Surah Al Inshiqaq Tafseer
Tafseer of Al-Inshiqaq : 13
Saheeh International
Indeed, he had [once] been among his people in happiness;
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও গুরুত্ব:
انشقاق শব্দের অর্থ ফেটে যাওয়া, বিদীর্ণ হওয়া। সূরার প্রথম আয়াতে বর্ণিত انشقاق শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমার (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : যদি কেউ স্বচক্ষে কিয়ামতের দৃশ্য দেখে নিজেকে খুশি করতে চায় সে যেন সূরা তাকভীর, ইনফিতার ও সূরা ইনশিকাক পাঠ করে। (তিরমিযী হা. ৩৩৩৩, সহীহাহ হা. ১০৮১)
আবূ রাফে (রাঃ) বলেন : আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-এর সাথে ইশার সালাত আদায় করেছি। তিনি
(إِذَا السَّمَا۬ءُ انْشَقَّتْ)
পড়লেন এবং সিজদা দিলেন। আমি তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন : আমি আবুল কাশেম (সাঃ)-এর পেছনে (এ সূরা পাঠ শেষে) সিজদা করেছি। অতএব আমি তাঁর সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত সিজদা করেই যাব। (সহীহ বুখারী হা. ৭৬৬)
অন্য বর্ণনাতে তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে
(إِذَا السَّمَا۬ءُ انْشَقَّتْ) ও (اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ)
এ দুটি সূরা পাঠান্তে সিজদা করেছি। (সহীহ মুসলিম, সিজদাতুত তিলাওয়াহ অধ্যায়)
কিয়ামতের দিন অবশ্যই মানুষকে কৃতকর্মের ফলাফল প্রদান করা হবে, সুখ আর দুঃখ এ দুটি মিলে মানুষের জীবন এবং কাফির ও মু’মিনদের জন্য যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সে সম্পর্কে সূরায় আলোচনা করা হয়েছে।
১-১৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে কিয়ামতের দিন আকাশ ও জমিনের যে অবর্ণনীয় অবস্থা হবে এবং ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত মু’মিনরা যে আনন্দ পাবে আর পেছন দিক থেকে বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্ত কাফিররা যে দুঃখ কষ্টে থাকবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
انْشَقَّتْ অর্থাৎ আকাশ কিয়ামতের দিন চূর্ণ-বিচূর্ণ ও বিদীর্ণ হয়ে যাবে। এর দ্বারা আকাশ যে মজবুত তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا)
“আর নির্মাণ করেছি তোমাদের ওপর সাতটি মজবুত আসমান।” (সূরা নাবা ৭৮ : ১২)
(وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেটে যাওয়ার যে আদেশ করবেন তা শুনবে এবং মেনে নেবে। এ আয়াত বলছে আকাশ-জমিন সব কিছু আল্লাহ তা‘আলার হুকুম মেনে চলে। এও প্রমাণ করছে যে, আকাশ আপনা-আপনিই সৃষ্টি হয়নি বরং এসবের একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন, তিনি হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
وَحُقَّتْ অর্থাৎ তার দায়িত্ব হলো রবের ডাকে সাড়া দেয়া, তাই সে তার দায়িত্ব পালন করত ফেটে যাবে।
مُدَّتْ অর্থ : بسطت বা সম্প্রসারিত হয়ে যাবে। অথবা উদ্দেশ্য হলো জমিনের ওপরে পাহাড়সহ যা আছে সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে সমান হয়ে যাবে। কোন উঁচু-নীচু থাকবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمٰوٰتُ وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ )
“যেদিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশসমূহও; এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখেÑযিনি এক, পরাক্রমশালী।” (সূরা ইবরাহীম ১৪ : ৪৮)
(وَأَلْقَتْ مَا فِيْهَا)
অর্থাৎ জমিনের ভেতরে যে মুর্দা দাফনকৃত থাকবে সমস্ত মুর্দাকেই সে বের করে দেবে। আর যে সব গুপ্ত ধন তাতে মজুদ রয়েছে তা বের করে দিয়ে একেবারে খালি করে দেবে। একথাই আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا)
“এবং যখন পৃথিবী তার বোঝা বের করে দেবে”। (সূরা যিলযাল ৯৯: ২)
كَدْحًا অর্থ : কঠোর সাধনা বা পরিশ্রম, সে পরিশ্রম ভালও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। অর্থাৎ যখন উল্লিখিত বস্তুসমূহ প্রকাশ পাবে তখন মানুষ তার কৃত ভাল-মন্দ সকল আমল দেখতে পাবে। জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : জিবরীল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মাদ! তুমি যত দিন ইচ্ছা বেঁচে থাক, তবে তোমাকে মৃত্যু বরণ করতেই হবে। তুমি যত ইচ্ছা ভালবাসা গড়ে তোলো তবে তোমাকে অবশ্যই সবাইকে ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। তুমি যা ইচ্ছা আমল কর, তবে একদিন তোমাকে সে আমলের হিসাব দিতেই হবে। (আবূ দাঊদ আত তায়ালিসি পৃ. ২৪২) সুতরাং যদি সকল ভালবাসা ও মায়া ছিন্ন করে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতেই হয় আর আমলের হিসাব দিতেই হয় তাহলে আমাদের উচিত হবে ভাল আমল করা।
অর্থাৎ যাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে এরা হল ডানপন্থী। এদের কথা সূরা ওয়াকিয়ার ২৭ নম্বরসহ কয়েক আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। এরা দুনিয়াতেও ছিল ডানপন্থী, তাদের সকল প্রকার কার্যকলাপ, আচার-আচরণ ও অবস্থা ডানপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
(حِسَابًا يَّسِيْرًا)
বা সহজ হিসাব হলো মু’মিনের আমলনামা শুধু তার সামনে পেশ করা হবে। তার ভুল-ভ্রুটিও সামনে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজের রহমত ও অনুগ্রহে তাদের মার্জনা করে দেবেন। আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : যার হিসাব নেয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বললাম : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ) আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেননি (فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَّسِيْرًا) ‘তার হিসাব-নিকাশ অতি সহজ ভাবে নেয়া হবে।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : এটা হিসাব না। এটা কেবলমাত্র পেশ করা হবে। যার কিয়ামত দিবসে হিসাব নেয়া হবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৩৯)
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কোন এক সালাতে বলতে শুনেছি
اللّٰهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا
হে আল্লাহ তা‘আলা আমার হিসাব সহজ করে নিয়ো। সালাত শেষে আমি বললাম : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ) সহজ হিসাব কী? তিনি বললেন :
(أَنْ يَنْظُرَ فِي كِتَابِهِ فَيَتَجَاوَزَ عَنْهُ)
শুধু আমলনামার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে। অতঃপর তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। কিন্তু হে আয়িশাহ! সেদিন যার হিসাব নেয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। (আহমাদ ৬/৪৮, সহীহ মুসলিমের শর্তানুপাতে।)
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাকে কাছে ডেকে নেবেন, এমনকি তাকে ডানে রাখবেন ও ঢেকে নেবেন। অতঃপর বলবেন : তুমি যে অমুক গুনাহ করেছো তা জান, তুমি যে অমুক গুনাহ করেছো তা জান? বান্দা বলবে : হ্যাঁ, হে আমার রব জানি। এভাবে স্বীকার করতে করতে যখন দেখবে তার জন্য ধ্বংস অবধারিত তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন :
سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا، وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ اليَوْمَ، فَيُعْطَي كِتَابَ حَسَنَاتِهِ
দুনিয়াতে এগুলো আমি তোমার ওপর গোপন রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এগুলো ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে। কিন্তু কাফির ও মুনাফিকের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকুল সাক্ষ্য দিয়ে বলবে ‘এরাই এদের প্রতিপালকের বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করেছিল।’ সাবধান! আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত জালিমদের ওপর, (সহীহ বুখারী হা ২৪৪১)
(وَّيَنْقَلِبُ إِلٰٓي أَهْلِه۪)
অর্থাৎ জান্নাতী ব্যক্তির জন্য জান্নাতে তার যে সকল পরিবার-পরিজন আছে তাদের কাছে আনন্দচিত্তে ফিরে যাবে। পরিবার বলতে, জান্নাতী হুর, গিলমান যা জান্নাতীগণ লাভ করবে। ইবনু যায়েদ বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে দুনিয়ার ভীতি ও কষ্টের বিনিময়ে আখিরাতে জান্নাত দেবেন আর কাফিরদেরকে দুনিয়ার আনন্দ-ফুর্তির বিনিময়ে আখিরাতে জাহান্নাম দেবেন। একথা বলে তিনি সূরা তুরের ২৬-২৭ নম্বর আয়াতদ্বয় পাঠ করতেন। (তাফসীর কুরতুবী)
আর যারা কাফির তাদেরকে আমলনামা তাদের
(وَرَا۬ءَ ظَهْرِه۪)
অর্থাৎ বাম হাতে পেছন দিক থেকে দেয়া হবে। এরা ছিল দুনিয়াতে বামপন্থী, তাদের সকল কার্যকলাপ ছিল বাম। তারা আখিরাতে শত চেষ্টা করেও ডানহাতে আমলনামা নিতে পারবে না।
ثُبُوْرًا অর্থ : ধ্বংস, ক্ষতি। অর্থাৎ বামপন্থী চিৎকার করে বলবে, আমি মরে গেলাম, আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِذَآ أُلْقُوْا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُّقَرَّنِيْنَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُوْرًا لَا تَدْعُوا الْيَوْمَ ثُبُوْرًا وَّاحِدًا وَّادْعُوْا ثُبُوْرًا كَثِيْرًا)
“এবং যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে। (তাদেরকে বলা হবে) ‘আজ তোমরা একবারের জন্য ধ্বংস কামনা কর না; বহুবার ধ্বংস হবার কামনা করতে থাক।’ (সূরা ফুরকান ২৫: ১৩-১৪)
অর্থাৎ বাম হাতে আমলনামা পাওয়া বামপন্থীদের পরিণতি হল একটাই, তা হল জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُ ثُمَّ الْجَحِيْمَ صَلُّوْهُ ثُمَّ فِيْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُ)
“(ফেরেশতাকে বলা হবে) তাকে ধর। অতঃপর তার গলায় বেড়ী পরিয়ে দাও। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। পুনরায় তাকে বেঁধে ফেলো এমন শেকল দ্বারা যা সত্তর হাত লম্বা।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯: ৩০-৩২)
(إِنَّه كَانَ فِيْٓ أَهْلِه۪ مَسْرُوْرًا)
অর্থাৎ দুনিয়ায় নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা মেটাতে মগ্ন এবং আপন পরিবারের মাঝে বড় আনন্দিত ছিল। আখিরাতের কোন তোয়াক্কা করত না, দীন-ধর্মের কোন পরওয়া করত না। দুনিয়াটা মস্ত বড় খাও-দাও ফুর্তি কর এ মতবাদে বিশ্বাসী ছিল।
(إِنَّه ظَنَّ أَنْ لَّنْ يَّحُوْرَ)
অর্থাৎ সে বিশ্বাস করত, কখনও সে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফিরে যাবে না এবং পুনরুত্থিত হবে না। এটাই ছিল দুনিয়াতে অন্যায়ে মত্ত ও আনন্দিত হওয়ার কারণ। নাবী (সাঃ) দু‘আ করে বলতেন :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْحَوْرِ بَعْدَ الْكَوْر
হে আল্লাহ তা‘আলা! আমি ঈমান ও আনুগত্যের পর যেন কুফরী ও অবাধ্যতায় ফিরে না যাই এ ব্যাপারে আশ্রয় চাচ্ছি। (সহীহ মুসলিম হা. ১৩৪৩)
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সকল কাজ কর্ম প্রত্যক্ষ করেন। সুতরাং তাঁর অগোচরে কোন কাজ করার সুযোগ নেই। সুতরাং সর্বদাই আমাদের সতর্ক থাকা উচিত আমাদের দ্বারা যেন কোন অন্যায় কাজ না হয়। কারণ সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার কাছে দৃশ্যমান।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আকাশ, জমিন ও নক্ষত্র সবকিছু আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
২. মানুষ অবশ্যই তার কৃত আমলের প্রতিদান পাবে।
৩. যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে তাদের হিসাব হবে হালকা ও তারা জান্নাতে সপরিবারে আনন্দে থাকবে।
৪. সহজ হিসাবের অর্থ জানলাম।
৫. যারা পেছন দিক থেকে বাম হাতে আমলনামা পাবে তাদের দুর্দশার শেষ হবে না। তাদের একমাত্র ঠিকানা জাহান্নাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings