মের বিচারের জন্য মুুখোমুখি হতে হবে। সুতরাং সেদিনকে তোমাদের ভয় করা উচিত।
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন : مرة بعد مرة অর্থ একের পর এক কম্পন আসা ও সবকিছু সমান করে ফেলা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمٰوٰتُ وَبَرَزُوْا لِلهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ)
“যেদিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশসমূহও; এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখেÑযিনি এক, পরাক্রমশালী।” (সূরা ইবরাহীম ১৪: ৪৮)
(وَّجَا۬ءَ رَبُّكَ....)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মানুষের ফায়সালা করার জন্য আগমন করবেন এবং প্রত্যেক আকাশের ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে আসবে। আর জাহান্নামকেও ফেরেশতারা শেকলে বেঁধে নিয়ে আসবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে। তখন তার সত্তর হাজার লাগাম থাকবে আর প্রত্যেক লাগামে সত্তম হাজার ফেরেশতা থাকবে। তাহলে সর্বমোট ৭০০০০×৭০০০০=৪৯০০০০০০০০ জন ফেরেশতা জাহান্নাম টেনে নিয়ে আসবে। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযী হা. ২৫৭৩)
আল্লাহ তা‘আলা বিচার ফায়সালার জন্য আগমন করবেন, তবে কিভাবে আসবেন, তার ধরণ কী হবে? তিনি আসলে আরশ খালি হয়ে যাবে কি-না ইত্যাদি বিষয় তিনি ছাড়া কেউ জানেন না। কারণ
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” (সূরা শুরা ৪২: ১১)
সুতরাং তিনি যেভাবে চান, যখন চান তাঁর মর্যাদার সাথে যেমন উপযোগী সেভাবেই আগমন করেন ও করবেন। যেমন হাদীসে এসেছে, তিনি প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে আসেন (সহীহ বুখারী হা. ১১৪৫)। এ বিষয়ে বলা যাবে না যে, আল্লাহ তা‘আলা আসেন না বরং তাঁর নির্দেশ আসে কিম্বা এসব রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
(يَوْمَئِذٍ يَّتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ)
অর্থাৎ সেদিন মানুষ দুনিয়াতে তার কৃত ভাল মন্দ আমলের কথা স্মরণ করতে পারবে কিন্তু সে স্মরণ কোন কাজে আসবে না। আফসোস করে বলবে: হায়! যদি জীবনে ভাল আমল করতাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰي يَدَيْهِ يَقُوْلُ يٰلَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا)
“জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ দু’হাত দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম!” (সূরা ফুরকান ২৫: ২৭)
এ জন্য নাবী (সাঃ) বলেন : পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে গনিমত মনে কর। তার প্রথম হলো মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে। অর্থাৎ মারা যাওয়ার পূর্বে জীবনে আখিরাতের জন্য সৎ আমল করে পাথেয় গ্রহণ করে নাও। (ফাতহুল বারী ১৮ : ২২৪)
(فَیَوْمَئِذٍ لَّا یُعَذِّبُ عَذَابَھ۫ٓ اَحَدٌ)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অবাধ্যতার শাস্তি আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে দেবেন তার চেয়ে কঠিনভাবে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা আর কারো নেই। দুনিয়ার কোন শাস্তি আখেরাতের শাস্তির তুলনায় কিছুই নয়।
(وَّلَا یُوْثِقُ وَثَاقَھ۫ٓ اَحَدٌ)
অর্থাৎ পাপীদেরকে জাহান্নামের শেকল দ্বারা মজবুত করে বাঁধা হবে এবং মুখের ওপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। পক্ষান্তরে যারা মু’মিন তাদেরকে বলা হবে: হে প্রশান্ত আত্মার অধিকারী মু’মিনগণ! তোমরা প্রতিপালকের প্রতিদান ও সুখ সামগ্রীর নিকট ফিরে আস।
(رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ও আল্লাহ তা‘আলা আমলের প্রতিদানস্বরূপ যে সম্মাননার ব্যবস্থা করে রেখেছেন তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে এস এবং আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রতি সন্তুষ্ট। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ ط ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّه۫)
“আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে তার প্রতিপালককে ভয় করে।” (সূরা বায়্যিনাহ ৯৮: ৮)
(فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ)
অর্থাৎ আমার সৎ বান্দাদের সাথে শামিল হয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর। এ কথা বিচার শেষে বলা হবে। فِيْ عِبَادِيْ ‘আমার বান্দাদের মধ্যে’ অর্থ
في الصالحين من عبادي
আমার নেককার বান্দাদের মধ্যে। (কুরতুবী) যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَنُدْخِلَنَّهُمْ فِي الصّٰلِحِيْنَ)
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করব।” (সূরা আনকাবূত ২৯: ৯) এজন্য বিগত নাবীরা দু‘আ করে বলতেন :
(رَبِّ هَبْ لِيْ حُكْمًا وَّأَلْحِقْنِيْ بِالصّٰلِحِيْن)
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান দান কর এবং সৎকর্মপরায়ণদের মধ্যে শামিল কর।’ (সূরা শুআরা ২৬ : ৮৩) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি তার সাথেই থাকবে যাকে সে দুনিয়াতে ভালবাসতো। (সহীহ বুখারী হা. ৬১৬৯, সহীহ মুসলিম হা. ২৬৪০)
আল্লাহ আমাদেরকে সৎ সঙ্গ বেছে নিয়ে সৎ মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার তাওফীক দান করুন। আমীন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন “আল্লাহ তা‘আলা আগমন করেন” এ গুণটির প্রমাণ পেলাম।
২. জাহান্নাম কত বিশাল তার অনুমান করা যায় টেনে আনার ফেরেশতাদের সংখ্যা দ্বারা।
৩. সেদিন কাফিররা আফসোস করবে কিন্তু আফসোস কোন কাজে আসবে না।
৪. মু’মিনদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যে সম্মান ও মর্যাদার ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা জানতে পারলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings