Surah Al Infitar Tafseer
Tafseer of Al-Infitar : 10
Saheeh International
And indeed, [appointed] over you are keepers,
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত মুআয (রাঃ) ইশার নামাযে ইমামতি করেন এবং তাতে তিনি লম্বা কিরআত করেন। (তখন তার বিরুদ্ধে এটার অভিযোগ করা হলে) নবী (সঃ) তাকে বলেনঃ “হে মুআয (রাঃ)! তুমি তো বড়ই ক্ষতিকর কাজ করেছে? (আরবি) এবং (আরবি)-এই সূরাগুলো কি নেই? এই হাদীসের মূল সহীহ্ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও রয়েছে। হ্যা, তবে (আরবি) এর বর্ণনা শুধু সুনানে নাসাঈতে রয়েছে। আর ঐ হাদীসটি ইতিপূর্বে গত হয়েছে যাতে রয়েছেঃ “য়ে ব্যক্তি কামনা করে যে, কিয়ামতকে সে যেন স্বচক্ষে দেখছে, সে যেন (আরবি) এবং (আরবি)-এই সূরাগুলো পাঠ করে।”
১-১২ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন যে, কিয়ামতের দিন আকাশ ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “ওর সাথে আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে।” (৭৩:১৮)
‘আর নক্ষত্ররাজি বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে। লবণাক্ত ও মিষ্টি পানির সমুদ্র পরস্পর একাকার হয়ে যাবে। পানি শুকিয়ে যাবে, কবরসমূহ ফেটে যাবে। কবর, ফেটে যাওয়ার পর মৃতেরা জীবিত হয়ে উঠবে। তারপর সব মানুষ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব আমল সম্পর্কে অবহিত হবে। এরপর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদেরকে ধমক দিয়ে বলেনঃ হে মানুষ! কিসে তোমাদেরকে প্রতিপালক হতে প্রতারিত করলো? আল্লাহ তা'আলা যে, এ কথার জবাব চান বা শিক্ষা দিচ্ছেন তা নয়। কেউ কেউ এ কথাও বলেন যে, বরং আল্লাহ্ তা'আলা জবাব দিয়েছেন যে, আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহ তাদেরকে গাফিল করে ফেলেছে। এ অর্থ বর্ণনা করা ভুল। সঠিক অর্থ হলো? হে আদম সন্তান! নিজেদের সম্মানিত প্রতিপালকের প্রতি তোমরা এতোটা উদাসীন হয়ে পড়লে কেন? কোন্ জিনিস তোমাদেরকে তাঁর অবাধ্যতায় উদ্বুদ্ধ করেছে? কেনই বা তোমরা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লেগে পড়েছো? এটা তো মোটেই সমীচীন হয়নি। যেমন হাদীস শরীফে এসেছেঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ হে আদম-সন্তান! কোন জিনিস তোমাকে আমার সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে? হে আদম সন্তান! তুমি আমার রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছো?”
হযরত সুফিয়ান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ) একটি লোককে (আরবি)-এ আয়াতটি পাঠ করতে শুনে বলেনঃ “অজ্ঞতা।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অর্থাৎ মানুষের অজ্ঞতাই তাকে তার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে। হযরত ইবনে উমার (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন হতেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে।
কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, মানুষকে বিভ্রান্তকারী হলো শয়তান। হযরত ফুযায়েল ইবনে আইয়ায (রঃ) বলেন, যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “কিসে বিভ্রান্ত করেছে। তবে অবশ্যই আমি বলবো: তোমার লটকানো পর্দাই তোমাকে বিভ্রান্ত করেছে। আবু বকর আল আররাক (রঃ) বলেনঃ “কিসে তোমাকে তোমায় মহাম প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে?” যদি এ প্রশ্ন আমাকে করা হয় তবে অবশ্যই আমি বলবো: অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহই আমাকে বিভ্রান্ত করেছে।
মা'রেফাত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কারো কারো মতে এখানে (আরবি) শব্দটিই যেন জবাবের ইঙ্গিত বহন করছে। কিন্তু এ উক্তিটি তেমন যুক্তিযুক্ত নয়। বরং এর প্রকৃত তাৎপর্য হলো এই যে, অনুগ্রহশীল আল্লাহর অনুগ্রহের মুকাবিলায় মন্দ কাজ তথা দুস্কৃতি না করাই সমীচীন। কালবী (রঃ) এবং মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি আসওয়াদ ইবনে শুরায়েকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এই দুবৃত্ত নবী পাক (সঃ)-কে মেরেছিল। তৎক্ষণাৎ তার উপর আল্লাহর আযাব না আসায় সে আনন্দে আটখানা হয়েছিল। তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং তৎপর সুবিন্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং মধ্যম ধরনের আকার-আকৃতি প্রদান করেছেন ও সুন্দর চেহারা দিয়ে সুদর্শন করেছেন?
হযরত বিশর ইবনে জাহ্হা আল ফারাশী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর হাতের তালুতে থুথু ফেলেন এবং ওর উপর তার একটি আঙ্গুল রেখে বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি কি আমাকে অপারগ করতে পার? অথচ আমি তোমাকে এই রকম জিনিস হতে সৃষ্টি করেছি, তারপর ঠিকঠাক করেছি, এরপর সঠিক আকার-আকৃতি দিয়েছি। অতঃপর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে চলাফেরা করতে শিখিয়েছি। পরিশেষে তোমার ঠিকানা হবে মাটির গর্ভে। অথচ তুমি তো বড়ই বড়াই করছো, আমার পথে দান করা হতে বিরত থেকেছে। তারপর যখন কণ্ঠনালীতে নিঃশ্বাস এসে পৌঁছেছে তখন বলেছেঃ এখন আমি সাদকা বা দান-খয়রাত করছি। কিন্তু এখন আর দান-খয়রাত করার সময় কোথায়? (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ যেই আকৃতিতে চেয়েছেন, তিনি তোমাকে গঠন করেছেন। অর্থাৎ পিতা, মাতা, মামা, চাচার চেহারার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে গঠন করেছেন। আলী ইবনে রাবাহ (রাঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর দাদাকে নবী (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার ঘরে কি সন্তান জন্মগ্রহণ করবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ছেলে হবে অথবা মেয়ে হবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কার সাথে সাদৃশ্যযুক্ত হবে। তিনি জবাবে বললেনঃ ! হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার সাথে অথবা তার মায়ের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত হবে।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাকে বললেনঃ “থামো, এরূপ কথা বলো না। বীর্য যখন জরায়ুতে অবস্থান করে তখন হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত নাসাব বা বংশ ওর সামনে থাকে। তুমি কি আল্লাহ্ তা'আলার কিতাবের (আরবি)-এই আয়াতটি পড়নি? অর্থাৎ “যেই আকৃতিতে চেয়েছেন, তিনি তোমাকে গঠন করেছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ), ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) এবং ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা যদি সহীহ হতো তবে এটা আয়াতের অর্থ প্রকাশের জন্যে যথেষ্ট হতো কিন্তু এ হাদীসের সনদ সঠিক প্রমাণিত নয়। কেননা, মুতহির ইবনে হায়সাম (রঃ) বলেন যে, এতে আবু সাঈদ ইবনে ইউনুস নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন যার হাদীস পরিত্যক্ত। তাছাড়া তার ব্যাপারে আরো অভিযোগ রয়েছে)
সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেনঃ “হে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)! আমার স্ত্রী একটি কালো বর্ণের সন্তান প্রসব করেছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “তোমার উট আছে কি?” লোকটি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, আছে।” তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “উটগুলো কি রঙ এর?” লোকটি জবাব দিলেনঃ “লাল রঙ-এর।” তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ “উটগুলোর মধ্যে সাদা-কালো রঙ বিশিষ্ট কোন উট আছে কি?” লোকটি উত্তর দিলেনঃ “হ্যা, আছে।” তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “লাল রঙ বিশিষ্ট নর-মাদী উটের মধ্যে এই রঙ-এর উট কিভাবে জন্ম নিলো?” লোকটি বললেনঃ “সম্ভবতঃ উর্ধ্বতন বংশধারায় কোন শিরা সে টেনে নিয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) লোকটিকে বললেনঃ “তোমার সন্তানের কালো রঙ হওয়ার পিছনেও এ ধরনের কোন কারণ থেকে থাকবে।” হযরত ইকরামা (রঃ) বলেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে বানরের বা শূকরের আকৃতিতেও সৃষ্টি করতে পারেন। আবু সালেহ্ (রঃ) বলেন যে, তিনি (আল্লাহ্) ইচ্ছা করলে কুকুরের আকৃতিতেও সৃষ্টি করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে গাধা বা শূকরের আকৃতি দিয়ে গঠন করতে পারেন।
কাতাদাহ্ (রঃ) বলেনঃ এ সবই সত্য যে, আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা সব কিছুরই উপর সক্ষম। কিন্তু আমাদের সেই মালিক আমাদেরকে উন্নত, উৎকৃষ্ট, হৃদয়গ্রাহী এবং সুন্দর আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ মহান ও অনুগ্রহশীল আল্লাহ্র অবাধ্যতায় তোমাদেরকে কিয়ামতের প্রতি অবিশ্বাসই শুধু উদ্বুদ্ধ করেছে। কিয়ামত যে অবশ্যই সংঘটিত হবে এটা তোমাদের মন কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। এ কারণেই তোমরা এ রকম বেপরোয়া মনোভাব ও ঔদাসীন্য প্রদর্শন করেছে। তোমাদের এই বিশ্বাস রাখা অবশ্যই উচিত যে, তোমাদের উপর সম্মানিত, সংরক্ষণকারী লিপিকর ফেরেশতাবৃন্দ নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁদের সম্পর্কে তোমাদের সচেতন হওয়া দরকার। তারা তোমাদের আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করছেন ও সংরক্ষণ করছেন। পাপ, অন্যায় বা মন্দ কাজ করার ব্যাপারে তোমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সম্মানিত লিপিকর ফেরেশতাদের সম্মান করো। তাঁরা নাপাক অবস্থা এবং পায়খানায় যাওয়ার অবস্থা ছাড়া কখনোই তোমাদের থেকে পৃথক হন না। গোসলের সময়েও তোমরা পর্দা করবে। দেয়াল যদি না থাকে তবে উট দ্বারা হলেও পর্দার ব্যবস্থা করবে। যদি সেটাও সম্ভব না হয় তবে নিজের কোন সাথীকে দাঁড় করিয়ে রাখবে, তাহলে ওটাই পর্দার কাজ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হাফিয আবু বকর আল বাযার (রঃ) এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। এতে শব্দের কিছু হেরফের রয়েছে। এতে একথাও রয়েছেঃ আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে উলঙ্গ হতে নিষেধ করেছেন। তোমরা আল্লাহর এই ফেরেশতাদের সম্মান করো। এতে এও আছে যে, গোসলের সময়েও এই ফেরেশতারা দূরে চলে যান।
অন্য একটি হাদীসে আছে যে, কিরামান কাতিবীন আল্লাহর সামনে বান্দার দৈনন্দিনের আমল উপস্থাপন করেন। যদি দেখা যায় যে, শুরুতে ও শেষে ইসতিগফার রয়েছে, তবে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি আমার এ বান্দার (শুরু ও শেষের) মধ্যবর্তী সমস্ত গুণাহ মাফ করে দিলাম।
আরো একটি দুর্বল হাদীসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলার কোন কোন ফেরেশতা মানুষ এবং তাদের আমলসমূহ জানেন ও চিনেন। কোন বান্দাকে পুণ্য কাজে লিপ্ত দেখলে তারা পরস্পর বলাবলি করেন যে, আজ রাত্রে অমুক ব্যক্তি মুক্তি লাভ করেছে। পক্ষান্তরে কাউকে পাপ কর্মে লিপ্ত দেখলে তারা নিজেদের মধ্যে সেটাও আলোচনা করেন এবং বলেন যে, আজ রাত্রে অমুক ব্যক্তি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings