72:8

وَأَنَّا لَمَسۡنَا ٱلسَّمَآءَ فَوَجَدۡنَٰهَا مُلِئَتۡ حَرَسًا شَدِيدًا وَشُهُبًا٨

Saheeh International

And we have sought [to reach] the heaven but found it filled with powerful guards and burning flames.

Tafsir "Ibn Kathir Full" (Bengali)

৮-১০ নং আয়াতের তাফসীর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বি’সাতের পূর্বে জ্বিনেরা আকাশের উপর গিয়ে কোন জায়গায় বসে পড়তো এবং কান লাগিয়ে এবং একটার সঙ্গে শতটা মিথ্যা মিলিয়ে দিয়ে নিজেদের লোকদেরকে বলতো। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে পয়গম্বর রূপে পাঠানো হলো এবং তার উপর কুরআন কারীম নাযিল হতে শুরু হলো তখন আকাশের উপর কঠোর প্রহরী বসিয়ে দেয়া হলো ঐ শয়তানদের পূর্বের মত সেখানে বসে পড়ার আর সুযোগ রইলো না। যাতে কুরআন কারীম ও গণকদের কথার মধ্যে মিশ্রণ না ঘটে যায় এবং সত্যের সন্ধানীদের কোন অসুবিধা না হয়।ঐ মুসলমান জ্বিনগুলো তাদের সম্প্রদায়কে বলেঃ পূর্বে তো আমরা আকাশের উপর বসে পড়তাম। কিন্তু এখন তো দেখা যায় যে, তথায় কঠোর প্রহরী বসে রয়েছে। তারা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে! এর প্রকৃত রহস্য যে কি তা আমাদের জানা নেই। মহামহিমান্বিত আল্লাহ জগদ্বাসীর মঙ্গলই চান, না তাদের অমঙ্গলই অভিপ্রেত তা আমরা বলতে পারি না।ঐ মুসলমান জ্বিনদের আদব-কায়দা লক্ষ্যণীয় যে, তারা অমঙ্গলের সম্বন্ধের জন্যে কোন কর্তা উল্লেখ করেনি, কিন্তু মঙ্গলের সম্বন্ধ আল্লাহ তা'আলার সাথে লাগিয়েছে এবং বলেছেঃ এই প্রহরী নিযুক্তিকরণের উদ্দেশ্য যে কি তা আমরা জানি না। অনুরূপভাবে সহীহ হাদীসেও এসেছেঃ “অমঙ্গল ও অকল্যাণ আপনার পক্ষ থেকে নয়।” ইতিপূর্বেও মাঝে মাঝে তারকা নিক্ষিপ্ত হতো, কিন্তু এতো অধিকভাবে নয়। যেমন হাদীসে হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে বসেছিলাম, হঠাৎ আকাশে একটি তারা নিক্ষিপ্ত হলো এবং আলো বিচ্ছুরিত হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তোমরা এটা সম্পর্কে কি বলতে?” আমরা উত্তরে বললামঃ আমরা বলতাম যে, কোন মহান ব্যক্তির জন্মের কারণে বা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে এরূপ হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “না, তা নয়। বরং যখন আল্লাহ আকাশে কোন কাজের ফায়সালা করেন (তখন এরূপ হয়ে থাকে)।” সূরা সাবার তাফসীরে এ হাদীসটি পূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারকা খুববেশী নিক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ হলো ওগুলো দ্বারা শয়তানদেরকে ধ্বংস করা ও আকাশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেন তারা আকাশের খবর নেয়া হতে বঞ্চিত হয়। এ ব্যবস্থা গ্রহণের পর জ্বিনেরা চতুর্দিকে অনুসন্ধান চালাতে শুরু করলো যে, তাদের আকাশে যাওয়া বন্ধ হওয়ার কারণ কি? সুতরাং তাদের একটি দল আরবে আসলো এবং সেখানে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ফজরের নামাযে কুরআন কারীম পাঠরত অবস্থায় পেলো। তারা তখন বুঝতে পারলো যে, এই নবী (সঃ)-এর বি’সাত এবং এই কালামের অবতরণই তাদের আকাশে যাওয়ার পথ বন্ধ হওয়ার একমাত্র কারণ। অতঃপর ভাগ্যবান ও বুদ্ধিমান জ্বিনগুলো তো মুসলমান হয়ে গেল। আর অবশিষ্ট জ্বিনদের ঈমান আনয়নের সৌভাগ্য লাভ হলো না। সূরা আহকাফের (আরবি) (৪৬:২৯) এই আয়াতের তাফসীরে এর পূর্ণ বর্ণনা গত হয়েছে। নক্ষত্ররাজির ঝরে পড়া এবং আকাশ সুরক্ষিত হওয়া শুধুমাত্র জ্বিনদের জন্যেই নয়, বরং মানুষের জন্যেও এক ভীতিপ্রদ নিদর্শন ছিল। তারা ভয় পাচ্ছিল এবং অপেক্ষমান ছিল যে, দেখা যাক কি ফল হয়। আর সাধারণতঃ নবীদের (আঃ) আগমন এবং আল্লাহর দ্বীন জয়যুক্ত হওয়ার সময় এরূপ হয়েও থাকতো।হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, শয়তানরা ইতিপূর্বে আসমানী বৈঠকে বসে ফেরেশতাদের পারস্পরিক আলোচনা শুনতো। যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) রাসূলরূপে প্রেরিত হলেন তখন এক রাত্রে শয়তানদের প্রতি এক বড় অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হলো, যা দেখে তায়েফবাসীরা বিচলিত হয়ে পড়লো যে, সম্ভবতঃ আকাশবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হলো। তারা লক্ষ্য করলো যে, ক্রমান্বয়ে তারকাগুলো ভেঙ্গে পড়ছে এবং অগ্নিশিখা উঠতে রয়েছে। আর দূর দূরান্ত পর্যন্ত তীক্ষ্ণতার সাথে চলতে রয়েছে। এ দেখে তায়েফবাসী তাদের গোলামগুলো আযাদ করতে এবং পশু আল্লাহর পথে চেড়ে দিতে শুরু করলো। পরিশেষে আবদে ইয়ালীল ইনে আমর ইবনে উমায়ের তাদেরকে বললোঃ “হে তায়েফবাসী! তোমাদের মালগুলো তোমরা ধ্বংস করছো কেন? তোমরা নক্ষত্রগুলোকে গণে পড়ে দেখো। যদি তারকাগুলোকে নিজ নিজ জায়গায় পেয়ে যাও তবে জানবে যে, আকাশবাসীরা ধ্বংস হয়নি। বরং এসব ব্যবস্থাপনা শুধু ইবনে আবী কাবশা অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর জন্যেই হচ্ছে। আর যদি তোমরা দেখতে পাও যে, সত্যি সত্যিই তারকাগুলো নিজ নিজ নির্ধারিত স্থানে নেই তবে নিশ্চিতরূপে জানবে যে, আকাশবাসীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা তখন নক্ষত্রগুলো গণে পড়ে দেখলো এবং দেখতে পেলোলা যে, তারকাগুলো নিজ নিজ নির্ধারিত স্থানেই রয়েছে। এ দেখে তায়েফবাসীরাও আশ্বস্ত হলো এবং শয়তানরাও পালিয়ে গেল। তারা ইবলীসের কাছে গিয়ে তাকে ঘটনাটি শুনালো। ইবলীস তখন তাদেরকে বললোঃ তোমরা প্রত্যেক এলাকা হতে আমার নিকট মাটি নিয়ে এসো।" তারা তার নিকট মাটি নিয়ে আসলো। সে মাটি শুকলো এবং বললোঃ “এর হেতু মক্কায় রয়েছে।” নাসীবাইনের সাতজন জ্বিন মক্কায় পৌঁছলো। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) মসজিদে হারামে নামায পড়াচ্ছিলেন এবং কুরআন কারীম পাঠ করছিলেন। কুরআন শুনে ঐ জ্বিনদের অন্তর কোমল হয়ে যায়। আরো নিকটে গিয়ে তারা শুনতে থাকে এবং এতে মুগ্ধ হয়ে তারা মুসলমান হয়ে যায় এবং নিজেদের কওমকেও ইসলামের দাওয়াত দেয়।আমরা এই পূর্ণ ঘটনাটি পুরোপুরিভাবে ‘কিতাবুসসীরাত'-এর মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নবুওয়াতের সূচনার বর্ণনায় লিখে দিয়েছি। সুতরাং আল্লাহরই জন্যে সমস্ত প্রশংসা।

Arabic Font Size

30

Translation Font Size

17

Arabic Font Face

Help spread the knowledge of Islam

Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.

Support Us