Surah Al A'raf Tafseer
Tafseer of Al-A'raf : 74
Saheeh International
And remember when He made you successors after the 'Aad and settled you in the land, [and] you take for yourselves palaces from its plains and carve from the mountains, homes. Then remember the favors of Allah and do not commit abuse on the earth, spreading corruption."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৭৩-৭৯ নং আয়াতের তাফসীরঃ
পূর্বে আদ জাতি সম্পর্কে আলোচনা করার পর অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা সামূদ জাতির কথা নিয়ে এসেছেন যাদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন সালেহ (আঃ)-কে।
আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে সামূদ জাতির প্রতি সালেহ (আঃ)-কে নাবী হিসেবে প্রেরিত হন। (তারীখুল আম্বিয়া ১/৪৯) আদ ও সামূদ জাতি একই ব্যক্তি ‘ইরাম’ এর দু’ ছেলের দু’টি বংশধারার নাম। সামূদ জাতি আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজর’ যা সিরিয়ার অর্ন্তভুক্ত। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে সালেহ’ বলা হয়। আদ জাতির ধ্বংসের পর সামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারশর্দী ছিল। (সূরা শুআরা ২৬:১৯) সমতল ভূমিতে বিশালাকার অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানারূপ প্রকোষ্ট নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান। এগুলোর গায়ে ইরামী ও সামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে। এ এলাকাটি এখনো পরিত্যক্ত, তথায় কেউ বসবাস করে না।
সামূদ জাতিতে সালেহ (আঃ)-এর দাওয়াত:
পথভোলা এ জাতিকে অন্যান্য নাবীদের মত সালেহ (আঃ) প্রথমেই তাওহীদের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজাসহ যাবতীয় শির্ক ও কুসংস্কার ত্যাগ করে এক আল্লাহ তা‘আলাকে ভয়, তাঁর ইবাদত ও তাঁর প্রেরিত রাসূলের আনুগত্য করার প্রতি আহ্বান জানান। যেমন অত্র সূরার ৭৩ ও সূরা হূদের ৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে। তাওহীদের এ দাওয়াতের সাথে সাথে তাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন: ‘আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন, তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করেছ। সুতরাং তোমরা ‘আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর।’ تَنْحِتُوْنَ অর্থাৎ তারা পাহাড়ের পাথর কেটে বসবাসের বাড়ি নির্মাণ করত। তিনি আরো বললেন: ‘তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদেরকে বসবাস করিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তাঁর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা কর আর তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন কর। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটে, তিনি আহ্বানে সাড়া দেন।’ (সূরা হূদ ১১:৬১) অন্যান্য নাবীদের মত তিনি এ কথাও বললেন, আমি এ কাজের জন্য তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না।
সালেহ (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলাফল:
সালেহ (আঃ) তাওহীদের দাওয়াত শুরু করলে জাতির লোকেরা দু’ দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল ঈমান আনে, তবে এরা ছিল সমাজের দুর্বল ও সাধারণ মানুষ। সাধারণত নাবীদের অনুসারী এমনই হয়ে থাকে। যেমন হিরাকলের হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭) অন্য দল কুফরী করে, সালেহ (আঃ)-এর প্রতি ঈমান আনেনি। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ اَرْسَلْنَآ اِلٰی ثَمُوْدَ اَخَاھُمْ صٰلِحًا اَنِ اعْبُدُوا اللہَ فَاِذَا ھُمْ فَرِیْقٰنِ یَخْتَصِمُوْنَ)
“অবশ্যই আমি সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভ্রাতা সালেহ্কে পাঠিয়েছিলাম এ আদেশসহ- ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর’, কিন্তু তারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হল।” এ দলের পরিচয় দিয়ে অত্র সূরার ৭৫-৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানেরা সে সম্প্রদায়ের ঈমানদার যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে বলল: ‘তোমরা কি জান যে, সালেহ ‘আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত?’ তারা বলল: ‘তার প্রতি যে বাণী প্রেরিত হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাসী।’ তখন অহংকারীরা বললো, তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অবিশ্বাস করি।’
এ অবাধ্য লোকেরা সালেহ (আঃ)-কে বলল:
(یٰصٰلِحُ قَدْ کُنْتَ فِیْنَا مَرْجُوًّا قَبْلَ ھٰذَآ اَتَنْھٰٿنَآ اَنْ نَّعْبُدَ مَا یَعْبُدُ اٰبَا۬ؤُنَا وَاِنَّنَا لَفِیْ شَکٍّ مِّمَّا تَدْعُوْنَآ اِلَیْھِ مُرِیْبٍ)
‘হে সালেহ্! এর পূর্বে তুমি ছিলে আমাদের আশা ভরসার পাত্র। তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করছ ‘ইবাদত করতে তাদের, যাদের ‘ইবাদত করত আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা? আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছি সে বিষয়ে, যার প্রতি তুমি আমাদেরকে আহ্বান করছ।’ (সূরা হূদ ১১:৬২) অর্থাৎ যেহেতু নাবীরা সচ্চরিত্রবান, আমানতদার ও উত্তম আখলাকের হয়ে থাকে যেমন আমাদের নাবী ছিলেন তাই তারা সালেহ (আঃ)-এর কাছে ভাল কিছু আশা করেছিল। ভাল আশা বলতে তাদের মুআফেক হবে, তাদের মা‘বূদদেরকে গালিগালাজ করবে না, পূর্বপুরুষের ধর্মের অনুসরণ করবে ইত্যাদি। তখন সালেহ (আঃ) তাদের এ কথার জবাবে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি একটু চিন্তা করেছ! যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন, তারপরেও কি আমি তাঁর অবাধ্য হব? তাহলে তো আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি হতে রক্ষা পাব না। (সূরা হূদ ১১: ৬৩)
সালেহ (আঃ)-এর এসব কথা শুনে তারা বলতে লাগল, ‘তুমি তো জাদুগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। তুমি তো আমাদের মত একজন মানুষ, কাজেই তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে একটি নিদর্শন উপস্থিত কর।’ (সূরা শুআরা ২৬:১৫৩-১৫৪) এমনকি তারা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলল,
(اَبَشَرًا مِّنَّا وَاحِدًا نَّتَّبِعُھ۫ٓﺫ اِنَّآ اِذًا لَّفِیْ ضَلٰلٍ وَّسُعُرٍﭧءَاُلْقِیَ الذِّکْرُ عَلَیْھِ مِنْۭ بَیْنِنَا بَلْ ھُوَ کَذَّابٌ اَشِرٌ)
“আমরা কি আমাদেরই এক ব্যক্তির অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী এবং বিবেকহীনরূপে গণ্য হব। আমাদের মধ্যে কি তারই প্রতি ওয়াহী করা হয়েছে? বরং সে তো একজন মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।” (সূরা কামার ৫৪:২৪-২৫) তারা আরো বলল: ‘তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি।’ (সূরা নামল ২৭:৪৭)
এভাবে সমাজের প্রভাব ও শক্তিশালী শ্রেণি সালেহ (আঃ)-কে অমান্য করল এবং মূর্তিপূজাসহ শির্ক ও আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত রইল। আল্লাহ তা‘আলার ভাষায়,
(وَاَمَّا ثَمُوْدُ فَھَدَیْنٰھُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمٰی عَلَی الْھُدٰی فَاَخَذَتْھُمْ صٰعِقَةُ الْعَذَابِ الْھُوْنِ بِمَا کَانُوْا یَکْسِبُوْنَ)
“আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, আমি তাদেরকে পথ নির্দেশ করেছিলাম; কিন্তু তারা সৎ পথের পরিবর্তে অন্ধত্ব (ভ্রান্ত পথ) অবলম্বন করেছিল। অতঃপর তাদের কৃতকর্মের পরিণামস্বরূপ লাঞ্ছণাদায়ক বজ্র শাস্তি আঘাত হানল।” (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৭)
সামূদ জাতির ওপর আপতিত গযবের বিবরণ:
ইবনু কাসীর বর্ণনা করেন যে, সালেহ (আঃ)-এর নিরন্তর দাওয়াতে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রদায়ের নেতারা স্থির করল যে, তাঁর কাছে এমন একটা বিষয় দাবী করতে হবে যা পূরণ করতে তিনি ব্যর্থ হবেন এবং এর ফলে তাঁর দাওয়াতী কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারা সালেহ (আঃ)-এর কাছে দাবী করল, আপনি যদি সত্যি নাবী হন তাহলে পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে এনে দেখান। সালেহ (আঃ) তাদের দাবী শুনে অঙ্গীকার নিলেন যে, তোমাদের দাবী পূরণ করা হলে তোমরা ঈমান আনবে। তবে দাবী পূরণ করার পরেও ঈমান না আনলে আল্লাহ তা‘আলার গযবে তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। এতে সবাই স্বীকৃতি দিল এবং সেই মর্মে অঙ্গীকার করল। তখন সালেহ (আঃ) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবূল করে নিলেন এবং বললেন:
( اِنَّا مُرْسِلُوا النَّاقَةِ فِتْنَةً لَّھُمْ فَارْتَقِبْھُمْ وَاصْطَبِرْ)
“নিশ্চয়ই আমি তাদের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি এক উষ্ট্রী; অতএব (হে সালেহ!) তুমি তাদের আচরণ লক্ষ কর এবং ধৈর্যশীল হও।” (সূরা কামার ৫৪:২৭) কিছুক্ষণের মধ্যেই পাহাড়ের ভিতর থেকে দশ মাস গর্ভবতী একটি উষ্ট্রী বের হয়ে আসলে তিনি বললেন, তোমাদের কাছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে, অতএব তোমরা ঈমান আন। আর উষ্ট্রীর জন্য কিছু নিয়ম-কানুন বেঁধে দিলেন যা অত্র সূরার ৭৩ ও হূদের ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘এটি আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। এটাকে ‘আল্লাহর জমিতে চরে খেতে দাও এবং একে মন্দ উদ্দেশ্যে স্পর্শ কর না, করলে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে।’ উক্ত উষ্ট্রীর জন্য পানি পান করার জন্য নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করা ছিল আর বলে দেয়া ছিল সেদিন যেন কেউ পানি সংগ্রহে উপস্থিত না হয়। (সূরা কামার ৫৪:২৮)
সামূদ জাতির লোকেরা যে কূপ থেকে পানি পান করত ও তাদের গবাদি পশুদের পানি পা করাত, এ উষ্ট্রীও সেই কূপ থেকে পানি পান করত। যেদিন উষ্ট্রী পানি পান করত সেদিন পানি শেষ হয়ে যেত। অবশ্য সেদিন লোকেরা উষ্ট্রীর দুধ পান করত এবং বাকী দুধ দ্বারা তাদের সব পাত্রে ভরে নিত। কিন্তু এ হতভাগাদের কপালে এত সুখ সহ্য হল না। তার উষ্ট্রীকে হত্যা করার নীলনকশা তৈরি করল। আল্লাহ তা‘আলা গযবের পরওয়া করল না, অবশেষে শয়তান তাদেরকে সর্ববৃহৎ কুমন্ত্রণা দিল। আর তা হল, নারীর প্রলোভন। সামূদ গোত্রের দুজন পরমা সুন্দরী মহিলা, যারা সালেহ (আঃ)-এর প্রতি চরম বিদ্বেষী ছিল তারা তাদের রূপ-যৌবন দেখিয়ে দুজন যুবককে উষ্ট্রী হত্যায় রাযী করাল। অতঃপর তারা তীর ও তরবারির আঘাতে উষ্ট্রীকে পা কেটে হত্যা করে ফেলল। হত্যাকারী যুবকদ্বয়ের প্রধানকে লক্ষ করেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِذِ انْۭبَعَثَ اَشْقٰٿھَا)
“যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল।” (সূরা শামস ৯১:১২) কেননা তার কারণেই গোটা সামূদ জাতি গযবে পতিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘অতঃপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহ্বান করল, সে ওটাকে (উষ্ট্রীকে) ধরে হত্যা করল। কী কঠোর ছিল আমার আযাব ও সতর্কবাণী! আমি তাদের উপর পাঠিয়েছি এক বিকট আওয়াজ; ফলে তারা হয়ে গেল খোয়াড় মালিকদের বিখণ্ডিত ভূষির ন্যায়।” (সূরা কামার ৫৪: ২৯-৩১)
এ উষ্ট্রী হত্যার পর সালেহ (আঃ) জাতিকে আল্লাহ তা‘আলার গযবের কথা জানিয়ে দিলেন যে,
(تَمَتَّعُوْا فِیْ دَارِکُمْ ثَلٰثَةَ اَیَّامٍﺚ ذٰلِکَ وَعْدٌ غَیْرُ مَکْذُوْبٍ)
‘‘তোমরা তোমাদের গৃহে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও। এটা একটি প্রতিশ্রুতি যা মিথ্যে হবার নয়।’’ (সূরা হূদ ১১:৬৫) কিন্তু তারা এরূপ কঠোর হুশিয়ারীকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে বরং তাচ্ছিল্যভরে বলল, “হে সালেহ! তুমি সত্য রাসূল হয়ে থাকলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর।” তারা সালেহ (আঃ)-কেও হত্যা করার ষড়যন্ত্র করল। তারা ভাবল, যদি আযাব এসেই যায়, তবে তার আগে সালেহকেই হত্যা করে শেষ করে দিই। কেননা এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করার কারণেই গযব আসবে। সুতরাং সে-ই গযবের জন্য দায়ী। আর যদি গযব না আসে তাহলে সে মিথ্যার দণ্ড ভোগ করুক। জাতির নয়জন নেতা এ নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দেয়। তাদের এ চক্রান্তের বিবরণ সূরা নামলে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,
(وَکَانَ فِی الْمَدِیْنَةِ تِسْعَةُ رَھْطٍ یُّفْسِدُوْنَ فِی الْاَرْضِ وَلَا یُصْلِحُوْنَ قَالُوْا تَقَاسَمُوْا بِاللہِ لَنُبَیِّتَنَّھ۫ وَاَھْلَھ۫ ثُمَّ لَنَقُوْلَنَّ لِوَلِیِّھ۪ مَا شَھِدْنَا مَھْلِکَ اَھْلِھ۪ وَاِنَّا لَصٰدِقُوْنَ)
“আর সে শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং সৎ কর্ম করত না। তারা বলল: ‘তোমরা আল্লাহর নামে শপথ কর, ‘আমরা রাত্রিকালে তাকে ও তার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করব; অতঃপর তার অভিভাবককে নিশ্চয়ই বলব, ‘তার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করিনি; আমরা অবশ্যই সত্যবাদী।’’ (সূরা নামল ২৭:৪৮-৪৯) তাদের সিদ্ধান্ত মতে নয়জন নেতা তাদের প্রধান কাদার বিন সালেফ এর নেতৃত্বে রাতের বেলা সালেহ (আঃ)-কে হত্যা করার জন্য তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পথিমধ্যেই প্রস্তর বর্ষণে ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَکَرُوْا مَکْرًا وَّمَکَرْنَا مَکْرًا وَّھُمْ لَا یَشْعُرُوْنَﮁفَانْظُرْ کَیْفَ کَانَ عَاقِبَةُ مَکْرِھِمْﺫ اَنَّا دَمَّرْنٰھُمْ وَقَوْمَھُمْ اَجْمَعِیْنَ)
“তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি। অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছে- আমি অবশ্যই তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি।” (সূরা নামল ২৭:৫০-৫১) যা হোক, নির্ধারিত দিনে গযব আসার প্রাক্কালেই আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে সালেহ (আঃ) স্বীয় ঈমানদার সাথীদেরকে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন এবং যাওয়ার সময় তিনি অবাধ্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি, কিন্তু তোমরা তো উপদেশদাতাদেরকে পছন্দ কর না।”
আপতিত গযবের ধরন:
সালেহ (আঃ) অবাধ্য জাতিকে শাস্তির ভয় দেখালে তারা বলল, এ শাস্তি কিভাবে আসবে, কোত্থেকে আসবে, এর লক্ষণ কী হবে? সালেহ (আঃ) বললেন: আগামীকাল বৃহস্পতিবার তোমাদের সকলের মুখমণ্ডল হলুদ হয়ে যাবে। পরের দিন শুক্রবার লালবর্ণ ধারণ করবে। অতঃপর শনিবার তা গাঢ় পিতবর্ণ হয়ে যাবে। এটাই হবে তোমাদের জীবনের শেষ দিন। (ইবনু কাসীর, ৭৭-৭৮ নং আয়াতের তাফসীর) রবিবার সকালেই সবাই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সুগন্ধি মেখে অপেক্ষা করতে থাকে। এমতাবস্থায় ভীষণ ভূমিকম্প শুরু হল এবং ওপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ এক গর্জন শোনা গেল। ফলে সবাই যার যার স্থানে একযোগে অধোমুখী হয়ে ভূতলশায়ী হল (সূরা আ‘রাফ ৭৮, হূদ ৬৭-৬৮) এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হল এমনভাবে, যেন তারা কোনদিন সেখানে বসবাস করেনি। অন্য আয়াতে এসেছে যে, ‘আমি তাদের উপর পাঠিয়েছি এক বিকট আওয়াজ; ফলে তারা হয়ে গেল খোয়াড় মালিকদের বিখন্ডিত ভূষির ন্যায়।’ (সূরা কামার ৫৪:৩১)
(الرَّجْفَةُ)
অর্থ ভূমিকম্প, অন্যত্র رجفة স্থানে আওয়াজের কথা এসেছে। এ থেকে বুঝা যায় উভয় শাস্তিই তাদের ওপর এসেছিল। এ সম্পর্কে আরো আলোচনা সূরা হূদের ৬১-৬৮, নামলের ৪৫-৫৩, কামারের ২৩-৩১ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
৯ম হিজরীতে তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার পথে মুসলিম বাহিনী হিজরে অবতরণ করলে রাসূলুল্লাহ তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে নিষেধ করে বলেন,
(لَا تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ إِلَّا أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ ثُمَّ تَقَنَّعَ بِرِدَائِهِ)
তোমরা ঐসব অভিশপ্তদের এলাকায় প্রবেশ করো না ক্রন্দনরত অবস্থায় বতীত। যদি ক্রন্দন করতে না পার তাহলে প্রবেশ করো না। তাহলে তোমাদের ওপর ঐ গযব আসতে পারে, যা তাদের ওপর এসেছিল। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাথা ঢেকে ফেললেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৩৩)
পার্থিব ক্ষমতা ও ধনৈশ্বর্য অধিকাংশ মানুষকে অশুভ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। বিত্তশালীরা আল্লাহ তা‘আলা ও আখেরাতকে ভুলে গিয়ে ভ্রান্ত পথে পা বাড়ায়। সামূদ জাতির বেলায়ও তাই হয়েছিল। অথচ নূহ (আঃ) জাতির কঠিন শাস্তির ঘটনাবলী তখনও লোকমুখে আলোচিত হত। আর আদ জাতির নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনা তো তাদের কাছে এক প্রকার টাটকা ঘটনাই ছিল। অথচ তাদের ভাইদের ধ্বংসস্তুপের ওপরে বড় বড় বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মাণ করে ও বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে তারা পেছনের কথা ভুলে গেল। এমনকি তারা আদ জাতির মত অহংকারী কার্যকলাপ শুরু করে দিল। ফলে আল্লাহ তা‘আলার গযব অনিবার্য হয়ে গেল।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনকে অবমাননা করলে শাস্তি অপরিহার্য। যেমন সামূদ সম্প্রদায় শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন উষ্ট্রীকে অবমাননা করার কারণে।
২. অধিকাংশ মানুষ দুনিয়ার স্বার্থ অথবা ক্ষমতার লোভে সত্য বর্জন করে।
৩. অহংকারীদের অন্তর শক্ত হয়, তারা আল্লাহ তা‘আলার গযব দেখেও পরওয়া করে না, বরং তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়।
৪. নাবীদের ঘটনা বর্ণনার বড় শিক্ষা হল, লোকেদের সতর্ক করা। আমরাও যাতে নাবীর অবাধ্য না হই। অন্যথায় শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
৫. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্যই দুনিয়াতে ছোট-খাট শাস্তির আস্বাদন করিয়ে থাকেন ও তাদেরকে ভয় দেখান।
৬. যুগে যুগে সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনরা সত্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল ফলে তাদের ওপর গযবও এসেছিল, তাই তাদেরকে ভয় না করে বরং আল্লাহ তা‘আলাকেই ভয় করে সত্যের সপক্ষে কথা বলা অব্যাহত রাখা উচিত।
৭. দুর্বল শ্রেণির লোকেরাই সাধরাণতঃ অন্যদের আগে আল্লাহ তা‘আলা ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয় ও অন্যদের দ্বারা নির্যাতিত হয়।
৮. মানুষকে বিপদে ফেলার জন্য শয়তানের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল নারী ও অর্থ-সম্পদ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings