Surah Al Haqqah Tafseer
Tafseer of Al-Haqqah : 9
Saheeh International
And there came Pharaoh and those before him and the overturned cities with sin.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ :
الحاقة কিয়ামতের নামসমূহের অন্যতম একটি নাম। এই দিনে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে, তাই এটাকে الحاقة বলা হয়। এ সূরার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে উল্লিখিত শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরার শুরুর দিকে পূর্ববর্তী কয়েকটি অবাধ্য জাতির ধ্বংসের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তারপর কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, অতঃপর ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের বাঁধভাঙ্গা আনন্দ ও বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সীমাহীন আফসোসের কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং সর্বশেষে আল্লাহ তা‘আলা শপথ করে বলেছেন যে- এ কুরআন কোন গণক, জ্যোতিষী বা কবির কথা নয় বরং তা তাঁরই বাণী।
১-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আলোচ্য আয়াতগুলোতে কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং পূর্ববর্তী জাতি সামূদ, ‘আদ ও ফির‘আউনকে যে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করেছেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
الحاقة শব্দটি حق মূলধাতু থেকে গৃহীত, যার অর্থ : সত্য, অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, এটা দিবালোকের ন্যায় সত্য। এখানে প্রশ্নাকারে তুলে ধরার উদ্দেশ্য, কিয়ামতের ভয়াবহতা বুঝোনো। সালেহ ও হূদ (আঃ)-এর জাতির নাম সামূদ ও ‘আদ। তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করত, ফলে তারা অপরাধমূলক কাজ করতে এবং নাবীদের অবাধ্য হওয়াকে পরওয়া করত না। যার কারণে আল্লাহ তা‘আলা সামূদ জাতিকে এমন এক বিকট আওয়াজ দ্বারা ধ্বংস করলেন যা অন্তরকে বিদীর্ণ করে দিয়েছিল। বিকট আওয়াজ শুনেই তারা মারা গিয়েছিল। হেজায ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী ‘আল-হিজর’ নামক স্থানে তাদের বসবাস ছিল। কুরআনে একাধিক জায়গায় তাদের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানে এ বিকট আওয়াজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তাগিয়া’। এ শব্দ দ্বারা পূর্বের ও পরের আয়াতগুলোর সাথে ধ্বনি ও ছন্দগত মিল যেমন রক্ষা করা হয়েছে তেমনি এ সূরার প্রেক্ষাপট ও পরিবেশের সাথে এর সংযোগ রক্ষা করা হয়েছে।
আর ‘আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন প্রচণ্ড ঝড়ো হওয়া দ্বারা। ‘আদ জাতির আবাসভূমি ছিল দক্ষিণ আরব, ইয়ামান ও হাজরামাওতের মধ্যবর্তী আহকাফ নামক স্থানে। ‘আদ জাতি অত্যন্ত হিংস্র, লড়াকু ও শক্তিশালী ছিল। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাত দিন আট রাত ধরে প্রচণ্ড ঝড় দ্বারা শাস্তি দিলেন। صرصر অর্থ হল : অত্যধিক হিমশীতল প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৬৫-৭২ নম্বর আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
عاتية হল এমন কিছু যা দমন করা যায় না, এ ঝড়ো হাওয়া সাত রাত আট দিন প্রবাহিত হয়েছিল। حسوما অর্থ : ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : متتابعات বা ধারাবহিকভাবে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী রবী (রহঃ) বলেন : জুমার দিন শাস্তি শুরু হয়েছিল।
صرعي অর্থ : মৃতদেহ, اعجاز النخل অর্থ : খেজুরের কান্ড, ডাল। خاوية অর্থ : কালি, শূন্য। অর্থাৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত তাদের দেহকে সারশূন্য খেজুর কাণ্ড বা ডালের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন আমাদের দেশে ধান মাড়াই করার পর আঁটি বা নাড়াকে গরুর পা দ্বারা পীষে মলা হয় তাদের অবস্থা তেমনই হয়েছিল।
অনুরূপভাবে ফির‘আউন, তার পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতি এবং উল্টে দেওয়া জাতি তথা লূত (রাঃ)-এর জাতিকে পাপকাজ করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করেছেন। লূত (রাঃ)-এর জাতিকে المؤتفكات বলার কারণ হল তাদেরকে জমিন উল্টিয়ে দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। সেটা হচ্ছে, বর্তমান ইসরাঈল সীমান্তবর্তী এলাকায় সাগরের বেলাভূমিতে- যার নাম হল ‘ডেড সী বা মৃত সাগর’। এদের অপরাধ হচ্ছে-তারা সমকামীতায় লিপ্ত ছিল। তাদের কাছে প্রেরিত আল্লাহ তা‘আলার নাবী লূত (আঃ) তাদেরকে এ জঘন্য অপরাধ থেকে বিরত থাকতে বললেন কিন্তু তারা মানল না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطِ نِالْمُرْسَلِيْنَ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوْهُمْ لُوْطٌ أَلَا تَتَّقُوْنَ إِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ أَمِيْنٌ فَاتَّقُوا اللهَ وَأَطِيْعُوْنِ وَمَآ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ج إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلٰي رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ أَتَأْتُوْنَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعٰلَمِيْنَ وَتَذَرُوْنَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ أَزْوَاجِكُمْ ط بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ عٰدُوْنَ قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ يٰلُوْطُ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِيْنَ قَالَ إِنِّيْ لِعَمَلِكُمْ مِّنَ الْقَالِيْنَ )
“লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল, যখন তাদের ভ্রাতা লূত তাদেরকে বলল : ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? ‘আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। ‘আমি তার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই আছে। ‘বিশ্বজগতের মধ্যে তো তোমরাই পুরুষের সাথে কুকর্ম কর, ‘এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে তোমরা বর্জন করে থাক। তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’ তারা বলল : ‘হে লূত! তুমি যদি বিরত না হও, তবে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে।’ লূত, বলল : ‘আমি তোমাদের এ কর্মকে ঘৃণা করি।” (সূরা শুআরা ২৬ : ১৬০-১৬৬)
প্রতœতাত্ত্বিক আবিস্কার ও খননকার্য থেকে এ সত্য বেরিয়ে এসেছে যে, এ শহর ইসরাইল ও জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায় মৃত সাগরের তীরে অবস্থিত। এ জায়গাটির নাম ওল্ড টেস্টামেন্টে সুডুম (ঝঙউঙগ) নামে উল্লেখ রয়েছে। প্রতœতত্ত্ববিদরা এখানে খুঁজে পেয়েছেন ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার অসংখ্য নমুনা। চূর্ণ-বিচূর্ণ কংকালই বলে দেয় সেখানকার ভয়াবহ দুর্যোগের কথা।
رابية শব্দটির অর্থ : অতিরিক্ত। অর্থাৎ পরিমাণের বেশি শাস্তি দ্বারা তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম।
لَمَّا طَغَا الْمَا۬ءُ
অর্থাৎ নূহ (আঃ) এর যুগে প্লাবন দ্বারা মুুমিনদের ব্যতীত অবাধ্যদেরকে ডুুবিয়ে মেরেছিলেন। মক্কার কাফিরদের সম্বোধন করে বলছেন যে, তারা ছিল তোমাদের পূর্ব পুরুষ, তারা ছিল মু’মিন আর তোমরা এখন কুফরী করছো। তোমরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ কর।
সুতরাং আমাদের উচিত হবে পূর্ববর্তী জাতিদের মত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের অবাধ্য না হয়ে তাদের আদেশ মেনে চলা আর নিষেধ থেকে বিরত থাকা। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যদি কোন সমাজে খারাপ ও আল্লাহদ্রোহী কাজ হয় আর তা পরিবর্তন করার মত লোক থাকে কিন্তু তা পরিবর্তন না করে তাহলে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করবেন। (আবূ দাঊদ হা. ৪৩৩৯, ইবনু মাযাহ হা. ৪০০৯, হাসান)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. ‘আদ, সামুদ, ফির‘আউন ও অন্যান্য পাপিষ্ঠ জাতির ধ্বংসের কারণ ও আযাবের ধরণ জানলাম।
২. তাদের থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings