Surah Nuh Tafseer
Tafseer of Nuh : 21
Saheeh International
Noah said, "My Lord, indeed they have disobeyed me and followed him whose wealth and children will not increase him except in loss.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২১-২৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
নূহ (আঃ) এক পুরুষের পর দ্বিতীয় পুরুষকে অতঃপর তৃতীয় পুরুষকে এমনিভাবে সাড়ে নয়শত বছর দাওয়াতী কাজ করলেন এ আশায় যে, তারা ঈমান আনবে। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী বিরতিহীন দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও তারা ঈমান আনল না। তখন নূহ (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার কাছে অভিযোগ করে বললেন : হে আল্লাহ তা‘আলা! তারা আমার অবাধ্য হয়েছে এবং এমন মা‘বূদের অনুসরণ করছে যারা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার করতে পারে না। আর তারা হককে প্রতিহত করার জন্য সর্বপ্রকার ষড়যন্ত্র করছে।
নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় জাতির লোকেরা তাঁকে হত্যা করার চক্রান্ত করল।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(لَئِنْ لَّمْ تَنْتَھِ یٰنُوْحُ لَتَکُوْنَنَّ مِنَ الْمَرْجُوْمِیْنَ)
‘হে নূহ! তুমি যদি বিরত না হও তবে তুমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে নিহতদের মাঝে শামিল হবে।’ (সূরা শুআরা ২৬ : ১১৬) তিনি স্বজাতিকে ডেকে বললেন : ‘‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থিতি ও আল্লাহর নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশ দান তোমাদের নিকট যদি দুঃসহ হয় তবে আমি তো আল্লাহর ওপর নির্ভর করি। তোমরা যাদেরকে শরীক করেছ তৎসহ তোমাদের কর্তব্য স্থির করে নাও, পরে যেন কর্তব্যের বিষয়ে তোমাদের কোন অস্পষ্টতা না থাকে। আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্ম নিষ্পন্ন করে ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিও না। ‘আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তোমাদের নিকট আমি তো কোন পারিশ্রমিক চাই না, আমার পারিশ্রমিক আছে একমাত্র আল্লাহর নিকট, আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে আদিষ্ট হয়েছি।’ আর তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল।” (সূরা ইউনুস ১০ : ৭১-৭৩) জাতির লোকেরা তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে শির্কের ওপর অটল রইল এবং অন্যদেরকেও জানিয়ে দেয়, তোমরা নূহের কথায় তোমাদের মা‘বূদদেরকে বর্জন করো না।
(لَا تَذَرُنَّ اٰلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ)
অর্থাৎ নূহ (আঃ)-এর যুগের লোকেরা যে সকল ব্যক্তিদের পূজা করত তারা সকলে সৎ বান্দা ছিল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : নূহ (আঃ)-এর জাতির মাঝে যে প্রতিমার পূজা চালু ছিল পরবর্তীতে আরবের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল।
(ود) ওয়াদ “দাওমাতুল জান্দাল” নামক জায়গায় কালব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, (سُوَاعً) সূওয়া হল হুযায়ল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং (يَغُوْثَ) ইয়াগুছ ছিল মুরাদ গোত্রের, পরবর্তীতে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটবর্তী “জাওফ” নামক স্থানে। (يَعُوْق) ইয়াউক ছিল হামাদান গোত্রের মূর্তি, (نَسْرًا) নাসর ছিল যুলকালা গোত্রের হিময়ার শাখার মূর্তি। নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেক লোকের নাম নাসর ছিল। তারা মারা গেলে শয়তান তাদের জাতির লোকদের অন্তরে এ কথা ঢেলে দিল যে, তারা যেখানে বসে আলোচনা করত, সেখানে তোমরা কতিপয় মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সমস্ত পূন্যবান লোকদের নামেই এদের নামকরণ কর। তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকেরা মারা গেলে এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে প্রকৃত জ্ঞান বিলুপ্ত হয়ে গেলে লোকজন তাদের পূজা করা শুরু করে দেয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯২০)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : তাই সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, তাদের মর্যাদা থেকে বেশি সম্মান প্রদর্শন করা ও শরীয়ত গর্হিত কাজ মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়। সেজন্য তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় আমল করা আবশ্যক।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা উম্মু হাবীবাহ ও উম্মু সালামাহ (রাঃ) হাবশায় গীর্জা দেখলেন, সেগুলোকে মারিয়া বলা হয়। সেখানে অনেক ছবি, প্রতিকৃতি ও মূর্তি ছিল। রাসূলুুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসব কথা বললে, তিনি বলেন : ঐ সমাজে যখন কোন সৎ লোক মারা যেত, তারা সেই সৎ লোকের কবরের ওপর মাসজিদ বানাতো এবং তাতে তাদের প্রতিকৃতি বানিয়ে রাখতো। এসব লোকেরা হল সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট। এরা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি হিসাবে গণ্য হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৪২৭, ৩৮৭৩, সহীহ মুসলিম হা. ৫২৮)
(وَقَدْ أَضَلُّوْا)
অর্থাৎ নূহ (আঃ)-এর জাতির নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনেক লোকদেরকে প্রতিমা পূজার দিকে দাওয়াত দিয়ে পথভ্রষ্ট করেছে।
সৃষ্টির সূচনালগ্ন অর্থাৎ আদম (আঃ) থেকে নূহ (আঃ) পর্যন্ত সমস্ত মানুষ তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সে সময় ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(کَانَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةًﺤ فَبَعَثَ اللہُ النَّبِیّ۪نَ مُبَشِّرِیْنَ وَمُنْذِرِیْنَ...)
“মানবজাতি একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসাবে নাবীদেরকে পাঠালেন...।”
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যকার দশ যুগ বা প্রজন্মের সকলেই সত্য ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, অতঃপর তারা ধর্মীয় বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হয়। ফলে তাদেরকে সত্য ধর্মের ওপর পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীস্বরূপ প্রেরণ করেন (তাবারী ২/৩৩৪)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) যা বলেছেন তার সত্যতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি হাদীসেও প্রমাণিত। তিনি বলেন : আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী দশ যুগ বা প্রজন্ম পর্যন্ত সবাই ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। (তাবারী ২/৩৩৪) এ ছাড়াও অনেক প্রমাণ রয়েছে যা প্রমাণ করে-আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়ের লোকেরা তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সর্বপ্রথম যে জাতি শির্কে লিপ্ত হয় :
এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনু জারীর বলেন : এরা পাঁচজন আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়ের সৎ মানুষ ছিলেন। তাদের অনুসরণকারী অনেক মানুষ ছিল। তারা মৃত্যু বরণ করার পর তাদের অনুসারীরা বলল : আমরা যদি তাদের প্রতিকৃতি নির্মাণ করি তাহলে তা দেখে আমরা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের প্রতি আগ্রহী ও মনোযোগী হতে পারব। এটা মনে করে তারা তাদের প্রতিকৃতি তৈরি করল। এদের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় প্রজন্মের জনগণের নিকট শয়তান এসে বলল : তোমাদের পূর্ব পুরুষগণ এদের উপাসনা করত ও এদের ওসীলায় তারা বৃষ্টি কামনা করতো। এভাবে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে তারা তাদের উপাসনা করতে আরম্ভ করে। (তাবারী ১২/২৯/৬২, এগাছাতুল লাহফান ২/১৬১)
আরবে শির্কের অনুপ্রবেশ :
আরবে বসবাসকারী সাধারণ লোকজন ইসমাঈল (আঃ)-এর দাওয়াত ও প্রচারের ফলে ইবরাহীম (আঃ) প্রচারিত দীনের অনুসারী ছিলেন। এ কারণেই তারা ছিলেন আল্লাহ তা‘আলার একত্বে বিশ্বাসী এবং তারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করত। কিন্তু কালপ্রবাহে ক্রমান্বয়ে তারা আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ এবং খালেস দীনি শিক্ষার কোন কোন অংশ ভুলে যেতে থাকে। এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলার একত্ব ও দীনে ইবরাহীমের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট থাকে। বনু খুযাআহ গোত্রের সরদার আমর বিন লুহাইকে ধর্মীয় বিষয়াদির প্রতি তার গভীর অনুরাগের কারণে লোকজন তাকে শ্রদ্ধা করত এবং তার কথা অনুসরণ করত। এক পর্যায়ে সে ব্যক্তি শাম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেখানে মূর্তি পূজা দেখতে পায়। শাম দেশে বহু নাবী-রাসূলগণ এসেছেন। সেই হিসাবে লুহাই মূর্তি পূজাকে অধিকতর ভাল ও সত্য বলে ধারণা করে। তাই দেশে ফিরে আসার সময় সে হুবাল নামক একটি মূর্তি সাথে নিয়ে আসে এবং খানায়ে কাবার মধ্যে তা রেখে দিয়ে পূজা করা শুরু করে। সাথে সাথে মক্কাবাসীকেও পূজা করার জন্য আহ্বান করে। মক্কাবাসী তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মূর্তি হোবলের পূজা করতে থাকে। কাল বিলম্ব না করে হিজাযবাসীও মক্কাবাসীর অনুসরণ করে মূর্তি পূজা করতে লাগল। এভাবে একত্ববাদী আরববাসী মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়। (আর রাহীকুল মাখতূম)
(وَلَا تَزِدِ الظّٰلِمِيْنَ إِلَّا ضَلٰلًا)
অর্থাৎ নূহ (আঃ) তাঁর অবাধ্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বদ্দুআ করেছেন, যেমন মূসা (আঃ) করেছিলেন :
(وَقَالَ مُوْسٰي رَبَّنَآ إنَّكَ اٰتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَه۫ زِيْنَةً وَّأَمْوَالًا فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا لا, رَبَّنَا لِيُضِلُّوْا عَنْ سَبِيْلِكَ ج رَبَّنَا اطْمِسْ عَلٰٓي أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلٰي قُلُوْبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوْا حَتّٰي يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيْمَ )
“মূসা বলল : ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি তো ফির‘আউন ও তার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে শোভা ও সম্পদ দান করেছ, হে আমাদের প্রতিপালক! যার করণে তারা মানুষকে তোমার পথ হতে ভ্রষ্ট করছে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, তাদের হৃদয় কঠিন করে দাও, তারা তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ৮৮)
সুতরাং যুগে যুগে সৎ ব্যক্তিদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকেই মূলত শিরকের আস্তানা গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও দেখা যায় যত মাযার, খানকা ইত্যাদি রয়েছে তার অধিকাংশ সৎ লোকদের কবরকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে। আর কিছু আছে ভন্ড শয়তান যারা কোনদিন নামায রোযার ধার ধারত না; অথচ তাদের অনুসারীরা তাদের মৃত্যুর পর কবরের ওপর মাযার গড়ে তোলে। আর কিছু মাযার রয়েছে মূলত সেখানে কোন মৃত ব্যক্তিই নেই, রাতারাতি মাযারের মত গড়ে তুলে ব্যবসা করছে। আমাদের সবাইকে এ সমস্ত ধোঁকা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. মূর্তি পূজার সূচনা জানলাম।
২. প্রকৃত জ্ঞান না থাকলে মানুষ সহজেই পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
৩. যুগে যুগে যারাই সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে তারাই পথভ্রষ্ট হয়েছে।
৪. নাবীরা মুসতাজাবুত দাওয়াহ বা দু‘আ করলে কবূল হত এমন ব্যক্তি ছিলেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings