Surah Abasa Tafseer
Tafseer of Abasa : 1
Saheeh International
The Prophet frowned and turned away
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ:
عَبَسَ আবাসা শব্দের অর্থ ভ্রুকুঞ্চিত করা বা মুখ ভার করা। প্রথম আয়াতে উল্লিখিত এ শব্দ থেকে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরায় কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে:
যেমন সমাজের দুর্বল মানুষদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে প্রভাব ও বিত্তশালীদের প্রতি মনোনিবেশ করার কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তিরস্কার করা, কুরআনের গুরুত্ব ও মর্যদার বর্ণনা কয়েকটি নেয়ামতের দিকে ভাবনার দৃষ্টিতে দেখার নির্দেশ এবং আখিরাতের ভাল মন্দের প্রতিদান ইত্যাদি।
১-১৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
সূরাটি সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রাঃ)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। একদা নাবী (সাঃ) কুরাইশ নেতাদের নিয়ে আলোচনা করছিলেন এ আশায় যে, হয়তো তারা ইসলাম গ্রহণ করবে। এমতাবস্থায় হঠাৎ ঐ মাজলিসে আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রাঃ) উপস্থিত হয়ে বলেন : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ) ! আমাকে সঠিক পথ দেখান। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটু বিরক্তি ভাব পোষণ করে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তাই নাবী (সাঃ)-কে সতর্ক করে এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। (তিরমিযী সূরা আবাসার তাফসীর)
আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রাঃ) অনেক আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (ইবনু কাসীর) আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে খুবই সমাদর করতেন। (মুসনাদে আবূ ইয়ালা হা. ৩১২৩) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যুদ্ধে যাওয়াকালে তাকে প্রায়ই মদীনার প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে যেতেন। ঐতিহাসিকগণ বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বদর, ওহুদ ও বিদায় হাজ্জসহ মোট ১৩ বার মদীনা ত্যাগকালে তাকে মদীনার দায়িত্ব দিয়ে যান। (ইবনু হাজার, আল ইসাবাহ হা. ৫৭৫৯) বেলাল তাহাজ্জুতের আযান দিতেন আর আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম ফযরের আযান দিতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৬১৭) এসব ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পক্ষ হতে বিশেষ মর্যাদা দানের ফল। এ মর্যাদার কারণ হল তার শানে উক্ত আয়াতগুলো নাযিল হওয়া।
এ ধরণের দরিদ্র কয়েকজন সাহাবীর ব্যাপারে আরো কিছু আয়াত নাযিল হয়েছে যারা সর্বদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটে থাকতেন। মক্কার কাফিররা তিরস্কার করে বলত : হে মুহাম্মাদ! এ লোকগুলোকেই কি আল্লাহ তা‘আলা বেছে নিয়ে আপনার ওপর অনুগ্রহ করেছেন? আর আমরা এদের আনুগত্য করব? এদের সরিয়ে দিন। তাহলে আমরা আপনার অনুসারী হতে পারি। তখন সূরা আন‘আমের ৫২-৫৩ নম্বর আয়াত নাযিল হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا تَطْرُدِ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّھُمْ بِالْغَدٰوةِ وَالْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْھَھ۫ﺚ مَا عَلَیْکَ مِنْ حِسَابِھِمْ مِّنْ شَیْءٍ وَّمَا مِنْ حِسَابِکَ عَلَیْھِمْ مِّنْ شَیْءٍ فَتَطْرُدَھُمْ فَتَکُوْنَ مِنَ الظّٰلِمِیْنَﮃوَکَذٰلِکَ فَتَنَّا بَعْضَھُمْ بِبَعْضٍ لِّیَقُوْلُوْٓا اَھٰٓؤُلَا۬ئِ مَنَّ اللہُ عَلَیْھِمْ مِّنْۭ بَیْنِنَاﺚ اَلَیْسَ اللہُ بِاَعْلَمَ بِالشّٰکِرِیْنَ)
“যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে তুমি বিতাড়িত কর না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমারও কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয় যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে; করলে তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আমি এভাবে তাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি যেন তারা বলে, ‘আমাদের মধ্যে কি এদের প্রতিই আল্লাহ অনুগ্রহ করলেন? আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন?” (সূরা আন‘আম ৬: ৫২-৫৩)
الْأَعْمٰي অন্ধ ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম।
(وَمَا يُدْرِيْكَ) অর্থাৎ
أي شئ يجعلك عالما بحقيقة أمره؟
কোন্ জিনিস তোমাকে তার প্রকৃত ব্যাপার অবগত করেছে? অর্থাৎ তুমি তার প্রকৃত ব্যাপার জাননা।
এ আয়াতগুলো প্রমাণ করছে, নাবী (সাঃ) গায়েব জানতেন না। তিনি কেবল ততটুকুই জানতেন যতটুকু তাকে ওয়াহীর মাধ্যমে জানানো হত। আর এও প্রমাণ করে যে, তিনি দীনের কোন বিধান লুকাননি। যদি গোপন করতেন তাহলে তাঁকে তিরস্কারমূলক আয়াতগুলো গোপন করতেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি বলবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহ তা‘আলার দীনের কোন কিছু গোপন করেছেন সে তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করবে।
ইমাম রাযী (রহঃ) বলেন : নাবীদেরকে যারা নিষ্পাপ মনে করে না, তারা এ ঘটনা থেকে দলীল গ্রহণ করে নাবী (সাঃ)-কে গুনাহগার বানাতে চায়। অথচ এটি কোন গুনাহর বিষয় নয়। কেননা এ অন্ধ সাহাবী পূর্ব থেকেই মুসলিম ছিলেন।
এ আয়াত থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, শীয়াদের দাবী মিথ্যা, বানোয়াট। কেননা তারা বলে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে যে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন, যাকে ‘মুসহাফে ফাতেমা’ বলা হয় তা এ কুরআনের চাইতে তিনগুণ বড় এবং বর্তমান কুরআনের একটি হরফও সেখানে নেই। (আশ শীয়া ওয়াস সুন্নাহ, ইহসান ইলাহী জহীর, পৃ : ৮০-৮১)
(مَنِ اسْتَغْنٰي)
অর্থাৎ যারা তোমার হিদায়াত থেকে বিমুখ হয়, তোমার হিদায়াত প্রয়োজন মনে করে না, অথচ তুমি তাদের নিয়েই ব্যস্ত। হিদায়েতের মালিক তুমি নও বরং তোমার দায়িত্ব কেবল পৌঁছে দেয়া, তুমি তাই কর।
(وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكّٰ)
অর্থাৎ তোমার কাজ তো কেবল প্রচার করা। সুতরাং এই শ্রেণির কাফিরদের পেছনে পড়ে থাকার কোন প্রয়োজন নেই।
(كَلَّآ إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ)
অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! তুমি যে কাজ করেছো তা উচিত হয়নি। এ সূরা তোমার ও যারা উপদেশ গ্রহণ করতে চায় তাদের জন্য শিক্ষা। অতএব আগামীতে যেন এরূপ না হয়। (তাফসীর মুয়াসসার)
তাই দাওয়াতী কাজে গরীব-মিসকীন ও নিম্নশ্রেণির মানুষ উপেক্ষা করে চলা আদৌ উচিত নয়। কারণ কার ভাগ্যে হিদায়াত আছে আর কার দ্বারা ইসলামের উপকার হবে তা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কেউ জানে না।
(فَمَنْ شَا۬ءَ ذَكَرَه۫)
অর্থাৎ যে ব্যক্তির নিকট সত্যের দাওয়াত পৌঁছেছে এখন সে ইচ্ছা করলে যেন সত্য কবুল করতঃ আমল করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ قف فَمَنْ شَا۬ءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَا۬ءَ فَلْيَكْفُرْ)
“বল: ‘সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে; সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনুক ও যার ইচ্ছা কুফরী করুক।” (সূরা কাহ্ফ ১৮: ২৯)
অতঃপর এ উপদেশবাণীর অবস্থান ও মর্যাদার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فِيْ صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ)
বা সম্মানিত সহিফা অর্থাৎ লওহে মাহফূজে লিপিবদ্ধ যার মর্যাদা সুউচ্চ এবং যা সকল প্রকার নাপাকি ও কম-বেশি থেকে পবিত্র।
(بأَيْدِيْ سَفَرَةٍ) سافر
এর অর্থ হলো: দূত। ইমাম বুখারী ও ইবনু জারীরসহ অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে سفرة হলো ফেরেশতা। আর এটাই সঠিক। (ইবনু কাসীর) অর্থাৎ ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলদের মাঝে দূতের কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে।
(كِرَامٍ ۭبَرَرَةٍ)
অর্থাৎ কুরআন বহনকারী ফেরেশতারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং কাজকর্ম, কথায় পূত পবিত্র ও উত্তম। তাই প্রতিটি মু’মিন যারা কুরআনের ধারক বাহক তাদের এমন চরিত্রের অধিকারী হওয়া দরকার। আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
الماهر بالقرآن مع السفرة الكرام البررة، والذي يقرأ القرآن ويتتعتع فيه، وهو عليه شاق، له أجران
যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং সে তাতে সুদক্ষ সে কিরামিম বারারাহ বা সম্মানিত পূন্যবান ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে কিন্তু কষ্টের সাথে (পড়তে গেলে আটকে যায়) তার জন্য দ্বিগুণ নেকী রয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা. ৭৯৮)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম <-এর ফযীলত জানতে পারলাম।
২. যারা সাগ্রহে দীন গ্রহণ ও শিক্ষা নিতে চায় তাদেরকে সে বিষয়ে সময় ও সুযোগ করে দেয়া আবশ্যক তিনি যেই হোক না কেন।
৩. কুরআনের ধারক-বাহকদের কেমন চরিত্রের অধিকারী হওয়া উচিত তা জানতে পারলাম।
৪. কুরআন তেলাওয়াতকারীদের ফযীলত জানলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings