Surah Al An'am Tafseer
Tafseer of Al-An'am : 1
Saheeh International
[All] praise is [due] to Allah, who created the heavens and the earth and made the darkness and the light. Then those who disbelieve equate [others] with their Lord.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ, অবতরণের স্থান ও প্রেক্ষাপট:
আন্‘আম শব্দের শাব্দিক অর্থ হল: গৃহপালিত পশু। অত্র সূরার ১৩৬, ১৩৮, ১৪২ নং আয়াতে (الأنعام) আল-আন্‘আম শব্দটি উল্লেখ রয়েছে বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া এ সূরাতে গৃহপালিত পশু সংক্রান্ত বিধি-বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কারণ মক্কার মুশরিকরা কিছু পশু আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্ধারণ করত, কিছু নিজেদের জন্য হারাম করে নিত, আবার কিছু পশু নিজেদের নারী-পুরুষের মাঝে ব্যবধান করতঃ হারাম করে নিত।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: সূরা আন্‘আম মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। (সনদ সহীহ, ইবনে কাসীর, ৩/২৭২)
আল্লামা সা‘লাবী (রহঃ) বলেন: সূরা আন্‘আম মক্কায় অবতীর্ণ হয়। তবে ছয়টি আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ হয়। তা হল
(وَمَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدْرِه۪)
-সহ পরের দু’টি আয়াত এবং
(قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ) আয়াত সহ পরের দু’টি আয়াত। অর্থাৎ ৯১-৯৩ নং আয়াত ও ১৫১-১৫৩ নং আয়াত।
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) ইবনু আব্বাস ও কাতাদাহ (রহঃ) থেকে একটি বর্ণনা নিয়ে এসেছেন তাতে তাঁরা বলেন: দু’টি আয়াত ব্যতীত সম্পূর্ণ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সে দু’টি আয়াত হল ৯১ ও ১৪১ নং। (ফাতহুল কাদীর, ২/১২৬)
এ সূরা অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট ও ফযীলত সম্পর্কে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় সকল বর্ণনাই দুর্বল। (ফাতহুল কাদীর, ২/১২৬) তবে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, তিনি বলেন: আরবের অশিক্ষিত লোকেদের শিক্ষা দিতে যদি তুমি আনন্দ পাও তাহলে সূরা আন্‘আমের ১৩০ নং আয়াতের পরের আয়াতগুলো পড়। (সহীহ বুখারী হা: ৩৫২৪)
অত্র সূরার শুরুতে তাওহীদ, আল্লাহ তা‘আলার মর্যাদা, মাঝে ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত মা‘বূদ চেনার ঐতিহাসিক ঘটনা, হালাল-হারামের বিধান এবং শেষ দিকে মক্কার মুশরিকদের শির্কের ধরণ ও পদ্ধতি আর যেসব প্রাণী হারাম করা হয়েছে তা-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিধানাবলী অত্র সূরায় স্থান পেয়েছে।
১-৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা সূরাটি শুরু করেছেন দু’ প্রকার তাওহীদ দ্বারা। প্রথমেই নিজের প্রশংসা করলেন যা তাওহীদে উলুহিয়্যাহ, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল সর্বাধিক প্রশংসার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। মানুষ একমাত্র তাঁর প্রশংসা করবে, কেননা প্রশংসা করা একটি ইবাদত। তবে ভাল ও সৎ কাজে মানুষেরও প্রশংসা করা যায়। সৎ কাজ ও একে অন্যের প্রতি দয়াদ্রতার জন্য মানুষের প্রশংসা করা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসার পরিপন্থী নয়। কারণ হাদীসে এসেছে:
مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرِ اللّٰهَ
“যে মানুষের প্রশংসা করল না সে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করল না।”(নাসায়ী হা: ১৯৫৫, সহীহ) কেননা ভাল কাজে মানুষের প্রশংসা করা মূলত আল্লাহ তা‘আলারই প্রশংসা করা। এতে আরো ইঙ্গিত রয়েছে: মানুষ আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করুক আর নাই করুক আল্লাহ তা‘আলা তাঁর স্বত্ত্বা ও গুণে প্রশংসনীয়। মানুষ তাঁর প্রশংসা করলে মর্যাদা বাড়বেও না, আর প্রশংসা না করলে মর্যাদা ক্ষুণœও হবে না। তিনি সকল প্রশংসনীয় গুণের একক অধিকারী।
তারপর আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী, অন্ধকার এবং আলো সৃষ্টির কথা বলেছেন যা তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ। অর্থাৎ সকল কিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, দ্বিতীয় কেউ নেই। তা ভাল হোক আর মন্দ হোক। আয়াতে الظُّلُمٰتِ ‘অন্ধকারসমূহ’ শব্দটি বহুবচন আর النُّوْرَ ‘আলো’ শব্দটি একবচন উল্লেখ করা হয়েছে। এ অন্ধকার ও আলোতে পঞ্চইন্দ্রিয় অনুধাবনযোগ্য দিন-রাত চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদির সাথে আধ্যাত্মিক অন্ধকার ও আলো শামিল। যেমন অজ্ঞতা, শির্ক ও অন্যায়ের অন্ধকার। আর জ্ঞান, ঈমান, তাওহীদ ও আনুগত্যের আলো। এসব কিছু প্রমাণ করে স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার একমাত্র হকদার।
এত সুন্দরভাবে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও পরিচয় তুলে ধরার পরেও একশ্রেণির মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করে এবং তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করে। তারা বলে: আল্লাহ তা‘আলার নাকি স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে পবিত্র ও মহান।
তারপর আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির উপাদান মাটির কথা স্মরণ করে দিচ্ছেন, আর আমরা তারই বংশধর। সে হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। তারপর সকলের একটি নির্দিষ্ট আয়ু (জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়) নির্ধারণ করে দিয়েছি, আর একটি সময় তথা কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় আল্লাহর কাছে আছে যা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানেন না।” অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْ ج لَا يُجَلِّيْهَا لِوَقْتِهَآ إِلَّا هُوَ)
‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকেরই আছে। তিনিই যথাকালে সেটা প্রকাশ করবেন।’(সূরা আ‘রাফ ৭:১৮৭)
(وَهُوَ اللّٰهُ فِي السَّمٰوٰتِ وَفِي الْأَرْضِ)
‘আসমানসমূহ ও জমিনে তিনিই আল্লাহ’এ আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসিরদের উক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঠিক উক্তি হল: আকাশে যারা রয়েছে এবং জমিনে যারা রয়েছে সকলের মা‘বূদ আল্লাহ তা‘আলা।
এর প্রমাণে অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَهُوَ الَّذِيْ فِي السَّمَا۬ءِ إِلٰهٌ وَّفِي الْأَرْضِ إِلٰه)
“তিনিই মা‘বূদ আকাশমণ্ডলীতে, তিনিই মা‘বূদ পৃথিবীতে।”(সূরা যুখরুফ ৪৩:৮৪)
ইমাম শাওকানী (রহঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন:
أي هو المعبود أو المالك أو المتصرف في السموات والأرض كما تقول زيد الخليفة في الشرق والغرب
আল্লাহ তা‘আলা আকাশে ও জমিনে একমাত্র মা‘বূদ অথবা মালিক অথবা ক্ষমতাশীল। যেমন বলা হয়, যায়েদ পূর্ব ও পশ্চিমের খলিফা। (ফাতহুল কাদীর, ২/১২৯)
তাফসীর মুয়াসসারে এ অংশের তাফসীর করা হয়েছে:
والله سبحانه هو الإ له المعبود بحق في السموات والأرض
আল্লাহ তা‘আলাই আকাশমণ্ডলী ও জমিনের সত্যিকার মা‘বূদ।
আল্লামা আব্দুর রহমান নাসির আস সা‘দী বলেন:
أي: وهو المألوه المعبود ، في السموات والأرض ، فأهل السماء والأرض ، متعبدون لربهم ، خاضعون لعظمته ، مستكينون لعزه وجلاله ، الملائكة المقربون ، والأنبياء ، والمرسلون ، والصديقون ، والشهداء ، والصالحون
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলাই আকাশমণ্ডলী ও জমিনের একমাত্র মা‘বূদ। তাই আকাশে ও জমিনে যারা আছে সবাই তাদের রবের ইবাদত করে, তাঁর বড়ত্বের কাছে বিনয়ী হয় এবং তাঁর সম্মান ও মর্যাদার কাছে নতি স্বীকার করে নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণ, নাবী, রাসূলগণ, সত্যবাদীগণ, শহীদ ও সৎ কর্ম স¤পাদনকারীগণ। (তাফসীর সা‘দী পৃ: ২৪১-২৪২)
তাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদাহ হল, আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপরে আছেন। সেখানে থেকে তাঁর দর্শন, জ্ঞান, শ্রবণ ও ক্ষমতার দ্বারা সর্বত্র রয়েছেন। তাঁর জ্ঞান, দর্শন, শ্রবণ ও ক্ষমতার বাইরে কিছুই নেই। গভীর অন্ধকার রাতে কালো পাথরের ওপর কালো পিপিলিকা চলাচল করলেও আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান ও দর্শনের বাইরে নয়।
সুতরাং জাহমিয়াগণ ও অন্যান্য যারা এ আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করে থাকে যে, “আল্লাহ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান” এ ধরণের বিশ্বাস ভুল এবং ভ্রান্ত আকীদাহ।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল প্রশংসা পাওয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলা। আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা এক প্রকার ইবাদত।
২. স্রষ্টা কেবল তিনিই যিনি ইবাদত পাওয়ার যোগ্য, যিনি সৃষ্টি করতে পারেন না তিনি মা‘বূদ হতে পারে না।
৩. ভাল কাজের জন্য মানুষের প্রশংসা করা বৈধ তবে সীমা অতিক্রম করা যাবে না যাতে আল্লাহ তা‘আলার সমপর্যায়ে যেন না পৌঁছে যায়।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষের নির্দিষ্ট আয়ু নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না।
৫. আল্লাহ তা‘আলা স্বস্বত্ত্বায় সর্বত্র বিরাজমান নন বরং তিনি স্বস্বত্ত্বায় আরশের ওপরে রয়েছেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings