Surah Al Buruj Tafseer
Tafseer of Al-Buruj : 1
Saheeh International
By the sky containing great stars
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ:
بُرُوْجِ শব্দটি برج এর বহুবচন। এর আসল অর্থ : প্রকাশ পাওয়া। নক্ষত্রমালা প্রাসাদ ও অট্রালিকার মত। আর তা আকাশে প্রকাশ ও স্পষ্ট হওয়ার কারণে বুরূজ বলা হয়। প্রথম আয়াতে উল্লিখিত بُرُوْجِ শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। বুরূজ সম্পর্কে সূরা ফুরকানের ৬১ নম্বর আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-সহ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেছেন : বুরূজ থেকে উদ্দেশ্য হলো, নক্ষত্ররাচি। কেউ কেউ বলেছেন : আকাশের দরজাসমূহ বা চাঁদের কক্ষপথ। (ইবনু কাসীর)
এ সূরায় অতীত কালের জনৈক বাদশার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যে বাদশা ঈমান আনার অপরাধে একদল মু’মিনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সাথে সাথে মাজলূম মু’মিনদের আখিরাতের সফলতা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
১-১০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
অনেকে الْبُرُوْجِ এর অর্থ করে থাকে ‘রাশিচক্র’। এটা সঠিক নয়, বরং বুরূজ অর্থ প্রকাশ। অর্থাৎ যে সকল নক্ষত্র আকাশে প্রকাশিত থাকে। যেমন চন্দ্র, সূর্য, তারকা ইত্যাদি। এ সকল নক্ষত্র আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি, তাঁর নির্দেশ মেনে চলে, এরা মানুষের কোন উপকার বা অপকারের ক্ষমতা রাখেনা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمِنْ اٰيٰتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ط لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ)
“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রজনী ও দিবস, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কর না, চন্দ্রকেও নয়; সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১: ৩৭)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : তোমরা কি জান তোমাদের প্রতিপালক কী বলেন? সাহাবীগণ বললেন : আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আমার কতক বান্দা সকাল করে আমার প্রতি মুু‘মিন অবস্থায়, আবার কতক বান্দা সকাল করে আমার প্রতি কাফির অবস্থায়। যারা বলে : আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহে ও কৃপায় বৃষ্টি পেলাম তারা আমার প্রতি মু’মিন, তারকার প্রতি কাফির। আর যারা বলে : অমুক, অমুক তারকার কারণে আমরা বৃষ্টি পেয়েছি, তারা আমার প্রতি কাফির, তারকার প্রতি মু’মিন। (সহীহ বুখারী হা. ৮৪৬, সহীহ মুসলিম হা. ৭১)
সুতরাং তারকার প্রতি এরূপ বিশ্বাস করা যে, তারকা আমাদের কল্যাণ ও অকল্যাণের ক্ষমতা রাখে তা শিরক ও কুফরী। মু’মিনদের ঈমানকে বিনষ্ট করার জন্য বিভিন্ন নভোথিয়েটারে সৌরজগত প্রদর্শনের নামে রাশিগুলিই দেখানো হয় এবং বিভিন্ন পেপার পত্রিকায় রাশিফল প্রচার করা হয়। এগুলো থেকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।
(وَالْيَوْمِ الْمَوْعُوْدِ)
‘প্রতিশ্রুত দিবসের’ আবূ মূসা আল আশআরী (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : প্রতিশ্রুত দিবস হলো কিয়ামত দিবস, শাহেদ হলো জুমুআর দিন, মাশহুদ হলো আরাফার দিন, আর আল্লাহ তা‘আলা জুমু‘আর দিনকে আমাদের জন্য সঞ্চিত করে রেখেছেন। (ইবনু কাসীর)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত এ আয়াতের ব্যাপারে তিনি বলেন : শাহেদ হলো জুমু‘আর দিন, আর মাশহুদ হলো কিয়ামতের দিন। (আহমাদ হা. ৭৯৫৯, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুপাতে।)
(أَصْحٰبُ الْأُخْدُوْدِ)
অর্থাৎ যারা খন্দক খনন করে আল্লাহ তা‘আলার অনুগত বান্দাদের ধ্বংস ও হত্যা করেছিল তাদের জন্যও ধ্বংস। قتل শব্দটি لعن অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এ খন্দক ছিল ইন্ধনপূর্ণ আগুন। যা ঈমানদারদেরকে নিক্ষেপ করার জন্য প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছিল।
(إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُوْدٌ)
অর্থাৎ ঐ কাফির বাদশা বা তার কর্মচারীরা খন্দকের পার্শ্বে বসে ঈমানদারদের পোড়া তামাশাচ্ছলে প্রত্যক্ষ করছিল। যেমন পরের আয়াতে বলা হয়েছে কেবল ঈমান আনার কারণে তাদেরকে এ শাস্তি প্রদান করেছিল। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ঘটনা সহীহ হাদীসে এসেছে। নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হল।
আসহাবুল উখদূদের সংক্ষিপ্ত কাহিনী:
অতীতকালে এক বাদশার এক জাদুকর ও গণক ছিল। যখন সে গণক বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হলো তখন সে বাদশাকে বলল, আমাকে একটি বুদ্ধিমান বালক দিন যাকে আমি এ বিদ্যা শিক্ষা দেব। সুতরাং বাদশা সে রকম একজন বুদ্ধিমান বালক খোঁজ করে তার কাছে সমর্পণ করলেন। ঐ বালকের পথে এক পাদরিরও ঘর ছিল। বালকটি পথে আসা যাওয়ার সময় সে পাদরির নিকট গিয়ে বসত এবং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতো। এভাবে তার আসা-যাওয়া অব্যাহত থাকে। একদা এ বালকটির যাওয়ার পথে এক বৃহদাকার জন্তু (বাঘ অথবা সাপ) বসে ছিল যে মানুষের আসা যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল। বালকটি চিন্তা করল, আজকে আমি পরীক্ষা করব যেÑজাদুকর সত্য, না পাদরী। সে একটি পাথরের টুকরো কুড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ তা‘আলা! যদি পাদরীর আমল তোমার কাছে জাদুকরের আমল থেকে উত্তম এবং পছন্দনীয় হয়, তাহলে এ জন্তুকে মেরে ফেল, যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে। এ বলে বালকটি পাথর ছুড়লে জন্তুটি মারা গেল। এবার বালকটি পাদরীর নিকট গিয়ে সব খুলে বলল। পাদরী বললেন : হে বৎস! এবার দেখছি তুমি পূর্ণ দক্ষতায় পৌঁছে গেছো। এবার তোমার পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। কিন্তু এ পরীক্ষা অবস্থায় আমার নাম তুমি প্রকাশ করবে না। এ বালকটি জন্মান্ধ ও ধবল প্রভৃতি রোগের চিকিৎসাও করত; তবে তা আল্লাহ তা‘আলার ওপর বিশ্বাসের শর্ত রেখেই করত। বালকটি এ শর্তানুযায়ী বাদশার এক সহচরের অন্ধ চক্ষুকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করে ভাল করে দেন। বালকটি বলত যে, আপনি যদি ঈমান আনেন তাহলে আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করব; তিনি আরোগ্য দান করবেন। সুতরাং সে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা জানালে তিনি রোগীকে আরোগ্য দান করতেন। এ খবর বাদশার নিকট গেল, সে বড় উদ্বিগ্ন হলো। কিছু সংখ্যক ঈমানদারকে সে হত্যাও করে ফেললো। আর এ বালকটির ব্যাপারে তিনি কয়েকটি লোককে ডেকে বললো যে, এ বালকটিকে উঁচু পাহাড়ের ওপর নিয়ে গিয়ে নীচে ফেলে দাও। বালকটি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করলে পাহাড় কাপতে লাগল। সে ছাড়া সকলেই পাহাড় থেকে পড়ে গেল। বাদশা তখন বালকটিকে অপর কিছু লোকের কাছে সমর্পণ করে বললো, একে একটি নৌকায় চড়িয়ে সমুদ্রের মাঝে নিক্ষেপ কর। সেখানেও বালকটি বেঁচে গেল। এবার বালকটি বাদশাকে বলল : যদি আপনি আমাকে মারতে চান তাহলে এর সঠিক পদ্ধতি হলো একটি খোলা মাঠে লোকদেরকে সমবেত করে “বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম” বলে আমার প্রতি তীর নিক্ষপ করুন। দেখবেন আমি মারা গেছি। বাদশা তাই করলো। ফলে বালকটি মৃত্যুবরণ করল। সে ঘটনাস্থলেই লোকেরা উচ্চকণ্ঠে বলে উঠল যে, আমরা এ বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। বাদশা আরো অধিক উদ্বিগ্ন হলো। অতএব সে তাদের জন্য গর্ত খনন করে তাতে আগুন জ্বালাতে আদেশ করলো। অতঃপর হুকুম দিলো যে, যে ব্যক্তি ঈমান হতে ফিরে না আসবে তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ কর। এভাবে ঈমানদার ব্যক্তিরা আসতে থাকল এবং আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে থাকল। পরিশেষে একটি মহিলার পালা এল, যার সঙ্গে তার বাচ্চাও ছিল। সে একটু পশ্চাদপদ হলো। কিন্তু বাচ্চাটি বলে উঠল, আম্মাজান! ধৈর্য ধরুন। আপনি সত্যের ওপরে আছেন। সুতরাং সেও আগুনে পুড়ে শহীদ হয়ে গেল। (সহীহ মুসলিম, যুহদ অধ্যায়, আসহাবে উখদূদ পরিচ্ছেদ।)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শাহেদ ও মাশহুদের ব্যাখ্যা অবগত হলাম।
২। পূর্ববর্তী জাতির যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে ক্ষমতাসীন রাজা বাদশারা আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দিয়েছিল, তারপরেও তাদেরকে ঈমান থেকে সরাতে পারেনি।
৩. আকাশ সমান বড় অপরাধ করেও যদি আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবা করা হয় তবুও আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেবেন। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন : দেখ, আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও উদারতার প্রতি, তারা আল্লাহ তা‘আলার কত ওলী ও আনুগত্যশীল বান্দাদেরকে হত্যা করেছে তারপরেও আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাওবার দিকে আহ্বান করছেন। (তাফসীর সা‘দী)
৪. সর্বোত্তম জিহাদ হল জালিম শাসকের কাছে হক কথা বলা।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings