Surah An Naziat Tafseer
Tafseer of An-Nazi'at : 14
Saheeh International
And suddenly they will be [alert] upon the earth's surface.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ:
النازعٰت শব্দটি نزع থেকে উদ্গত। অর্থ হলো : ছিনিয়ে নিয়ে আসা, মূলোৎপাটন করা। غَرْقً অর্থ : ডুব দেয়া। নাযিআত আত্মহরণকারী বা জান কবযকারী ফেরেশতার একটি বৈশিষ্ট্য। ফেরেশতা কাফিরদের শরীরে ঢুকে তাদের আত্মা কঠিনভাবে ছিনিয়ে আনে, তাই তাদেরকে এ নামে ভূষিত করা হয়েছে। এ শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সূরাটির মত এ সূরাতেও কিয়ামত ও তার ভয়াবহতা, জান্নাত ও জাহান্নামীদের পরিচয় এবং কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
১-১৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী এবং তা যথাসময়ে সংঘটিত হবে। এর গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা পরপর গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ শ্রেণির ফেরেশতাদের শপথ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আয়াতে ঐ সকল ফেরেশতার শপথ করেছেন যারা কাফিরদের শরীরে প্রবেশ করে তাদের আত্মা কঠিনভাবে ছিনিয়ে নিয়ে আসে। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন : মালাকুল মাউত যখন কাফিরদের আত্মা টেনে বের করে, তখন তা যেন লোহার করাতের ন্যায় তার প্রতিটি চুলের ও নখের গোড়া দিয়ে বেরিয়ে আসে। (কুরতুবী)
نَّاشِطٰتِ শব্দটি نَشْط হতে এসেছে, যার অর্থ হলো গিরা খুলে দেয়া। অর্থাৎ ফেরেশতা মু’মিনদের আত্মা খুব সহজ ও মৃদুভাবে বের করে থাকে যেমন কোন জিনিসের গিরা সহজে খুলে দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : কলসী কাত করলে পানি যেভাবে সহজে বেরিয়ে যায়, সৎকর্মশীল মু’মিনদের রূহ মৃত্যুর সময় সেভাবে সহজে বের হয়ে যায়। (আহমাদ হা. ১৮৫৫৭, মিশকাত হা. ১৬৩০, সনদ সহীহ)
سَّابِحٰتِ শব্দটি سَبْحً হতে এসেছে। যার অর্থ হলো : সাঁতার কাটা। ফেরেশতা আত্মা বের করার সময় মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এমনভাবে সাঁতার কাটে যেমন ডুবুরীরা কোন কিছু খোঁজার উদ্দেশ্যে পানির গভীরে সাঁতার কাটে। (ফাতহুল কাদীর) অথবা যে সকল ফেরেশতারা মানুষের আত্মা আনা-নেয়া করার কাজে আকাশে সাঁতার কাটে। (তাফসীর মুয়াসসার)
سَّابِقٰتِ অর্থ : অগ্রগামী। যে সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত ওয়াহী ও নির্দেশাবলী নিয়ে নাবীদের নিকট দ্রুত পৌঁছে যায়, যাতে যেসকল শয়তানরা ওয়াহীর বার্তা চুরি করার জন্য আকাশে থাকে তারা কোন বার্তা চুরি করতে না পারে।
مُدَبِّرٰتِ শব্দটি تدبير থেকে এসেছে, অর্থ : পরিচালনা করা, বাস্তবায়ন করা। এখানে সে সকল ফেরেশতাদের শপথ করা হয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত কার্যাবলী যথাযথভাবে পালন করে। যেমন বৃষ্টি বর্ষণ করার দায়িত্ব অর্পন করেছেন মিকাইল (আঃ) ফেরেশতাকে, মানুষের আত্মা কবয করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন মালাকুল মাওতকে, জিবরীল (আঃ)-কে দায়িত্ব দিয়েছেন ওয়াহী আদান প্রদান করতে ইত্যাদি। এমনিভাবে অসংখ্য ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে মানুষের ও জীবজগতের সেবায় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمَا يَعْلَمُ جُنُوْدَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ)
“তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন।” (সূরা মুদ্দাসসির ৭৪ : ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা এ সকল ফেরেশতাদের শপথ করেছেন কিয়ামতের বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা যে কোন সৃষ্ট বস্তু বা ব্যক্তি ইত্যাদির নামে শপথ করতে পারেন কিন্তু মানুষ আল্লাহ তা‘আলার নাম ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করতে পারবে না।
(تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ)
শব্দের অর্থ: কম্পিত হওয়া। অর্থাৎ শিংগায় ফুঁ দেয়ার ফলে আকাশ-জমিন কম্পিত হয়ে যাবে। সব মানুষ মারা যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيْبًا مَّهِيْلاً)
“(এসব হবে) সেদিন যেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশির ন্যায় হবে।” (সূরা মুযযাম্মিল ৭৩: ১৪)
এটা হলো প্রথম ফুঁ। আর দ্বিতীয় ফুঁতে সকল মানুষ জীবিত হয়ে উঠবে, আর এটা হবে প্রথম ফুঁৎকারের চল্লিশ পর, চল্লিশ বছর, না মাস, নাকি দিনে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিছু বলেননি। এ মত পোষণ করেছেন ইবনু আব্বাস, হাসান বাসরী, কাতাদাহ প্রমুখ। (সহীহ বুখারী হা. ৩৯৩৫, মুসলিম হা. ২৯৫৫) আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَنُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَا۬ءَ اللّٰهُ ط ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ أُخْرٰي فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ )
“এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, ফলে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে।” (সূরা যুমার ৩৯: ৬৮)
الرَّادِفَةُ শব্দটি ردف থেকে গঠিত। অর্থ হলো : পেছনে আসা, পরে আসা। যিনি সওয়ারীর ওপর প্রথম ব্যক্তির পেছনে বসেন তাকে رديف বলা হয়। যেহেতু দ্বিতীয় বার শিংগায় ফুঁ দেয়া প্রথম বারের পরপরই হবে তাই তাকে الرَّادِفَةُ বলা হয়েছে।
وَّاجِفَةٌ অর্থ : خائفة বা ভীত সন্ত্রস্ত। সেদিন কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে সকল অন্তর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে। خَاشِعَةٌ অর্থ : অবনত, নিম্নগামী। কিয়ামতের দিন মানুষের দৃষ্টি অপরাধীদের মত নিম্নগামী থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ط وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ إِلَي السُّجُوْدِ وَهُمْ سٰلِمُوْنَ )
“তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে, অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহ্বান করা হয়েছিল। (কিন্তু তারা অমান্য করেছে)” (সূরা কালাম ৬৮ : ৪৩)
الْـحَافِرَةِ কবরকে বলা হয়। অর্থাৎ যারা দুনিয়াতে পুনরুত্থানকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে অস্বীকার করত তারা বলবে আমরা কি কবরস্থ হওয়ার পর পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যাব? এজন্য তারা বলে: আমরা তো মৃত্যুর পর জীর্ণ অস্থিতে পরিণত হয়ে যাব। আল্লাহ তা‘আলা তাদের আশ্চর্যের কথা তুলে ধরে বলেন:
(وَقَالُوْآ أَإِذَا كُنَّا عِظَامًا وَّرُفَاتًا أَإِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ خَلْقًا جَدِيْدًا )
“তারা বলে: ‘আমরা হাড়ে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নূতন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হব?’ (সূরা ইসরা ১৭: ৪৯)
(كَرَّةٌ خَاسِرَةٌ)
অর্থাৎ তারা বলে: যদি দ্বিতীয় বার জীবিত হতেই হয় তাহলে এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর পুনরুত্থান। কারণ আখিরাতকে অস্বীকার করার কারণে তাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই।
আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ কাজ যে একেবারে সহজ সে কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন :
(فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَّاحِدَةٌ)
অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জীবিত করার জন্য একটি ফুঁৎকারের প্রয়োজন মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা ইসরাফিল (আঃ)-কে নির্দেশ দেবেন ফলে তিনি একটা ফুঁৎকার দেবেন, আর আদম (আঃ) থেকে সর্বশেষ আগমনকারী ব্যক্তিসহ সবাই আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাজির হবে। আল্লাহ তা‘আলার আদেশ চোখের পলকের মত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلِلہِ غَیْبُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِﺚ وَمَآ اَمْرُ السَّاعَةِ اِلَّا کَلَمْحِ الْبَصَرِ اَوْ ھُوَ اَقْرَبُﺚ اِنَّ اللہَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ)
“আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায়, বরং তার চেয়েও দ্রুততর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।” (সূরা নাহল ১৬: ৭৭)
سَّاهِرَة এর শাব্দিক অর্থ : জাগরণ ভূমি। এখানে উদ্দেশ্য হলো : জমিনের উপরিভাগ, অর্থাৎ ময়দান। জমিনের উপরিভাগকে سَّاهِرَة বলা হয় এ জন্য যে, সকল প্রাণির শয়ন, জাগরণ এ জমিনের উপরে হয়ে থাকে। (ফাতহুল কাদীর)
অর্থাৎ সকল মানুষ ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্টে উঠে আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাজির হবে। অতএব কিয়ামত সংঘটিত হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ করার অবকাশ নেই। এ বিষয়ে সন্দেহ করলে ঈমান থাকবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা যে জিনিসের শপথ করেন সে জিনিস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
২. কিয়ামতের পূর্ব মূহূর্তে মানুষের কী করুণ দশা হবে তা জানতে পারলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings