Surah An Naba Tafseer
Tafseer of An-Naba : 30
Saheeh International
"So taste [the penalty], and never will We increase you except in torment."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৭-৩০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
সূরা শুরু করা হয়েছে ‘মহাসংবাদ’ দিয়ে। এক্ষণে তা সংঘটিত হওয়ার সময়কাল, সংঘটিত হওয়ার সময়ের অবস্থা ইত্যাদির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সৃষ্টি ও লালন-পালন শেষে পৃথিবী ধ্বংস ও প্রলয়কাল সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : কিয়ামতের জন্য একটি নির্ধারিত দিন রয়েছে। এ সুনির্দিষ্ট দিন বা তারিখ আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না। (সূরা মূলক ৬৭ : ২৬) যদিও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মত ব্যক্ত করে থাকে যে, ৫০০ বছর পর পৃথিবী আলোহীন হয়ে যাবে ইত্যাদি তা নিছক ধারণা মাত্র, প্রকৃত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে, তিনি ছাড়া কেউ তা জানে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْهُ حَتّٰي تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً أَوْ يَأْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيْمٍ )
“যারা কুফরী করেছে তারা তাতে সন্দেহ পোষণ করা হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ না তাদের নিকট কিয়ামত এসে পড়বে আকস্মিকভাবে, অথবা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের শাস্তি।” (সূরা হজ্জ ২২: ৫৫)
(يَوْمَ الْفَصْلِ)
অর্থ ফায়সালার দিন, আর তা হল কিয়ামতের দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ভাল-মন্দ কর্মের ফায়সালা করবেন। (كَانَ مِيْقَاتًا) অর্থ
كان وقتا وميعادا محددا الأولين والأخرين
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য তার সময় ও প্রতিশ্রুত সময় নির্ধারিত। যা কোনরূপ কমবেশি হবে না। এ সম্পর্কে কাফিররা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمَا نُؤَخِّرُھ۫ٓ اِلَّا لِاَجَلٍ مَّعْدُوْدٍ)
“এবং আমি নির্দিষ্ট কিছু কালের জন্য সেটা স্থগিত রেখেছি মাত্র।” (সূরা হূদ ১১: ১০৪) এখানে সরাসরি বা কিয়ামতের দিন বলে বা ফায়সালার দিন বলার মাধ্যমে বুঝাতে চাচ্ছেন কিয়ামতের মূল উদ্দেশ্য বান্দার কর্মের হিসাব-নিকাশ নেওয়া এবং তার যথাযথ বিচার ফায়সালা করা।
أَفْوَاجًا অর্থ হলো দলে দলে। ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন : প্রত্যেক জাতি তাদের রাসূলদের সাথে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ أُنَاسٍ ۭبِإِمَامِهِمْ)
“স্মরণ কর, সে দিনকে যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতা-সহ আহ্বান করব।” (সূরা ইসরা ১৭: ৭১)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : দুবার শিংগায় ফুঁ দেয়ার মাঝে সময় হলো চল্লিশ। সাহাবীগণ বললেন : চল্লিশ দিন? তিনি বললেন : আমি বলতে পারি না। তারা আবার বললেন : চল্লিশ মাস কি? তিনি বললেন : আমি বলতে পারি না। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন : চল্লিশ বছর কি? তিনি বললেন : বলতে পারি না। অতঃপর তিনি বললেন : আল্লাহ তা‘আলা আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ফলে মানুষ (মাটি থেকে) উঠবে যেমন উদ্ভিদ গজায়। মানুষের মেরুদণ্ডের শেষাংশের হাড় ব্যতীত দেহের সব কিছু মাটিতে বিনষ্ট হয়ে যাবে। ঐ হাড় দ্বারা কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টিকে পুনরায় গঠন করা হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৩৫)
এ আয়াতে বর্ণিত ফুঁক দ্বিতীয় বারের ফুঁক। প্রথম ফুঁতে সবকিছু ধ্বংস হবে। আর দ্বিতীয় ফুঁতে মানুষ কবর থেকে উঠবে।
أَبْوَابًا শব্দটি باب এর বহুবচন, অর্থ দরজাসমূহ, অনেক পথ। কিয়ামতের দিন ফেরেশতা অবতরণের জন্য আকাশে অনেক রাস্তা হয়ে যাবে। আকাশ অত্যন্ত সুরক্ষিত যা ভেদ করে যে কেউ ওপরে উঠতে পারে না। প্রত্যেক আকাশের দরজা রয়েছে এবং সেখানে দ্বাররক্ষী ফেরেশতা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মি‘রাজের রাতে আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া হলে জিবরীল (আঃ) প্রত্যেক দরজায় প্রবেশের পূর্বে দ্বাররক্ষী ফেরেশতার অনুমতি নিয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী হা. ৩৪৯, সহীহ মুসলিম হা. ১৬৩)
দ্বিতীয় ফুঁৎকারের পর আকাশ-জমিন পুনরায় বহাল হয়ে যাবে এবং নতুন আকাশ ও জমিন সৃষ্টি হবে ও সকল মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে উপস্থিত হবে। নতুন সে পৃথিবী সমতল হবে, তাতে কোনরূপ বক্রতা বা উঁচু-নিচু থাকবে না।
سَرَابًا অর্থ : মরীচিকা। এমন ধু-ধু মরুভূমি যা রোদের তাপে দূর থেকে মনে হয় পানি দ্বারা ভরপুর। কিয়ামতের পূর্বে পাহাড়গুলোকে-
প্রথমত:
চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً)
“আর পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৮: ১৪)
দ্বিতীয়ত:
তা ধূনিত রঙ্গিন পশমের মত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَتَكُوْنُ الْـجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ)
“এবং পর্বতমালা হবে ধূনিত রঙিন পশমের মত।” (সূরা কারিয়াহ ১০১ : ৫)
তৃতীয়ত:
তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণার মত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَکَانَتْ ھَبَا۬ئً مُّنْۭبَثًّا)
“তখন তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬: ৬)
চতুর্থত:
পাহাড়গুলোকে উড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفًا)
“তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল: ‘আমার প্রতিপালক তাদেরকেসমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন।” (সূরা ত্বহা ২০: ১০৫)
আর পঞ্চম অবস্থায় তা মরীচিকার মত অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। (ফাতহুল কাদীর) এসব আলোচনার পর জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের অবস্থা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
مِرْصَادًا অর্থ হলো ঘাঁটি। যেখানে আত্মগোপন করে শক্রর অপেক্ষা করা হয়। সুযোগ পেলেই হামলা চালাবে। অনুরূপভাবে জাহান্নামের প্রহরীরা সুযোগ পেলেই কাফিরদেরকে শাস্তি দেবে।
أَحْقَابًا শব্দটি حقب এর বহুবচন। এর অর্থ হলো যুগ বা জামানা। উদ্দেশ্য হলো যুগযুগ ধরে অনন্তকাল কাফিররা জাহান্নামে থাকবে। কখনও সেখান থেকে বের হতে পারবে না। জাহান্নামে প্রবেশ করার পর তারা এমন কোন কিছু পাবে না যা অন্তর ও দেহ ঠান্ডা করে যন্ত্রণা নিবারণ করাবে। তবে পাবে ফুটন্ত গরম পানি ও তাদের দেহ নির্গত পুঁজ। এসব তাদের তৃষ্ণা নিবারণে কোন উপকারে আসবে না, বরং অর্ধগলা পর্যন্ত গিয়ে আটকে থাকবে যা মৃত্যুযন্ত্রণা আরো বৃদ্ধি করবে। এসব তাদের কৃত আমলের পূর্ণ পরিণাম। কারণ তারা আখিরাতে বিশ্বাসী ছিল না এবং আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের জন্য দিন নির্ধারিত হয়ে আছে।
২. কিয়ামতের পূর্বে দুনিয়ার কী অবস্থা হবে তা জানতে পারলাম।
৩. কাফিররা যে শাস্তি পাবে তার বিবরণ জানলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings