Surah Al An'am Tafseer
Tafseer of Al-An'am : 90
Saheeh International
Those are the ones whom Allah has guided, so from their guidance take an example. Say, "I ask of you for this message no payment. It is not but a reminder for the worlds."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৮৪-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও বন্ধু এবং মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ)-কে ইলম, দাওয়াত, ধৈর্য ও সৎ বংশধর ও পবিত্র সন্তান দিয়ে যে অনুগ্রহ করেছেন তার বিবরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বৃদ্ধ বয়সে ইসহাক (আঃ)-কে পুত্র হিসেবে দান করেন এবং ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র ইয়াকূব (আঃ)-কে দান করলেন। যখন ফেরেশতাগণ লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য আগমন করে তখন ইবরাহীম ও সারাকে ইসহাক (আঃ)-এর সুসংবাদ দেয়। এমন সময় ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স ছিল ১০০ বছর এবং তাঁর স্ত্রী সারাহ-এর বয়স ছিল ৯০ বছর, তিনি ছিলেন বন্ধ্যা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالَتْ يٰوَيْلَتٰٓي أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوْزٌ وَّهٰذَا بَعْلِيْ شَيْخًا إِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيْبٌ قَالُوْآ أَتَعْجَبِيْنَ مِنْ أَمْرِ اللّٰهِ رَحْمَتُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُه۫ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّه۫ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ)
‘সে বলল: ‘কী আশ্চর্য! সন্তানের জননী হব আমি, এখন আমি বন্ধ্যা এবং আমার স্বামীও বৃদ্ধ! এটা অবশ্যই এক অদ্ভূত ব্যাপার!’ তারা বলল: ‘আল্লাহর কাজে তুমি আশ্চর্য বোধ করছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।’(সূরা হূদ ১১:৭২-৭৩)
তাছাড়া ইসহাক (আঃ) যে নাবী হবেন তারও সুসংবাদ দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَبَشَّرْنٰهُ بِإِسْحَاقَ نَبِيًّا مِّنَ الصّٰلِحِيْنَ)
“আর আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের, সে সৎ লোকেদের মধ্য থেকে অন্যতম নাবী।”(সূরা সফফাত ৩৭:১১২)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَبَشَّرْنٰهَا بِإِسْحَاقَ لا وَمِنْ وَّرَا۬ءِ إِسْحٰقَ يَعْقُوْبَ)
অতঃপর আমি তাকে ইস্হাকের ও ইস্হাকের পরবর্তী ইয়া‘কূবের সুসংবাদ দিলাম।”(সূরা হূদ ১১:৭১)
(وَنُوْحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ)
‘পূর্বে নূহকেও সৎ পথে পরিচালিত করেছিলাম’অর্থাৎ নূহ (আঃ) হলেন ইসহাক ও ইয়াকুব (আঃ)-ও এদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর পূর্বের নাবী। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকে যেমন হিদায়াত দান করেছিলেন নূহ (আঃ)-কে সেরূপ হিদায়াত দান করেছিলেন এবং উত্তম বংশধর দিয়েছেন।
নূহ (আঃ) ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ব্যতীত সকলকে ডুবিয়ে মারার পর দুনিয়াতে কেবল তাদের বংশধররাই অবশিষ্ট থাকে। তাই এর পরবর্তীকালে সকলেই নূহ (আঃ)-এর বংশধর। অনুরূপভাবে ইবরাহীম (আঃ)-ও ছিলেন নূহ (আঃ)-এর বংশধর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلْنَا فِيْ ذُرِّيَّتِهِ النُّبُوَّةَ وَالْكِتٰبَ وَاٰتَيْنٰهُ أَجْرَه۫ فِي الدُّنْيَا ج وَإِنَّه۫ فِي الْاٰخِرَةِ لَمِنَ الصّٰلِحِيْنَ)
“এবং তার বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নবুওয়াত ও কিতাব এবং আমি তাকে দুনিয়ায় পুরস্কৃত করেছিলাম; এবং আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎ লোকেদের অন্যতম হবে।”(সূরা আনকাবুত ২৯:২৭)
(وَمِنْ ذُرِّيَّتِه)
‘এবং তার বংশধর থেকে’ এখানে ‘তার’বংশধর দ্বারা কাদেরকে বুঝানো হয়েছে- এ ব্যাপারে কোন কোন মুফাসসির বলেন, নূহ (আঃ)-এর বংশধর থেকে যেসকল নাবী এসেছেন তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা সমস্ত আলোচনা তাঁকে নিয়েই। যদিও লূত (আঃ) তাঁর বংশধর থেকে আসেননি। অধিকাংশের ওপর ভিত্তি করে লূত (আঃ)-এর আলোচনা তাতে চলে এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَا۬ءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ لا إِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْۭ بَعْدِيْ ط قَالُوْا نَعْبُدُ إِلٰهَكَ وَإِلٰهَ اٰبَآئِكَ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ إِلٰـهًا وَّاحِدًا وَّنَحْنُ لَه۫ مُسْلِمُوْنَ)
“তোমরা কি উপস্থিত ছিলে? যখন ইয়া‘কূবের মৃত্যু উপস্থিত হয়! তখন তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার পরে তোমরা কোন্ জিনিসের ইবাদত করবে? সন্তানরা বলেছিলেন, আমরা আপনার ও আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা‘বূদের ইবাদত করব, তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব।” (সূরা বাকারাহ ২:১৩৩)
ইসমাঈল (আঃ) হলেন ইসহাক (আঃ)-এর সন্তানদের চাচা। তারপরেও এখানে বাবাদের অন্তভুর্ক্ত করেছেন অধিকাংশের ওপর লক্ষ রেখে। (ইবনে কাসীর, ৩/৩৩৫)
এভাবে আল্লাহ তা‘আলা এখানে সতের জন নাবীর নাম উল্লেখ করেছেন। সকলকে সৎ বান্দা বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং সারা পৃথিবীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ সকল শ্রেষ্ঠ ও সৎ বান্দারাও যদি আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করত আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকল আমল বরবাদ করে দিতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ اُوْحِیَ اِلَیْکَ وَاِلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِکَﺆ لَئِنْ اَشْرَکْتَ لَیَحْبَطَنَّ عَمَلُکَ وَلَتَکُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ)
“নিশ্চয়ই তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওয়াহী করা হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহর সাথে শরীক স্থির কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবেই এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”(সূরা যুমার ৩৯:৬৫) তাহলে আমাদের অবস্থা কী হতে পারে?
دَاو۫دَ ‘দাঊদ’ হলেন বিপুল শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত ও মানুষের মাঝে বিচার-ফায়সালা করার প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। বর্তমান ফিলিস্তীনসহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) এলাকায় তাঁর রাজত্ব ছিল। পৃথিবীর অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অনুগত ও সদা কৃতজ্ঞ। দাঊদ (আঃ) হলেন আল্লাহ তা‘আলার ঐ বান্দা যাকে খুশী হয়ে পিতা আদম (আঃ) স্বীয় বয়স থেকে ৪০ বছর কেটে তাকে দান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করেছিলেন এবং তাই দাঊদ (আঃ)-এর ৬০ হতে ১০০ বছরে উন্নীত হয়। (তিরমিযী, মিশকাত হা: ১১৮, হাসান সহীহ) দাঊদ (আঃ) সম্পর্কে সূরা সাবার ১০-১১ ও সূরা সোয়াদের ১৭-২৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
سُلَیْمٰنَ ‘সুলাইমান’ দাঊদ (আঃ)-এর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র সুলাইমান (আঃ) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুওয়াতের সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। এছাড়াও তাঁকে এমন কিছু নেয়ামত দান করেন যা অন্য কোন নাবীকে দান করেননি। ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, সুলাইমান (আঃ) মোট ৫৩ বছর বয়স পেয়েছিলেন। তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর রাজত্ব করেন (কুরতুবী)। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা আম্বিয়ার ৭৮-৮২, নামলের ১৫-৪৪ এবং সূরা সোয়াদের ৩০-৪০ নং আয়াতের উল্লেখ করা হয়েছে।
الْیَسَعَ -‘আল ইয়াসা‘পবিত্র কুরআনে এ নাবী সম্পর্কে অত্র সূরা ও সূরা সোয়াদের ৪৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর চাচাতো ভাই ও তাঁর প্রতিনিধি। ইলিয়াস ও সুলাইমান (আঃ)-এর পরে তাঁকে নবুওয়াত দেয়া হয়, ফলে তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর শরীয়ত অনুযায়ী ফিলিস্তিন এলাকায় দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করেন। (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/৪ পৃঃ) ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে সূরা সফফাতের ১৩৯-১৪৮ নং আয়াতে আলোচনা রয়েছে।
অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা এসব হিদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হিদায়াতের অনুসরণের নির্দেশ দিচ্ছেন।
(قُلْ لَّآ أَسْئَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا)
বল: ‘এ জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না, অর্থাৎ দীনের তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজের জন্য কোন প্রতিদান চাই না। এর প্রতিদান আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার কাছে পাব।
প্রশ্ন আসতে পারে- কুরআন শিক্ষা দিয়ে, দীনের তাবলীগ করে ও ওয়াজ-নসিহত করে অর্থ নেয়া যাবে কি? উত্তর: কেউ না নিলে তা অধিক উত্তম। আর নিলে জায়েয হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللّٰهِ
তোমরা যেসকল কাজ করে পারিশ্রমিক নাও তার অধিক হকদার হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাব শিক্ষা দিয়ে নেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ৫৭৩৭.)
সুতরাং ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক নেয়ার অধিকার রয়েছে, বিশেষ করে যদি সরকারী ব্যবস্থা না থাকে। তবে ইসলামী সরকার থাকলে সরকারই এ গুরু দায়িত্ব বহন করবে। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ৪০-৪৩ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষের জীবনে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল সঠিক পথের হিদায়াত।
২. পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ নাবী ও রাসূলগণ।
৩. দুনিয়ার অনাসক্তি ও আখিরাতের প্রতি আসক্তির ফযীলত জানতে পারলাম।
৪. নাবী-রাসূলগণ শির্কী অপরাধ করা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত, কিন্তু যদি করেন তাহলে তারও পরিণতি খুব ভয়াবহ।
৫. নাবীদের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা উম্মাতের জন্য ফরয।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings